তু ল সী দা স মা ই তি
বাবার দেখানো পথ
বাবা বলতেন বাঁদিকে চলো, হাঁটতাম পুব থেকে উত্তরে।
শোভাগড়ের হাট ,গোলদিখির মাঠ পেরিয়ে কাজুবাদামের বাগান।।
অর্ধবিস্মৃত জনপদের ভাঙা দেউল ডানদিকে রেখে পলাশতলা ঘাট।
আবহমান জলে ভেসে যাচ্ছে স্মৃতি।বাবার দেখানো পথে
আবছায়া বৃক্ষরা এখন আমার বিহ্বল বন্ধু,কেউ বা সৌখিন পরিজন। বসন্ত এলে একটা বিশেষ পাখির দল কৃষ্ণচূড়ার মগডালে খানিকটা জিরিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেত।
ইচ্ছেমতো এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতে রাজারপুকুরের জলে স্নান।
বাবার অঙ্গের স্পর্শ লেগে আছে সেই অতল দৃশ্যের অবগাহনে।
বেসরকারি রাস্তার ধুলোয় রহস্যময় গোধূলি। তাঁর ছায়া ই বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে এতকাল।
সড়কে এখন বিজলিবাতি। অন্ধকার গভীর না হলে তাঁকে আর খুঁজে পাই না।
মৃত্যুর ঘুম নেই
রাত্রি নামে।নগর পেরিয়ে কালিন্দি শ্মশানঘাট,
পাশে ছায়াদীঘি ।থৈ থৈ কান্নার কোলাহল অন্ধকারে মিশে যায়।
ছোট ডিঙাটি এখনো ছুঁয়ে আছে মুগ্ধগোধূলির ছায়া।
পারাপার শেষে মাঝিদের সুগভীর ঘুম।
অদূরে শস্যখেত।একা-চাঁদের সাথে খেলা করে বইছুট রাখালের বাঁশি।
আবার আসিবে সে,এই বিশ্বাসে,
সুদীর্ঘ ভ্রমণ শেষে চলে গেছে সাহসী ডানার পরিযায়ী দল।
আহ্নিকগতির মতো চলে যায় সব। দিন আর রাত।
ভঙ্গুর কাব্যভূমিতে মৃত্যু জেগে থাকে।জেগে থাকে সমাধির ফুল।
স্বেচ্ছাদূরত্ব
কেউ নেই কাছাকাছি।ধু ধু নির্জনতায় চিৎসাঁতার দিচ্ছে মানুষ।
দিনের প্রগাঢ় কোলাহল ফেলে অনন্ত রাত্রি এসে দাঁড়িয়েছে তার শরীরের চারিপাশে।
শাদা শয্যায় মাথা রেখে যেন অজস্র মরুভূমি পার হওয়ার দিন।
দুরতর বসন্ত সন্ধ্যায় কেউ হয়তো বাঁশিতে ললিত গাইছে।
চোখের ভেতরে যে নদী তারই স্রোতে ভেসে যাচ্ছে প্রিয় মুখগুলি।
রংকুসুম গাছে পাখিদের প্রণয় খেলার শব্দে অর্থহীন শূন্যতা ।
অদৃশ্য শত্রুর সাথে দ্যূতক্রীড়ায় এখন নির্মম নিঃসঙ্গ
গভীরে লক্ষ্যহীন চাল, বাজিমাতের মৌলিক অপেক্ষায়।
এক আশ্চর্য সময়ের ছায়া বইছে নিঃশব্দ চেতনার ভেতর।
স্বজন থেকে অনেক দূরে জীবন-মৃত্যু এক নির্বিকার লড়াইয়ের মুখোমুখি।
জনপদ
সহস্র প্রাচীন মৃত্তিকা নগরী-পাললিক দিগন্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে আদিম অথর্ব নদী।
পথের দুধার বেয়ে খেতচষা মানুষের ঘর।
জীবনের সুস্বাদ নিতে এখানে তামাটে রঙের মানুষ-মানুষী
স্বপ্নে পুঁতে রাখে রোদ-বৃষ্টি আর সংগীতের বিস্তীর্ণ সবুজ,
নদী প্রেম – শস্য প্রেম , চিরায়ত চারণগীত।
জলহাওয়া দুর্যোগের কোলাহলও ভিড় করে থাকে।
সহজ সরল দিন –এলোমেলো করে ধুলোর ধূমায়িত উৎপাত
আর মহাজনি সওগাত নিয়ে নির্মম হুল্লোড়।
তবুও বয়ে চলে নদী-রোদ্দুর-মেঘ বৃষ্টি, পুঁতে রাখা স্বপ্নবৃক্ষের চারা।
উল্লাসের রঙেই শুরু হয় ব্রীহি উৎসব।
বাতিস্তম্ভের ছায়া
সপ্তম বাতিস্তম্ভের পর রূপকথা চুড়িঘরের গলি
নীরব জ্যোৎস্নার মতো দাঁড়িয়ে থাকে সাঁতারু যুবতী।
বুকে পা জুড়ে পা জুড়ে কেউ ধীরে এসে দাঁড়ায় নিশব্দে।
কিছুটা পথ শেষে উৎসুক শালিকের মতো নির্বাক ঠোঁট
ছায়াদৃশ্য রচনা করে ইশারার গভীরে মিশে যায়।
নির্জন তরঙ্গ ভাঙতে ভাঙতে ই পুরুষের অভিমান জমা হতে থাকে।
মায়াভ্রমণের ক্লান্তি বাড়িয়ে নির্বিকার পলায়ন।
বরফ শীতে ভিজতে থাকে পরিত্যক্ত বাতিস্তম্ভগুলি।
অনুযোগহীন পড়ে থাকে ঘুমন্ত চুড়িঘর !
------
0 Comments