জ্বলদর্চি

আমার শৈশব /এ পি জে আব্দুল কালাম/(ভাষান্তর : প্রসেনজিৎ রায়)

আমার শৈশব
   
এ পি জে আব্দুল কালাম

(ভাষান্তর : প্রসেনজিৎ রায়)

আমার জন্ম তৎকালীন মাদ্রাজ রাজ্যের রামেশ্বরম দ্বীপ শহরটিতে অবস্থিত একটি মধ্যবিত্ত তামিল পরিবারে। আমার বাবা জয়নুলাবদিনের খুব বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা সম্পদ ছিল না। তা সত্ত্বেও, তিনি অসাধারণ সহজাত প্রজ্ঞা এবং প্রকৃত উদার মনোভাবের অধিকারী ছিলেন।

 আমার মা আশিয়াম্মা ছিলেন বাবার চিন্তন ও জীবন-সংগ্রামের এক আদর্শ সহযোদ্ধা। তিনি প্রতিদিন কতজনকে রান্না করে খাওয়াতেন তার সঠিক সংখ্যা এখন আর আমার মনে নেই, তবে আমি নিশ্চিত যে আমাদের পরিবারের সকল সদস্যের একসাথে যতটা খাবার খেতেন তার চেয়ে অনেক বেশি বহিরাগতরা আমাদের সাথে খেতেন।

আমি অনেক সন্তানের মধ্যে একজন ছিলাম - লম্বা এবং সুদর্শন বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণকারী একটি বেঁটেখাটো ছেলে- চেহারা-ছবি যার তেমন আকর্ষণীয় ছিল না‌। 

 ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তৈরি হওয়া আমাদের পৈতৃক বাড়িতে আমরা থাকতাম। রামেশ্বরমের মসজিদ স্ট্রিটে চুনাপাথর এবং ইট দিয়ে তৈরি এটি ছিল বেশ বড় পাকা বাড়ি। আমার কঠোর বাবা সকল অপ্রয়োজনীয় আরাম-আয়েশ এবং বিলাসিতা এড়িয়ে চলতেন। তবে, খাদ্য, ঔষধ বা পোশাকের ক্ষেত্রে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করতে তিনি কোনোরূপ কার্পণ্য করতেন না। আসলে, আমি বলব যে আমার শৈশব ছিল বস্তুগত এবং মানসিকভাবে খুবই নিরাপদ। ১৯৩৯ সালে, যখন আমার বয়স আট বছর, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। 

সেই সময় বাজারে হঠাৎ তেঁতুল-বীজের চাহিদা দেখা দেয়। কারণটা যে ঐ বিশ্বযুদ্ধ তা আমি তখন বুঝতে
পারি নি। আমি বীজ সংগ্রহ করে মসজিদ স্ট্রিটের একটি খাবারের দোকানে বিক্রি করতাম।একদিনের সংগ্রহ থেকে আমি এক আনা পারিশ্রমিক পেতাম। এক আনা-র মালিক হিসাবে এক রাজকীয় অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হতাম।

আমার ভগ্নীপতি জাল্লালুদ্দিন দাদা আমাকে যুদ্ধের গল্প বলতেন যা আমি পরে সংবাদপত্র "দিনমণি"-র শিরোনামে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। আমাদের এলাকা মূল ভূখন্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন ছিল বলে প্রথম দিকে যুদ্ধের প্রভাব তেমন পড়ে নি।

কিন্তু শীঘ্রই ভারতকে যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর পক্ষে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় এবং জরুরি অবস্থা-র মতো একটা পরিস্থিতি  তৈরি হয়। এর প্রথম অভিঘাত আমরা অনুভব করেছিলাম যখন জানিয়ে দেওয়া হল,  রামেশ্বরম স্টেশনে ট্রেন থামা বন্ধ থাকবে। এই কারণে বাধ্য হয়ে  সংবাদপত্র বিক্রেতারা রামেশ্বরম এবং ধনুস্কোডির মধ্যবর্তী রামেশ্বরম রোডে চলন্ত ট্রেন থেকে সংবাদপত্রগুলি বান্ডিল করে ফেলে দিতে হতো। 

আমার খুড়তুতো দাদা সামসুদ্দিন ছিলেন  রামেশ্বরমের একজন সংবাদপত্র বিক্রেতা। চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলা কাগজের বান্ডিলগুলি ধরার জন্য তাঁর একজন সহযোগীর প্রয়োজন ছিল আর  আমি সেই জায়গাটি পূরণ করি।

সামসুদ্দিন দাদা-র মাধ্যমেই আমার   প্রথম মজুরি অর্জন।  অর্ধ শতাব্দী পেরিয়েও, নিজের সেই প্রথম অর্থ উপার্জনের গর্বের ঢেউ আমি এখনও বুকের ভেতর অনুভব করতে পারি।

আমরা জানি সকল শিশুর মধ্যেই  উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যেগুলি নিয়ে তারা  এক-একটি নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো এবং মনস্তাত্বিক প্রেক্ষাপটযুক্ত পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে। এক্ষেত্রে বাড়ির বড়োদের একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে, তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। 

আমি এবং আমার তিন ভাই ও বোন বাবার কাছ থেকে সততা এবং আত্ম-শৃঙ্খলা উত্তরাধিকারসূত্রেই পেয়েছি।  মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি ধার্মিক মনোভাব এবং সকল মানুষের প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রকাশের মানসিকতা।

 আমার শৈশবে আমার তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল - রামানন্দ শাস্ত্রী, অরবিন্দন এবং শিবপ্রকাশন। এই ছেলেরা সবাই ছিল গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের। ছোটবেলায়, আমাদের পরিবারগুলির ধর্মীয় পার্থক্য বা আলাদা পরিবেশে বেড়ে ওঠা সত্বেও  নিজেদের মধ্যে কোনও পার্থক্য অনুভব করিনি। 

প্রকৃতপক্ষে, রামানন্দ শাস্ত্রী ছিল রামেশ্বরম মন্দিরের পুরোহিত লক্ষণ শাস্ত্রীর পুত্র,  পরে সে তার পিতার কাছ থেকে রামেশ্বরম মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। অরবিন্দন ভ্রমণকারী তীর্থযাত্রীদের জন্য পরিবহন পরিসেবা ব্যবসায় যোগদান করে আর  শিবপ্রকাশন দক্ষিণ রেলওয়ের একজন ক্যাটারিং ঠিকাদার হিসাবে যোগ দেয়। 

শ্রীসীতারাম কল্যাণম ছিল আমাদের অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য বাৎসরিক  অনুষ্ঠান।  এই সময়, আমাদের পরিবার থেকে
একটি বিশেষ মঞ্চ সহ নৌকার ব্যবস্থা করা হত, যাতে করে ভগবানের মূর্তি মন্দির থেকে বিবাহস্থলে  বহন করে নিয়ে যাওয়া যায় । 

 এই বিবাহস্থলটি ছিল আমাদের বাড়ির কাছে, রামতীর্থ নামের একটা পুকুরের ঠিক মাঝখানে।  

 আমার মা এবং দাদী আমাদের পরিবারের বাচ্চাদের ঘুমোবার আগে রামায়ণ থেকে এবং নবীর জীবনের ঘটনাগুলি থেকে
 গল্প বলতেন।  

যখন আমি রামেশ্বরম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন একজন নতুন শিক্ষক আমাদের ক্লাসে আসেন। আমি একটি টুপি পরতাম যাতে বোঝা যেত আমি ধর্মে মুসলমান এবং আমি সামনের সারির বেঞ্চে বন্ধু রামানন্দ শাস্ত্রীর পাশে বসতাম। রামানন্দ উপবীত ধারণ করত। 

নতুন শিক্ষক একজন হিন্দু পুরোহিতের ছেলেকে একজন মুসলিম ছেলের সাথে বসে থাকতে দেখে  হজম করতে পারেননি। আমাদের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী  তিনি আমাকে পিছনের বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আমি  আর রামানন্দ শাস্ত্রী দুজনেই যে এই ঘটনায় কতটা দুঃখ পেয়েছিলাম, তা বলে বোঝানো যাবে না। 

স্যারের আদেশে আমি যখন শেষ বেঞ্চে গিয়ে তখন আমার বন্ধু রামানন্দের চোখের জলে  ভাসতে থাকা মুখের ছবিটি আমার মনে একটা চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছিল। 

তাই স্কুলের পরে, আমরা বাড়ি ফিরে আমাদের নিজ নিজ অভিভাবকদের এই দুঃখজনক ঘটনাটি না জানিয়ে পারলাম না। লক্ষ্মণ শাস্ত্রী স্যারকে ডেকে  আমাদের উপস্থিতিতেই তাঁকে বললেন যে তিনি যেন নিষ্পাপ শিশুদের মনে সামাজিক বৈষম্য এবং সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার বিষ না ছড়ান।। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্যারকে বলেন, "হয় আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে নাহলে  স্কুল এবং দ্বীপ ত্যাগ করতে হবে"।

 স্যার  তাঁর আচরণের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন আর পরবর্তীতে কোনো সময়েই এই ধরণের ঘটনা আর ঘটান নি। বলা যায়, শ্রদ্ধেয় লক্ষণ শাস্ত্রীর স্পষ্টভাষণ এবং দৃঢ় বিশ্বাসের অনুভূতি অবশেষে এই তরুণ শিক্ষককে সংশোধন করে দিয়েছিল।

সামগ্রিকভাবে, রামেশ্বরমের ছোট্ট সমাজ ছিল বিভিন্ন গোষ্ঠীতে  বিচ্ছিন্ন এবং এই ভিন্নতা খুবই কঠোরভাবে পালন করা হতো। তবে, ওখানে আমার বিজ্ঞান শিক্ষক শিবসুব্রহ্মণিয়া আইয়ার-এর মতো মানুষও ছিলেন যিনি গোঁড়া ব্রাহ্মণ হয়েও নানা সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে একজন বিদ্রোহী সংস্কারকের ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হয়েছিলেন।  সামাজিক বাধা ভেঙে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন যাতে বিভিন্ন পটভূমির মানুষ সহজেই নিজেদের মধ্যে  মিশে যেতে পারে এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে যুক্ত হতে পারে। 

 তিনি আমার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাতেন। বলতেন, "কালাম, আমি চাই বড়ো হয়ে তুমি  বড় শহরের উচ্চ শিক্ষিত লোকদের সমান হও।" 

একদিন তিনি আমাকে তাঁর বাড়িতে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ভীষণ ভয় পেয়ে যান। একজন মুসলিম ছেলেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে 
সামগ্রিকভাবে, রামেশ্বরমের ছোট্ট সমাজ ছিল বিভিন্ন গোষ্ঠীতে  বিচ্ছিন্নতা এবং এই ভিন্নতা খুবই কঠোরভাবে পালন করা হতো।

 তবে, আমার বিজ্ঞান শিক্ষক শিবসুব্রহ্মণিয়া আইয়ার, যদিও একজন গোঁড়া ব্রাহ্মণ এবং অত্যন্ত রক্ষণশীল স্ত্রী ছিলেন, তিনি ছিলেন একজন বিদ্রোহী। তিনি সামাজিক বাধা ভেঙে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন যাতে বিভিন্ন পটভূমির মানুষ সহজেই মিশে যেতে পারে। তিনি আমার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাতেন এবং বলতেন, "কালাম, আমি চাই তুমি এমনভাবে উন্নত হও যাতে তুমি বড় শহরের উচ্চ শিক্ষিত লোকদের সমান হও।" একদিন, তিনি আমাকে তার বাড়িতে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। একজন মুসলিম ছেলেকে খাওয়ার নেমন্তন্ন করা হয়েছে। রান্নাঘরের ধর্মীয় পবিত্রতা আদৌ থাকবে কি নি, এই ছিল তাঁর দুশ্চিন্তার বিষয়‌। তিনি তাঁর রান্নাঘরে আমাকে খাবার পরিবেশন করতে আপত্তি জানালেন। 

শিবসুব্রহ্মণিয়া আইয়ার কিন্তু এতে  স্ত্রীর উপর একটুও বিরক্ত হননি, বা রাগ করেননি । তিনি নিজের হাতে আমাকে খাবার পরিবেশন করলেন আর আমার সাথে বসেই  খাওয়াদাওয়া করলেন। 
🍂

তাঁর স্ত্রী রান্নাঘরের দরজার আড়াল থেকে আমাদের দেখছিলেন আর আমি ভাবছিলাম যে খাওয়ার  সময় আমি যেভাবে ভাত খাই, জল খাই অথবা খাওয়ার পর যেভাবে  মেঝে পরিষ্কার করি, তাতে সে কি কোনও পার্থক্য লক্ষ্য করেছে? আমি যখন তার বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলাম, তখন শিবসুব্রহ্মণ্য আইয়ার আমাকে পরের সপ্তাহান্তে আবার তার সাথে ডিনারে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমার দ্বিধা লক্ষ্য করে তিনি আমাকে বিরক্ত না হতে বলেছিলেন, "একবার তুমি ব্যবস্থা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিলে, এই ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।" পরের সপ্তাহে যখন আমি তার বাড়িতে যাই, শিবসুব্রহ্মণ্য আইয়ারের স্ত্রী আমাকে তার রান্নাঘরে নিয়ে যান এবং নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করেন।

তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেল এবং ভারতের স্বাধীনতা আসন্ন। "ভারতীয়রা তাদের নিজস্ব ভারত গড়বে," গান্ধীজি ঘোষণা করলেন। পুরো দেশ এক অভূতপূর্ব আশাবাদে ভরে উঠল। আমি আমার বাবার কাছে রামেশ্বরম ছেড়ে রামনাথপুরমের জেলা সদর দপ্তরে পড়াশোনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে জোরে জোরে ভাবতে ভাবতে বললেন, "আবুল! আমি জানি তোমাকে বেড়ে উঠতে দূরে যেতে হবে। সিগাল কি সূর্যের ওপারে উড়ে যায় না, একা এবং বাসা ছাড়াই?" তিনি আমার দ্বিধাগ্রস্ত মাকে খলিল জিবরানের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, "তোমার সন্তানরা তোমার সন্তান নয়। তারা জীবনের নিজের জন্য আকাঙ্ক্ষার পুত্র এবং কন্যা। তারা তোমার মাধ্যমে আসে কিন্তু তোমার কাছ থেকে আসে না। তুমি তাদের তোমার ভালোবাসা দিতে পারো কিন্তু তোমার চিন্তা নয়। কারণ তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে।" ধারণায় তার স্ত্রী ভীত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তার রান্নাঘরে আমাকে পরিবেশন করতে অস্বীকৃতি জানান। শিবসুব্রহ্মণিয়া আইয়ার এতে বিরক্ত হননি, তিনি তার স্ত্রীর উপর রাগ করেননি, বরং তার নিজের হাতে আমাকে পরিবেশন করেছিলেন এবং তার পাশে বসে তার খাবার খেতে খেতেছিলেন। তার স্ত্রী রান্নাঘরের দরজার আড়াল থেকে আমাদের দেখছিলেন।

আমি ভাবছিলাম যে খাবারের পর আমি যেভাবে ভাত খাই, জল খাই অথবা মেঝে পরিষ্কার করি, তাতে  কি তিনি কোনোও তফাৎ খুঁজে পাচ্ছেন ?  

শিবসুব্রহ্মণ্যম আইয়ার আমাকে পরের সপ্তাহে আবার ডিনার খেতে ডাকলেষ। আমার মধ্যে কিন্তু কিন্তু
ভাব লক্ষ্য করে তিনি আমাকে বললেন, "এতো বিরক্ত হলে চলবে না।  তুমি একটা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চাইছ বলেই এই ধরণের সমস্যার মুখোমুখি তোমাকে হতেই হবে।"

পরের সপ্তাহে যখন আমি তাঁর  বাড়িতে ডিনারে গেলাম, শিবসুব্রহ্মণ্যম আইয়ারের স্ত্রী আমাকে তাঁর রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে   নিজের হাতেই খাবার পরিবেশন করেন।

এইসব চলতে  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেল আর  ভারত স্বাধীনতা পেল। গান্ধীজি ঘোষণা করলেন
 "ভারতীয়রা তাদের নিজস্ব ভারত গড়বে"। 

গোটা দেশে দেখা গেল  এক অভূতপূর্ব আশাবাদ। আমি আমার বাবার কাছে রামেশ্বরম ছেড়ে রামনাথপুরমের জেলা সদর দপ্তরে পড়াশোনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম। উত্তরে তিনি অত্যন্ত কাব্যিক ভাষ্যে  বললেন, "আবুল! আমি জানি তোমাকে বেড়ে উঠতে দূরে যেতে হবে। শঙ্খচিল কি সূর্যের ওপারে উড়ে যায় না, একা এবং বাসা ছাড়াই?"

আমার স্নেহশীলা মা স্বাভাবিকভাবেই আমাকে দূরে পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।

 বাবা মাকে খলিল জিবরানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, "তোমার সন্তানরা তোমার সন্তান নয়। তারা নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার পুত্র এবং কন্যা। তারা তোমার মাধ্যমে আসে কিন্তু তোমার কাছ থেকে আসে না। তুমি তাদের তোমার ভালোবাসা দিতে পারো কিন্তু তোমার চিন্তা নয়। কারণ তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে।"

( মূল উৎস:-  সিবিএসিই-র দশম শ্রেণির ইংরাজী প্রথম ভাষার টেক্সবই-এর মুদ্রিত পাঠ)

Post a Comment

0 Comments