জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৬

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৬




সম্পাদকীয়,
গাছ ভর্তি ফুল দেখতে কতই না সুন্দর। ঠিক যেমন বিদ্যালয় ভরা ছাত্র ছাত্রী। কোভিডের সময় দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা না যেতে পারায়, বিদ্যালয় আর ছাত্র ছাত্রী - উভয়েরই মন ভীষণ খারাপ হয়েছিল তা আমরা সবাই জানি। তোমরা কি ভেবে দেখেছো প্রতি বসন্ত শেষে পলাশেরর সব ফুল গাছ থেকে খসে গেলে তার মন কত খারাপ হয়! তোমরা বলবে এতো প্রকৃতির নিয়ম। আমি বলব, হ্যাঁ ঠিকই বলেছো, তবে শুধু যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুল গাছ থেকে ঝরে পড়ে তা তো নয়। আমরাও নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ফুলেদের গাছ থেকে ছিঁড়ে নিই। তখন গাছেদের কত কষ্ট হয় ভেবে দেখেছো? হ্যাঁ, এবারের মতো বসন্ত যাবো যাবো। পলাশ তলায় ফুলেরা খসে পড়ছে অঝোরে। সেইসব ফুলেদের ছবি তুলে পাঠিয়েছে নীলাব্জ আঙ্কেল। ফুলেদের কথা মনে হতেই পাখিদের কথা বলব বলে মন ছটফট করছে। পাখিরা কত উপকার করে জানো? না জানলে জেনে নিও বাসবদত্তা আন্টির 'চলো যাই' পড়ে। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, তোমরা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছো ওদিকে জয়াবতী, পুণ্যিও গুরুগৃহে যাচ্ছে। আমার দারুণ আনন্দ হচ্ছে। কারণ সুদীপ্তাদিদি জয়াবতীর একটা দারুণ প্রচ্ছদ এঁকে পাঠিয়েছে।  তৃষ্ণা আন্টির লেখায় আজ ঘোড়ার কথা এসেছে। অথচ আমি চোখ বুজতেই একটা হরিণের ছবি দেখলাম। তাহলে ফুল, পাখি, পশু সবই রইল।  তোমরা রেগে গেছো দেখছি, বুঝেছি স্কুল খুলেছে, পড়ার চাপ, প্রজেক্ট করো, এই দিবস ওই দিবস নিয়ে লিখে আনো, খুব ব্যস্ত তাই তো? আরে কদিন আগে স্কুলে ভাষা দিবস পালন হল। মনে আছে তো? সেই নিয়ে একটা গল্প লিখে পাঠিয়েছে অমিত আঙ্কেল। সেটা পড়ে আমি চোখ বুজতেই দেখতে পেলাম, কত কত বাড়ি রাস্তা। আর ভজন কাকু একটা কবিতা পাঠিয়েছে। কবিতাটা পড়েই আমার বুদ্ধের মুখ মনে পড়ল। তোমরাও পড়ে দেখো। পীযূষ আঙ্কেল আজ পরশুরামকে নিয়ে লিখেছেন। পরশুরামের আসল নাম কি জানতে লেখাটা তোমায় পড়তে হবে। সবশেষে এটাই বলার, ভানুপ্রিয়ার মতো যা শিখছো জানছো তাই নিয়ে লিখে পাঠাও আর  অবশ্যই শ্রীপর্ণা, তুলি আর এষণার মতো ছবি এঁকে পাঠাও। পলাশের মতো রঙীন হয়ে উঠুক ছোটোবেলার পাতা। - মৌসুমী ঘোষ।


ধারাবাহিক উপন্যাস

জয়াবতীর জয়যাত্রা
অষ্টম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক
 
১২
 
সকালে পড়ার ঘরে গিয়ে সেদিন ভালই পড়া এগোচ্ছিল। পুণ্যির মাথা যেমন, মনও খুব। সেনমশাই যা পড়া ধরছিলেন, তাই সে টকাটক উত্তর দিচ্ছিল। পড়তে পড়তে তার চোখ চলে গেল জানলা দিয়ে পেছনের মাঠে। যা দেখল, তাতে তার পিলে চমকে উঠল। মাঠে ঘুরছে একটা বিশাল পাটকিলে রঙের ঘোড়া, তার কপালে লম্বা টিপের মতো একটু শাদা। এ কার ঘোড়া? নির্ঘাত সেনমশাইয়ের। এসে ইস্তক ঘোড়া দেখেনি তো কোনদিন। অবিশ্যি কদিনই বা এসেছে। ও মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল। সেনমশাই তো পালকি চেপেই যান দূর দূর গাঁয়ে। তাদের যে ঘোড়ায় চাপার কথা বলেন, তা নেহাতই ঠাট্টা। তবে এই ঘোড়াটা কীসের জন্যে?
ওর চোখ অনুসরণ করে সেনমশাই ঘোড়াটা দেখতে পান।
‘দিব্যি ঘোড়াটা না? আরবী ঘোড়া কিনা’
পুণ্যি না জিগ্যেস করে পারে না ‘ঘোড়া দিয়ে কী হবে সেনমশাই?’
জয়াবতী মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে ‘ঘোড়ার ডিম খাবি তুই’ বলেই সে জিভ কাটে। বিধবা মানুষ, মাছই খায় না, তায়  ডিম! নিজের কথাটা ঢাকতে সে বলে ‘দেকুন সেনমশাই, পুণ্যির কি বুদ্ধি, ঘোড়া দিয়ে নাকি কী হবে? রুগি দেখতে ভিন গাঁয়ে যাবেন না বুঝি?’
‘সে তো উনি পালকি চড়েই যান’
‘এই কদিন যাই। আগের ঘোড়াটা কী এক ব্যামো হয়ে মরে গেল। ধরতে পারলুম না কী ব্যামো। তাই ভালো ঘোড়া না পাওয়া ইস্তক পালকিই ভরসা। এখন আবার ঘোড়ায় যাব। তোমরাও’
‘জলজ্যান্ত ঘোড়া ব্যামো হয়ে মরে গেল, বলেন কী? কবে ঘটল এমন?’
‘হ্যাঁ মা, ওই গেল ফাল্গুন মাসে’
‘আমি বলছি একটা গুপ্ত কতা। একদিন রামতারণ কবরেজ এসে বললে দিব্যি ঘোড়া তো তোমার দীননাথ, দূরে যেতে কত সুবিধে। ঠাকমা তো বলে রামতারণের নজর লেগেই ঘোড়াটি মরে গেল’ পানু, সেনমশাইয়ের ছেলে বলল মাঝখানে।
‘যত বাজে কথা। নাও পড়া করো। বিকেলে তোমাদের ঘোড়ায় চড়া শেখাব’
পুণ্যির পেট গুড়গুড় করে ওঠে। সে বলে ‘ঘোড়ায় না চড়লে কি কবরেজি শেখা যায় না সেনমশাই?’
সেনমশাই হেসে বলেন ‘মা পুণ্যবতী, ঘোড়ায় চড়ার সঙ্গে কবিরাজি শিক্ষার কোন সম্বন্ধ নেই। কিন্তু এ তো আর পাঁচটা পড়াশোনা নয়, যে তুমি ঘরে বসে একা বিদ্বান হলেই হয়ে গেল। তুমি তো একজন চিকিৎসক হতে যাচ্ছ, তোমার কাজ সমস্ত অসুস্থ মানুষের নিরাময় করা। আর একবার তোমার নামডাক ছড়িয়ে পড়লে দূর দূর গ্রাম থেকে ডাক আসবে। যেখানে না যাবে, তারা কষ্ট পাবে শুধু না, তোমার কর্তব্য থেকে তুমি বিচ্যুত হবে। ঘোড়ায় চড়তে জানলে তুমি অনেক মানুষকে কঠিন পীড়া, এমনকি মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারবে’
বাব্বা কি শক্ত শক্ত কথা! আসল কথা তো একটাই, ঘোড়ায় চড়ে খুব তাড়াতাড়ি রুগীর বাড়ি পৌঁছনো যাবে, তা বললেই হয়। না, যত আগড়ম বাগড়ম কথা। জয়াবতীর মাথায় অমনি একটা চিন্তা খেলে যায়। সবাই বলে নিচু জাতের মাথা মোটা, তাদের কিছু বোঝালেও বোঝে না। এইজন্যেই তাদের পড়াশোনা হয়নি। কথাটা মোটেও ঠিক না। এত শক্ত ভাষায় কথা বললে কী করে বুঝবে? জয়াবতী তো দিনরাত সমোসকিতো শুনতে শুনতেই বড় হয়েছে, সে-ই বোঝে না। অবশ্য, তাকে তো পিতাঠাকুর পড়াশোনাই শেখাননি এতদিন, শিখলে নাকি মেয়েমানুষ বিধবা হয়। হয় তো হয়। মেয়েমানুষের বাপ, মা, ভাই মরলে তো এত কথা ওঠে না, সোয়ামি নিয়ে এত মাথা ব্যথা কীসের? জন্মালে তো মানুষ মরবেই, তাতে কিচুদিন দুক্ষ হবে ঠিকই, তা বলে জীবনটাই বদলে যাবে কেন? সোয়ামি মরবে বলে পড়াশোনা করবে না মেয়েমানুষে? এটা একটা কথা হল? কথায় বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এমন হল যে পিতাঠাকুর তাকে এখানে পড়তে পাঠাতে বাধ্য হলেন। কেমন মজা! তবে এসে ইস্তক পড়ার চাপ কাকে টের পাচ্ছে জয়াবতী। তার সারাদিন মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো প্রায় বন্ধ। তবে সে ক্রমাগত সেনমশাইয়ের কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছে ‘কবরেজকে তো বনজঙ্গল থেকে লতাপাতা খুঁজে আনতে হয়, ও সেনমশাই দুপুরে খেয়ে উটে একটু নতুনপোতা  জঙ্গলটা ঘুরে আসি পুণ্যিতে আমাতে মিলে’ আর ততবারই সেনমশাই বলেছেন ‘বিলক্ষণ, তারপর সিধু ডাকাতে তুলে নিয়ে যাক তোমাদের। শোন এত কত্তামো করতে হবে না। লতাপাতা যখন আনতে পাঠাব, তখন যেও। এই দুই বছর শুধু পুথি পড়ো’ জয়াবতী মুখে আর কিছু বলতে পারেনি, কিন্তু তার রাগ হয়েছে ভেতরে ভেতরে। সে তাই এখন বলতে ছাড়ে না ‘যাই বলুন সেনমশাই, এই রকম শক্ত শক্ত কতা বোঝে কার সাধ্যি। আমি পণ্ডিত ঘরের মেয়ে, তাই বুঝি না, আর এই কতা ওই পাতু কামার, কি সনাতন কাহার কিংবা কালিন্দি ঝি বুঝবে?’
সেনমশাই জুলজুল করে চান জয়াবতীর দিকে। রামগতির মেয়েটার বুদ্ধি  প্রখর, কিন্তু সে বড় তার্কিক। অবশ্য এটা ওদের বংশের ধারা।  এই তর্ক করার জন্যেই নাকি ওদের বাড়ির দুই মেয়ে লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। এটা অবশ্য অতি অন্যায় কাজ। মেয়েদুটির কত বিপদ ঘটতে পারত। তবে তারা হার মানবার পাত্রী ছিল না, কত সাহসে বুক বেঁধে তারা পৌঁছে গেছিল কাশীতে, সেখানে টোল খুলে বসেছিল। জয়াবতীর শরীরে সেই রক্ত বইছে। সে তো তার্কিক হবেই। দীননাথ হাসি হাসি মুখে বলেন ‘ পাতু কামার, কালিন্দি ঝি কিংবা সনাতন কাহার- এরা আমার কথা বুঝলে কি লাভ? কথা দুম করে বললেই তো হল না, যুক্তি থাকা চাই’
পুণ্যি ওধার থেকে ইশারা করে মুখে মুখে জবাব না দিতে। এই গঙ্গাজলকে নিয়ে তার হয়েছে ভারি জ্বালা। কতা না কয়ে যেন থাকতেই পারে না।
জয়াবতী সে ইশারা দেখেও দেখে না। সে আঁচলটা কোমরে জড়িয়ে সেনমশাইয়ের মুখের সামনে এসে হাত নেড়ে বলে ‘এই তুচ্ছু কতাটা বুঝতে পারলেন না? লাভ আপনার। এদের বোঝার মতো ভাষায় কতা কয়ে যদি দুচারটে সোজা ব্যামোর চিকিচ্ছে শিকিয়ে দিতে পারতেন, তবে তো আপনাকেই রাত বিরেতে ছুটতে হত না। আপনারা খালি বলেন ওদের বুদ্ধি নেই। বুদ্ধি না থাকলে ওরা এত সুন্দর জাল বোনে কী করে, লাঙলই বা কী করে বানায়, মাছই বা কী করে কাটে বলুন দিকি’
দীননাথ সেন একেবারে স্তম্ভিত হয়ে যান এ মেয়ের ভাবনার গভীরতা দেখে। বড় বড় পণ্ডিতেরা যে কথা বুঝতে পারেননি, এইটুকু মেয়ে কী করে...
মুখে তিনি বলেন ‘যাও, এখন তোমাদের ছুটি। বিকেলে আমি ঘোড়াটায় চড়া অভ্যাস করব, তোমরা তখন মাঠে থেকো। আর কদিন আমি দুরস্থ হয়ে নিলে তোমরা শিখতে শুরু করবে’
জয়াবতী বলে ‘আপনি ভালো কতা মনে করালেন সেনমশাই, পুণ্যির নাম যে পুণ্যবতী আমার মনেই থাকে না। আর একটা কতা ভুলে যাব, ওই প্যাকাটির কতাটা ফেলনা নয়। নতুন ঘোড়ার কাচে রাতে যেন লোক পাহারায় থাকে’
সেনমশাইয়ের ছেলে পানু চোখ কটমট করে চায় তাকে প্যাকাটি বলায়। সেনমশাইয়ের ভুরু কুঁচকে যায়।
 ‘পাহারা? কেন? ‘
‘এখুনি কইতে চাই না। কটা দিন যাক। কিন্তু ঘোড়াকে একলাটি রাকবেন না, আপনার পায়ে মিনতি’। ( ক্রমশ)


অহিংসা পরম ধর্ম 
ভজন দত্ত

পৃথিবীর পারমাণবিক গদির ওপর বসে 
তোমরা কারা, খেলছ এমন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা! 
জানো না কি, 
পৃথিবীতে এখনো ফুল সহজ ভাবে যায় পাওয়া

ও ফুল, আয় না আমরা স্মরন করি বুদ্ধ 
তিনিই তো শিখিয়ে গেছেন অহিংসা পরম ধর্ম।


একুশে ফেব্রুয়ারী 

অমিত মজুমদার 

“কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে স্কুলে সব ক্লাস যখন চালু হয়ে গেছে তখন সমস্যা কিসের ? অন্যান্য বছর এই সময় মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকে বলে আমরা স্কুলে এই দিনটা পালন করতে পারি না। এই বছর তো পরীক্ষা নেই। চল আজকেই হেডস্যারকে বলে দেখি।” 
      “দেখ রণদেব স্কুলে আমরা হেডস্যারকে কিছু না বললেও ছোটো করে হলেও একটা অনুষ্ঠান হবেই। কারণ এই দিনটা আমাদের কাছে ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারীতেই বাংলা ভাষার অধিকার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন করে। কারণ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো উর্দু ভাষা। শহরে ১৪৪ ধারা জারি ছিলো সেদিন। সেই ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর থেকে রাজপথে বেরিয়ে এলেই তাদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়৷ রফিক সালাম বরকত সেদিন ভাষার জন্য শহীদ হয়৷ পরবর্তীতে এই দিনটাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে৷ সুতরাং স্কুলে এই দিনটা পালন হবে এটা স্বাভাবিক।” 
        “তাহলে সমস্যা কিসের ?”
        “আমি ভাবছি অন্য একটা ব্যাপার। স্কুলের অনুষ্ঠানের বাইরে গিয়ে আমরা নিজেরা কিছু করতে পারি না ?” সুমন বললো। 
      “তারমানে আমাদের কোচিং সেন্টারে ?” 
      “না ওখানে না। অন্য কোথাও।” 
      “কোথায় করবি ? অন্য কোথাও কিছু অনুষ্ঠান করার একটা প্রস্তুতি লাগে। আমাদের হাতে সময় মাত্র তিন দিন। তাছাড়া খরচের একটা ব্যাপার আছে। কে দেবে ?” 
      “এমন কিছু ভাবতে চাইছি যেখানে খরচ হবে না কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷” 
      “আচ্ছা বেশ বুঝলাম। ফাঁকা মাঠের মধ্যে অনুষ্ঠান হবে। সর্ষে তো কাটা শুরু হয়েছে। মাঠ জুড়ে সর্ষে ফুল অবশ্য নেই। তাই মাঠের মধ্যে গিয়ে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করবো।” 
        রণদেবের কথা শুনে হেসে উঠলো সুমন। বললো, “ভালো বললি৷ তোর পরিকল্পনা কিন্তু ফেলে দেয়া যায় না। মাঠে আমাদের বাবা কাকা জেঠারাই চাষের কাজ করেন। মাঝে মাঝে আমরাও যাই। ওঁদের সঙ্গে নিয়ে ভাষা দিবস পালন করলে খারাপ হয় না। চল সেটাই হবে। এবারের অনুষ্ঠান আমরা চাষের মাঠে করবো। সকালের দিকে। মানে একুশের রোদ ওঠার সাথে সাথেই। আটটা থেকে শুরু করাই ভালো হবে৷ ওই সময় সবাই মাঠে চলে আসে। আমরা কয়েক জন র‍্যালি করে মাঠে আসবো। তাঁদের অনুরোধ করে খুব অল্প সময়ের জন্য ডেকে নেবো। ধর পনেরো মিনিট। এর পর আবার র‍্যালি করে অন্য কোথাও যাবো। দেড় ঘন্টার মধ্যে গোটা তিনেক অনুষ্ঠান আমরা করে ফেলবো।” 
        রণদেব অবাক হয়ে তাকালো সুমনের দিকে। ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে৷ কাজের সময় মাঠে গিয়ে বক্তব্য শোনাতে গেলে পিঠে কিছু না পড়লেও গালাগালি যে শুনতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 
        “মাঠ ছাড়া আর কোথায় যাবি ?” 
        “বাজারে যাবো। ওখানে একটা অনুষ্ঠান হবে। আর মাঝে একটা হবে কামারশালার সামনে। ওখানে বেশ কয়েকটা দোকান আছে কিছু লোকজন পাওয়া যাবে৷ মাঠ থেকে শুরু করে বাজারে গিয়ে শেষ করবো। এক রুটে পরপর তিনটে অনুষ্ঠান হবে। রফিক সালাম বরকত।” বলে আবার হেসে উঠলো সুমন। 
        “তিনটে ? কেমন অনুষ্ঠান হবে ?” 
        “আমাদের সবার হাতে ছোটো ছোটো প্ল্যাকার্ড থাকবে। তাতে ভাষা দিবস উপলক্ষে কিছু না কিছু লেখা থাকবে। আর অদিতিকে বলবো একটা ভাষা শহীদ বেদীর রেপ্লিকা তৈরী করতে। তিন জায়গায় আমরা ওই বেদী বসাবো। ফুল দেবো বেদীতে। বড়দেরও বলবো বেদীতে ফুল দিতে। তিনটে জায়গায় তিনজন ওই দিন সম্পর্কে বলবে।” 
        “রণদেব আরও অবাক হয়ে গেলো। তিনজন ? কে কে বলবে রে ?” 
        “অদিতি, কৃষ্ণেন্দু আর তুই।” 
        “আমি ? আমাকে কোনোদিন এসব বলতে দেখেছিস ? তুই খেপেছিস নাকি ?”
        “না একদম ঠাণ্ডা মাথায় বলছি। এতদিন বলিসনি এবার বলবি। আমি ভালো করে গুছিয়ে বক্তব্য লিখে দেবো তোরা তিনজন ঝেড়ে মুখস্থ করবি। মাঠে তুই, বাজারে অদিতি আর কামারশালার সামনে কৃষ্ণেন্দু বলবে।” 
        “আর প্ল্যাকার্ড ?” 
        “সেগুলো তোর দায়িত্ব তানিয়া আর সুদেবকে নিয়ে তুই বানাবি। বয়ান আমি লিখে দেবো। তানিয়ার হাতের লেখা ভালো। ওকে দিয়ে লেখাবি। কঞ্চি কেটে স্ট্যান্ড বানাতে হবে। গোটা পাঁচেক প্ল্যাকার্ড হলেই আমাদের হয়ে যাবে। আজ সন্ধ্যায় তোদের বক্তৃতা আর প্ল্যাকার্ডের বয়ান লিখে দেবো। কালকের মধ্যে সব শেষ করে ফেলবি।” 
        “আর তুই ?” 
        “তিনটে অনুষ্ঠান আমিই সঞ্চালনা করবো। শুধু এইটুকুই। বাকি দায়িত্ব তোদের।” 
        “কিন্তু —” 
        “আর কোনো কিন্তু নয়। টিফিন শেষের ঘন্টা পড়েছে। ক্লাসে চল। পাঁচ পিরিয়ডে ভূগোল ক্লাস।”

        একুশ তারিখের সকালে মাঠ আর কামারশালার অনুষ্ঠান খুব সুন্দর উৎরে গেলো। কৃষ্ণেন্দু আর রণদেব একুশে ফেব্রুয়ারি ঝাড়া মুখস্থ আউড়ে দিলো। বলার ভঙিমাটাও ভালো হয়েছিলো। স্কুলের অনন্তবাবুকে একবার দেখিয়ে নিয়েছিলো সুমন। 
        শহীদবেদীটাও থার্মোকল দিয়ে দারুণ বানিয়েছে অদিতি। বেদী বসিয়ে তাতে গাঁদাফুলের পাপড়ি দেয়া হলো। উপস্থিত লোকজন বেশ খুশি। মাঠে সেই সময় রণদেবের বাবা উপস্থিত ছিলেন। কামারশালাটাও কৃষ্ণেন্দুর বাবার। দু'জনেরই ধারণা ছিলো তাদের ছেলেরা আড্ডা দেয়া ছাড়া আর কোনো কর্মের নয়। কিন্তু এদিন তাদের বক্তব্য শুনে তাঁরা মনে মনে গর্ববোধ করলেন। 
        সমস্যাটা হলো বাজারে এসে। ন’টার দিকে বাজারে এসে ওরা দেখলো প্রচণ্ড ভীড়। এই সময় লোকজন বেশীই থাকে। এই মুহূর্তে মাইক ছাড়া এখানে অনুষ্ঠান করা খুব কঠিন। সবজী বাজারের পাশে মাছ বাজার। চিৎকার চেঁচামেচি বেশ ভালো হচ্ছে। প্রতিদিনই হয়। আগের দুই জায়গায় লোকজন কম ছিলো তাই খুব ভালো অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু এই পরিবেশে কী করে সেটা সম্ভব ? 
        এখানে বক্তব্য রাখার কথা অদিতির। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে সে এবার বেঁকে বসেছে। বাড়িতে অনেকবার বক্তব্য প্র‍্যাকটিস করে এসেছে কিন্তু এত ভীড়ে তার কথা কেউ শুনবে না। তার ওপর ওদের কাণ্ড দেখে হাসাহাসি করতে পারে। 
        একটা ফাঁকা জায়গা দেখে তারা দাঁড়ালো। এদিক ওদিক থেকে কয়েকটা ইঁট যোগাড় করে শহীদ বেদীটা বসানো হলো। সুমন প্রথমে বলা শুরু করলো। কিন্তু একজনও সামনে এলো না। রাগের চোটে অদিতি সরে গিয়ে একটা চায়ের দোকানের সামনে পাতা বেঞ্চে গিয়ে বসলো। সুমন পাঁচ মিনিট চেষ্টা করেও পাঁচজন লোক জড়ো করতে পারলো না৷ সেও হতাশ হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ওদিকে রাগে দুঃখে অভিমানে অদিতির চোখে প্রায় জল এসে গেছে। সুমন ওর সামনে গিয়ে বললো, “দেখ অদিতি কেউ আমাদের কাজ দেখলো কি দেখলো না তাতে কি যায় আসে ? চল আমরাই শহীদ বেদীতে ফুল দিই। তারপর তুই তোর বক্তব্য বল। কেউ না শুনুক আমরা তো তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এটাই আসল।” 
        অদিতি এমন করুণ কান্না ভেজা চোখে সুমনের দিকে তাকালো যে সুমনের খারাপ লাগলো। সে আবার বললো, “আয় তুই বক্তব্য রাখ। আমরা তো শুনবো তোর কথা।” 
        “না আমি এখানে বলবো না কিছু। চারপাশে তাকিয়ে দেখ এখানে কেউ জানে না একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে কি! আমরা গ্রামে থাকি বলে এই অবস্থা। এদের কারো কাছে এই দিনটার গুরুত্ব নেই। গুরুত্ব থাকলে আমাদের প্ল্যাকার্ডগুলো দেখে কয়েকজন অন্তত এগিয়ে আসতো। কেউ আসেনি।” 
        “শোন আজকের দিনটার বিষয়ে গ্রাম শহর সব জায়গায় কমবেশি একই অবস্থা। আমরা আগের দুই জায়গায় অনুষ্ঠান করলাম সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁদেরও দিনটা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা ছিলো না। আমরা তো তাঁদের বোঝাতে পারলাম আজকের দিনের গুরুত্ব। এখানেও তাই করবো।”
        “কেউ শুনবে না এখানে।”
        “শুনুক বা না শুনুক প্ল্যাকার্ডগুলো আমরা এখানে পুঁতে রেখে যাবো। কিছুজন তো অন্তত দেখবে। সেটাই বা কম কিসের বল ? আয় দেরি করিস না। এরপরে স্কুলে যেতে হবে।” 
        অদিতি উঠলো না। সে বসেই থাকলো। পাশ থেকে বয়স্ক একজন বললেন, “ওঠো মা। আমি শুনবো তোমার বক্তব্য।” 
        ভদ্রলোক চায়ের দোকানেই চা খেতে এসেছিলেন। ওদের কথা তিনি শুনেছেন। সুমন ভালো করে ভদ্রলোকের দিকে তাকালো। মুখটা চেনা। ইনি একজন প্রাক্তন সৈনিক। কিছুদিন হলো কাজ থেকে অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। স্কুল মাঠে তিনি মাঝে দৌড়াতে আসেন। 
        অদিতি অবাক হয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকালো। তিনি আরও বললেন, “ওঠো মা দেরি কোরো না। কেউ না শুনলেও আমি শুনবো তোমার কথা। তোমাদের সঙ্গে আমিও শহীদ বেদীতে ফুল দেবো। আর তোমরা অনুমতি দিলে আমিও দু চার কথা বলতে পারি। তোমরা রেডি হও আমি এক্ষুণি কয়েকজনকে এখানে ডেকে আনছি।” বলেই তিনি চলে গেলেন। সুমন অদিতিকে বললো, “কিরে এবার বলবি তো ?” 
        অদিতি এতক্ষণ পর হেসে ফেলেছে। বললো, “হ্যাঁ বলবো। আমি দু মিনিট মনেমনে একটু গুছিয়ে নিই।” 
        অদিতি রেডি হবারর আগেই ভদ্রলোক ফিরে এসেছেন। সঙ্গে আরও পাঁচ-সাত জন লোক। তিনি এসে বললেন, “তোমাদের উৎসাহ দেখে সামনের মাইকের দোকানদার বলেছেন ওঁর দোকানের সামনে অনুষ্ঠান করলে কিছুক্ষণের জন্য মাইক সেট করে দেবেন। কোনো টাকা তার জন্য দিতে হবে না। তোমরা কি ওখানে করবে অনুষ্ঠানটা ?” 
        “হ্যাঁ অবশ্যই। দোকানের সামনে বাঁধানো জায়গাটা খুব ভালো।” অদিতি বললো। 
        এমন একটা ঘটনা কেউই প্রত্যাশা করেনি। কথাটা শুনেই তারা মনের জোর ফিরে পেয়ে আনন্দ আর উত্তেজনায় ফুটতে শুরু করেছে। সুমন কৃতজ্ঞ চোখে সেই ভদ্রলোকের দিকে তাকালো। তিনি তখন এক দৃষ্টিতে শহীদ বেদীর দিকে তাকিয়ে আছেন।


😈সাইন্স👿     

 ভানুপ্রিয়া মাহাতো
অষ্টম শ্রেণী, জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর


সাইন্স আছে সবার বাড়ির 🏠
মা'র গোছানো রান্নাঘরে 🍱
সাইন্স আছে বাবার আবার 🧔🏻
স্বপ্নের ওই চাষের ক্ষেতে । 🌾

সাইন্স আছে ছড়ানো এই ✨
সুন্দর প্রকৃতিতে 🌟
কেউ বা তাকে দেখতে পায় 👀
কেউ বা সেটা পারে না যে  ❌

কেউ বা ভাবে সাইন্স মানে 🤔
ঘোষ স্যারের লেকচার রোজ 🗣️
কেউ বা ভাবে সাইন্স মানে 🤔
নতুন কিছু আবিস্কারের খোঁজ । 🪄


কেউ বা ভাবে সাইন্স মানে 🤔
শুধুই বসে মুখস্ত পড়া📖
কিন্তু এটা আসলে তো 🛑
প্রকৃতির এক আজব খেলা । 🌎

সাইন্স মানে নতুন করে ☺️
নতুন ভাবে বাঁচতে শেখা 😊
সাইন্স মানে জীবনটাকে ♥️
সহজ সরল করে তোলা । 😇

সাইন্স মানে দূর্যোগেতে ও 😣
নতুন আলোয় বাঁচার আশা 🍁
প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে পাওয়া 🪶
এক রাশ ভালোবাসা । ❤️

