দেশভাগ
শ্যামলকান্তি দাশ
সারা পাড়া বিষাদে মুহ্যমান,
দেশভাগ হয়ে গেল সকালবেলায়।
এমন নির্মম খেলা জমে যাবে কখনো ভাবিনি।
ময়লা নোংরা রোদ তেরছা হয়ে দেয়ালে পড়ল,
আকাশ ও মেঘ থেকে ঘুটঘুটে কালো নেমে এলো।
কী জানি কোথায় যাব, পরদেশে বাড়িঘর নেই,
খাট চৌকি তক্তপোশ হরিপদ তোমাকে দিলাম,
থালা বাটি হাতা খুন্তি পদ্মাপিসি সমস্ত তোমার।
সবাই চিৎকার করছে দেশভাগ, দেশভাগ,
অদ্ভুত সোনার দেশ, তারও দ্যাখো মুণ্ডু কাটা গেল।
দরিদ্র ব্রাহ্মণ এসে হাত পেতে দাঁড়িয়েছে,
স্থাবর অস্থাবর সমস্তই বিলিয়ে দিলাম ৷
প্রকৃতই ন্যাড়ান্যাংটো হলাম এবার।
এবার তো যেতে হয়, কিন্তু কোথায় যাব,
দাঁড়াবার জায়গা কোথায়!
শুনেছি বন্ধুর বাড়ি দেশের অদূরে -
প্রকাণ্ড প্রশস্ত বাড়ি, বেশি দূরে নয়।
মন চাইছে ওখানেই চলে যেতে - গিয়ে দেখা যাক ৷
সঙ্গে নিলাম দুটি ফুলগাছ,
এক ব্যাগ পাখির হৃদয়।
হিতে বিপরীত
বিরূপাক্ষ পণ্ডা
আকাশকে বলেছিলাম, "আর একটু নীলাভ হও--
ভাবলো, কিন্তু সুযোগ পেলো না রঙিন হওয়ার"
বাতাসকে বলেছিলাম, "আর একটু উদার হও--
শুনলো, কিন্তু ছুটে এলো ঝড় হয়ে"
সমুদ্রকে বলেছিলাম, "আর একটু কাছে এসো" ----
বললো, "এভাবে আমাকে ডেকো না বারবার"
আয়না
আশিস মিশ্র
আয়নার মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে একটি গল্প
তা যেন তোমারই, তোমারই।
আয়নাটি সরিয়ে নিলেই তোমার মুখশ্রী রাগ করবে
আবার মুখশ্রী সরিয়ে নিলে আয়নারও হবে মনখারাপ।
এতোদিন ধরে এতো সেজেছো, আয়না সব দেখেছে।
তার চোখ কখনো হয়েছে কি পুরনো? জেনেছো?
কখনো কি তার কাছে জেনেছো? কী করে বলবে --
এতোদিন ধরে তুমি শুধু নিজেকেই দেখেছো
আয়নাকে কোথাও দেখোনি কখনো।
নিরাশ্রয়
প্রতাপ সিংহ
চলেই যখন যাবে, তখন
বাসলে কেন ভালো?
ছড়িয়ে দিলে ঘরের ভেতর
ফুলজাগানি আলো!
অন্ধকারে গাইলে কেন
দুঃখসুখের গান,
ভাঙলে কেন ধাক্কা দিয়ে
নীরব অভিমান?
আমিতো দূর মফস্ সলে
ছিলাম একা, একা,
কিসের জন্য নিরাশ্রয়কে
দিলে এমন দেখা!
দেখা দিয়েই কেন এমন
বাসলে ভালোবাসা,
সাঙ্গ হল এই জীবনের
সকল কাঁদাহাসা।
একলা ছিলাম, একলা আছি,
একলা থেকে যাব,
হয়তো কোনো পথের শেষে
পথের দেখা পাব।
ভালোবাসার রকমফের
স্মৃতি সাহা
১.
