জ্বলদর্চি

সৌমেন রায় ও সঞ্জীব ভট্টাচার্য-র অণুগল্প

সৌমেন রায় ও সঞ্জীব ভট্টাচার্য-র অণুগল্প 

হাড়িভাঙ্গা
সৌমেন রায়

 দরজার শব্দ পেয়ে বৃদ্ধা বলে ওঠে, ‘কে এলি  রে, সুজি?’ উত্তর দেয় না সুজাতা। কিছু একটা খুঁজতে থাকে। 
‘কি খুঁজছিস লা সুজি?’
‘তোমার অত কথার দরকার কি গো? চুপচাপ  বসে থাকনা !’
 বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনটি পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছে সুজাতা ।আগামীকাল ওপেন ইভেন্ট হাড়িভাঙাতেও  তার পুরস্কার চাই। প্র্যাকটিস করতে বেরিয়ে যায় হাড়ি আর লাঠি হাতে।
 বাঁধা চোখে সব রাস্তা বেঁকে যায়,ওঠে হাস্যরোল। সুজাতা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, পা মেপে দেখে নিয়েছে দূরত্ব।চোখ বেঁধে  একপাক ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতেই কেমন সব এলোমেলো হয়ে গেল । গুলিয়ে গেল দিক, দিগন্তও।খানিক থমকে এগিয়ে গেল পা মেপে।  চাপা হাসি চারপাশে। তিনটা পুরস্কার পেয়েও সুজাতার মনটা খারাপ। প্রিয় বন্ধু সাহিনা  পিঠে হাত রাখে , ‘তিনটে পুরস্কার তো পেয়েছিস।‘ কোন উত্তর নেই।
 বাড়ি ঢুকেই অন্ধ  ঠাকুমাকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে সুজাতা। মেডেলগুলো বড্ড বিবর্ণ লাগে।

একা
                     
সঞ্জীব ভট্টাচার্য 


সরকারি উচ্চপদস্হ  কর্মচারী  দিব্যেন্দু সেন। মধ্য বয়সী। একমাত্র সন্তান  কর্মসূত্রে বাইরে।ঘরে কেবল স্বামী আর স্ত্রী। একটু একটু করে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি যেমন ব্যস্ত আত্মীয়-স্বজনও তেমনই। প্রায় একা থাকতে থাকতে একাকিত্বে মানিয়ে নিয়েছেনতিনি। দিব্যেন্দু অন্তত  নিজে সেরকমটা ভাবেন। 

ঠিক এরকম সময়েই আমন্ত্রণ।তার ফেলে আসা বাসভূমিতে অনুষ্ঠান।  অনেকদিন পর জন্মস্থানের গন্ধে বিভোর হয়ে পড়লেন দিব্যেন্দু। দেখলেন চলে যাওয়া সময়ে অনেককে  হারিয়েছেন তিনি, আবার অনেককে  পেলেনও নতুন করে। যাদের মধ্যে বড় হয়েছিলেন তাদের একটা বড় অংশ তার চতুর্দিকে হারানো দিন, হারানো সুখ- দুঃখ নিয়ে হাজির। কখন যে দ্রুত কয়েকটা দিন  পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারলেন না। 

এবার ফেরার পালা। কবে যে আবার সকলের সঙ্গে দেখা হবে। ঝাপসা চোখে দিব্যেন্দু নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলেন সত্যিই কি তিনি  একাকিত্বে মানিয়ে নিয়েছিলেন?

🍂
ad

Post a Comment

0 Comments