জ্বলদর্চি

গুচ্ছকবিতা / সৌমিত্র শংকর রায়চৌধুরী


সৌ মি ত্র  শং ক র  রা য় চৌ ধু রী

আলোকফেনা

১.                   
কতদিন পরে আবার রোদ্দুরে হাঁটবো
বুকভরা আনন্দে, বড়ো রাস্তায় নির্ভয়ে,
মুখচাপা খুলে বোশেখের এ তীব্র গরমে,
ঘরে ব'সে ক্রমশ ভারসাম্য হারানো মন
বর্ণময় ক'রে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টায়;
পৃথিবীর যাবতীয় অসুখ সেরে গেলে
বন্ধুর ডোরবেলে হাত ছোঁয়াবো ভালোবাসার,
বাজার ঘুরে কিনে আনবো রকমারি জিনিস;
বসবো চাঁদনি রাতে তারার মেলার নীচে
দু'হাত ছড়িয়ে, হেলান দিয়ে পার্কের বেঞ্চিতে,
জেগে উঠবে কবিতারা মগজের তরলে,
বালকের মতোই খেলবো হাততালি দিয়ে।

                  
২.
কবেকার পুরোনো খোলা হাসি তোমার,
অবসন্ন মানুষের ঘুমে ফিরে আসো,
কানে কানে ডেকে বলো, কবিতা শোনাও,
শরীর ঝুঁকে দেখো, হাত রাখো কপালে;
সারা আসমান জুড়ে দমকা বাতাস
ধুলোয় ভরিয়ে দেয় সোহাগী চাদর,
চন্দনরঙা যৌবন ম্যারাপ বাঁধে
আবরণহীন বুকের চেনা পাঁজরে,
ঝড় থেমে গেলে বৃষ্টি নামে অঝোরে
ধুয়ে যায় সব বিষ এ মহানিখিলে।
জনতার ঘামে ভেজে পিচ্ছিল মাটি,
রাজপথ ঢেকে যায় আলোর ফেনায়।

                 
৩.
অনিরুদ্ধ স্মৃতি আর স্বপ্নে
রোজ রাতে ঘুম আসে শরীরের,
মেঘধ্বনি কখনো বা মধ্যযামে
বিনিদ্র শয্যার ঘোর তমসায়;
চারপাশে দীর্ঘ আয়নারা হাঁটে
নীরবতার মায়াবী সান্নিধ্যে,
প্রতিবিম্ব মাথা নাড়ে লাবণ্যে
অপার্থিব অনুভূতির গন্ধে,
এসরাজের ললিত সুর ভাসে 
আঁকাবাঁকা ছায়াশীল তরঙ্গে,
সামুদ্রিক আঁধারেও জোছনারা
হাতছানি দেয় নতুন সূর্যের।

                  
৪.
নিকষ আঁধারেও ছায়ারা দোলে
অমাবস্যার নরম চাদরে,
রঙহীন পারাওঠা আরশিতে
ওঠে আর নামে সরল নিয়মে
ভালোমন্দের অলস মই বেয়ে,
স্বপ্নেরা ঝিমোয় চিৎ হয়ে
দমবন্ধ সভ্যতার অন্দরে,
অচেনা লাগে জন্মগত শ্বাস,
কানামাছি খেলে পুরোনো শৈশব
এক চিলতে রোদ্দুরের তল্লাশে;
রাতশেষে আসে নির্জন ভোর,
পাখিরব ঘন্টাধ্বনি আজানে
সাত ঘোড়ার সোনালী রথে চ'ড়ে
আলোরা ফোটে নির্মল আকাশে।
সবুজ চা'এর সুবাস ভাসে
গার্হস্থ্য আঁচলের প্রভাতী সুরে।

Post a Comment

0 Comments