একপলকেই ভালোবেসেছি তোমাকে হাজার হৃদয়ে
কোনও পাপের অভিযোগ আনতে পারে না তারা
তোমাকেই ভালোবাসা ছাড়া
কাছে এসো দূরে চলে যেওনা কখনও
অবিশ্বাসীরা ভাবুক, ভালোবাসা পাপ...
কী বা আসে যায়...
পুড়ুক না তারা সে পাপের নরক আগুনে
২.
সাধুরা তাকান যদি, ধুলো হয় সোনা
আমার প্রণয়ী তবে একটু আলাদা,ডাকে সে আমায় সোনা
তবু তার চাউনি চোখের, আমায় পুড়িয়ে ছাই করে
আমি ওকে ভালোবাসি, সে নেয় সুবাস, নানান ফুলের
রাখে না সে খোঁজ এই মন-ফুলের
যা ফুটেছে পাশেই!
সময়
সন্দীপ কাঞ্জিলাল
.
সময় একটু পিছিয়ে যেতেই
যারা সময়ের ভরসায় পথ হাঁটছিল
তারা ঘোর বেকায়দায় পড়ে
হাতের সামনে লাঠি জুতা ঝাটা
যে যা পেয়েছিল তাই দিয়ে
সময়কে করল রক্তাক্ত।
সামনে পচা নালা ছিল , তাই
সময় একটু পিছিয়ে গিয়েছিল
লাফ দেওয়ার জন্য
তারা তা বুঝতেই পারেনি।
সময়কে যারা আহত করল
সেই হিতাহিত জ্ঞানশূন্যের দল
তাকে ছেড়ে এগিয়ে যেতেই
এখন পচা নালায় হাবুডুবু খাচ্ছে।
আর যারা সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিল
সে তাদের হাত ধরে পার করে দিতেই
তারা এখন পিচ রাস্তা ধরে
তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে।
ওরা জানতো সময় যখন পেছনে হাঁটছে
সামনে নিশ্চয় কোন বিপদ আছে।
অবাধ্য
তুলসীদাস মাইতি
বড়ো মুখ করে ডাকো বলেই তোমার সভায় থাকি, এইটুকুই সত্য বলে ভেবো না।
তোমার আহ্বানের নিবিড়ে লুকিয়ে আছে যে অদৃশ্য অসি,অন্ধকারের আলোয় তাকে স্পষ্ট দেখতে পাই বলেই, তোমার সভায় যাই প্রায়ই তোমার কথা শুনতে , দেশের কথা – দশের কথা, দশের মুখে শুনতে ।
তোমার ভাষণমুদ্রায় মিশে যায় অজস্র মানুষের কোলাহল
আর নিকষ কালো তর্জনীর টঙ্কার ধ্বনি।তবুও তা শুনতে থাকি...শুনতে থাকি.. ,শুনতে থাকি.....
যতক্ষণ না আমার শ্রবণ ক্রিয়া স্নায়ুকলাকে অবশ না করে
অবশেষে দেখি আমার বাধ্য হাত ,বোবা মুখের সাথে দিব্যি সন্ধি করেছে ।
এখন আমার সিদ্ধান্ত এই ,আমি নীরবতার অনুশীলন করে চলেছি। বোধের অবাধ্যতাকে প্রশ্রয় দিই না আর।
এভাবেই আমি তোমার সভায় যাবো বার বার।
সভায় তবু থাকবো না কখনোই।
ঈশ্বরের দরবার
নরেন হালদার
দরবার একটা আছে –
তোমার না তার কখনো ভেবে দেখিনি।
দরবার করতে হয়। মাঝে মাঝেই করে থাকি।
ঠিক না ভুল বিচারকরা বলেন।
তবে বোঝা যায় একটা অলিখিত নিয়ম
সুর করে বেজে যায় শরীরে হৃদয়ে।
বক্তব্য থাকলে দরবারও একটা থাকবে।
নালিশের ভাষা আজানা বা অ-মানা
ঝিঙেফুল বা করমচা একসময়ে ফোটে না
একসঙ্গে ধরেনা গান কোকিল আর বৈষ্ণবী
কেবল একসঙ্গে মেলে এলোমেলো ইচ্ছেগুলো।
দরবার থেকে নির্দেশ আসে।
যা সাজানো আছে তার কিছুটা শরীর আর কিছুটা রোমকূপ।
সবই শূন্যতায় পুণ্যতা।
ভেজা-ভালোবাসা
শুভজিৎ মুখার্জি
আচ্ছা ! আমি যেমন কল্পনা করি,
তুমিও কি ঠিক তেমনি করেই ভাবো ?
সারাটি দিন সেই চিন্তায় মরি!
কবে তোমায়, পূর্ণ রূপে পাবো ?
দুষ্টুমি মোর কারও তো কথা ফোটায় ---
প্রেম জন্মায়, মহার্ঘ ও গোপন ;
মিলনেচ্ছার নিষেধাশ্ব ছোটায়,
ভালোবাসা ভেজায় শরীর-মন।
তোমারই দেয়া শতেক পুষ্প-গোছার
না হয় একটি দিলেম তোমায় ফিরে ---
আমার লক্ষ্য তোমার কষ্ট মোছার,
সংগোপনে, কল্প-সুখের নীড়ে।
আচ্ছা, না হয় ছন্দ দিলেম বাদ,
চিন্তাগুলো এলোমেলোই থাক !
বরং ভেজা-ভালোবসার স্বাদ--
মনেতে মোর মিলন-ঝড় ওঠাক।
শ্রান্ত সোহাগী
তাপসকুমার দত্ত
অনেকপথ যেন স্বপ্নময়, দৃশ্য হীন প্রেক্ষাপট
লুকোচুরি মেঘ পাহারা দেয়, বৃষ্টিদের আনাচ কানাচে
বাতাসের গায়ে হাত রেখে বুঝি, এ চৈতী বাসন্তীর বেলা।
উষ্ণতার উচ্ছন্নি বিরহে শ্রাবণ কাটে, আল্পনার অব্যক্ত যন্ত্রনা
শেষ রাত্রির ছোঁয়া, পৃথিবীর দুয়ারের সীমা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।
আর বিছানায় ঘুমিয়ে আছে, আমার শ্রান্ত সোহাগী আদর
আমি আবাক অবলোকনে দৃশ্যহীন প্রেক্ষাপটের মুখোমুখি!
বাড়ী আমার ভাঙন ধরা
রাখহরি পাল
কোন কৌটোতে মধু রাখি কোন কৌটোতে বিষ
কোন কৌটোতে প্রাণভোমরা খুঁজছি অহর্নিশ।
শ্বাপদ খোঁজে অরণ্য ঘোর পথিক খোঁজে ছায়া
দুয়ের মাঝে আবছা আলোয় নিত্য আসা যাওয়া।
কথার ভুবন আষ্টেপৃষ্ঠে ভাবের বাঁধন ডোর
এক তরীতে যাত্রী সবাই এক স্বপ্নে ভোর
কথার জালে প্রেম, বিরহ,---দ্বন্দ্বে ছিটোয় ঘৃত
আসল নকল বুঝব কেমন জীবিত না মৃত?
এই ধন্দে অলি গলি আঁধার নিয়ে পাড়ি
যে কুলেতে নৌকা ঠেকে সেই কুলেতে বাড়ি।
নারীদিবসের চিঠি
অনিন্দিতা শাসমল
তোমার জন্য সারা আকাশ, মোম জোছনার হাসি,
তোমার জন্য চিরকুট লিখি--খুউব ভালোবাসি।
তোমার কাছেও এই কথাটি শুনতে চায় মন,
তোমার বুকে শান্তির ঘুম,ধন্য নারীজীবন।
বন্ধু হয়ে থাকলে পাশে-- আমি,আমি নির্ভয়..
সব বাধা পেরিয়ে ঠিক, বিশ্ব করবো জয়।
পলাশ ফোটা দশদিগন্তে,আঁচল উড়িয়ে দিই..
সারাবছর বসন্তদিন,মন দিয়ে মন ছুঁই..
দুটি কবিতা
তড়িৎ ভট্টাচার্য
স্মৃতি
হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে এল
অনেক দিনের গান
শ্রাবণ সাঁঝে মনের মাঝে
দুলিয়ে দিল প্রাণ।
হোলি
একদিন শুধু হোলি খেলা নয়
সারাটা জীবন ধরে
রঙের খেলায় মেতে আছি আমি
তোমাকে আপন করে।
আহ্বান
রূপককুমার হাতী
সেতু টা বড়ই নড়বড়ে হয়ে উঠেছে-
কখন যে ভেঙ্গে পড়বে কে জানে!
তখন দুপারের বন্ধন ফিকে হয়ে যাবে হয়তো!
নয়তো ফিকে হতে হতে বিলীন হয়ে যাবে একদিন।
আগামী দিনের লোক বা নাগরিক যাই বলি- আজকের কচিকাঁচা যারা। বদ্ধ জলাশয়ে মাছের মতন -
ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা পড়বে নাকি!
তাই এসো মেরামত করি -ভেঙে পড়া সম্পর্ক-
ঘরে -ঘরে, পাড়ায় -পাড়ায়, দেশে -দেশে, মানুষে- মানুষে ;
সেতুটা মজবুত আর দীর্ঘজীবী করি; যাতে-
সমস্ত সীমানা ঘুচে যায়; বন্ধন দৃঢ় হয়।
ভূভুক
নারায়ণ প্রসাদ জানা
রাজার মুখ ভরবে বলে আলোয়
আয়না তুমি সরিয়ে নিলে
আমার চোখের থেকে।
"লাইট-সাউন্ড-অ্যাকশন"-
মেকআপ মুখে রাজা দিলেন সঠিক পোজ,
সবটাই হল মুখোশে ঢাকা নিখুঁত অভিনয়।
আমিতো রঙ মাখবোনা
ধরবোনা ভেক আর,
তাইতো এখন ঘসে ঘসে তুলেছি সব রঙ।
আয়না খানি সরিয়ে নিলে
আমার মুখের থেকে ,
আমার মুখ করে তুমি কালো ;
রঙ ভরিয়ে রাজার মুখ
ভরলে নকল আলোয়।
কূট-কচাল
অনুপ মাহাত
হঠাৎ সেদিন কাকাবাবুর
মাথাঘোরা আর বমি
তখুনি ছুটে গেলাম
ডাক্তারখানায় আমি।
গিয়ে দেখি ডাক্তারবাবু
চিকিৎসায় ব্যস্ত খুবই
জিভটা দেখি পেটটা দেখি
সবাইকে তাঁর একই বুলি।
আমি কিছু বলার আগে
পেটটা উনি টিপে দেখেন
তারপর জিভটা দেখে
পাঁচদাগ সিরাপ দিলেন।
বললাম আমি অবশেষে
ব্যাধি আমার নয় যে
বললেন উনি হেসে
এতেই নিরাময় হবে।
তুমি শুধু অনন্ত বৈভব
ভবেশ মাহাত
জানি তুমি বাসবেনা ভালো
জানি তুমি ঠেলে দেবে দূরে,
মনে তুমি রাখবেনা জানি
ভাবি শুধু ফেলে দেবে কী করে?
জানি তুমি ব্যস্ত আছো খুব
জানি তুমি ভুলে যাবে সব,
জানি আমি কেউ নই আজ
তুমি শুধু অনন্ত বৈভব।
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments