জ্বলদর্চি

'মানুষের দুঃখের অবসান হোক'/বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

'মানুষের দুঃখের অবসান হোক'

বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়



এটাই চাইছিলেন তিনি । না, তখনও তিনি বুদ্ধ
হন নি ।তিনি তখন সিদ্ধার্থ নামেই পরিচিত। এই
সত্যকে খুঁজে বের করার জন্য তিনি তপস্যা বা 
সাধনা করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।
তখনকার দিনে তপস্যা বা সাধনা করা বড় সহজ কাজ ছিলো না ।বিভিন্ন সাধক , বিভিন্ন গুরু বিভিন্ন
ভাবে সাধনার ব্যবস্থা পত্র দিতেন ।এর মধ্যে প্রধানতম ছিলো আত্ম-নিপীড়ন । সেটা কি ?
'কৃচ্ছ্র সাধন' বা শরীরকে কষ্ট দেওয়া । এই পদ্ধতি
ছিলো অমানবিক । একাসনে সুদীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা। হাতের আঙ্গুল হাতের তালুতে অত্যন্ত
চাপ দিয়ে টিপে ধরে থাকা ।এর ফলে হাতের নখ
হাতের তালু ভেদ করে তালুর অপর দিকে চলে যেতো ফলে অসহ্য যন্ত্রণার সৃষ্টি হতো । কেউ কেউ
আবার সুদীর্ঘ কাল ধরে ঊর্ধ্ব-বাহু হয়ে বসে থাকতেন।এটা বোঝাই যায় এর সব গুলিই অত্যন্ত
কষ্ট সাপেক্ষ ।এ ছাড়াও ছিলো উপবাস এবং   ক্রমে ক্রমে একেবারেই খাদ্য বর্জন ।
এই সব কৃচ্ছ্র সাধনের মধ্য দিয়েই নাকি সত্যকে একদিন জয় করা যাবে । এটাই ছিল সে যুগের
ধারণা । এভাবেই হবে সাধনার সিদ্ধি ।

মগধ যাওয়ার পথে উরুবিল্ব নামে একটি গ্রাম ছিলো । স্থানটি ছিলো নির্জন, প্রাকৃতিক শোভায়
মনোরম ।এখানে একটি বিশাল বৃক্ষের তলায়
এক সমতল স্থানে সিদ্ধার্থ তাঁর আসন গ্রহণ
করলেন । শুরু করলেন তপস্যা । বড় কঠিন
এই তপস্যা ।

খাওয়া দাওয়া ক্রমে বন্ধ করে দিলেন ।ক্রমশ 
তিনি কঙ্কালসার দশা প্রাপ্ত হলেন । কিন্তু তবু
তিনি সংকল্প চ্যূত  হলেন না । কিন্তু মানুষের
শরীরে কত আর সহ্য হয় ? একদিন তিনি মূর্ছা
গেলেন । ভাগ্যক্রমে এক মেষপালক কাছেই ছিলো। সে কদিন ধরেই তাঁকে লক্ষ্য করছিলো।
সে ছুটে এলো । বুঝতে পারলো দীর্ঘ উপবাসের
ফলে সাধুটির এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে । সে ছুটে
গিয়ে একটি দুগধবতী ছাগীকে সেখানে নিয়ে এলো এবং বহু কষ্টে সাধুটিকে ছাগ দুগ্ধ পান করালো ।
ধীরে ধীরে সিদ্ধার্থের শক্তি ও জ্ঞান ফিরে এলো।
ফিরে এলো তাঁর চিন্তা করার ক্ষমতাও । তিনি বুঝতে পারলেন এই ভাবে জ্ঞান লুপ্ত হয়ে গেলে
কোনো ভাবেই  তিনি সত্যকে খুঁজে পাবেন না ।
তা হলে কি করবেন তিনি ? এই প্রশ্ন মনে নিয়েই দুর্বল সিদ্ধার্থ ঘুমিয়ে পড়লেন ।

ভোরে মধুর এক গান শুনে তাঁর ঘুম ভাঙলো ।
একদল গায়িকা নর্তকী সেই পথ দিয়ে গান গাইতে
গাইতে হয়তো মগধের দিকেই চলেছিলো ।তারা
যে গানটি গাইছিলো সেটি হলো :

'সেতারের   তার   খুব   আলগা   করো,

সেতার   তোমার   বাজবে   না,

খুব   টান   করো  , তার   ছিঁড়ে   যাবে

সেতার   সুর   আর   সাধবে   না।

মাঝা   মাঝি   যদি   তারটাকে   রাখো,

তার  পরে   যদি   সুরটাকে   ডাকো,

তখন   সেতার মধুর বাজবে, কোনো বাধা,

আর    মানবে   না'

সিদ্ধার্থ এবার পথ পেলেন। কি সেই পথ ?

''Majjhima Patipada' (মধ্য পন্থা)

Avoidance of all extremes, whether of Self Indulgence and Self Mortificarion ;
of  Eternity or Annihilation : of Complete
Indetermination or Accidentalism and Strict
Determination or Fatalism : or of any other
'ism' .


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments