জ্বলদর্চি

জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ও তাঁর কবিতা-২ (Muhammad Rumi and his Poetry- 2)


Jalal-ad-Din Muhammad Rumi and his Poetry- 2

কবি জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ও তাঁর  কবিতা-২


তৌ ফি ক  হো সে ন 

 
রুমি বা মৌলানা জালালুদ্দিন রুমি বা জালালুদ্দিন বাল্খি ছিলেন অন‍্যতম শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম পার্সি সুফি কবি। সেই সময়ের পারস‍্য সাম্রাজ্যের আফগানিস্তানের বালখে 1207 খ্রিষ্টাব্দের 30 সেপ্টেম্বর তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর পিতা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন একজন অতীন্দ্রিয় সাধক, তত্ত্বজ্ঞানী ও ধর্মীয় গুরু। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তাঁরা স্থিতু হন তুরস্কের কোনিয়ায়। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সেখানকার দরবেশ সম্প্রদায়ের দ্বায়িত্ব নেন। তাঁর অভিন্ন -হৃদয় বন্ধু শামস্-ই-তবরিজ তাঁর জীবন ঔ দর্শনকে সম্পূর্ণ বদলে দেন। শামস্-এর প্রভাবেই বিশ্ববাসী রুমির মতো একজন বিশ্বকবিকে পেয়েছেন। 'মসনবি' তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্ব সাহিত‍্যের অন‍্যতম শ্রেষ্ঠ কাব‍্যগ্রন্থ। এই 'মসনবি'কে পার্সি ভাষার কোরান বলা হয়।যাপন, দর্শন ও কাব‍্যে তিনি যাবতীয় প্রতিষ্ঠিত বেড়াজাল ভেঙে দিয়েছিলেন। তাঁর সৃষ্টি ও সুফি মতাদর্শের উত্তরাধিকার সমগ্র মানবজাতির আদরের সম্পদ। 

 তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন 12 ডিসেম্বর,1273। রুমির শেষ যাত্রায় পাঁচ ধর্মের অগণিত মানুষ সামিল হয়েছিলেন।
  কোলম‍্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত রুবাই সংগ্রহ 'বার্ডসঙ' থেকে কবিতাগুলি নেওয়া হয়েছে।

প্রথম পর্বে গেছে ১০ টি কবিতা। এবার অন্য ১০ টি কবিতা থাকলো এই  দ্বিতীয় পর্বে।


এগারো 

প্রেম হোল যেভাবে গোপনে থেকে 
ফেরেশ্তারা কথা বলে।

প্রেম হোল জননী
আমরা সন্তান।

আমাদের ভেতর প্রেম দীপ্ত
দৃশ‍্যমান বা অদৃশ্য 
যখন বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস হারাই,
অথবা অনুভব করি আবার শুরু হচ্ছে প্রেম।


বারো

শৈশব, যৌবন ও পূর্ণতা,
আর এখন বার্ধক‍্য

প্রত‍্যেক অতিথিই তিনদিন থাকতে  সম্মত হয়,
তার বেশি নয়।

প্রভু, তুমি মনে করাতে বলেছিলে।
এখন যাবার সময়।


তেরো 

তুমি সমুদ্রের উদারতাকে ঈর্ষা করো?
এই আনন্দ অন‍্যকে দিতে কেন অস্বীকার করবে?

মাছেরা পবিত্র তরলকে পেয়ালার মধ্যে রাখেনা।
তারা সাঁতরায় বিশাল তরল স্বাধীনতায়।


চৌদ্দ 

দেখ, আমি তোমার সঙ্গে আছি সর্বদা,
তুমি কথা দিয়েছিলে,
আর তা যখন সত্য বলে জানলাম 
আমার আত্মা জ্বলে উঠলো।

যেকোনো দুঃখ ভুলে যাওয়া থেকে আসে।
মনে রাখো,
আর বন্ধুর কাছে ফিরে হও ঘনিষ্ঠ।


পনেরো 

এই যে ভোজ এখানে গমের দানাগুলি
বসে আর খায় আর আরো-আরো চায়     
আর আরো আনা হয়।

এই খেতে আসা শস‍্যকণাগুলির
কখনোই খাওয়া শেষ হয় না, আর         
অনন্তকাল
খাবার টেবিল ঠাসাই থাকে।


ষোল 

তুমি আমাকে এতো বিহ্বল করেছো,
তোমার না থাকায় আমার ভালোবাসা বেড়ে যায় অনেক।
প্রশ্ন করোনা কিভাবে।

তারপর তুমি কাছে এলে।
আমি বললাম,' না...'
আর তুমি বললে, 'না...'।

প্রশ্ন করোনা কেন 
এতে আমি খুশি হই।


সতেরো

আসল মূল্য থাকে পাগলামিতে
সত্যপ্রেমী নিচে, বিজ্ঞানী উপরে।

যে-ই আঘাত ও দুঃখের নিচে 
ভালোবাসা খুঁজে পায়

মিশে যায় শূন্যতায়
হাজার নতুন ছদ্মবেশে।

আঠারো 

ফুলে ভরা ডালে ফল আসে 
বাজপাখি নেমে আসে অভিসন্ধি নিয়ে।

তোমার প্রতিমা আসে আর যায় এখানে 
আমার ভেতর। কখন তোমার থাকা হবে?

উনিশ

কবিতা, গান, ও গল্প,
নদী বয়ে যায়, পথ ধরে 
যে পথ আমার কোনোদিন কোনোভাবেই ছিল না।

আমি যা করেছি ইচ্ছাশক্তিতে
অর্থবহ বা অর্থহীন, তা সংক্ষেপে উত্থাপন করেছে
চাঁদের আলো এবং ভেসেও গেছে সেই আবছা আলোয়।

কুড়ি 

গোলাপগুলি ঝলমল করে দিনে 
তোমার সমাধির পাশে।

মাটি, সতর্ক হও,
কে ঘুমায় তোমার ভেতর!

_____________________________________
অলংকরণ - রবীন্দ্রনাথ কপাট  
_____________________________________

প্রতি বুধবার।  প্রকাশিত হবে। 
অনুবাদ সাহিত্য / তৌফিক হোসেন

মতামত জানাতে পারেন --
jaladarchi@yahoo.in 
        

Post a Comment

0 Comments