কা র্তি ক মা ই তি
মেয়েটি
শাল পাতা বেচে যে-মেয়েটি সংসার টানে
তার নাম জাসনি বাস্কে
বয়স ষোলো, সাকিন খড়িকামাথানি
বাবা নিরুদ্দেশ, পঙ্গু মা, এক ভাই দুই বোন।
আলাপ পঁচিশ ডিসেম্বর দু হাজার
সুবর্ণরেখার চরে বসে সে শুধু একটাই কথা বলে ছিল বারবার :
'হামাকে একটা কাজ করিঞ দেন না'
মনে মনে আমি একদিন
তার খোঁপায় শালফুল গুঁজে বলেছিলাম:
' তুই আমার ঘর হবি রে'
আমরা আবার স্বপ্ন দেখছি না তো
তারপর কেটে গেল দশটা বছর
একদিন কাগজে দেখি
এ কে ফরটি সেভেন হাতে বুড়িশোলের গভীর অরণ্যে
পড়ে আছে তার রক্ত মাখা দেহ
সুবর্ণচরে হাঁটতে হাঁটতে
আমরা আবার অরণ্যে হারিয়ে যাই
কথাকলি
অবিরত বৃষ্টির মতো অশ্রু ঝরছে
সাদা পাতার উপর
ঘুমন্ত স্ত্রীর আঁচলে বাঁধা সংসারের চাবি
বাস্তবপুর থেকে যেতে হবে মায়াগ্ৰাম
যেখানে পাগল শিশু মাথা নাড়ে
মৃদঙ্গ গানের তালে
জ্যোৎস্না রঙিন সংবাদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আকাশবাণী। বিন্দুবাসিনীর মতো
তুমিও যেতে পারো ঝরাপাতার দেশে।
ভূর্জপত্রে লিখে রেখে যেয়ো ঈশ্বরীর জার্নাল
তোমার না-বলা বেদনাই
আমার উপহার
সমাবর্তন
প্রকৃতি সাগরে ভাসিয়ে দাও
পোড়ামাটির কবিতা
ওই আকাশ পাঠ করুক
পাঠ করুক নদী, পাহাড় আর
উড়ে যাওয়া মেঘ
কে তুমি রাস্তার পাগলি
বসে আছ
ফুটপাথ-বিশ্ববিদ্যালয়ে
রূপের প্রাসাদে পড়ে আছে দেখো
কতো হৃদয়পর্ণ
তুমি কার স্বয়ংসম্পূর্ণ মুক্তাঞ্চল
ও বিষণ্ণ নগরীর মেয়ে,
ডুব দিয়ে দেখো
অতলস্পর্শী স্মৃতিচিহ্ন যেন
ভুয়ো সময়ের ধ্বংসাবশেষ
আঃ
মায়ের মরদেহ পচে যাচ্ছে মর্গে
স্বপ্নের বোতল হাতে ছেলে গেছে অপ্সরার বাড়ি
বোন তার আজও নিরুদ্দেশ
বুকের ভেতর আর-একটা বুকে
আমার কবিতা গুমরে ওঠে
আর বাতাসে তরঙ্গায়িত হওয়ার আগেই
হারিয়ে যায়
আততায়ী রণবিলাসীরা জীবন্মৃত দৈত্যের মতো
নষ্ট চরণামৃত হয়ে গেছে
উৎসর্গের গোলাপও ধ্বংস বীজ মনে হয়
রক্তাক্ত নাটমন্দিরে বেনজির বোবা কান্নায়
বোধিবৃক্ষ কেঁপে কেঁপে ওঠে
শব্দের কঙ্কাল কুরে কুরে খায় নরকের কীট
অভিনয়
শরীর জুড়ে চিহ্ন বঞ্চনার
ঘন গিরিমাটি রক্তে রক্তে মাখা
মুখোশের নীচে প্রাচীন গুহামুখ
শত কামনার উলকি আঁচড় আঁকা
বুকের ভেতর বরফশীতল লাভা
নিরুদ্ধ রোষে ঢেউ হয়ে ভেঙে পড়ে
এরা সব দুঃখী, কবি, সম্রাট, চোর....
ছবির মতো স্বরচিত সাজঘরে
যে যার মঞ্চে সুদক্ষ কুশীলব
দুঃখের মধু আদুড় গায়েতে মেখে
প্রথামতো করে সুনিপুণ অভিনয়
বৃক্ষের মতো যন্ত্রণা বুকে রেখে
শেকড়ের মতো যন্ত্রণা ঢেকে রেখে.....
------
0 Comments