জ্বলদর্চি

নবীন প্রবীণের একগুচ্ছ কবিতা -২

নবীন প্রবীণের একগুচ্ছ কবিতা -২
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে সুমিত্রা মাহাত অন্তরা ঘোষ  কৃষ্ণা গায়েন শম্ভুনাথ শাসমল অনিন্দিতা শাসমল  সুতনু সরকার ভবেশ মাহাত 
সিদ্ধার্থ সাঁতরা তুলসীদাস মাইতি নরেন হালদার  বিভাস মণ্ডল পুষ্পেন্দু বিকাশ বাগ  রাজর্ষি রায় 

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

 মাটি  

মাটির কবিতা লিখে গেছি আমি 
শিকড়কে আঁকড়ে ধরে 
মায়ের টানেই ফিরি বার বার
আমার আপন ঘরে।  

ব্যথা

ধরতে গেলাম পালিয়ে গেলে শিকল ভাঙা পাখি
তাইতো বাঁধা হল না তো আমার প্রেমের রাখি
হৃদয় যেন অবুঝ চাতক শুধুই বৃষ্টি যাচে॥
বুঝলে না তো আমার বুকেও ভালোবাসা আছে।


দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

অনেকদিন

মুখ দেখিনি মুখোশ পরা মানুষগুলোর, 
গায়ে লাগা  দুর্গন্ধ চতুর্দিকে, 
রোদ্দুর এখনো ঢোকেনি মস্তিষ্কে, 
বোবা জানালা তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।

উড়ন্ত 

পাখির শরীর থেকে খসে পড়ছে 
একটা একটা  পালক, আগুনও বিবর্ণ, 
মরা গাঙে আর কোন শালিক ডাকে না, 
পাতা হয়েছে আজ ফ্যাকাসে, হলদেটে।


সুমিত্রা মাহাত

ঠাকুমা

আমার জীবনে ধ্রুবতারা তুমি ,
জ্ঞান - বিজ্ঞান - সংস্কার ;
দুহাতে ভরেছো জীবন আমার ,
তোমাতেই আমি একাকার।।

গানের ক্লাস 

মামাবাবু ,করেন কাবু
ক্ল্যাসিক্যাল এর সুরে,
পিঙ্কি, ভোলা, গদাই, মণি-
চেষ্টা তবু করে।।


অন্তরা ঘোষ

 আগুনপাখি

শ্বাসরুদ্ধ সলতে পোড়া প্রাণে,
জ্বলছে দেখো লক্ষ কোটি নারী।
বলছে ওরা আগুনপাখি হয়ে,
বিশ্বকে আজ পুড়িয়ে দিতে পারি।


প্রেম

গোপনীয় ক্ষতে আজ আদুরে আলাপন,
আলোর বাজনা মন জুড়ে।
হৃদয়ের গান আজ ঢেউ তোলে মনে,
যতই থাকো না কেন দূরে!


কৃষ্ণা গায়েন 

যুদ্ধ

আকাশ ঢেকেছে বোমারু বিমানে
ঘর বাড়ি সব দগ্ধ, 
প্রাণ ভয়ে দেশ ছাড়ছে মানুষ
ত্রাণে ও মেলেনি খাদ্য।

কৃত্রিম বুদ্ধি

একের মাথা অন্যের ঘাড়ে
বসিয়েছে 'ডিপ ফেক', 
মানুষ এখন নিজেকে চেনেনা
ভুল ঠিক সব এক।


শম্ভুনাথ শাসমল

শঙ্কিত প্রহর

আমাদের সমবেত শ্রমে
জৌলুস তোমার দেহে
তোমার মনের কদর্যতায়
শঙ্কিত প্রহর গুনি কর্মহীনতার।


যুগের তরঙ্গ

তিল তিল করে গড়ে তোলা ভালোবাসা
যুগের তরঙ্গে হয়তো ভেসে যাবে একদিন
শিল্পী হয়ে দেখতে হবে হয়তো ধ্বংসের বীভৎসতা
সৃষ্টি তো অর্থহীন ধ্বংসকের কাছে।


অনিন্দিতা শাসমল 

ঢেউ

বাঁধনহারা মনের উচ্ছ্বাসকেই ঢেউ বলে।
সমুদ্রের গভীরে গর্জন করে 
ছুটে আসতে আসতে, তীরে পৌঁছে 
পাড় ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে ; ব্যাপ্ত হয়।

সম্প্রীতি

খুনী যখন মুখোশ প'রে
ভালোমানুষ সাজে
ছড়িয়ে পড়ে গীতবিতান
অগ্নিবীণা বাজে। 


সুতনু সরকার 

মুখোশ

জাগতিক সম্পর্কগুলো একই আজও 
বদলেছে হাতের রেখা, দৃষ্টিভঙ্গি
চেনা মুখগুলো মুখোশের আড়ালে
মহাযুদ্ধ লেখে ইতিহাস।

দেশ

আকাশ সেদিনও কালো ছিল
আকাশ আজও ধোয়াময়
দেশগুলো সব একই রয়ে যায়
বদলে যায় জনজীবন।

🍂


ভবেশ মাহাত 

সূত্র  

জীবনের প্রতিটি পরীক্ষার আগে ভাবি
নিজেকে আরও নিখুঁতভাবে  প্রস্তুত করবো,
অথচ সারাজীবন একটিই সূত্র মুখস্থ করেছি
"হয় মেনে নাও নইলে মানিয়ে নাও।"


রহস্য  

একটা সিঁড়ি ধরে হেঁটে যাচ্ছি দুজনেই 
তুমি উঠছ প্রয়োজনে, আমি প্রয়োজন শেষে,
সিঁড়ির রহস্য ভেঙে আবার দেখা হয়
কেউ কাউকে চিনতে পারিনা পরিশেষে।


সিদ্ধার্থ সাঁতরা

সময় 

১.
একদিন এসো, দেখা হবে সময় করে
যদিও বই আর পড়া হয়না সুইচ অফ ফোনের
তবু এসো নাহয় মনের ভেতর, কথা হবে
আজন্ম বিপদে থাকা প্রদীপ শিখাটির সাথে...

 ২.
এত সাদা চারপাশে কে যেন কার আঙ্গুল ধরে
বুঝি বয়স হলো, ওরাও বড় হয়ে গেলো দ্রুত
যে ছবিটা মনের ভেতর সন্ধে তারার মতো
মিলিয়ে যেতে যেতে বড় টানে আজও...


তুলসীদাস মাইতি

অনন্তের দিকে

তলপায়ে অজস্র হোচটের দাগ। বহুকাল ধরে তবু হেঁটে চলেছে নক্ষত্র পুরুষ, পথের পাথরের উপহাস পেরিয়ে তারা পৃথিবীর শেষ বয়স দেখবেই ।

হাঁটতে হাঁটতে এই নিরাকার প্রবাহ অনন্তের দিকে…


স্তব্ধতার গান

মৃত রাত্রির গায়ে সময় দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকার। 
বাঁশিতে সুরও থেমে গেছে জ্যোৎস্নার মত। 
ঝাপসা জানালায় রোদের সংবাদ এলে বেরিয়ে পড়ি।

অর্কেস্ট্রার আওয়াজ শোনা যায়। ‘স্তব্ধতার গান’।


নরেন হালদার

১.
উড়ুক তালপাতা বা তালধ্বজ।
মাটি যেমন আছে মাটিতে সুপ্ত -
তেমনি করে পাখাদুটি মানুষে বিলীন।
ধ্বজ হোক বা সংকেত আরোগ্যটাই 
         মাটির সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

২. 
ঝনঝন করুক শুকনো পাতা বা বাসা
অনুলোমবিদ্ধ সন্ধ্যা সম্ভাবনা।
ভৈরবী আর বিকাশ সমার্থ্য
গান গেয়ে গাওয়া পথ চলা।


বিভাস মণ্ডল 

আবেদন

তোমার আশিস ঝরুক আনত শিরে
সরষের ক্ষেতে পদ্মদিঘির ' পরে
তোমার আশিস ঝরুক মুটে-মজুরের
চাষী-শ্রমিকের ক্ষেত- খামারের 'পরে।


নিবেদন

শক্তি দাও ক্ষণভঙ্গুর বাহুতে
বুদ্ধি  দাও দুর্বল  মস্তিষ্কের  ঘিলুতে
অবিরাম যেন হেঁটে চলি আলোকরেখায়
সূর্যমুখীকে হৃদয়ে গেঁথে নিয়ে।


পুষ্পেন্দু বিকাশ বাগ

আলো

পূর্বসুরীরা গান গেয়ে গেছে
হৃদয়ে এঁকেছে পান্না,
মনমাঝি তুই রূপ নিয়ে থাক
বানভাসি আজ কান্না ।


আঁধার

উত্তরসূরী বাঁধবে যে তান
হৃদয়ে লাগবে মাতন,
আলোর কাছে ফিরতে চেয়ে সে
পাবে আর কত যাতন ?


রাজর্ষি রায় 

অধরা
    
তোকে বলেছিলাম কৃষ্ণচূড়ার রং চেনাবো
 তোকে জেনেছিলাম হাতের তালুর মত স্পষ্ট
তোকে মীরাবাই ভেবে ঝাঁপ দিতে গিয়ে দেখি
সকলই ঝাপসা অন্ধকারের মতো অস্পষ্ট।

পিচ্ছিল
        
একক ক্ষুধার মতো একলা আকাশ
ক্ষুরধার স্বপ্ন-সম নিয়ত  মিছিল
গোপনে পোষন করা স্বকাল ও স্বদেশ ক্ষমতার অলিন্দে লুব্রিকেন্টে হও পিচ্ছিল..

Post a Comment

0 Comments