পা র্থ প্র তি ম আ চা র্য
জিয়ন কাঠি
গ্রামের প্রান্তে মাটির বাড়ি সঙ্গে একটা স্বচ্ছ পুকুর
বাঁশের মাচা, খামার-গোয়াল,মন্দিরে হয় নিত্য সেবা,
পুষ্পে পুষ্পে বাতাস ঘুরছে, দীর্ঘ তেঁতুল ছড়ায় ছায়া
চওড়া দাওয়ায় ঘুমিয়ে থাকে লম্বা নধর অলস কুকুর।
মাঠের সবুজ ধানের গোড়ায় ক্যানেল পাঠায় জলের ধারা
ধুলায় মলিন ব্যাপ্ত পথে দোকান -বাজার, রিকশা -ঠ্যালা...
প্রতীক্ষালয়,জটলা ঘুরে বাস চলে যায় সদর শহর,
শহর থেকে ফিরলে স্বজন গল্প শোনে বাইশ পাড়া।
পাঁচিল টপকে পালায় বেড়াল, পায়রা খোঁটে চালের কুঁড়ো,
হাঁটলে পরেই হলুদ দালান, প্রাইমারিতে পড়াই যখন,
সন্দীপনে তুমিও থাকো, দৌড়ে বেড়ায় খেলার ছেলে,
নামতা শেখার ছন্দে সকাল, নাড়ছে মাথা প্রাচীন বুড়ো।
চিঠির ভাষায় মেঘের খবর, পত্রিকা সব পোস্টে আসে,
এক্কেবারেই টেনশন নেই, কেউ থাকে না মাথার ওপর ;
আগল ছাড়া হাজার পাখি উড়তে থাকে শাখায় শাখায়
রোদের আলোয় রামধনু হয়, ফড়িং নামে নরম ঘাসে।
আপন ভোলা চরণ বাউল হারায় যখন নদীর বাঁকে
এমনই এক শান্ত জীবন আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।
মাথুর
মাটির বেদির পিঠে পিঠ দিয়ে শুয়ে থাকে শীর্ণ পাগল।
অঝোরে বৃষ্টির পরে স্যাঁতসেঁতে দালানের মেঝে,
নেমে আসে অনির্দেশ পোকারা।
এই চরাচর হতে অন্য কোনও চরাচরে
ভেসে যেতে যেতে
দু- একটা চিহ্ন কেউ রেখে যায় সীতার মতন।
তুমিও রেখেছ,তাই নয়ানজুলির জলে
ছায়া পড়া গাছ,
চাষের জমির আল, অস্থির স্যালো,
ভুটভুটি পাম্পের ধোঁয়া...
ধূসর পাথর ভাঙা খুশি খুশি পথ যায়
জুনিয়র হাই।
অবিশ্রাম পায়ে হাঁটা
ভোটের লিখন ভরা রঙিন দেয়াল ছেড়ে
সবল ছিটকিনির আলগা আড়াল ঠেলে
তুমি ও তোমার ওঠা - নামায়
সকল অরূপ রূপ গড়িয়ে নেমেছে ওই
রোদের তলায়।
ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হলে
দু'হাতের সজল পাতায়,
তোমাকে পাবে না জেনেও মাথুর মাথুর ধুলোয়
সস্তার বাসস্টপে
কে এসে দুপুরে দাঁড়ায়?
বিকেল
অনেক দিন পরে একপ্রস্থ বিকেল এসে
একাকার হয়েছে।
পাখি ডাকছে, সবুজপাতার ঝুরু ঝুরুর পাশে
শিথিল ডালের হিন্দোল...
দূরের আকাশ, তারও দূরে যে জগাই মাধাই পাহাড়
তার চূড়ায় হাল্লা রাজার কেল্লায়
খেলে বেড়াচ্ছে জয়চণ্ডীর সন্তান।
জলে ছায়া ফেলে উড়ে যাচ্ছে শঙখচিল
বাড়ির মাথায় অনাহূত সারসের চিৎকার...
অসহ্য হয়ে উঠেছে মা মাসিমার কান।
শাল পলাশের জঙ্গল আর অস্তগামী রোদের আভায়
চক্রাকার হাওয়া, মিতবাক মন্ত্রের সুরে --
বহুযুগ আগের এক বিকেল,
যা আমাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল জীবন থেকে
সে রকমই এক বিকেল
যেন অনেক বিপ্লবের পরে
আজ আবার তোমার রুমালে এসে বসেছে...
পাকদণ্ডীর পথে কে আর কাকে
কতদিন স্মরণে রাখে বলো!
চোর
মন্দিরের তালা ভেঙে কী ভাবে যে চুরি গেল ঈশ্বর।
কতকালের প্রাচীন সম্বল...
এবার যদি অমঙ্গল আসে? শুকিয়ে যায়
জল ঢ্লঢ্ল বসন্ত পুকুর? মাঠে মাঠে না যদি হয়
লাবণ্যময় ধান?
হাঁস,মুরগি, গোরুর মৃত্যু
পরপর হয় যদি খামারে খামারে?
এতদিনের বাঁধা সিট হাতছাড়া হয় যদি
রায় বাড়ির মেজোকর্তার?
দুপুরে পুলিশ আসে,
শুধু মাত্র সন্দেহের বসে নিত্যপূজার পুরোহিতকে
ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দেয় খাঁচার ভিতর।
চারিদিকে পাখি ডাকছে,
সাঁঝবেলার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে
আমগাছের মাথায়...
আর দু'টি বড় বড় হাত, বড় বড় পা ফেলে
মুঠো মুঠো ধরে নিচ্ছে গুছিয়ে রাখা সুখ।
অদৃশ্য ওই চলন, মুখ দেখা যাচ্ছে না বলে
বুঝে উঠতে পারা যাচ্ছে না
অবয়বটি কার?
তবু যেন মনে হচ্ছে আতায় পাতায় চিনে ফেলছি তাকে,
যে প্রতিটি মন্দির থেকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে
কোমল ঈশ্বর...
মন্দ ভালোয় মানুষ, ঈশ্বরের সন্তান
প্রত্যেকের মুখই সোনা রূপায় মোড়া
চোর বলব কাকে?
সিঁদুর
মস্তানের মতন তিনটি কাক
রংমেরে বসে আছে ছাদের কার্নিশে,
যেন যখন তখন ঠুকরে দেবে লালটু-পলটুর মাথায়...
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিচ্ছে
লালটু -পলটুর মা কেও।
পাঁচমিশেলির দিন, উষ্ণতার গ্রাফ
লাফ দিয়ে উঠে যাচ্ছে ধাপের পরে ধাপ
হা হা করে গাছ পাতাও ছায়া চাইছে
ধোয়া রং আকাশের কাছে,
কুয়োতলার পাথর, সেও চাইছে বারবার
অবগাহনের জল।
হুশ করলে উড়ে যাবে, লালটু -পলটু হাত তুলতেই
মা বললেন - থাক।
ওই যে এক নম্বর কাক,
নবম শ্রেণিতে ও আমার বন্ধু ছিল খুব।
দু' নম্বর কাক, ওকে নিয়েই তো পালিয়েছিলাম
ভিতরকণিকার জঙ্গলে, ফার্স্ট ইয়ারের শেষে...
তিন নম্বর কাক,স্মার্ট হলে কী হবে
আমার মুঠোয় চিরকুট গুঁজে
সিলিং থেকে ঝুলে পড়েছিল ভর দুপুরের দিনে...
আর ওই ঘরের ভিতর নিত্যদিনের মানুষ
বিয়ের আগে দু'দুটো শালিকের বানিয়ে ফেলেছিল পেট।
তবুও আমি ঠাকুরকে বলি
ও যেন কোনও দিন কাক না হয়ে যায়
জাহান্নমের বাতাস সে আর কী জানে পুব পশ্চিমের খবর!
কাক জন্মের আগে সকলে যে মানুষ হয়েই থাকে...
-------
5 Comments
অশেষ কৃতজ্ঞতা
ReplyDeleteসব গুলি কবিতায় ভীষণ সুন্দর
ReplyDeleteপ্রতিটি কবিতায় সুন্দর।
ReplyDeleteসুন্দর। খুব আনন্দ নিলাম ঝরঝরে কবিতাগুলোর থেকে। কবিতার সঙ্গে অলঙ্করণে অনেক আলো ফুটে উঠলো। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো কবি।
ReplyDelete(গৌতম বাড়ই)
সবকটি কবিতাই খুব সুন্দর। আনন্দ পেলাম।
ReplyDelete