জ্বলদর্চি

মাস্টারমশাই ও বিড়াল /সংগ্রাহক- পূর্ণিমা দাস


মাস্টারমশাই ও বিড়াল

সংগ্রাহক- পূর্ণিমা দাস

কথক-লাবণ্যময়ী দাস, গ্রাম-বেড়াজাল, থানা-নয়াগ্রাম, জেলা-ঝাড়গ্রাম


এক গ্রামে এক মাস্টারমশাই তাঁর বউ ও একটি বিড়ালকে নিয়ে বসবাস করতেন। মাস্টারমশাই বিড়ালটিকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। তাকে রোজ খাইয়ে দাইয়ে স্কুলে যেতেন। কারণ তাঁর কোনো সন্তান দিল না। একদিন মাস্টারমশাইয়ের শালা তাদের বাড়িতে আসে। তখন মাস্টারের বউ মাস্টারকে বলে -“আজ মোর ভাই আসচি। সেইজন্য ভালামন্দ  কিছো রাঁধমি। তুমে গড়িয়া নু গটে বড়ো দেখি মাছো ধরি দিও তো।” তখন মাস্টার পুকুরে জাল ফেলে একটা বড়ো দেখে রুই মাছ ধরে দেন। মাছ ধরে মাস্টারমশাই স্নান ও খাওয়া দাওয়া সেরে স্কুলে চলে গেলেন। এদিকে মাস্টারমশাইয়ের বউ সেই রুই মাছ কেটেকুটে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে ভেজে শিকায় তুলে রেখে দেয়। এদিকে বিড়ালটি শুয়ে ছিল মাচার উপর, হঠাৎ মাছের গন্ধ পেয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকল। ঘরে ঢুকে সে দেখে শিকায় মাছ তোলা আছে। তারপর বিড়াল এদিক ওদিক দেখে যে মাস্টারের বউ আসছে কিনা। কাউকে দেখতে না পেয়ে লাফ দিয়ে শিকায় রাখা মাছগুলো পাড়ে এবং সব মাছ খেয়ে ফেলে। মাছগুলো খেয়ে ফেলে আবার গিয়ে মাচার শুয়ে পড়ে। মাস্টারের বউ এসে দেখে শিকায় যে মাছগুলো রেখেছিল তার মধ্যে একটাও মাছ নেই। তখন সে বুঝতে পারে এটা কার কাজ। সে বুঝে যে এই বিড়ালটিই সব মাছ খেয়েছে। তখন সে রেগে আগুন হয়ে যায়। তারপর গ্রামের থেকে লোক ডেকে আবার মাছ ধরে মাস্টারের বউ তার ভাইকে খেতে দেয়।

🍂
ad

 বিড়াল এদিকে ভয়ে দুদিন ধরে মাচা থেকে নামার কোনো নাম ধরে না। সে মনে মনে ভাবে -"মু যদি এঠনু নামে তো মাস্টারোর বউ মোকে মারি দোবো।” মাস্টারের বউ অনেক চেষ্টা করে বিড়ালকে বাড়ি থেকে বের করার কিন্তু মাস্টারমশাইয়ের চাপে পারে না। এরপর একদিন মাস্টার স্কুলে চলে গেলে মাস্টারের বউ রাস্তায় যেতে থাকা সমস্ত স্কুলের বাচ্চাদের ডেকে বলে- “এই বিলেইটাকু তোর মেনে যদি মারি মারি খাল পারকি দেই আসু তো মু তোর মেনে কু পিঠা খাইতে দেমি।” তখন স্কুলের বাচ্চারা পিঠার লোভে ওই বিড়ালটাকে তাড়াতে থাকে। বিড়ালটা তখন ভয় পেয়ে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। আর মনে মনে ভাবে -“মু আউ এই রাজ্য রো রইমিনি বাবা।তাইনে এর মেনে মোকে মারি দোবো।” এদিকে স্কুলের বাচ্চারা বিড়ালকে খুঁজতে খুঁজতে অন্য দিকে চলে যায়। আর বাচ্চারা যাওয়ার সময় কোনো একটা বাচ্চার পেন-খাতা ভুলে রাস্তায় পড়ে যায়। তখন বিড়াল ঝোপ থেকে বেরিয়ে এই পেন ও খাতাটা তুলে নেয়। পেনটা তুলে বিড়াল কানে গুঁজে নেয় আর খাতাটা বগলে চেপে বনের দিকে চলে যায়। বনের মধ্যে তার বাঘ বুড়ি ও বাঘের ছেলেপুলেদের সঙ্গে দেখা হয়। বাঘ বুড়ি বিড়ালকে ওই পেন খাতা নিয়ে আসতে দেখে বলে-“বিলেই ভাই তুমে কেনে আসচো ।” বিড়াল প্রথমে বাঘকে দেখে ভয় পেয়েছিল। কিন্ত পরে যখন দেখে বাঘ নেই শুধু বাঘ বুড়ি আছে। তখন বিড়াল বাঘবুড়িকে বলে-“ওই বুড়ি দে খাজনা দে, মু খাজনা আদায় করতে আসচি।” তখন বাঘ বুড়ি ভয় পেয়ে বলে-“সে তো ঘরো নাইনি শিকার করতে যাইচোন, সে নাই আইনে মু কেঠনু খাজনা দেমি কও তো।” তখন বিড়াল বলে-“কে বাটে যাইচি।” বুড়ি বলে-"এই পশ্চিম বাটে যাইচোন।”  তখন বিড়াল ওই রাস্তায় বাঘের খোঁজে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর বাঘ ঘরে ফিরে আসে আর এসে বুড়িকে দেখে বলে-“কীরে বুড়ি কী হেলা? তু এইরকম মুহকু হাঁড়ি করি রোখচু কেনে।” তখন বুড়ি বলে-“বিলেই ভাই খাজনা লেইতে আসথালা।” তখন বাঘ বুড়িকে বলে- “সেই শালা বিলেইটা কে বাটে যাইচি।” বুড়ি বলে এই পশ্চিমদিকে। তখন বাঘ দৌড়ে যায় বিড়ালকে খুঁজতে। বিড়াল হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখে বাঘ তার পেছনে আসছে। তখন সে ভয় পেয়ে গাছে উঠে যায় এবং গাছের উপরই উঠে বসে থাকে। বাঘের ভয়ে গাছ থেকে নামে না। এদিকে বাঘ তাকে ধরবে বলে গাছে লাফ মারতে থাকে। আর লাফাতে লাফাতে গাছের ফাঁকে বাঘের গলা আটকে যায়। আর সেই অবস্থায় বাঘ ঝুলতে থাকে। তখন বিড়াল ফিরে এসে বাঘ বুড়িকে বলে -“ওই বুড়ি তু তো খাজনা দেলুনি, দেখবু চল তোর বরকু একা চাপড়রো গোছরো টাঙ্গি দেইচি।” তখন বুড়ি বলল-“না তুমে মিথ্যা কথা কউচো।” তখন বিড়াল বলে-“তাইনে তু দেখবু চল।” বুড়ি গিয়ে যখন দেখে সত্যিই তো বাঘ গাছে ঝুলছে। সেই অবস্থায় বাঘকে দেখে বুড়ি ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে বিড়ালের এত শক্তি। বিড়াল তখন বুড়িতে বলে-“ওই বুড়ি তু ঘর যা, আউ বাঘো যেতে শিকার করি আনচি সব মোকে দেই যা।”  বুড়ি তখন আর কিছু না বলে ঘর থেকে সব শিকার এনে বিড়ালকে দেয়। আর বিড়াল সব খেয়ে দেয়ে মহামন্দে সেই বন ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যায়।

Post a Comment

0 Comments