স্মরণীয়
(পরশুরাম)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার 

১৮৮০ সালের ১৬মার্চ বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রাজশেখর বসু। তাঁর পিতা চন্দ্রশেখর বসু ছিলেন দ্বারভাঙ্গা রাজ এস্টেটের ম্যানেজার। তার আদি নিবাস ছিল নদীয়া জেলার বীরনগর(উলা) গ্রাম। রাজশেখর বসুর মাতা ছিলেন লক্ষীমনি দেবী। রাজশেখর ১৮৯৫খ্রীষ্টাব্দে দ্বারভাঙ্গা রাজ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৮৯৭এ পাটনা কলেজ থেকে এফ. এ. পাশ করেন। ১৮৯৯খ্রীষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্সসহ বি.এ. পাশ করেন। ১৯০০খ্রীষ্টাব্দে রসায়নে এম.এ.(তখনও এম.এসসি.চালু হয়নি) পরীক্ষা দেন ও প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯০২সালে রিপন কলেজ থেকে বি. এল.(আইন) পাশ করেন। আইনের ব্যবসা ভালো না লাগায় বিজ্ঞান চর্চাতেই মনোনিবেশ করার ইচ্ছে নিয়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৯০৩খ্রীষ্টাব্দে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস কোম্পানিতে চাকুরি জীবন শুরু করেন। তাঁর দক্ষতা ও নৈপুণ্যে অল্পদিনেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ও তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. কার্তিক বসুর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। ১৯০৪খ্রীষ্টাব্দে তিনি এ কোম্পানির পরিচালক পদে উন্নীত হন। রসায়ন ও শরীরবিদ্যার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে তিনি এক নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
      ১৯০৬খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হলে তিনি তাতে সক্রিয় অংশ নেন। ১৯২২খ্রীষ্টাব্দে 'পরশুরাম' ছদ্মনামে একটি মাসিক পত্রিকায় 'শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড' নামে একটি ব্যঙ্গ রচনা প্রকাশ করেন। শনিবারের চিঠি পত্রিকাতেও তিনি নিয়মিত লিখতেন। ছদ্মনামে ব্যঙ্গাত্মক গল্পরচনা ছাড়াও স্বনামে প্রকাশিত কালিদাসের মেঘদূত, বাল্মীকি রামায়ণের সারানুবাদ, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসকৃত মহাভারতের সারানুবাদ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, হিতোপদেশের গল্প ইত্যাদির অনুবাদগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৩৭এ রাজশেখর বসু রচিত বাংলা অভিধান চলন্তিকা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও গড্ডলিকা, কজ্জলী, হনুমানের স্বপ্ন, গল্পকল্প ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক রচনা এবং লঘুগুরু, বিচিন্তা, ভারতের খনিজ, কুটিরশিল্প প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ছিল ২১টি।
      ১৯৩৫এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বানান সংস্কার সমিতি ও ১৯৪৮সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিভাষা সংসদের সভাপতিত্বও করেন তিনি। ১৯৫৫সালে সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে 'কৃষ্ণকলি ইত্যাদি' গল্পগ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। 'আনন্দীবাঈ ইত্যাদি' গল্পগ্রন্থের জন্য ১৯৫৬ সালে ভারতের সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির বছরে সাম্মানিক ডি লিট দিয়ে ভূষিত করে রাজশেখর বসুকে। ১৯৫৬সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মান প্রদান করে। সাহিত্য কীর্তির জন্য ১৯৪০ সালে তিনি পেয়েছিলেন জগত্তারিনী পদক ও ১৯৫৫তে পেয়েছিলেন সরোজিনী পদক।
      ১৯৬০সালের ২৭ শে এপ্রিল কলকাতায় রাজশেখর বসুর মৃত্যু হয়।


ধারাবাহিক ভ্রমণ
চলো যাই (পাখিদের কাছে)
কলমে - বাসবদত্তা কদম

পর্ব ৫
সেই যে পিছনের ধানক্ষেতে যে বক দেখলাম, ঘাড় ঘুরিয়ে সে তখন মন দিয়ে পোকা খাচ্ছে টকাস্‌, টকাস্‌ করে। পোকাগুলো খেয়ে চাষীদের বেশ উপকার করে কিন্তু এরা। চাষীভাইদের এদের থ্যাঙ্কু বলা উচিত, কি বল? কী মুসকিল – হাসছ যে বড়ো! চাষের জমিতে যত্ন করে লাগানো ধান কিংবা অন্য ফসলে কত যে পোকা হয়! এই পাখিরা সেগুলো খেয়ে ফেলে, ফলে ফসলে পোকা ধরেনা। থ্যাঙ্কু তো বলাই যায় একটা। 
এরা আবার শুধু পোকা খায় না চাষের ক্ষেতের ছোট খাটো সাপ, সাপের খাদ্য ব্যাঙ এসবও খেতেই থাকে। এদের কেউ কেউ আবার দেখলাম পাশের আরেকটি মাঠে গরুর পিঠে চড়ে ঘুরছে মহানন্দে। গরুও আরামসে ঘাস চিবোচ্ছে আর এ পিঠের উপর চড়ে পোকা খাচ্ছে। এমনকি গরু যখন বসে জাবর কাটে তাদের দাঁতের পোকাও খায় দেখলাম। তারা দিব্যি মুখ হাঁ করে রাখছে আর এরা এদের খাবার খাচ্ছে।
সারা পৃথিবীতে বকেদের বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে খুব ঠান্ডার জায়গায়, বলা ভালো পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে যে দুটি অঞ্চল আছে যা উত্তর ও দক্ষিণ মেরু নামে পরিচিত; সেই মেরু অঞ্চলে বক দেখতে পাওয়া যায় না। এছাড়া সারা পৃথিবীতেই কোথাও কম, কোথাও বেশি এদের দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া মহাদেশ, অস্ট্রেলিয়া সব জায়গার কথাই বলা যায়। তবে বকেদের ভাগ অনুযায়ী কিছু কিছু জায়গায় কম বেশি হয় এদের সংখ্যা। 
তবে পৃথিবীর মানচিত্রকে যদি উত্তর ও দক্ষিণে সমানভাবে ভাগ করে ফেলো একটা লাইন টেনে সেই নিরক্ষীয় অঞ্চলে এদের প্রচুর পরিমানে দেখতে পাওয়া যায়। তবে মরু অঞ্চলের মত, মেরু অঞ্চলেও এদের খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। যদিও আমাদের দেশের রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চলে কিছু বক দেখতে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের বকের মধ্যে আমাদের দেশে, নিশি বক, বগা, বগলা এদেরই বেশি দেখা যায়। হয় জলাভূমি অথবা ধানক্ষেত এরকম জায়গায়।
সব প্রানীদের এমনকি সব গাছেদেরও নিজেদের একটা গোত্র আছে তারা যার অন্তর্ভুক্ত। মানুষ নিজেও ম্যামেলিয়া বা স্তন্যপায়ী শ্রেনীর কর্ডাটা পর্বের, হোমিনিডি পরিবারের প্রানী।  
ঠিক এভাবেই বকেরা যে পরিবারের অন্তর্ভুক্ত তা অবশ্যই পক্ষী বা পাখি। এ কি আর বলে দিতে হয়? সেই কর্ডাটার পক্ষী শ্রেনীর এদের পরিবারের নাম হচ্ছে আর্ডেইডি (Ardeidae) ভবিষ্যতে যারা এসব নিয়ে পড়াশোনা করবে, স্বাভাবিক ভাবেই এর থেকে অনেক বেশি জেনে যাবে। আমি তখন তোমাদের থেকে ক-ত কিছু নতুন জানতে পারব। হ্যাঁ নতুন, কারণ গবেষণা প্রতিদিন হচ্ছে আর তার নতুন নতুন দিগন্ত রোজ খুলে যাচ্ছে। আমরা রোজ কত কিছু নতুন জানতে পারছি। 
মাছরাঙাদের চেনা আমরা সদ্য শেষ করেছি আগের পর্বে। মাছরাঙাদের যেমন ছোট পা, ছোট গলা, ছোট শরীর, শুধু ঠোঁট দুখানা খুব পোক্ত, লম্বা আর বড়; বকেদের কিন্তু অনেকটাই উল্টো। এদের লম্বা পা, লম্বা গলা, ঠোঁট তো লম্বা আর সূচলো বটেই। কোনো কোনো বকেদের শরীরও বেশ বড় হয়। প্রচুর পালক দিয়ে ঢাকা। আমাদের আশে পাশে যাদের সব থেকে বেশি দেখা যায় তারা সাদা বক Great Egret
সাদা বক জলের মধ্যে লম্বা লোমহীন পা ডুবিয়ে এরা হেঁটে বেড়ায় জলের মাছ, ব্যাঙাচি, ব্যাঙ বা ছোট সাপ ও পোকা শিকার করার জন্য। শিকারের প্রয়োজনে এদের ঠোঁট খুব তীক্ষ্ণ লম্বা। এদের কারুর পালক চিত্র বিচিত্র, কারুর পুরো সাদা অথবা গোলাপি আভা যুক্ত হয়।
গাছের মাথায় বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে এরা। একা খুব কম থাকে। একসঙ্গে অনেকগুলো পাখি পাশাপাশি গাছে বাসা বানায়।
এদের সম্পূর্ণ পরিযায়ী বলা যায় না। খাদ্যের প্রয়োজনে এরা মধ্যম মানের পরিযায়ী। ডিম পাড়ে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। তিন থেকে সাড়ে তিন সপ্তাহ লাগে ছানাদের ডিম ফুটে বেরোতে। পুরুষ পাখির বানানো বাসায় স্ত্রী পাখি এসে ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী দুজনেই ডিমে তা দেয়। তবে প্রচুর ডিম এবং ছোট পাখি অন্য পাখি এবং হিংস্র জন্তুর আক্রমনে শেষ হয়ে যায়।
নিশি বক এই বক গোত্রেরই পাখি। ইংরেজিতে এদের বলা হয় Black Crowned Night Heron রাত্রের আকাশে হটাৎ উড়ে যাওয়া এই পাখিরা, ‘ওয়াক ওয়াক’ আওয়াজ করতে করতে উড়ে যায়। এই আওয়াজ হয়তো তোমরা কেউ কেউ শুনে থাকবে শীত বা বসন্তের সময় রাত্রি বেলায়। এই আওয়াজের কারণে এদের ‘ওয়াক ওয়াক’ পাখিও বলে। তবে কবিদের কলমে এদের নামই ‘চক্রবাক’। কি সুন্দর শব্দবন্ধ না! 
অসম্ভব ভালো দৃষ্টিশক্তি এদের। রাত্রিবেলা শিকার ধরতে এদের বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। দিনে তো হয়ই না। লম্বা গলা ভাঁজ করে চুপ করে বসে থাকে। জলের ধারে সেই যে বকটাকে বসে থাকতে দেখেছিলাম চুপ করে। মনে হচ্ছিল যেন স্ট্যাচু। হটাৎ খপাৎ একখানা শব্দ পেয়েই দেখি মুখে মাছ। শিকার ধরার ব্যাপারে এদের  দেখলেই অসম্ভব দ্রুততার সাথে গলা বাড়িয়ে খপাৎ রাতের আকাশে যখন হটাৎ উড়ে যায় সে কিন্তু খুব কম স্পিডে নয়। এদের উড়ে যাবার সময়কার গড় করলে দেখা যায় তা প্রায় ৫০-৫৫ কিমি প্রতি ঘন্টায়। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, বার্মা, শ্রীলঙ্কা এইসব দেশে প্রায় সারাবছর এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা খানিকটা স্বভাব পরিযায়ী। অথবা বলা যায় উত্তরদেশের নিশি বকেরা স্বভাব পরিযায়ী। কারণ সেই ঠান্ডা।
জলের মাছ এদের খুব প্রিয় খাদ্য। এছাড়া ছোট ছোট পোকা, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদিও। এক্ষেত্রে সব বকই একই জাতীয় খাদ্য পছন্দ করে। কিন্তু এদের বাসা জলের বা মাটির থেকে বেশ অনেকটা উঁচুতে হয়। কতটা উঁচু? সে অনেক! এমনকি বাঁশের মাথায় পর্যন্ত। (ক্রমশ)


পাঠপ্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ৭৫ পড়ে সাহিত্যিক মলয় সরকার যা লিখলেন) 

জ্বলদর্চি ছোটোবেলা সংখ্যা ৭৫ হাতে এল, যেমন প্রতি সপ্তাহেই ঠিক সময়েই আসে মৌসুমীর হাত ধরে।দরজায় কড়া নাড়ল যথারীতিই।
খুলে দেখি দাঁড়িয়ে আছে, একটি মেয়ে দড়ির উপরে। আর তার নীচে দাঁড়িয়ে আছে তার বাবা ধরণের কেউ। আমার কাছে ছবিটা অনেক অর্থবহ হয়ে ধাক্কা দিল। 
আমাদের মেয়েদের কি আমরা দড়ির খেলায় তুলে দিয়ে হাঁ করে দেখতে থাকি তার ভবিষ্যত! এটাই কি আমরা করছি না, বেশির ভাগ বাবা মা-ই? যে দড়ির খেলা থেকে অনেক সময়েই আমাদের আদরের মেয়েরা পড়ে যায়, তাল সামলাতে না পেরে, হারিয়ে যায় অন্ধকারের গর্ভে? এটাই কি ভবিতব্য! এই ভাবেই ছবিটা আমার মনে হল।

এই রকম ছবির উপর একসময় একটা গল্প লিখেছিলাম, একটি পত্রিকায়। সেখানে মেয়েটি সংসারের তাগিদে দড়িতে চেপেছিল।পরে পড়ে যায়।
যাক, সে কথা। ছবিটা অনেক কিছু অর্থ তুলে ধরে এটা বলতে পারি। সুদীপ পাত্র মহাশয়ের ছবি ও মৌসুমীর নির্বাচন অতুলনীয়।
সম্পাদকীয় নিয়ে আর কিছু বলব না স্থির করেছি, তাহলে একই কথা বারবারই বলতে হবে।একঘেয়ে ভালটাও খারাপ লাগবে।

এগোলাম জয়াবতী আর পুণ্যির সাথে। তৃষ্ণা বসাক অভিজ্ঞ লেখিকা। ভালই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জয়াবতীকে। মাঝে মাঝে ক্যাপ্সুলের মত ঢুকে যাচ্ছে অগোচরে নানা তথ্য, মারাঠার মেয়েদের শাড়ি পরা, পোষাক আশাকের নানা তথ্য, ছেলে মেয়েদের লাঠিখেলা  ইত্যাদি। দেখা যাক, কোথায় যায় ওরা।
' পাই' নিয়ে লেখাটা বেশ ভাল লাগল। মনে পড়ল, নিজের ছোটবেলা। কলেজে ঢুকে প্রথম কলেজ ম্যাগাজিনে এই পাইয়ের উপর একটা সুদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে যথেষ্ট সুনাম পেয়েছিলাম। এর উপর আমার আগ্রহটা বরাবরই ছিল। বড় অদ্ভুত জিনিস এই পাই, যদিও অঙ্কের সাম্রাজ্যে এরকম আরও বেশ কয়েকটি ধ্রুবক আছে, তাদের অনেকের রহস্যই মানুষের সঠিকভাবে অজানা।তবু এগুলো কাজ করে বড় অদ্ভুত ভাবে।বহু প্রাচীন কাল থেকেই এদের অনেকগুলোই মানুষের কৌতুহল সৃষ্টি করেছে।দশম শ্রেণীর তনয় টিকাদার একটা বড় সুন্দর বিষয় নির্বাচন করেছে, ব্যাখ্যা বা বর্ণনাও বড় সুন্দর করেছে।এরকম একটি বিষয় নিয়ে এই বয়সে ও যে এত সুন্দর একটা প্রবন্ধ লিখেছে, সেটি যথেষ্ট প্রশংসার দাবী রাখে।
বানীয়া সাহা খোকার মনে মায়ের স্নেহমায়ার কথা অল্প কথায় মন ছুঁয়ে যাওয়া ভাবে প্রকাশ করেছেন। খুব সুন্দর।
স্নেহা মণ্ডল,  সেও দেখি ছোট্ট মেয়ে।সবে স্কুল ছেড়ে কলেজের গণ্ডীতে পা রেখেছে। ভগিনী নিবেদিতা সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানিয়েছে। এগুলো সত্যিই প্রত্যেকের জানা দরকার। নতুন প্রজন্ম নানা ভাবে অতীতের মহান মানুষদের কথা বিস্মৃত হচ্ছে বা তাদের মন থেকে নানা ভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।এর ফলে তারা আজ আদর্শবিচ্যুত হয়ে দিশাহীন বা লক্ষ্যহীন। তারা বুঝতে পারছে না আদর্শ মানব কে, কাকে তারা অনুসরণ করবে।তাই আজ বড় প্রয়োজন এই সমস্ত মানুষদের কথা সকলের সামনে তুলে ধরার।একজন বিদেশী নারী কত অল্প সময়ে অজানা অচেনা দেশে এসে কত বিষয়ে যে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন, ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়।অবনীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ সকলের সঙ্গেই ছিল তাঁর সখ্য।আবার স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও পাশের মানুষ। কত কাজে যে নিজেকে জড়িয়েছিলেন, ভাবা যায় না। কত বড় ক্ষমতা থাকলে তবে এই সমস্ত উঁচুদরের গুণীমানুষের সান্নিধ্যে আসা যায় তা অনুমানেরও বাইরে।আমার মনে হয়, তাঁর মনীষার প্রকৃত মূল্যায়ন আজও আমরা করি নি।উনিও স্বামী বিবেকানন্দকে ঠিক চিনেছিলেন,  বিবেকানন্দও তাই। তাই উনি যেমন বিবেকানন্দের ভগিনী নিবেদিতা, তেমনই রবীন্দ্রনাথের লোকমাতা। অনেক কথাই এসে যায় বলতে গেলে।
যাই হোক, স্নেহা ছোট পরিসরে খুব ভাল লিখেছে।
আবার অলিভা বিশ্বাস, সেও তো মাত্র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।কিন্তু মাদার টেরিজার অল্প কথায় যে ছবি এঁকেছে, সুন্দর।তাঁর সুনাম, বদনাম দুটোরই উল্লেখ রয়েছে।শেষের লাইনগুলোয় বড় সুন্দর হয়েছে লেখাটা।
পীযূষ  প্রতিহার প্রতিবারের মতই এবারে এনেছেন অন্নদাশঙ্কর রায়কে।খুব ভাল প্রচেষ্টা।আগেই বলেছি, আমাদের দেশের এই সমস্ত জ্ঞানী গুণী মানুষেরা যে অল্পদিন আগেই ছিলেন আমাদের সঙ্গে, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম তা জানার সুযোগই পাচ্ছে না। তারা ভুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে নানা ধরণের চাপে। জ্বলদর্চি অন্ততঃ তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষমতা নিয়ে চেষ্টা করছে, এঁদের স্মৃতি জাগিয়ে রাখতে, এটা প্রশংসার যোগ্য, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
এর পর যাই বাদবদত্তার লেখায়। বাসবদত্তার কাছে মনে হয় শুধু ছোটদের নয় বুড়োবয়সে আমাদেরও অনেক কিছু জানার আছে। পুরো সেলিম আলির পক্ষীবৃত্তান্ত তুলে এনেছেন। মাছরাঙা যে কত রকমের হয় তা বেশ জানা গেল।চেন্নাই অনেকবার গিয়েছি। তবে ভেদান্থাঙ্গলে যাই নি কখনও।দেখি পরে যদি সময় হয় কখনও—। এখানকার বর্ণনা শুনে যেতে ইচ্ছা করছে। খুব ভাল বর্ণনা ও সঙ্গের ছবি।

পত্রিকার গল্পের সঙ্গে সঙ্গে আঁকা ছোটদের ছবি গুলোও বড় সুন্দর। অন্বেষা, শ্রেয়সী,  সায়নী, রোহিণী খুব ভাল এঁকেছে।
সব মিলিয়ে পত্রিকা যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
হ্যাঁ, এই সুনির্বাচন করে সুন্দর করে সাজানোর কৃতিত্ব অবশ্যই মৌসুমীর। এগিয়ে চলুক পত্রিকা।

আরও পড়ুন 
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments