সুমিত্রা ঘোষ
রানির গৃহদেবতা ছিলেন রঘুনাথ জীউ। গৃহদেবতা নিয়ে রানির মনে একবার এক বাসনা জেগেছিল। এ ব্যাপারে রানির ডান হাত স্বরূপ মথুরামোহনকে ডেকে বললেন, তাঁর বাসনা হয়েছে রুপোর রথে আরোহন করিয়ে গৃহদেবতা রঘুনাথ জীউকে রাজপথে ভ্রমণ করাবেন। এজন্য ঝকঝকে রুপোর রথ তৈরি করাতে হবে। মথুরামোহন রানি মায়ের কথা শুনে বললেন, ঠিক আছে আমি আজই বিখ্যাত সাহেব জহুরী হ্যামিলটন কোম্পানীকে অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। রানি মৃদু হেসে মথুরার কথার প্রতিবাদ করলেন। মিষ্টি গলায় বললেন, মথুর দেশি কারিগর থাকতে বিদেশীর কাছে যাবে কেন? এ ব্যাপারে সকলেই বুঝতে পারবেন শৃঙ্খলিত ভারতমাতার প্রতি রানির কতখানি দরদ। দেশীয় জিনিস, দেশীয় ঐতিহ্য বজায় রাখতে চেয়েছেন। মথুর রানি রাসমণির কথায় দেশীয় জরুরী (কারিগর) ডাকলেন। ঠিক সময় রুপোর রথ প্রস্তুত করা হল। রুপোর রথে বসিয়ে গৃহদেবতা রঘুনাথ জীউকে কলকাতার রাজপথে ভ্রমণ করানো হল। রথের দিন প্রভু রঘুনাথ জীউ-এর পেছন-পেছন রানির বাড়ির সকলে খলিপায়ে ভ্রমণ করেছিল। প্রভূত আড়ম্বরে স্নানযাত্রার দিন রথ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। রথ তৈরি করতে খরচ হয়েছিল সেকালের হিসেব মতে এক লক্ষ বাইশ হাজার একশো পনেরো টাকা। কালের বিচারে সে হিসেব অত্যাধিক একথা বলা যেতেই পারে। রথের শোভাযাত্রা সকলের নজর কেড়েছিল। রানির নাতি-নাতনি-জামাই-মেয়েরা বিভিন্ন রকম গাড়ি চড়ে ঐ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিল। কলকাতার রাজপথ লোকে লোকারণ্য হয়েছিল তার প্রমাণ ইতিহাসে আছে। এমন উৎসরের প্রধান অঙ্গ ছিল অনাথ-আতুরদের সাহায্য করা, ভোজন করানো, ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দান।
রানির ইচ্ছে হল তিনি পুরী যাবেন জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রাকে দর্শন করতে। তখনকার দিনে ভ্রমণ মানে জলপথ ছাড়া কোন উপায় ছিল না। কখনও-সখনও পায়ে হেঁটেও যাওয়া যেত তবে সেক্ষেত্রে অনেক পথ পাড়ি দিতে হত। সারদা মা দক্ষিণেশ্বর যেতেন পায়ে হেঁটে। সঙ্গে অনেকে থাকতে। পথে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হত। সঙ্গে চিঁড়ে-মুড়ি ইত্যাদি শুকনো খাবার রাখতে হত। পথে ডাকাতদলের কবলেও পড়তে হতে পথচারীদের। সারদা মাও ডাকাত দলের কবলে পড়েছিলেন দক্ষিণেশ্বরে যাবার কালে। পরে নিজের স্বভাবগুণে ডাকাতকে বাবা বলে ডেকে পরিত্রাণ পান। ডাকাত সারদামাকে পরমযত্ন সহকারে দক্ষিণেশ্বরে পৌঁছে দেন।
🍂
ক্রমশ
0 Comments