ভবেশ মাহাতো
ভ বে শ মা হা ত
বর্তমান সংশয় জীবন ও রবীন্দ্রনাথ
সব চাইতে দ্রুত গতিসম্পন্ন বস্তু মনের এহেন খারাপ অবস্থা দেখে শরীর আর কীভাবে ভালো থাকে? পৃথিবীর আজ গভীর অসুখ, সে নিজেও জানে না নিবারণের উপায়। যেখানে সারা পৃথিবী আজ সঙ্কটের গহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত সে জায়গায় আমি তো এক ক্ষুদ্র জীব মাত্র। একটা সময় ছিল শুধুমাত্র নিজেকে বাঁচালেই বেঁচে যেত এই পৃথিবী, কিন্তু আজকের পরিস্থিতি বলছে কাকে ছেড়ে আপনি কাকে বাঁচাবেন? সারা পৃথিবীকে বাঁচাতে পারলে তবেই আপনি নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। তাই মনখারাপ ব্যাপারটা এখন মানুষের পায়ের জুতোর মতো, গায়ের জামার মতো। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো এসবের থেকে মুক্তির উপায় কী? আত্মহত্যার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ-ই কি এর একমাত্র পথ, না'কি সময়ের অপেক্ষা করতে করতে দিন গোনা? প্রথমটার জন্য রাষ্ট্র আমাকে সম্মতি দেবে না। আর দ্বিতীয়টির জন্য শরীর। তাই মনখারাপ অবধারিত।
তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গভীর জীবন দর্শন আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। তাঁর সেই গান "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে"- মনে অফুরন্ত শক্তি আর সাহস জোগায়। নিজেকে বলতে ইচ্ছে করে চরৈবতি। তাঁর 'গোরা' উপন্যাস রাজনীতি ও ধর্মের দার্শনিক বিতর্কে সমৃদ্ধ। কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরা যখন পরেশ বাবুকে বলেন- "আপনি আমাকে আজ সেই দেবতার মন্ত্র দিন, যিনি হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান-ব্রাহ্মণ সকলেরই..... যিনি ভারতবর্ষের দেবতা।" গোরার অন্তরে মাতৃভূমির প্রতি ভক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মনোভাব সুস্পষ্ট। যা কেবল রবীন্দ্রনাথ-ই পারেন। তাঁর গল্প-কবিতা-উপন্যাসের মূল সুর মানুষের জীবনবোধ, সীমার মধ্যে অসীমকে খুঁজে পাওয়া। আজও এই দুঃসময়ে রবীন্দ্রনাথ পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারি, নিজেকে সংযত করতে পারি, এ আমার পরম সৌভাগ্য।
------
Comments
Post a Comment