জ্বলদর্চি

নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাস/মৌসম মজুমদার

নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাস


মৌ স ম  ম জু ম দা র 

‘লে মারচান্ড দে লা মরট্ এস্ট মরট্’ অর্থাৎ ‘দ্য মার্চেন্ট অফ ডেথ’ বা ‘মৃত্যুর ব্যবসায়ী’। হ্যাঁ, এটাই তাঁর উপাধি। ডায়নামাইট, ব্যালাস্টিক, বফোর্স কামানের আবিষ্কর্তা সুইডেনের নাগরিক স্যার আলফ্রেড নোবেলের জীবনের শেষ অধ্যায়ে ১৮৮৮ সালে তাঁর ভাই লাডভিগের মৃত্যুর পর ফ্রান্সের এক সংবাদপত্র ভুল করে আলফ্রেডের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করে এই ভাবেই যে, ‘পূর্বের চেয়ে অনেক দ্রুত অনেক মানুষকে মারার রাস্তা আবিষ্কার করে ধনী হওয়া ‘মৃত্যুর ব্যবসায়ী’ আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যু হলো’। এই ঘটনার পর তিনি এক মানসিক যন্ত্রণায় কাটাতেন যে, এতদিনের বিজ্ঞান সাধনার পরেও মানুষ তাঁকে হয়তো মনে রাখবেন একজন সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারক ও সেগুলির বিক্রেতা হিসাবে বা মৃত্যুর ব্যবসায়ী রূপে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর কোনো উত্তরাধিকারীও ছিলো না। ফলে তখনই তাঁর মনে হয় এমন কিছু একটা করা উচিত, যাতে সবাই তাঁকে ‘মৃত্যুর ব্যবসায়ী’ নয়, একজন ভালো মানুষরূপে মনের মণিকোঠায় স্থান দেন। তখনই নিজের নামে নোবেল পুরস্কার প্রদানের কথা মাথায় আসে এবং সেইমতো তিনি ১৮৯৫ সালে ফ্রান্সে এক উইল করে যান, যেখানে তাঁর মোট সম্পত্তির ৯৪% নোবেল পুরস্কারের জন্য একটি নির্দিষ্ট ট্রাস্টকে দান করে দেন। সেই সময় যার মূল্য ছিল ৩১,২২৫,৫০০ সুইডিশ ক্রোনার। এই উইল অনুযায়ী, প্রতিবছর পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, শরীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শান্তি- এই পাঁচটি বিভাগে মানবজাতির কল্যাণে নিয়োজিত সারাবিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাহিত্যিকদের অবদানের জন্যে এবং বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে নিয়োজিত ব্যক্তি বা সংস্থাকে পুরস্কৃত করা হবে তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কারে। আর এই পুরস্কারের মাধ্যমে সুইডেনের অন্যতম শিল্পপতি, আবিষ্কারক এবং সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারী তথা ব্যবসায়ী আলফ্রেড নোবেলকে সারা বিশ্বের মানুষ মৃত্যুর ব্যবসায়ীরূপে নয়, সারাজীবন শ্রদ্ধার আসনে রাখবেন। অর্থনীতি বিভাগে নোবেল পুরস্কার ১৯৬৮ সাল থেকে নোবেলের ত্রিশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সুইডেনের সেন্ট্রাল ব্যাংক চালু করেন।
মজার ব্যাপার হলো ১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর, স্ট্রোকের কারণে যখন তিনি মারা যান, তখন তিনি ফ্রান্সের অগোচরে ইতালিকে ব্যালাস্টিক বিক্রির কারণে ফ্রান্সের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তিস্বরূপ প্যারিস থেকে (১৮৯১ সালে) বিতাড়িত হয়ে ইতালির স্যানরিমোতে বসবাস করতেন। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের না জানিয়েই তিনি তাঁর অগাধ সম্পত্তি নোবেল ট্রাস্টিবোর্ডে দানের উইল করে যান। ১৯০০ সালের ২৬ জুন নোবেল পুরস্কার প্রদানের সংগাঠনিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলি স্বচ্ছ ও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানরূপে ‘নোবেল ফাউন্ডেশন’ স্থাপিত হয়। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, শরীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞান সাহিত্য--এই চারটি বিভাগের পুরস্কার প্রদান করা হয় সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অবস্থিত ‘স্টকহোম কনসার্ট হল’-এ এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং ঐদিনই নরওয়ের রাজধানী অসলোতে অবস্থিত ‘অসলো সিটি হল’-এ নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় ১৯৯০ সাল থেকে। এর পূর্বে যথাক্রমে নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্টে (১৯০১-১৯০৪), ‘নরওয়েজিও নোবেল ইনস্টিটিউট’-এ (১৯০৫-১৯৪৬), এবং অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ল’য়ের অডিটরিয়ামে (১৯৪৭-১৯৮৯) এই পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান হতো। নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপকরা নরওয়ের রাজার উপস্থিতিতে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যানের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন, কিন্তু বাকি চারটি বিভাগের পুরস্কার প্রাপকরা সরাসরি সুইডেনের রাজার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
আলফ্রেড নোবেল তাঁর উইলে অন্য বিভাগগুলির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করে গেলেও, শান্তি পুরস্কার নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নীতি নির্ধারণ করে যেতে পারেননি। অ্যালফ্রেড নোবেলের  অন্যতম শিষ্য বার্থা ভন সাট্টনর, যিনি নিজেও ১৯০৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন, তিনিই সারা বিশ্বে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের বিনাশ ঘটিয়ে শান্তি স্থাপনের উদ্যোগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতেই শান্তি পুরস্কার প্রদানের যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করেন। তবে এখনোও স্পষ্ট নয় যে সুইডেনের অধিবাসী নোবেল কেন শুধুমাত্র শান্তি পুরস্কারের দায়িত্ব সুইডেনের পরিবর্তে নরওয়েকে দিয়ে গিয়েছিলেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকদের নির্বাচনের দায়িত্ব নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে দিয়ে থাকেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার মূলত তাদেরকেই প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে বা যাঁরা বা যে প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করবেন বা বিশ্বজুড়ে ‘পিস কংগ্রেস’ প্রমোশনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করবেন বা যুদ্ধের সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করবেন। 
‘এই বছরের শান্তি নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে নোবেল কমিটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চাইছে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ খিদের জ্বালায় মরছে’- নোবেল কমিটি চেয়ারম্যান বেরিট রেইস অ্যান্ডারসন সম্প্রতি অসলোয় ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করার পর কথাগুলো বলেন। আসলে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম তিনটি উপাদানের প্রধানই হল খাদ্য। আর এই খাদ্যের যোগানকে প্রাধান্য দিয়ে ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্র্যাম’ বা ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ প্রতিষ্ঠানটি এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতে নিলেন। নোবেল কমিটির মতে খাদ্যসুরক্ষাকে শান্তির উপকরণ হিসেবে এই সংস্থাটি ব্যবহার করে শুধু সফলই হননি, ২০১৯-এ ৮৮ টি দেশের প্রায় ৯ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম এই মানবতাবাদি সংগঠন নোবেল কমিটির কাছ থেকে এই পুরস্কার জিতলেন। তারা পাবেন এগারো লক্ষ ডলার অর্থাৎ প্রায় আট কোটি টাকা পুরস্কারমূল্যসহ সোনার মেডেল। ২০১৯ সালে প্রায় সাড়ে তেরো কোটি মানুষ অনাহারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লড়াই করেছিলেন, সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে যা ছিল সাম্প্রতিককালের মধ্যে সর্বোচ্চ আর যার মূল কারণই ছিল যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ। আবার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি এগারোজন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ না খেয়ে রাত্রে ঘুমাতে যান এবং সার্বিক ভাবে সেই সংখ্যাটা প্রায় ঊনসত্তর কোটি। বর্তমানে করোনা অতিমারীর কারণে আগামী এক বছরে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মৃত্যুমুখে পতিত হবেন এমনকি সাত থেকে দশ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন বলে মনে করছেন এই সংস্থা। 

এ বছর পয়লা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ১০৭টি সংগঠনের পাশাপাশি, ২১১ টি ব্যক্তিগত মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিলো। মজার ব্যাপার হলো ২০১৭ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পই ডেভিড বিসলেকে ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্র্যাম’-এর প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর সেই বিসলেরই সংগঠন এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের লড়াইয়ে ট্রাম্পকে হারিয়েই পুরস্কার পেলেন। ডেভিড কিছুদিন আগে বিশ্বের কোটিপতিদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তারা যদি বর্তমানে বা ভবিষ্যতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্যের হাত না বাড়ান, তাহলে চলতি বছরেই সাতাশ কোটিরও বেশি মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাবেন। এবছরের শান্তি নোবেল পুরস্কার যেন সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দিল।

১৯০১ সালে বাকি চারটি বিভাগের নোবেল পুরস্কারের সংগে প্রথমবার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয় যুগ্মভাবে ‘আন্তর্জাতিক রেডক্রস’-এর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সুইজারল্যান্ডের হেনরি ডুরান্টকে এবং ‘ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে প্রথম ‘ইউনিভারসাল পিস কংগ্রেসে’র প্রধান আয়োজক ফ্রান্সের ফ্রেডরিক প্যাসিকে। ১৯০১ সাল থেকে এই পুরস্কারের প্রচলন হলেও ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক বছর কিন্তু এই পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯১৪, ১৯১৫, ১৯১৬ এবং ১৯১৮ সালে এই পুরস্কার প্রদান বন্ধ থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৩ সালে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। এছাড়া ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৮, ১৯৩২, ১৯৪৮, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৭২ সালেও পুরস্কার প্রদান করা হয়নি যোগ্য প্রার্থীর অভাবে। অর্থাৎ মোট ঊনিশবার এই পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল।
এখনো পর্যন্ত ১০৯ জন ব্যক্তিগতভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছেন। এদের মধ্যে ১৭ জন মহিলা (সবকটি বিভাগ মিলে মোট ৫৮ জন মহিলা নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন)। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মহিলারা হলেন- ১৯০৫- বার্থা ভন সাট্টানার (অস্ট্রিয়া), ১৯৩১- জানে অ্যাডামস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ১৯৪৬- এমিলি গ্রীন ব্লাঁ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ১৯৭৬-মেইরেড মাগুইরে এবং বিটি উইলিয়ামস (উত্তর আয়ারল্যান্ড), ১৯৭৯- মাদার টেরিজা (ভারত), ১৯৮২-আলফা মিরডাল (সুইডেন), ১৯৯১- আঙ সাঙ সু কি (মায়ানমার), ১৯৯২- রিগোবার্তা মেন চু (গুয়েতেমালা),  ১৯৯৭- জোডি উইলিয়ামস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ২০০৩- শিরিন এবাদি (ইরান), ২০০৪- ওয়াংগারি মাথাই (কেনিয়া), ২০১১- লেমা গোবওই, এলেন জনসন সারলিফ (লাইবেরিয়া) এবং তাওয়াক্কোল কারমান (ইয়েমেন), ২০১৪- মালালা ইউসাফজাই (পাকিস্তান), ২০১৮- নাদিয়া মুরাদ (ইরাক)। 

২০২০ সাল পর্যন্ত ২৫ টি সংস্থা নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছে, যথাক্রমে- ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ল (বেলজিয়াম)-১৯০৪, পারমানেন্ট ইন্টারন্যাশনাল পিস ব্যুরো-১৯১০, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস (সুইজারল্যান্ড)- ১৯১৭, ১৯৪৪, ১৯৬৩, ন্যানসেন ইন্টারন্যাশানাল অফিস ফর রিফিউজি-১৯৩৮, দা কোয়ার্ক-১৯৪৭, অফিস অফ দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার অফ রিফিউজি -১৯৫৪, ১৯৮১, লীগ অফ রেডক্রস সোসাইটি- ১৯৬৩, ইউনিসেফ-১৯৬৫, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন- ১৯৬৯, অ্যামেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৭৭,  ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অফ নিউক্লিয়ার ওয়ার- ১৯৮৫, ইউনাইটেড নেশনস পিস কিপিং ফোর্সেস- ১৯৮৮, পাগওয়াশ কনফারেন্স অন সায়েন্স অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার-১৯৯৫, ইন্টারন্যাশনাল আর্মি টু ব্যান্ড ল্যান্ডমাইনস-১৯৯৭, মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ার্স (সুইজারল্যান্ড)-১৯৯৯, রাষ্ট্রপুঞ্জ -২০০১, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি-২০০৫, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক (বাংলাদেশ)-২০০৬,  ইন্টারগভর্ণমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-২০০৭, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন -২০১২ (সুইজারল্যান্ড), অর্গানাইজেশন ফর দা প্রহিবিশন অফ কেমিক্যাল উইপন্স (নেদারল্যান্ড)-২০১৩, ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ারটেট (তিউনিসিয়া)-২০১৫, ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবলিস নিউক্লিয়ার উইপন্স-২০১৭, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম -২০২০। এদের মধ্যে ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস’ (সুইজারল্যান্ড) সংস্থাটি তিনবার এবং ‘অফিস অফ দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার অফ রিফিউজি’ সংস্থাটি দু’বার নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছে। আবার দেশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরাই বেশিবার এই পুরস্কার জয় করেছেন।
তবে শান্তি নোবেল পুরস্কারের নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে এই পুরস্কার নির্বাচন অনেকাংশেই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মিখাইল গোরভাচেভ, ইঝ্যাক রবিন, সিমন পেরেস, মেনাচেম বেগিন, ইয়াসের আরাফাত, লে ডুক থো (পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন), হেনরি কিসিংগার, জিমি কারটার, আল গোরে, লিউ জিয়াওবো, ব্যারাক ওবামা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্তি যতেষ্ঠ বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলো। আবার ১২০ বছরের ইতিহাসে লে ডুক থো হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে বহু যোগ্য ব্যক্তি পুরস্কার পাননি, যাঁদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর নোবেল শান্তি পুরস্কার না-পাওয়াটা সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ২০০৬ সালে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সেক্রেটারি গেইর লান্ডেস্টাড এক বিবৃতি দিয়ে জানান, নোবেল পুরস্কারের ১০৬ বছরের ইতিহাসে নোবেল প্রাপকদের তালিকায় মহাত্মা গান্ধির নাম না থাকাটা সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি জানান গান্ধিজী নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯, ১৯৪৭ এবং তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে ১৯৪৮ সালে  অর্থাৎ মোট পাঁচবার মনোনয়ন পান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে একবারও পুরস্কার লাভ করেননি। ১৯৮৯ সালে দালাই লামা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে, নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বলেন ‘মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পুরস্কার অর্পণ করা হলো।

তবে এটা স্বীকার করতে বাধা নেই, বর্তমানের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধনিরস্ত্রীকরণসহ শান্তিস্থাপন, বেকারত্ব সমস্যা মেটানো, দারিদ্র‍্যদূরীকরণসহ জলন্ত সমস্যাগুলির সমাধানের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমশঃ এই পুরস্কার যথেষ্ঠ অর্থপূর্ণ হয়ে উঠছে।
----------------
আরও পড়ুন। 

Post a Comment

0 Comments