জ্বলদর্চি

বিশ্বজিৎ সাহু


বি শ্ব জিৎ  সা হু 

বাঙালি-বৃক্ষের শেকড় রবীন্দ্রনাথ


বাঙালি-বৃক্ষের শেকড় রবীন্দ্রনাথ । জিন । বংশগতির অত্যাবশ্যক সত্তা। বেঁচে থাকার জরিয়া । মানুষ দু'ভাবে বাঁচে।পেটে আর মনে। রবীন্দ্রনাথ মনের উপাদান । রসদ সংগ্রহের মাধ্যম । পরিস্থিতি অনুকূল হোক বা প্রতিকূল । একমাত্র অবলম্বন তিনি । স্বয়ং ঈশ্বর হবেন । নয়তো ঈশ্বরের দূত।' আজি হতে শতবর্ষ পরে'-ও অমর । জীবনের সর্বশেষ সীমা অতিক্রম করে তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। । 

'অকারণে অকালে মোর পড়ল যখন ডাক...তখন তিমিরগহন রাতি ।' সময়টা খারাপ । সাল ২০২০ । টি টোয়েন্টির জমানা।  হয়ত বিষ, কেবলই বিষ ! নয়ত বিষে বিষে বিষক্ষয় । প্রতি ১০০ বছরের সাইকেলিক অর্ডার। আশ্চর্য !  অতিমারীতে ভুগছে  পৃথিবী। এ অতিমারীর নাম করোনা। শ্রুতিমূলকভাবে চিনোদ্ভুত ভাইরাস । প্রকোপ সুদূরপ্রসারী । নির্মম । শেষ কথা মৃত্যু । 

'মরণের মুখে রেখে দূরে যাও দূরে যাও চলে।' স্বজন হারানোর এ কী অসহ্য যন্ত্রণা ! এন্টিডোর নেই ! প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান দেওয়ালে পিঠ রেখে অসহায় ! গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত । শেষ কোথায়? ' অশ্রুভরা বেদনা দিকে দিকে জাগে ' ।

'এ ভাঙা সুখের মাঝে ' ভারতে লকডাউন চলছে । সোশ্যাল ডিস্টেন্স জরুরি। মেন্টাল নয়। করোনা চেন ব্রেকআপের এটিই নাকি মোক্ষম দাওয়াই । 'আজ খেলা ভাঙার খেলা।' মেরামতের কাজ চলছে অবাধে । পৃথিবী, প্রকৃতি আর সম্পর্কের । 'আমি সংসারে মন দিয়েছিনু , তুমি ', গোছের প্রশ্নের যে উত্তর প্রগতিশীল মানুষ হারিয়ে ফেলেছিল কর্মব্যস্ততায় ; 'আয় তবে সহচরী' বলে পুনরায় জেগে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছে 'ওরে নূতন যুগের ভোরে '। সেখানেও আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ । 
জীবন অনেক উপন্যাসের সমাহার । মিলনান্তক সমাপ্তি অপ্রতুল । বলা ভালো 'শেষের কবিতা'-র মতো অসমাপ্তিতেই সমাপ্তি । সমাধানহীন আতঙ্কের মধ্যে 'আলোকের এই ঝরনাধারা'  বা 'আনন্দধারা'-ই তো হতে পারে এন্টিবায়োটিক । এ দুঃসময়েও তাই রবীন্দ্রনাথ সমানভাবে প্রাসঙ্গিক । গোটা বিশ্বের কাছে এখন দুটো পথ খোলা । 'মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান' বলে হাল ছেড়ে দেওয়া । নতুবা জৈব রাসায়নিক নিয়ে মানুষমারা দানবের যে ঘৃণ্য চক্রান্ত তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা ---
'নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস--
বিদায় নেবার আগে তাই 
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে ।'
--------

Post a Comment

0 Comments