উত্তীয় ভট্টাচার্য
বুড়ো ঘড়িটার ঢং ঢং শব্দ।
বুড়ো চৌকিদারটার কর্কশ
গলার আওয়াজ,
বয়ে আসা হিমেল হাওয়া,
আর চাঁদ আর মেঘে ঢাকা তারাদের লুকোচুরি খেলা।
এটা চৌরঙ্গী স্কোয়ার।
গগনচুম্বী আবাসনের অন্দরমহলের আলো ছায়ার বৃত্তে বুড়ো স্যার বরেন,
আর কবরখানা থেকে ফিরে আসা সেই ডোম।
' কালচে ', ' লাল ' হয়ে ওঠা
হাতের তালুর শক্ত হয়ে ওঠা
' চামড়া ',
আঙ্গুলের নখের ফাঁকে,
জমে থাকা মাটির দুর্গন্ধ
কিছুই এখন স্যার বরেনকে
নাড়া দেয় না।
নিজেকে হালকা নাড়া দিয়ে
চাপা গলায় স্যার বরেন বলে ওঠেন," তিয়াশা।"
কবরখানার ওই ডোমটাও
নিজের কাজ সেরে
এবার বেরিয়ে যাচ্ছে,
যাওয়ার আগে সে শুধু বলে গেল," স্যার বরেন, ভালো থাকবেন।"
শক্ত কাঠের চৌকাট,
হাড় হিম করা ঠান্ডা হাওয়া,
ঝকঝকে চাঁদের আলোতে,
আকাশ থেকে পড়তে থাকা চকচকে সাদা বরফের ডেলা,
আর ফিনচ পাখির গেয়ে ওঠা এক বিয়োগান্ত সুর।
🍂
স্যার বরেন এখন একা
সঙ্গী শুধু সিলিং থেকে ঝুলন্ত
লোহার মরচেপড়া চেইন থেকে ঝুলন্ত পুরোনো দামি ঝাড়বাতি,
সঙ্গী শুধু ওই জীব জন্তুর মৃতদেহ,
সঙ্গী শুধু শক্ত হয়ে ওঠা শিরার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া রক্তের স্রোত।
এই একাকীত্ব,এই নিঃসঙ্গতা,এই নিঃশব্দের
কোন ভাষা নেই।
বিষাক্ত বিছে,রক্তচোষা বাদুড় আর ' কট কট ' করে ডাকা জংলি টিকটিকি -
এরাই এখন স্যার বরেনের সঙ্গী।
"তিয়াশা,তিয়াশা তুমি কি কিছু চিনতে পারছো?"
"তিয়াশা,তিয়াশা তুমি কি
কিছু দেখতে পাচ্ছো"
কোন উত্তর এলো না।
শুধু বাড়িয়ে দেওয়া হাত,
হাতের আঙুলের ওপর চকচকে হিরের আংটি,
আর চকচকে নখ,
এর উত্তর দিয়ে গেলো।
"তুমি ভেতরে যাবে না ?"
তিয়াশার সেই বন্ধু বলে উঠলো।
আলো আঁধারির এই খেলাতে
স্যার বরেন এখন একা।
উঁচু ঘুলঘুলিতে তৈরি হওয়া ফাটল দিয়ে গলে আসা সাদা আলো,
আর উল্টোদিকে ঘুলঘুলিতে
তৈরি হওয়া ঘুঘু পাখির বাসাতে তৈরি হওয়া ফাঁক
আর তার থেকে গলে আসা খয়েরি আলো,
আর ঝাড়বাতির থেকে ছুটে আসা হলুদ আলো
এখন সব মিলেমিশে একাকার।
তিনটি বৃত্তে এক রং সমান
' কালো '।
তিয়াশা ও তার বন্ধু কি পারবে এই বৃত্তে ঢুকতে?
তারা কি পারবে এই অচেনা আলোতে মিশে যেতে?
শুধু গুন গুন করা
অজানা এক কালো ভ্রমর এর উত্তর দিয়ে গেল।
0 Comments