জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (গুচ্ছ কবিতা)/ইলা চ‍্যাটার্জ্জী


২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা || গুচ্ছ কবিতা 
ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু 
ইলা চ‍্যাটার্জ্জী

"ইচ্ছে ডানা"

হঠাৎ করে নতুন হাওয়ার  ছন্দে
কি যে করি ভেবে না পাই
পরেছি আমি ধন্দে। 
হাওয়ার  মাতন দেখে
মনটা ওঠে মেতে
উড়তে ইচ্ছে করে আমার 
তারই সঙ্গেতে। 
আমার তাকে সঙ্গে নিয়ে
এদিক থেকে ওদিক
পাহাড়,নদী,সাগর
ঘুরে বেড়াব চারদিক। 
ভয় পাবনা উড়তে উড়তে
দূর দেশেতে গিয়ে
মনের সুখে থাকবো দুজন
আমি আর সে। 
মিটিয়ে নেব তাকে নিয়ে
স্বপ্ন ছিল যত
কেউ পাবেনা খুঁজে মোদের
চেষ্টা করেও শত। 
হাওয়া কে আমি বলে দেব
আর কখনও না বয়তে
সময় হয়ে গেলেও
আমায় ছেড়ে পারবেনা আর যেতে।।


 "স্রোতস্বীনি"
 
নদী তুমি এমন করে আর
 নদী হয়ে বয়বে কতদিন!
মিথ্যে আশায় জীবনটাকে  আর
মিথ্যে স্বপ্ন দেখাবে কতদিন!
যে ভালোবাসার গর্বে 
বয়ে দিচ্ছো নিজেকে
সে ব্যাবহারের ভঙ্গি 
বুঝবে আর কবে?
তুমি সুন্দর,তাইতো সবাই 
আসে তোমার কাছে। 
কোথাও যদি হারিয়ে  যাও
তাইতো থাকে পাছে পাছে।
 মনের আগুন জ্বললে সবাই 
নেভাতে আসে তোমার বুকে
কেউ কি ভাবে কোন আগুনে
মরছো তুমি ধুকে ধুকে। 
শান্ত তুমি শীতল তুমি
নেইকো কোন আবদার,
দেওযার আছে নেইকো চাওয়ার
তাইতো তুমি হও সবার। 
সুনাম টুকু শুনবে বলে 
সব সয়ে যাও মুখটি বুজে
আদৌ কি সেই সুখটা আছে
দেখেছো কি কখনো খুঁজে। 
চোখের জল চাপতে চাপতে
যখন যায় বাঁধ ভেঙে
একুল ওকুল ঘর বাড়ী
ভেসে যাও সঙ্গে নিয়ে,
গালি দেয় তখন সবাই 
রাক্ষসী ভয়ঙ্করী——
কেউ ভাবে না এর কারন
আমরাই  যে অত্যাচারী। 
মিথ্যে সুনাম আর
মিথ্যে ভালোবাসার  আশায়
আর দেখোনা মিথ্যে স্বপ্ন
নিজেকে ভালোবাস এবার।।


 "বিন্দুতে সিন্ধু দেখা"
 
আমি আজ পথ হারানো ক্লান্ত পথিক
প্রেমের পাথার খুঁজতে খুঁজতে 
পরেছি এসে মরুভূমিতে। 
মরীচিকার ঝলক দেখে
ভুল করেছি সাগর ভেবে। 
পিছন ফিরে তাকায় নিকো
এগিয়ে গেছি ভ্রমের টানে। 
চলতি পথে কাঁটার বেড়া
পারেনি আমার পথ আটকাতে। 
তপ্ত বালিতে পুরেছে পা
কাঁটার আঁচরে ছিঁড়েছে গা। 
ঝরা রক্তে ভিজেছে মন
তবুও পাওয়ার আশা সারাক্ষন। 
সামনের ঝলকানি দেখে
দিক বিদিক ঞ্জান না রেখে
ছুটে গেছি তারই দিকে। 
ভেবেছি এবার ঠিকই পেলাম
দুহাত ছেড়ে তারই বুকে ঝাপিয়ে দিলাম
কোথায় যেন হারিয়ে  গেলাম। 
আজ যখন ক্লান্ত আমি
চক্ষু খুলে তাকিয়ে দেখি
চারিদিকে ধূ——ধূ মরুভূমি। 
আত্মীয় নেই,বন্ধু নেই——
তপ্ত বালি,কাঁটাগাছ ,আর আমি। 
উত্তাপ আর কাঁটার জ্বালায় অবসন্ন। 
কোথাও জল নেই,ঝাপ দেব
নেই পাহাড় যেখান থেকে লাফ দেব
নেই আগুন যাতে দগ্ধ হয়ে যাব। 
আছে শুধু জীবনী শক্তি 
তাই তো বাঁচতে চাইছি। 
চাতক কন্ঠে দুফোঁটা জল পেলে
বাঁচবো আবার সব কষ্ট ভুলে। 
এখন দু হাত দিয়ে বালি খুঁড়ে তুলে
জল খুঁজছি মাটির তলে। 
জানি এখান থেকে যে টুকু পাব
বিশুদ্ধতা থাকবে তাতে। 
আর যা কিছু ছেড়ে দিলেও 
বাঁচার জন‍্য এটুকু তো হবেই পেতে। 
পাওয়ার ছিল অনেক কিছুই
সব কিছু হারিয়ে  গেছে
মুক্ত আমি দাঁড়িয়ে আছি
আকাশ আর মরু মাঝে। 
ব্যার্থ হল জন্ম তবুও
জীবনটা তো বেঁচে আছে।।

 "স্বপ্ন"

রূপকথারা ডাকছে দুহাত  বাড়িয়ে
একছুটে তাই বেরিয়ে  পরি
যা কিছু দুপায়ে মারিয়ে। 
পিছন থেকে কাঁটাকাঁটা লতায়
আটকে ধরে আঁচল আমার 
ছাড়িয়ে নিয়ে ছিঁড়ো দিয়ে 
সাত সমুদ্র পার হয়ে
পৌঁছলাম সেই পাতালপুরে। 
টগবগিয়ে ঘোড়া ছুটে
আসবে কি আমায় নিতে
গল্প শুনে যার ছবি
এঁকেছিলাম কল্পনাতে। 
দেখি,আমার সেই রাজপুত্তুর
ঠিক তেমনই ঘুমিয়ে আছে
ছোট্ট বেলায় যেমন ছিল
ঠাকুমার সেই গল্পটাতে। 
সোনার  কাঠির  ছোঁয়া দিলাম
উঠলো জেগে রাজারকুমার
বাহুর বাঁধনে বেঁধে বলল
অপেক্ষাতে ছিলাম তোমার। 
জেগে উঠে আমায় নিয়ে
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে
চললো সেই স্বর্নপুরে। 
রাজকুমারের রানী হয়ে
থাকবো দুজন সেই সুদূরে। 
স্বপ্ন এবার সত্যি হল
দেখবো বলে যেই তাকালাম
দেখি একি————
আমি যে ঘুমিয়ে ছিলাম। 
ছোট থেকে যে স্বপ্নটা
দেখে ছিলাম বার বার
দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিল
জীবনে আমার।
রাজপুত্তুর সাতসমুদ্দুর
রূপকথাতেই গেল রয়ে
দিন যাপনে ফিরে এলাম
মনের ব্যথা বুকে লয়ে।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments