জ্বলদর্চি

আবৃত্তির পাঠশালা-২৫/শুভদীপ বসু

আবৃত্তির পাঠশালা-২৫
শুভদীপ বসু

বিষয়-বাংলার জনপ্রিয় আবৃত্তিকার (দ্বিতীয় পর্ব)

ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়-বাংলা আবৃত্তি শিল্পকে যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় করেছেন তিনি ব্রততী বন্দোপাধ্যায়।কবিতা ভালবাসে না বা আবৃত্তি ভালোবাসে না এরকম কোন কোন ব্যক্তিকে যদি কোন একজন আবৃত্তি শিল্পীর নাম বলতে বলা হয় তখন তিনি বলবেন-ব্রততী বন্দোপাধ্যায়। অর্থনীতির ছাত্রী,ভালো বিতার্কিক, মহোভাষীর মাথার মধ্যে রয়েছে যেন এক অত্যাধুনিক কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক।হাজার হাজার কবিতা যেখানে সুন্দরভাবে স্মৃতির মধ্যে গ্রন্থিত।দূরদর্শনের নিয়মিত সংবাদ পাঠের ত্রুটিহীন উৎকর্ষ পেশাদারিত্বের শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে।বাংলার বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পীদের পদাঙ্ক মেনেই ব্রততী বন্দোপাধ্যায় আবৃত্তি শিল্পে এনেছেন আধুনিক মাত্রা।শব্দ ও শব্দ প্রক্ষেপণের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে শহর থেকে গ্রামের সব রুচির শ্রোতার মন ও মননকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি।96 তে কলকাতার রবীন্দ্রসদনে'একক সন্ধ্যায় একা ব্রততী'শীর্ষক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা আবৃত্তির ম্যারাথনের শুরু তার। আবৃত্তির সাথে আলো, আবহসংগীত, নৃত্য, ভিডিওগ্রাফি সমস্ত কিছুর একত্র সমাবেশ করে নিজস্ব ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করেছেন তিনি।তার নিজের আবৃত্তি সংস্থার নাম-'কাব্যায়ান'। তার অজস্র আবৃত্তির সিডি। 'আবৃত্তিচর্চার দিনলিপি''শুধু আবৃত্তির জন্য'এরকম অজস্র সম্পাদিত কবিতার বই। দেশ ও দেশের বাইরে আবৃত্তি শিল্পকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছানোর জন্য তার অবদান কখনো ভুলবে না আবৃত্তি প্রেমী মানুষেরা।
সতীনাথ মুখোপাধ্যায়-বেতার-যাত্রা চলচ্চিত্রাভিনেতা, আবৃত্তিকার, পরিচালক, সংবাদ পাঠক, অসাধারণ সঞ্চালক, বিজ্ঞাপনের কন্ঠদাতা, অদ্বিতীয় গল্প পাঠক, লেখক-এককথায় পরিপূর্ণ এক শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। নবীন শিল্পীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন-'অনুকরন নয় প্রয়োজনে অনুসরণ করো, খুব বেশি বেশি করে পড়। একই সঙ্গে পড়াশোনার নিয়মিত অভ্যাস তৈরি করো। কঠোর অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই।'

পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ-এই দুই বাচিক দম্পতি আবৃত্তি শিল্পকে একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। বেতার ঘোষক হিসেবে দুজনের জনপ্রিয়তা ছিল। পার্থ ঘোষ এর পরিচালনায়'গল্প দাদুর আসর'রেডিওতে একটি স্মরণীয় ইতিহাস।গৌরী ঘোষের কণ্ঠস্বর মোহভাষী। বেতার ছাড়াও মঞ্চে, দূরদর্শনে, ক্যাসেটে, সিডিতে আবৃত্তি কে মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন এই দুইজন।দুজনে নিজস্ব একটি ঘরানা তৈরি করেছিলেন এই আবৃত্তিশিল্পে।
বিজয় লক্ষী বর্মন-কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর এই ছাত্রী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৫১ সালে।আবৃত্তিশিল্পে আঙ্গিক ও উপস্থাপনায় নতুনত্বের দিশা এনেছিলেন তিনি।'গান্ধার'নামে একটি নাট্যদল তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 'শিশিক্ষু'ও'সংকল্পিতা'নামে দুটি আবৃত্তির প্রতিষ্ঠান তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি ১৯৯৭ সালে'যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল'একক অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার দেন তাকে।দেশে ও বিদেশে ইনি সমাদৃত।
  আরণ্যক বসু-কবি নাট্যকার ও 'মনে থাকবে' পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আরণ্যক বসু ও বাচিকশিল্পী ও মঞ্চাভিনেতা পরিচয় বসু আসলে একজনই। আকাশবাণী ও দূরদর্শনে দীর্ঘদিন নাটক ও আবৃত্তি পরিবেশন করেছেন ইনি।কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৮ টি,শ্রুতি নাটক ও মঞ্চ নাটকের বই ৩টি।'১০০ প্রেমের কবিতা', 'দুরন্ত প্রেম প্রেম দুরন্ত','মানুষের মুখ কবিতার ভাষা','একমুঠো শিমুল পলাশ','শালবনির রাধাচূড়া', 'মেঘ রোদ্দুর নীলাকাশ'ইত্যাদি তার বিখ্যাত সব কবিতার বই। 'মনে থাকবে','রূপকথার পৃথিবী' 'গীতাঞ্জলি','সবাই থাকো ভালো' অ্যালবাম গুলি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার লেখা কবিতা আবৃত্তি করে জনপ্রিয় হয়েছেন ও হচ্ছেন বাংলার আবৃত্তিশিল্পীরা।বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে কবিতার বীজ তিনি বপন করতে চান।সেই জন্যই তার নেওয়া সারা বাংলা জুড়ে আবৃত্তির কর্মশালা গুলি থেকে উপকৃত হয় বহু নবীন আবৃত্তিশিল্পীরা।দেশে ও বিদেশে সমানভাবে জনপ্রিয় ও সমাদৃত এই শিল্পী।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments