গুচ্ছ কবিতা / বিজন সাহা
পরিবর্তন
দেশ আজ দেশ নেই
দেশ হয়েছে বিদেশ
কেউবা গেছে বিদেশ চলে
কেউ বিদেশ করেছে স্বদেশ
বদলে গেছে মুখের ভাষা
বদলে গেছে কবিতা আর গান
বেশভূষাও বদলে গেছে
সত্য আর মিথ্যা এখন বদল করেছে স্থান
সবার উপর মানুষ সত্য
যে দেশে ভাই ছিল যে একদিন
ধর্ম বর্ণের জোব্বা পরে
মানুষ আজ মনুষ্যত্বহীন
মানুষ আজ মূল্যহীন
ধর্মটা তার সবার চেয়ে দামী
টিকি দাড়ির দৈর্ঘ্য প্রস্থ
মানুষটাকে সমাজে করে নামী
দেশ আর দেশ নেই
দেশ আজ আত্মাবিহীন লাশ
কেমন করে করবে বল
এই দেশেতে ভালো মানুষ বাস?
জীবন মৃত্যু
জীবন আজ হারিয়েছে তার দাম
জীবনের জায়গা যে নিয়েছে – মৃত্যু যে তার নাম
জীবন ঘুরে মুখোশ পরে হাসপাতালের দোরে
মৃত্যু তারে হাসিমুখে জড়িয়ে বুকে ধরে
জীবন আজ অবহেলিত নিজ ঘরে কারাবন্দী
ঘর থেকে তারে বের করতে মৃত্যু আঁটে নানা ফন্দি
জীবন আজ পালিয়ে বেড়ায় সকলের অগোচরে
মৃত্যু খবর প্রতিদিন আসে কাগজের পাতা ভরে
ঘুমন্ত ঈশ্বর
ঘুমিয়ে ছিলেন ঈশ্বর বাবু
কম্বলে মাথা মুড়ে
সেই কম্বলও সেদিন শুনেছি
নিয়ে গেছে কোন চোরে
মাথার বালিশ নেয় নি তো চোর
পাছে ঘুম ভাঙ্গে তাঁর
ন্যায় অন্যায় পাপ পুণ্যের
শুরু করেন বিচার
চোরেরা জানে কীভাবে করে
ঈশ্বরের তোষণ
আপাত ন্যায়ের তোষণ করে
অন্যায় প্রসারণ
ঘুমিয়ে আছেন ঈশ্বর
কাঁথা কম্বল মুড়ে
তাঁর কাছ থেকে আর কী নেবে
চোর দেখে ঘুরে ঘুরে।
বার্চের জীবনচক্র
এক যে ছিল বার্চ গাছ
ভোলগা নদীর তীরে
বছরের পর বছর সে
বাড়ছিল ধীরে ধীরে
তীব্র শীতে মানুষ যখন
জ্যাকেট বা কোট পরে
বার্চ তখন ন্যাংটো হয়ে
শীত মোকাবেলা করে
বসন্তে সে সবুজ সাজে
পরে কানের দুল
শীত বসন্ত কোন কালেই
দেখিনি তার ফুল
গ্রীষ্মে যখন নারী পুরুষ
রোদ পোহায় খালি গায়
সেই রোদে বার্চ ঝাঁকড়া চুলে
দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়
এক যে ছিল সুন্দরী বার্চ
ভোলগা নদীর তীরে
শরতে সে হলুদ মেখে
কারে যেন খুঁজে ফিরে।
পাপ পুণ্য
পাপ পূণ্যের সহজ পাঠে
ন্যায় অন্যায় গুলিয়ে যায়
তোমরা যাকে পূণ্য বল
ন্যায় বলে সেটা মানা দায়
বিধর্মী খুন পূণ্য নাকি
খুলে দেয় শুনি স্বর্গ দ্বার
সমাজের চোখে এটা অন্যায়
খুন ন্যায় মানে - সাধ্য কার
পাপ পূণ্যের জমা খরচে
মানুষের চেয়ে বড় গরু
সুজলা সুফলা বাংলার চেয়ে
উর্বরা নাকি আরবের মরু
পাপ পূণ্যের সমীকরণে
ন্যায় অন্যায় গুলিয়ে যায়
এসব ধারণা না মিলিয়ে
সমাজে শান্তি ফেরানো দায়
বিজন সাহা। জন্ম বাংলাদেশে। ১৯৮৩ সাল থেকে রাশিয়ায় বসবাস। বর্তমানে দুবনায় বসবাস। কসমোলজির উপর গবেষণা জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফোর নিউক্লয়ার রিসার্চে আর শিক্ষকতা গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফটোগ্রাফি, বই পড়া আর লেখালেখি করা - এসবই হবি।
আরও পড়ুন
0 Comments