অ রি ন্দ ম ভূ ঞ্যা
মহুল তলার ঢিবি
আজ সমস্ত যৌবন উড়িয়ে দেব হাওয়ায়
এই বুড়ো বয়েস আমার ভালো, খুব
দাওয়ায় উবু হয়ে পিচ পিচ থুথু ফেলব আর
দেখব পৃথিবী নতুন হচ্ছে, পুরনো হচ্ছে,
নতুন মানুষ, পুরাতন মুরুব্বি মানুষ,
দেখতে দেখতে হাজার বছর পরে এমন একটা
ঝড় আসবে আর হেইসা বলে ধাক্কা মারবে যে
অনেকদূর মহুলতলার মাঠে, মাথা উল্টে থাকব পড়ে
আর উঠব না, ধুলো জমবে, মাটি জমবে,
জমতে জমতে উঁচু হয়ে উঠলে দূর থেকে
একটা ঢিবি ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হবে না
আমিও কাউকে বলব না, আমার ভেতর
প্রাচীন সভ্যতার ছোট ছোট ইটের ঘর
বৌদ্ধ বিহার, পরাক্রমশালী রাজার প্রাসাদ,
রাজকন্যার চোখের জল,স-ব লুকিয়ে রেখেছি
দুপুর 2:30
নগর পরিক্রমার পথে তিনি বৃক্ষটিকে দেখলেন
মৌন, বিপুল সব অট্টালিকার মধ্যে সে কত আনন্দে
পাতার গভীর থেকে শিস দিচ্ছে, তার স্নিগ্ধ ছায়ায়
ঠেস দিয়ে বসে পড়লেন, চোখ জুড়ে এলো ঘুমে
ব্যস্ত নগরীর এই দু'দণ্ড মাত্র বিশ্রাম
চলো পথ, চলো স্ট্র্যান্ড রোড,
যেদিকে মুক্তির ফেরিঘাট, পায়রাদের উড়ে যাওয়া-
দেখো, কোলাহলে যেন তার ঘুম না ভাঙে
হিমালয়ের গোপন কন্দর থেকে ভিক্ষা করতে করতে
এ শহরে তিনি এসেছেন
জীর্ণ দেয়ালের মতো ফাটা পায়ের পাতা
চুন-সুরকির দাড়ি, পুরনো ইটের চেয়ে ধূসর গৈরিক
তাঁর চুপসে যাওয়া ঝোলা, আমরা কিছুই পারিনি দিতে
এই গাছ তবু কিছু আড়াল দিয়েছে, এখন তিনি,
পুরনো শিবলিঙ্গের মতো একটু লুকিয়ে ঘুমোচ্ছেন
ভিক্ষা দেওয়ার নাম করে, এই প্রখর গ্রীষ্মে, অসময়ে
তাঁর অনন্তের ধ্যান ভাঙিওনা
রাঢ় বল্লভ
একদিন দূর দেশ ছেড়ে ফিরে যাব
এ কথা ভাবতেই সমস্ত ইন্দ্রিয় জুড়ে হাওয়া দিতে লাগল
খুলে গেল মুষ্টিবদ্ধ ডানা, কত জন্মের রুদ্ধ হৃদয়
সে হৃদয়ে এত জল, এত মুগ্ধ বালুকণা, যেন নদী
ফেরা হলো না আর
নদীতীরের প্রাচীন দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে পড়লাম
যেন এই সুবর্ণ ভূমির রাজা আমি এক, বটবৃক্ষ অন্তিম প্রহরী
তার ছায়ায় সুখী মায়েরা শিশুদের আঙ্গুল ধরে এল
এল দুঃখী প্রেমিকেরা, পৃথিবীর এমন সুখ-দুঃখের ভেতর
জমে উঠল কার্তিক ব্রতের সভা, রাসিকঠাকুর
সংকীর্তন শেষে গোকর্ণ মুদ্রায় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ
হাতের তালুতে মুড়ে নিতে বললেন, সকলকে দিলেন
সুগন্ধি চরণামৃত ও মগধ নাড়ুর প্রসাদ, সেই গোকর্ণ মুদ্রা
আজও বালুচরে গোকর্ণ-বটের পাতা হয়ে ছড়িয়ে থাকে
কুয়াশার আলোয় দূরে সমাধিক্ষেত্রগুলি আরো সাদা সাদা
অপ্সরার দল উড়ে যায়, এক অদ্ভুত আলো আঁধার
লীন এই জল স্থল অন্তরীক্ষ, মন হাওয়ার পর্দার মতো দোলে
চোখ পিটপিট করে দূরের তারায়, অন্ধকার ব্যেপে শরীরের
পদপ্রান্তে হস্তিনীর দল টিলার উচ্চতা থেকে গোল হয়ে নেমে আসে
এখন চরাচরে কোনো মনুষ্য নেই, মানুষের রাজা নেই
কেবল ঘণ্টাধ্বনি আছে, গোপিনাথের চূড়ার পতাকা
রোহিণীর কাছে কাছে উড়ছে
মহুলের বোনেরা
জলের গোপন কথা তারা কাউকে বলেনি, তবু কিভাবে যে
কলহাস্যে মুখর হয়ে উঠল তাদের স্নান!খসে গেল বস্ত্রখণ্ড
মালভূমির বাঁকের ভেতর এসব দুপুর কোনো মানুষ নয়
মহিষেরা জানে, যদুবংশীয় রাখাল এক বনের গভীর থেকে
দেখে ফেলল,আর পাথর হয়ে গেল তাদের স্নান,
বড় পাথরের পিঠ, ছোট পাথরের স্তনযুগল আধডোবা
রইলো পড়ে, সাদা সাদা বস্ত্রখণ্ড জলের আকাশে ভাসছে...
কাঁটা বাঁশ
দেখেছি কাঁটা বাঁশের ভেতর
তুলতুলে ডাহুক শিশুরা কী আনন্দে খেলে বেড়ায়
নিশুতি রাতে ঘন পাতার ফাঁক গলে
সরু সুতোর জ্যোৎস্না যখন নামে
এক একটি কোঁড় আর ফ্যাঁকড়া ছড়ায় দিগন্তে
ছড়াতে ছড়াতে এক সময় মানুষের মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে
তখন কত বিচিত্র দিকে তাদের গতি, কখনো
সোনালী মেঘের দিকে ছুটে যাচ্ছে, কখনও গৃহস্থের
সুখ-দুঃখ বিবাদের কথা মাথা নিচু করে শুনছে
কখনো আবার সারাদুপুর থমথমে ছায়া হয়ে ভাবছে তো ভাবছেই
মন কি এত সহজ বিষয়?
স্বয়ং ব্রহ্মাও তার গোড়া খুঁজে পান না
পচু লোধা এ বছর যত কাঁটা ছাড়ায়, পরের বছর
দ্বিগুণ উৎসাহে কাঁটাঝোপ ঘন হয়ে ওঠে, এইভাবে
কাঁটা ছাড়াতে ছাড়াতে বৃদ্ধ বয়সে এসে ভাবে
মনটি তার এখনো কত সবুজ আর ছন ছনে রয়ে গেল
দেহ যখন আগুনে পুড়বে এই মনও পুড়বে তো?
আর এই সাত মহলা সাম্রাজ্য যদি পোড়ে
পৃথিবী কি পারবে নেভাতে তার শিখা?
মনে পড়ে, কতবার খালপাড়ের কাটা বাঁশের বনে
আগুন লাগিয়ে 'হোলি হ্যায়' বলে ছুটে পালিয়ে এসেছি
-------
0 Comments