Posts

বিভাস মণ্ডল

Image
বি ভা স  ম ণ্ড ল  জীবঞ্জয়ী গীতবিতান সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, শয়নে-স্বপনে-জাগরণে, চেতনে মননে বাঁচার রসদ পেতে রবীন্দ্রসাহিত্যের জুড়ি মেলা ভার। মহাভাবনার উজ্জীবন মন্ত্র নিয়ে যাঁর আবির্ভাব সাহিত্যাকাশে। ঔপনিষদিক, বৈষ্ণবীয় ভাবধারার সঙ্গে সংস্কৃত সাহিত্য ও বাউল তত্ত্বের সম্মেলনে গড়ে ওঠে তাঁর সাহিত্য। স্বভাবতই রবীন্দ্র সাহিত্য যুগ থেকে যুগান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে কালজয়ী হবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।         সভ্যতার স্তিমিত দীপশিখা যখন নিভু নিভু তখনও শেষ লগ্নে মৃতপ্রায় জাতি তাঁর সাহিত্যের পাতায় ক্ষণিকের আশ্রয় নিলে নিশ্চিত মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসার সৌভাগ্য লাভ করে। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, অভাব-অনটনে মানুষ দৈহিকভাবে মারা যায় সত্য, কিন্তু চিন্তা চেতনায় ভাবনায় মননে মনুষ্যত্বে বিবেকে বুদ্ধিতে তার মৃত্যু হলে সভ্যতার অবলুপ্ত সাংঘাতিক চেহারা নেয়। এখানে দাঁড়িয়েই আশার আলো প্রাণের স্ফুরণ পেতে সাগ্রহে ধরে নিতে হবে রবি ঠাকুরের 'গীতবিতান'কে। গীতবিতানের অনাবিল সুর মূর্চ্ছনায় তার তাল লয় ছন্দের দোলায় বিশেষ করে কথায় ভাবনায় একবার যে প্রাণে দোলা জেগেছে, সে শত সহস্র বাধা উপেক্ষা করে তারই স্নেহ প

অনির্বাণ দাশ

Image
অ নি র্বা ণ  দা শ ওই মহামানব মানুষের ঐহিক জীবনে যে-সব আকাঙ্ক্ষা থাকে তার প্রায় সবই রবীন্দ্র-জীবনে অর্জিত হয়েছিল। মানুষের স্মৃতিকোঠায় চিরদিনের আসন-লাভ যদি পারমার্থিক আকাঙ্ক্ষা হয় তবে সেটাতেও সফল রবীন্দ্র-প্রতিভা। --- তাঁর গান বাঙালিকে গাইতেই হবে বলে তাঁর বিশ্বাস ছিল। আজ এই সত্য উজ্জ্বলভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর অসংখ্য কীর্তি - সাহিত্য - সমাজ - রাষ্ট্রচিন্তা - বিশ্ব নাগরিকত্ব - সমবায় গঠন - বিশ্ববিদ্যার চর্চাকেন্দ্র স্থাপন সবেতেই তিনি বিশেষভাবে সফল। আজ যখন আমাদের জীবন বিপন্ন তখনও তৃষ্ণার শান্তি খুঁজে পাই সেই সুন্দর কান্তির কাছেই। --- আমাদের ক্ষণিকের জীবনে একদিকে স্থূল ভোগলিপ্সা অন্যদিকে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম, একদিকে আত্মরক্ষা অন্যদিকে আত্মহনন। পরমাণু-যুদ্ধের বিভীষিকা, বিশ্ব-উষ্ণায়নে ও পরিবেশদূষণে সভ্যতার সংকট। নতুন নতুন মহামারীর আবির্ভাব ও মানুষের অসহায়তার এই প্রেক্ষিতে  রবীন্দ্রনাথ কী বিরাটভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। --- " ব্যাঘাত আসুক নব নব,  আঘাত খেয়ে অচল র'ব বক্ষে আমার দুঃখে বাজে তোমার জয়ডঙ্ক।    দেব সকল শক্তি, ল'ব অভয় তব শঙ্খ। " এই চরম দুর্দিনে  দুঃখ-বেদনায় য

রাজর্ষি রায়

Image
রা জ র্ষি  রা য়  এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ সমগ্র ভারতের আধ্যাত্মিক ও মানবিক চিন্তার সাকার বিগ্রহ স্বরূপ। গোটা পৃথিবীর মানব-ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন ক'টা মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়?হাতেগোনা যে কয়েকজন মানুষ, মানব-ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ অন্যতম অগ্রণী পথিক। আজ থেকে প্রায় ১০০বছর আগে 'গীতাঞ্জলি' মানুষকে পথ দেখিয়েছিল মুক্তির। আর আজ এই গৃহবন্দী মানুষের কাছে তিনি যে প্রাসঙ্গিক তা বলাই বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথ সারা জীবনে যে সত্য, শিব ও সুন্দরের আরাধনা করেছেন তাকেই তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বার বার বলার চেষ্টা করেছেন। ১৯৪১ সালে 'সভ্যতার সংকট '-এ তিনি বলছেন-  "মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে।" এই আশাতেই আমাদেরও বুক বাঁধতে হবে। আমরা তাঁর দর্শনে যদি বিশ্বাস রাখি তবে এই কালি-মাখা মেঘ একদিন কেটে যাবেই। তিনি মৃত্যুর পূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে ভয়াবহতা দেখেছ

অসীম ভুঁইয়া

Image
অ সী ম  ভুঁ ই য়া  এই সংশয়ে তিনি...   "কোথা তুমি শেষবার যে ছোঁওয়াবে তব স্পর্শমণি/ আমার সংগীতে /মহানিস্তব্ধের  প্রান্তে কোথা বসে রয়েছ, রমণী,/  নীরব নিশীথে?" রবীন্দ্রনাথ ? রবীন্দ্রনাথ ! রবীন্দ্রনাথ । মহাসংশয়ের  অমানিশায় বিশ্ব  বিপর্যয়ের সরণি বেয়ে বিশ্বজননী নয়, বিশ্বরমণী, যেন নীরবতার মৃত্যুময় পাঠে নিমগ্ন । "নদী বহি চলে প্রান্তরের শেষে," "সূর্য অস্ত যায়," "অন্ধকারে ধীরে ধীরে সন্ধ্যাতারা দেখা দেয় দিগন্তের ধারে।" বড়ই আনমনা হয়ে পড়ি আমরা ।     বাংলা কবিতার প্রধানতম স্তম্ভ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব-সংশয়ের পূর্ব বাণী কত দিন, কত বছর আগেই রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টি প্রবাহে । প্রাণের অফুরন্ত সম্পদে পরিপূর্ণ মানুষটি সমগ্র মানবসত্তা সম্পর্কেই বলে গেছিলেন হয়তো- "সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দেননি আমাকে মানুষ করে গড়তে,/ রেখেছেন আধাআধি করে।" তাই আমরা আজ ঘোরসংকটের, বেঘোর-সংশয়ের  দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মৃত্যুরই নান্দীপাঠ করছি ।  মৃত্যু পরম্পরার অদ্ভুত পথক্রমায়  হৃদয়ের শেষ সুধাটি  নিয়ে কি আমরা আরো একবার রবি ঠাকুরের প্রাণের তরী  নিয়ে মধুর উৎস

বিমল মণ্ডল

Image
বি ম ল  ম ণ্ড ল আজকের সময় ও রবীন্দ্রনাথ  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদিত মহাপুরুষ। তাঁর রচিত গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ তো বিশ্বসাহিত্যের অনন্য সম্ভার। তাই রবীন্দ্রনাথ বাঙালির  প্রাণপ্রিয়। এককথায় রবীন্দ্রনাথ মানেই বাঙালি,রবীন্দ্রনাথ মানেই তো কবিতা, কবিতা মানেই রবীন্দ্রনাথ, সাহিত্য মানেই তো কবিগুরু। তিনিই তো পৌঁছে দিতে পেরেছেন সবার হৃদয়ে সর্বকালের কথা।  রবীন্দ্রনাথ  কোনও সময়েই অপ্রাসঙ্গিক নয়। সারা বিশ্বজুড়ে তিনি সব সময়ের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো মানুষের কথা লিখেছেন। লিখেছেন মানবমনের যন্ত্রণা।কবিতায় ও সাহিত্যে  ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন  মানুষের মধ্যে জমে থাকা ছোটো ছোটো ব্যথাকে।  তিনি নিজেই ভুগেছিলেন মনোকষ্টে। সারাজীবন ধরে বারবার তাঁকে দহন করত যন্ত্রণা । তিনি যেন সবার মধ্যে থেকেও ছিলেন একা। তিনি মনে করতেন --         'চিনিলাম আপনারে           আঘাতে আঘাতে             বেদনায় বেদনায়।'     তিনি বিশ্বাস করেন যে -- প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ আর বেদনা থাকে সারাটা জীবন। তবে তিনি  সবার আগেই   মন থেকেই বুঝতে পারতেন ঈশ্বরের স্বরূপ এককথায় তিনিই ঈশ্বর স্বরূপী।  

রূপককুমার হাতী

Image
রূ প ক কু মা র  হা তী তোমার সৃষ্টিরা থাকে জেগে ‘অবগাহনই করিলাম,কিন্তু কূল পাইলাম কী?’ না! কূল পাইনি। শৈশবের আলো-আঁধারির মধ্যেই বাঙালির পরিচয় ঘটে প্রাণের ঠাকুর-রবি ঠাকুরের সাথে। কিন্তু আমৃত্যু অনুসন্ধানেও অধরাই থেকে যান –স্বভাব কবি। ‘রবীন্দ্রসাহিত্য সাগরের উপকূল’-এ পৌঁছানো হয়ে ওঠে না। ফরাসী দার্শনিকদের লেখনী সে দেশের জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিল--অত্যাচারের প্রতীক ‘বাস্তিল’ দূর্গের পতন ঘটাতে। দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের ভয়ঙ্কর তাণ্ডবলীলা,জঠরাগ্নি,মৃত্যুর নিশ্চিত হাতছানিকে উপেক্ষা করে,কবি সুকান্তকে বাঁচার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল--'রবীন্দ্রসাহিত্য’। কবির কথায়-“মনের গভীর অন্ধকারে তোমার সৃষ্টিরা থাকে জেগে।"         যত দিন যাচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রা ততই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। মানুষের মধ্যে লোভ-লালসা-হিংসা স্বার্থপরতা-ধর্মান্ধতা প্রভৃতি অপগুণগুলি বাসা বাঁধছে। মানুষ নিঃসঙ্গতা-অবসাদে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কাজ-কর্ম দিনেদিনে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে অপসংস্কৃতি গ্রাস করে ফেলছে ‘জাতির সম্পদ’--যুব সমাজকে। ফলে তারা নানারকম অসামাজিক কাজ-কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এই ধ্বংসের হাত থেকে গোটা জাতিক

কেশব মেট্যা

Image
কে শ ব  মে ট্যা আঁখি নাই বাঁধি নাই 'আঁধার রজনী আসিবে এখনি মেলিয়া পাখা,  সন্ধ্যা- আকাশে স্বর্ণ- আলোক পড়িবে ঢাকা।'  জীবন নিয়ে  এই সংশয়, এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের আলো আঁধারী যে খেলা চলছে পৃথিবীময়, তা কি সকল মানুষের! কিংবা এই মৃত্যু ভয়, তাও কি এই প্রথম? মানুষের অসহায়তার  শুরু কি এই ? রবিঠাকুরের আগে মানুষ কি বাঁচতো না? তবে কি সেই বাঁচা, বাঁচা ছিল না? আচ্ছা এই সময়ে রবিঠাকুর কি সকলের কাছে আছেন?   এই যে লকডাউনে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পথে বেরিয়ে পড়েছিল তাদের ঘর তাদের  উৎসের উদ্দেশ্যে, জীবনের কাছে এই আবেদন এই জোর নিয়ে --  'উৎস উঠিতেছে যেথা সে গোপন পুরে  আমায় লইয়া যাও - রাখিয়ো না দূরে। ' সেই ঘরে কি রবিঠাকুর ছিলেন ? সেই নিজের ঘরে কি তাদের খিদের ফুরান ছিল? তাহলে কেন মৃত্যুভয় কে তুচ্ছ করে বেরিয়ে পড়া! এতোদিন যে ছাদ  তার রক্তঘামের পরিশ্রমের সাক্ষী , সে ছাদ দুর্দিনে তার আশ্রয় হতে পারল না! নিজের রাষ্ট্র তার খিদে মেটায় না, দেয় না অধিকাংশের শুশ্রূষার অধিকার। সেখানে রবিঠাকুর তো সো কলড ভদ্রলোকের আনন্দ মনখারাপের উৎযাপনের সঙ্গীমাত্র।  'বিপদে আমি না যেন

অনুপ মাহাত

Image
অ নু প মা হা ত এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ এই সময় বলতে আমি বর্তমান সংকটের  সময়কে বলতে চাইছি। ঘরবন্দী আছি। দরজা জানালা বন্ধ করে আছি। এ অবস্থায় ক্রমশ খুলে যাচ্ছে মনের জানালা দরজাগুলো। সব একাকার হয়ে যাচ্ছে। সব সীমানা যাচ্ছে ভেঙে। দেশ জাতি ধর্মের মতো আবেগগুলো কেমন যেন হাল্কা হয়ে আসছে। সারা বিশ্বকে মিলিয়ে দেওয়ার সংকল্প নিয়েছে যেন এক অদৃশ্য শক্তি। ইতিহাস অনেক যুদ্ধ-মৈত্রীর সাক্ষী। কিন্তু বিশ্বকে একটি মিলন ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার মহৎ উদ‍্যোগ কই? পারমাণবিক শক্তি, অস্ত্র, অর্থের মাধ্যমে বিশ্বে রাজ করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা কই? মানব সভ্যতার অগ্রগতি কি কেবল বস্তুগত? কেবল ব‍্যক্তিগত ? নিশ্চিতরূপে না। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবিকতা। আর এখানেই এসে পড়ে রবীন্দ্রনাথের কথা। তাঁর কাছে সারা পৃথিবী একটাই দেশ। মানুষকে কোথাও একটা তো মিলতেই হবে। তাই বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা তিনি-ই করতে পারেন। তিনি-ই বলতে পারেন এমন কথা -- 'সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া;/ দেশে দেশে মোর দেশ আছে, আমি সেই দেশ লব যুঝিয়া।' কিন্তু আমরা কী দেখছি!  দেখছি সংকটকালেও অপরকে শায়েস্ত

নরেন হালদার

Image
ন রে ন  হা ল দা র  অস্তিত্বের অনুভূতি রবীন্দ্রনাথ অনেকদিন ঘুমের পরে জেগে উঠে দেখেছি আমি একা। ঘুম মানে স্বপ্ন মানে পাওয়া মানে শরীরের প্রতি রোমকূপে বিদ্যুৎ শিহরণে তার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া। স্বীকৃতি সেই ঈশ্বরের যার গালভর্তি সাদা লম্বা দাড়ি, মাথাভর্তি সাদা লম্বা চুল। ঠাকুর বলে অনেকেই তাঁকে পুজো করে।       জীবনকে ভালোবাসতে চাই, যেমন করে মর্ত হয়ে ওঠে স্বর্গ। জীবন যন্ত্রণার অলংকারগুলি সজ্জিত করে তার সভা। এ সভায় বারে বারে ফিরে আসতে চাই তাঁকে অনুসরণ করে। স্থিতির মধ্যে চঞ্চলতা আর সুখের মধ্যে ইচ্ছে করে ডেকে আনা অশান্তির পুষ্পিত গোলাপ। 'এবার ফিরাও মোরে'।       অমিত কি বলতে চাইছে - ঘড়ায় তোলা জল নাকি দিঘি? দুটোই। আর নিয়মবদ্ধ জীবনে পঞ্চকের বিদ্রোহ? সেও তো জীবনের আরেক পথ। ভেঙে ফেল আমার প্রাচীর। এ আশ্রয় নাকি অস্তিত্বের অনুভব। সংশয় নাকি তৃপ্তি। আমি বুঝি না, সে বোঝায় আমাকে। আমি ঘুমাই, নিশ্চিন্ত।     'বড় আমি' হতে চাই, কে দেখাবে পথ?  ছোটোর আমি থেকে যাত্রাপথের সেতু অদৃশ্য। ধরবো কিভাবে? একটি ব‌ই। সে কেবল সহযাত্রী। যখন ঘুম থেকে উঠে খুঁজি আমার আশ্রয়, আম

রাকেশ সিংহ দেব

Image
রা কে শ সিং হ  দে ব রবীন্দ্রচেতনায় পরিবেশ ও মানবসভ্যতা আজ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলছে মানবসভ্যতা। নেপথ্যে করোনা ভাইরাসের রক্তচক্ষু না প্রকৃতির প্রতিশোধ তার যাবতীয় হিসেবনিকেশ আজ স্পষ্ট। পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে একুশ শতকে মানবিক বোধোদয়ের পরিধি কতটুকু বেড়েছে তা নিয়ে নিজেরাই যথেষ্ট সন্দিহান !    ভাবতে বিস্ময় জাগে, আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে কিশোরবেলায় বাবার সাথে ট্রেনে চেপে যেতে যেতে রাঢ় বাংলার লালমাটির বুকে প্রকৃতির শান্তিনিকেতনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এক ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। বিশ্বমানব হয়েও জীবনের সায়াহ্নে সেই লালমাটিয়া শান্তিনিকেতনে কাটিয়েছিলেন আশ্রমিক জীবন। এভাবেই পৃথিবীর বুকে মহামানবদের আবির্ভাব ঘটে যাঁদের চিন্তাভাবনা, দর্শন নির্দিষ্ট সময়বৃত্তের বাইরে হয়ে ওঠে সর্বকালের। যাঁরা বিশ্বাস করেন জীবনের যা কিছু প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি তা নির্ধারণ করে প্রকৃতি পরিবেশের সাথে আমাদের আচরণ। কবিগুরুর পরিবেশ চেতনা ও মানবসভ্যতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটি ছিল এই বিশ্বাসের উপর। শান্তিনিকেতনের আবাসিকদের নিয়ে ওঁনার 'বৃক্ষরোপণ উৎসব', 'বর্ষাবরণ উৎসব' সেই আস্থাশীল পরিবেশ চেতনার শাশ্বত বার্তা দিয়ে আসছে।

বিশ্বজিৎ সাহু

Image
বি শ্ব জিৎ  সা হু  বাঙালি-বৃক্ষের শেকড় রবীন্দ্রনাথ বাঙালি-বৃক্ষের শেকড় রবীন্দ্রনাথ । জিন । বংশগতির অত্যাবশ্যক সত্তা। বেঁচে থাকার জরিয়া । মানুষ দু'ভাবে বাঁচে।পেটে আর মনে। রবীন্দ্রনাথ মনের উপাদান । রসদ সংগ্রহের মাধ্যম । পরিস্থিতি অনুকূল হোক বা প্রতিকূল । একমাত্র অবলম্বন তিনি । স্বয়ং ঈশ্বর হবেন । নয়তো ঈশ্বরের দূত।' আজি হতে শতবর্ষ পরে'-ও অমর । জীবনের সর্বশেষ সীমা অতিক্রম করে তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। ।  'অকারণে অকালে মোর পড়ল যখন ডাক...তখন তিমিরগহন রাতি ।' সময়টা খারাপ । সাল ২০২০ । টি টোয়েন্টির জমানা।  হয়ত বিষ, কেবলই বিষ ! নয়ত বিষে বিষে বিষক্ষয় । প্রতি ১০০ বছরের সাইকেলিক অর্ডার। আশ্চর্য !  অতিমারীতে ভুগছে  পৃথিবী। এ অতিমারীর নাম করোনা। শ্রুতিমূলকভাবে চিনোদ্ভুত ভাইরাস । প্রকোপ সুদূরপ্রসারী । নির্মম । শেষ কথা মৃত্যু ।  'মরণের মুখে রেখে দূরে যাও দূরে যাও চলে।' স্বজন হারানোর এ কী অসহ্য যন্ত্রণা ! এন্টিডোর নেই ! প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান দেওয়ালে পিঠ রেখে অসহায় ! গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত । শেষ কোথায়? ' অশ্রুভরা বেদনা দিকে দিকে জাগে ' । 'এ ভাঙা সুখের মাঝে ' ভারতে

রামকৃষ্ণ মহাপাত্র

Image
রা ম কৃ ষ্ণ  ম হা পা ত্র  এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ "বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা বিপদে আমি না যেন করি ভয়। দুঃখতাপে-ব‍্যথিত-চিতে নাই বা দিলে সান্ত্বনা দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।" এ-কথা বলেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। যিনি আমাদের কাছে অনন্ত আশ্রয়। এক অনাবিল দীর্ঘ শীতল ছায়া। পথ ভ্রমণের শেষে ক্লান্ত পথিক যেখানে দু'দণ্ড প্রাণের আরাম পায়। সুখ, দুঃখ, শোক, যন্ত্রণায় রবীন্দ্র-সৃষ্টির কাছে বারবার নতমস্তকে ফিরে ফিরে আসি আমরা। সুদূরের নৌকা ভিড়াই। এই ঘোর সংকট-সময়ে রবীন্দ্রনাথই আমাদের আশার বাণী শোনান। পথ দেখান ক্রমমুক্তির। আমাদের আত্মপ্রত‍্যয়কে জাগ্রত করেন। আসলে রবীন্দ্রনাথের সমস্ত সৃষ্টির মনোভূমি জুড়েই রয়েছে আশাবাদ ও বিশ্বমানবতাবোধের গভীর দর্শন। যা আমাদের এই অস্থির সময়ে বেঁচে থাকার অন‍্যতম শুশ্রূষা। রবীন্দ্রনাথ তো আমাদের চেতনা। অন্ধকারে আলোর দিশারী। সংকট মোচনের আরেক নাম। তাঁর সৃষ্টির নিভৃত চর্চায় ঘটে মানবসভ‍্যতার ব‍্যধিমুক্তি। পৃথিবীর গভীর, গভীরতর অসুখ এখন। বিশ্বনিখিল জুড়েই সর্বগ্রাসী মৃত‍্যুভয়, আমাদের চিন্তা ও চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ক্রমশ। হৃদয় আড়ষ্ট হয় বারবার, এই সময়ে। তবু

রাজকুমার আচার্য

Image
রা জ কু মা র  আ চা র্য রবীন্দ্ররচনা  মনন তৈরির 'মন্ত্র', পরম আশ্রয় কেউ কি মরতে চায় এই সুন্দর ভুবনে? উত্তরটা সবার জানা, "মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে..." বর্তমানের সংশয় জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে ভেবেছি, পেয়ে যাব একদিন, "আমার পরাণ যাহা চায়..." কিন্তু কেউ কি কখনও ভেবেছি, এমন দিন আসবে যে,  মৃত্যুভয় এমনভাবে ঘিরে ধরবে আমাদের! গৃহবন্দি এই নিভৃতবাস কে কবে কোথায় দেখেছে! দেখিনি কেউ। জানি না কেউ।  আচ্ছা ভেবে দ্যাখ মন, রবীন্দ্রনাথ  কতটা আশ্রয় আমাদের এই সংশয় জীবনে? ওই শোন, ভোরের আলোর সাথে গেয়ে ওঠে গান পাশের বাড়ির গৃহবন্দি কিশোরী, "এসো হে বৈশাখ এসো এসো..." আহা, সব সংশয় যেন দূর হয়ে যায়। আসবে বৈশাখ। বৈশাখ মানে নতুন ভোর, বৈশাখ মানে আলোর দিশা, বৈশাখ মানে যেন শঙ্কাহীন পথ চলা।  মননের অনুশীলন না করলে আমরা যেকোনও কাজে একটা সীমানার পর আর এগোতে পারি না, খাঁচাবন্দি কাকাতুয়ার মতো। যে কিছু কথা রপ্ত করে নিয়ে আমাদের মন জয় করে নেয়। কিন্তু সামান্য কিছু কথাতেই আটকে থেকে যায়। আমরাও কাকাতুয়ার মতো আটকে থেকে যাব যদি মনন তৈরি করতে না পারি। সেই মনন তৈর

রীতা দেব বেরা

Image
রী তা  দে ব বে রা এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ       রবীন্দ্রনাথ বাঙালির শয়নে, স্বপনে, চিন্তনে , মননে। রবীন্দ্রনাথ সর্বত্র। বাঙালির নিত্য জীবনের অঙ্গ রবীন্দ্রনাথ। সুখেদুঃখে , আনন্দ-উল্লাসে যেখানেই  খুঁজেছি প্রাণের ঠাকুরকে আমরা সেখানেই পেয়েছি ।   আজ বিশ্ব করোনা ভাইরাস নামক মৃত‍্যু মহামারির মুখোমুখি। এর আগেও বিশ্ব মহামারি দেখেছে , কিন্তু তা ছিল দৃশ‍্যমান । সহজেই রোগের উপসর্গ দেখা যেত । বিজ্ঞান যত উন্নত হয়েছে , রোগের ধরনও পাল্টেছে ততটাই। সে এখন অদৃশ‍্য শত্রু। যাকে খুঁজে বার করতেই সময় , অসময়ে পরিণত হয়েছে। এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতেও আমরা রবীন্দ্রনাথকে পাই তাঁর  লেখনীর মধ‍্যে দিয়ে , --  " আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে   প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস , যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেড়িয়ে এলো অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করলে দিনের অন্তিম কাল "। যেন তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন দিনের অন্তিমকাল আগত। গুপ্ত গহ্বরের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার কতটুকু ক্ষমতাই বা আছে মানব জাতির ।   এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে যখন আমরা জীবনের নতুন পথ অনুসন্ধান করি -- সে পথ বাঁচার পথ , মুক্তির পথ , আশ্রয়ের পথ। আর তখন  বিশ্বকবির

পৌলোমী ভট্টাচার্য

Image
পৌ লো মী  ভ ট্টা চা র্য  আমাদের আকাশ সময় জুড়ে ওলটপালট হাওয়া।  বারবার পাল্টে যাওয়া মুহূর্ত। উত্তরাধুনিক অভ্যাস। অফিস বাড়ি, টুইটার হোয়াটসঅ্যাপের নীল সবুজের খেলায় অনুরাগ বীতরাগের ঝড়ঝাপটা। গলায় টাই ঝুলিয়ে যে পুঁচকে চোখ কচলাতে কচলাতে ভোর ছটায় পুলকারে ওঠে, সে জানে না 'আঙিনা' কি! 'আঙিনা' মানে 'উঠোন ' বলে দিলে সে জিজ্ঞাসা করে 'উঠোন 'কি? কারণ সে উঠোন দেখেনি! ৯০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে কাঁথা থেকে হামাগুড়ি দিতে দিতে তার প্লে স্কুল! সেখানে  উঠোনই বা কী! আর সেই উঠোনে  বসে পড়া "চিঠি"রই -বা মানে কী!  জন্ম থেকে তো তার স্টাডি মেটেরিয়াল 'মেল' করেছে স্কুল টিউটোরিয়াল। মায়ের মন খারাপ হতে দেখেছে বটে! কিন্তু,"বাবার চিঠি হাতে/চুপ করে কি ভাবিস বসে ঠেস দিয়ে জালনাতে" , ....তার কাছে দুর্বোধ্য। তাকে এসব বোঝাতে হয় আলাদা করে। তবু একটা বিরাট আকাশ ঝুঁকে থাকে রোজ আমাদের মাথার ওপরে। সকাল থেকে সন্ধে। আমরা চলি, সেও চলে। সকালের ঘোড়দৌড় সন্ধের ক্লান্তি অ্যালকোহলে চুবিয়ে নেয় সারা দিনের হিসেবনিকেশ। আকাশটা তখনও তৈরি তার তারাদের নিয়ে। আম

ভবেশ মাহাতো

Image
ভ বে শ  মা হা ত  বর্তমান সংশয় জীবন ও রবীন্দ্রনাথ সব চাইতে দ্রুত গতিসম্পন্ন বস্তু মনের এহেন খারাপ অবস্থা দেখে শরীর আর কীভাবে ভালো থাকে? পৃথিবীর আজ গভীর অসুখ, সে নিজেও জানে না নিবারণের উপায়। যেখানে সারা পৃথিবী আজ সঙ্কটের গহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত সে জায়গায় আমি তো এক ক্ষুদ্র জীব মাত্র। একটা সময় ছিল শুধুমাত্র নিজেকে বাঁচালেই বেঁচে যেত এই পৃথিবী, কিন্তু আজকের পরিস্থিতি বলছে কাকে ছেড়ে আপনি কাকে বাঁচাবেন? সারা পৃথিবীকে বাঁচাতে পারলে তবেই আপনি নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। তাই মনখারাপ ব্যাপারটা এখন মানুষের পায়ের জুতোর মতো, গায়ের জামার মতো। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো এসবের থেকে মুক্তির উপায় কী? আত্মহত্যার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ-ই কি এর একমাত্র পথ, না'কি সময়ের অপেক্ষা করতে করতে দিন গোনা? প্রথমটার জন্য রাষ্ট্র আমাকে সম্মতি দেবে না। আর দ্বিতীয়টির জন্য শরীর। তাই মনখারাপ অবধারিত।      তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গভীর জীবন দর্শন আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। তাঁর সেই গান "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে"- মনে অফুরন্ত শক্তি আর সাহস জোগায়। নিজেকে বলতে ইচ্ছে করে চর

সন্দীপ দত্ত

Image
স ন্দী প  দ ত্ত রোদ্দুরে ভেসে যাক সমস্ত পৃথিবী বাঁচার স্পৃহাটা আমাদের আজকের নয়। সভ্যতাকে যেদিন থেকে বুকে নিয়েছি, রোদ্দুরের ওম্ মাখতে ইচ্ছে করেছে বার বার। সে যেমন আলো হয়ে চলার হোঁচট থেকে বিরত করে, ভেজা বাতাসকে শুষ্ক করবার মন্ত্রও আছে তার। রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে রোদ্দুর সম।     দিশেহারা আমরা আগেও হয়েছি। বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত হৃদয়কে মুচড়ে দিয়েছে, পরাধীনতার যন্ত্রণা স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে গতি, মন্বন্তরের করাল গ্রাস আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে ফাঁদ পেতেছে। সেইদিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথের অভয়বাণী আমাদের মনোবল বাড়িয়েছিল। আমরা উঠে দাঁড়াবার শক্তি পেয়েছিলাম। ঘুরে দাঁড়াবার সাহস। সেদিনও ছিল বিশ্বজুড়ে কালো মেঘের দাপাদাপি। দানব হয়ে নেমে এসেছিল দুর্দিন। আমরা আকুল কণ্ঠে হাত বাড়িয়ে চেয়েছিলাম রবিকিরণ। কেননা, মেঘলা পথে হাঁটা যায় না।     আজ আবার একটা দুর্দিন। থমকে যেতে চাইছে আমাদের পা। মেঘ নামাচ্ছে আঁধার। তাই রোদ্দুরের প্রার্থনা করি। সে এসে আমাদের অন্তর প্রকৃতির অঙ্গনজুড়ে আলোর আলপনা আঁকুক। আমাদের ভেজা হৃদয়কে শুষ্ক করবার মন্ত্রণা দিক কানে। আমরা যে বাঁচতে চাই !     বাঁচতে গেলে হাঁটতে হয়। হাঁটতে গেলে নামতে হবে প