জ্বলদর্চি

বিন্দুতে সিন্ধুভ্রম /আবীর ভট্টাচার্য্য

বিন্দুতে সিন্ধুভ্রম

আবীর ভট্টাচার্য্য


আজ শোনাই এক নতুন কাব্যযাত্রা কথা। আধুনিক পৃথিবীর ব্যস্ততায় তাল মিলিয়ে আবেগ সীমাবদ্ধ হচ্ছে,কবিতায়ও তার প্রভাব পড়ছে। সুললিত দীর্ঘায়িত ছন্দমাধুরী হ্রস্ব হতে হতে অনু থেকে পরমানু ছুঁয়ে আজ মাত্র সতেরো অক্ষর বা শব্দাংশে(সিলেবলে) এসে থেমেছে তার কাব্যিক প্রকাশ।
 'হাইকু' বা 'হক্কু' হল জাপানি কবিতার ক্ষুদ্রতম রূপ।প্রাথমিক পর্যায়ে ৫-৭-৫ অক্ষরে বা সিলেবলে 'হক্কু'(hokku)  লেখা হয়; অবশ্য তারও আগে 'রেঙ্গা'(renga) কবিতা ৫-৭-৫-৭-৭ ফর্ম্যাটে 'অক্ষর বা সিলেবল' মিলিয়ে মোট পাঁচটি ছোট লাইনে লেখা হতো। 'রেঙ্গা' (Renga)কবিতার আরেক নাম 'তানকা' (tanka) কবিতা,যেগুলি জাপানের 'Heian Period' ( ৭৯৪ – ১১৮৫ ) থেকে রাজদরবারে গুণী মনোরঞ্জনে লিখিত ও ব্যবহৃত হতো।
তখন থেকেই 'haikai-no-renga' রেঙ্গা কবিতারও প্রচলন হয়।কেউ বলেন তাতে থাকবে 'কিরেজি' নামক অনুসর্গ,কেউ বলেন থাকবে প্রকৃতি বা প্রেমের অনুসঙ্গ,কেউ বা বলেন থাকবে 'কিগো' বা যতি… নানা মুনির নানা মত। সে যাই হোক, নতুন কিছু তো সবসময়েই গবেষণায় উৎসাহ দেয়, আধুনিক পৃথিবীর বেশ জনপ্রিয় এই কাব্যশাখায় সাহস করে লিখলাম তেমনই কয়েকটি, পছন্দ হলে,উৎসাহ পাই।
শুরুতে রইলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'হাইকু'   
    
                  "পুরোনো ডোবা,
               দাদুরি লাফালো যে,
                   জলেতে ধ্বনি।"

পরের তেত্রিশখানিতে কেবল আমার আখরখেলা।

    (১)
কাব্য মাধুরী
দহন দিনে জল
জীবন ভরি…
       (২)
সে আনমনা;
কেন যে ভালোবাসি
সে তা বোঝেনা... 
      (৩)          
ফুল ফুটলে
বিবিক্ত সমর্পণে;
প্রাণ আকুল...
       (৪)
ডাকলে কাছে
অনন্ত অনুরাগে
ফিরে দাঁড়াই...           
    (৫)
কোমল ছুঁলে
আহীর ভৈরবের;
 ঋষভে এলে!
        (৬)
   স্নেহ মঞ্জিলে
  পরাভৃতে বায়স...
   প্রাণটি দিলে!
         (৭)
নয়নতারা…
তাকেই আমি ডাকি
সে তা বোঝে কি!
          (৮)
ভালোবাসলে…
বিন্দুতে সিন্ধুভ্রম
তুমি জানতে?
        (৯)
যেতে পারলে
দূরেই যাও তবে!
থাকি আড়ালে।
        (১০)
তারার আলো
দীপ্তশিখায় জ্বালে
তোমার ভালো।
     (১১)
তোমায় দেব
একান্ত সমর্পনে
আমার সব...
     (১২)
শব্দ মল্লারে,
শ্রবণে ঢেউ ওঠে
তুমি অধরে!

   (১৩)
মায়া দর্পণে
কার যে ছায়া ভাসে
শুনি নিঃস্বনে

  (১৪)
তোমায় দিলে
এক পৃথিবী প্রেম;
কম পড়বে…

     (১৫)
-ভালোবাসো কি?
-আ মোলো যা!মরণ!
-বেহায়া নাকি!

     (১৬)
ওগো সুদূর!
আমায় গ্রহণ করো…
কৃতার্থ সুর!

       (১৭)
অনন্ত জাগে
মৃত্যুরও অতলে!
কি অনুরাগে...

    (১৮)
ছেড়ে যাওয়া
বড্ডো বেশী কঠিন;
আগলে রাখি…

  (১৯)
সাঁঝ আকাশ
বা বুকের বাঁ-পাশ
সবই তোর!...

   (২০)
স্তব্ধ দুপুর
আলসে বক-পুকুর
প্রতীক্ষা কার?

    (২১)
আনজন্মে যে,
রাখেনি তার কথা
  সে রাধাব্যথা! 

      (২২)
আকাশে চিঠি
পেয়েছে তার দিঠি
মেঘের খামে।

      (২৩)
ও বনমালী!
ভুলগুলো না নিলে
ফুল দেব না...

  (২৪)
কাছে তো এলে।
চন্দনগন্ধ রেখে
দূরেই গেলে….

    (২৫)
শ্রাবণ দিনে
থাকলে পরবাসে
বিরহ প্রাণে

   (২৬)
লিখলে নাকি?
আলো আখর-প্রেম;
হবো জোনাকি!

     (২৭)
ওগো অতল
ভাসাও নিরবধি
স্বপনে যদি…

     (২৮)
ভুলই সত্যি! 
ফুলজন্ম যে পেলে,
গন্ধ নিমিত্তি...
  
    (২৯)
যদি বা এলে
এমন করে এলে!...
সব ভাসালে।

     (৩০)
প্রভাতী আলো
ঝোপের শ্যামলিমা
স্নেহে স্পর্শালো।

      (৩১)
চোখে আগুন
স্হির প্রত্যয় দিশা
জাগালো নিশা।

      (৩২)
আরব্ধ প্রেম!...
রজকিনীর ব্যথা
জানে সে কথা।

     (৩৩)
এবার আসি!...
বিদায়বাঁশি বাজে
আগামী মাঝে।

 পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. অনেক অনেক ধন্যবাদ। সবাইকে অনুরোধ,পড়ে দেখার জন্য

    ReplyDelete