দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
আজ বিশ্ব যোগ দিবস। যোগ কি, এর মধ্যে থাকলে কি, কি সুবিধা হতে পারে আমাদের, তা সবকিছুই বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
যোগ হলো, এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে মানুষ তার মন, শরীর এবং আত্মাকে একত্রিত করার চেষ্টা করে। যোগ একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ মিলন বা ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যোগের উৎপত্তি ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে। প্রায় ৫০০০ বছর আগে থেকে মানুষ যোগ অনুশীলন করে আসছে। যোগে শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতা থাকে না যোগে, মানুষ মানসিক মনোযোগ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের শরীর ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
পুরুষরা যদি যোগ শেখায়, তাহলে তাদের যোগী বলা হয়, আর মহিলারা যদি যোগ শেখায়, তাহলে তাদের যোগিনী বলা হয়। যোগসূত্র হলো,২০০০ বছরের পুরনো একটি বই। এটিই একমাত্র বই যেখানে যোগের লিখিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই বইটি যোগ সম্পর্কে প্রাচীনতম বই। এই বইটিতে যোগ দর্শনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কীভাবে কেউ তাদের মন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং আধ্যাত্মিকতায় মিশে যেতে পারে সে সম্পর্কে অনেক পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
যোগ ছয়টি শাখায় বিভক্ত, যথা হঠ যোগ, রাজ যোগ, কর্ম যোগ, ভক্তি যোগ, জ্ঞান যোগ, তন্ত্র যোগ। এছাড়াও যোগ শৈলীর সাতটি চক্র রয়েছে যথা সহস্রাম চক্র, অজ্ঞান চক্র, বিশুদ্ধ চক্র, অনাহত চক্র, মণিপুরা চক্র, স্বাধিষ্ঠান চক্র, মূলাধার চক্র।
মোট ১৩ ধরণের যোগ রয়েছে,কুণ্ডলিনী যোগ, ভিন্যাসা যোগ, হঠ যোগ, অষ্টাঙ্গ যোগ, যিন যোগ, আয়েঙ্গার যোগ, বিক্রম যোগ, শক্তি যোগ, শিবানন্দ যোগ, পুনরুদ্ধার যোগ, প্রসবপূর্ব যোগ, আকাশ যোগ, অ্যাক্রো যোগ।
🍂
যোগ হলো, শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন অর্জনের প্রাচীন উপায়। মূলত ভারতে উদ্ভূত, 'যোগ' শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, যার অর্থ একত্রিত করা। এই ঐক্য চেতনার সাথে শরীরের চূড়ান্ত মিলন এবং এইভাবে চূড়ান্ত শান্তি অর্জনকে বোঝায়। যোগব্যায়ামের সার্বজনীন আবেদনকে স্বীকৃতি দিয়ে, ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
যোগ হলো, প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত এক বিশেষ ধরনের শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন প্রথা বা যোগব্যায়াম। এর উদ্দেশ্য মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাবিধান। এই প্রথা ভারতে আজও প্রচলিত আছে। ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক মুখোপাধ্যায় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ১২৪ নম্বর আলোচ্য বিষয়ের উপর - প্রতি বছর ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের খসড়া সিদ্ধান্ত (A/69/L 17) উপস্থাপন করেন। ১৭৫ দেশের উপস্থিত প্রতিনিধির সভায় প্রস্তাবটি ভোটাভুটি ছাড়াই গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন হতে এই বৈশ্বিক দিবসটি পালিত হয়ে আসছে
যোগ দিবসে প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি ছিলো,
২০২৪ : নিজের এবং সমাজের জন্য যোগব্যায়াম
২০২৩ : যোগা ফর বসুধৈব কুটুম্বকম অর্থাৎ যোগব্যায়ামে সারা বিশ্ব এক পরিবার
২০২২ : যোগা ফর হিউম্যানিটি তথা মানবতার জন্য যোগব্যায়াম
২০২১ : যোগা ফর ওয়েলবিইং বা সুস্থতার জন্য যোগব্যায়াম
২০১৯ :যোগা ফর হার্ট - হৃদরোগ জন্য যোগব্যায়াম
২০১৮ : যোগা ফর পিস - শান্তির জন্য যোগব্যায়াম
২০১৭ : যোগা ফর হেল্থ - স্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়াম
২০১৬ : যোগা ফর দ্য অ্যাচিভমেন্ট অফ দ্য সাসটেইনঅ্যাবেল ডেভেলপমেন্ট গোল্স - টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগব্যায়াম
২০১৫ : যোগা ফর হারমোনি অ্যান্ড পিস - সম্প্রীতি ও শান্তির জন্য যোগব্যায়াম।
আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের ইতিহাসযোগব্যায়াম একটি শতাব্দী প্রাচীন অনুশীলন যা প্রায় ৫,০০০ বছর আগে ভারতে উদ্ভূত হয়েছিল। এটিকে মন, শরীর এবং আত্মাকে একত্রিত করার এবং জ্ঞানার্জনের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া এবং কৌশল হিসাবে দেখা হত। পশ্চিমে এই অনুশীলন জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে এটিকে একটি ব্যায়াম এবং শিথিলকরণ পদ্ধতি হিসাবেও অভিহিত করা শুরু হয়। এটি বিদ্যমান শারীরিক আঘাত এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশমের দাবির সাথেও যুক্ত ছিলো।
২১শে জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালনের ধারণাটি সর্বপ্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর উত্থাপন করেন।২১শে জুন, ২০১৫ তারিখে, অর্থাৎ, যখন এই দিবসটি প্রথম পালিত হয়েছিল, তখন সারা ভারত থেকে ৩৬,০০০ এরও বেশি মানুষ নয়াদিল্লির রাজপথে ৩৫ মিনিটের জন্য ২১টি যোগব্যায়াম আসন, যাকে আসনও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে যোগ দিয়েছিলেন। শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে বিশ্বের অন্যান্য উচ্চ-প্রোফাইল রাজনৈতিক এবং বিখ্যাত নেতারাও যোগ দিয়েছিলেন।
যোগব্যায়ামের উপকারিতাযোগব্যায়ামই একমাত্র প্রক্রিয়া যেখানে কোনও সরঞ্জাম ছাড়াই ব্যায়াম করতে পারা যায়। শুধু তাই নয়, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে কোনও ওষুধ ছাড়াই রোগ দূর করতে পারা যায়।
যোগব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি হয়। যদি কারো শরীরে নমনীয়তা থাকে, তাহলে সেই শরীরে ব্যথা অনেক কম থাকে। যোগব্যায়াম করলে ব্যথা উপশম হতে পারে।যদি একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট যোগব্যায়াম করেন, তাহলে তার শরীর সারা দিন ক্লান্ত হয় না।
যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করা যায়। যদি কারো শরীরে নমনীয়তা থাকে, তাহলে সেই শরীরে ব্যথা অনেক কম থাকে। যোগব্যায়াম করলে ব্যথা উপশম হয়।যোগব্যায়াম করলে মন শান্ত থাকে। এতে দুশ্চিন্তা আসে না। মানসিক চাপ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ শরীর থেকে দূরে থাকে।যোগব্যায়াম করলে মানুষের ভঙ্গি উন্নত হয়।
যোগব্যায়াম হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে এবং জয়েন্টে ব্যথা হয় না। যোগব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে। এটি শরীরের হৃদস্পন্দনও উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, যোগব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
0 Comments