জ্বলদর্চি

প্রসঙ্গ নেতাজী। উনি রাষ্ট্রনায়ক না দেশনায়ক/সন্দীপ কাঞ্জিলাল

পাঠকের দরবারে
প্রসঙ্গ নেতাজী। উনি রাষ্ট্রনায়ক না দেশনায়ক
সন্দীপ কাঞ্জিলাল

প্রশ্নঃ রাষ্ট্র ও দেশ কাকে বলে? নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস রাষ্ট্রনায়ক না দেশনায়ক?  আমার স্বামী বলছেন দেশনায়ক। আমি বলছি রাষ্ট্রনায়ক। এই নিয়ে ঝগড়া। কাল সারারাত ঘুমোতে  পারিনি। মাঝে মাঝে উনি না-বুঝে এরকম করেন। কি করলে বন্ধ হবে এই উপদ্রব যদি একটু বলেন।
---- দীপান্বিতা পোড়েল। নাইকুঁড়ি।বর্ধমান।


আপনার প্রশ্ন, নেতাজী দেশনায়ক না রাষ্ট্রনায়ক। তাহলে আসুন রাষ্ট্র আর দেশ কাকে বলে একটু বোঝা যাক!
   প্রথমে আলোচনা করা যাক দেশ কাকে বলে? দেশ বলতে একটি সমরুপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোন ভৌগোলিক এলাকাকে বোঝানো হয়। দেশ কোনো আইনি ধারণা নয়। যার কোনো নিজস্ব সামরিক বাহিনী থাকে না। এমনকি নিজস্ব সংবিধান ও নেই। অনেক ব্যাপারে স্বাধীন হলেও পুরোপুরি স্বাধীন নয়। যেমন বর্তমানে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। 
    আর রাষ্ট্র বলতে সর্বজন স্বীকৃত নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সীমানাযুক্ত কোন ভূখণ্ড যখন অন্য যে কোন ভূখণ্ড বা রাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সরকারি কার্য নীতি নির্ধারণ করতে পারবে, তখন সে ভূখণ্ডকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলা হয়। সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন রাষ্ট্রের মধ্যে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে অপর কোন শক্তি প্রভাবিত করতে পারে না। 
স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে ভারতকে একটি দেশ বলা হতো। কারণ ভারতের সার্বভৌমত্ব ছিল না। নিজস্ব আইন নীতি নির্ধারণ করার ক্ষমতাও ছিল না।  স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত অবশ্যই একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। 
    রাষ্ট্র হতে গেলে ৪টি শর্ত পূরণ করতে হবে- (১) নির্দিষ্ট ভূমি, (২) জনসংখ্যা, (৩) সরকার, (৪) সার্বভৌমত্ব। ভারত এই চারটি শর্ত পূরণ করে। তাই ভারত একটি রাষ্ট্র। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তিনটি শর্ত পূরণ করলেও, চতুর্থ শর্ত পূরণ করে না। তাই পশ্চিমবঙ্গ একটি প্রদেশ বা দেশ বলা যেতে পারে। তাই রবীন্দ্রনাথ যখন নেতাজী কে দেশনায়ক বলেছিলেন, ভারতের সার্বভৌমত্ব ছিল না। তখন গোটা ভারত একটি দেশ। তাই তিনি সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে নেতাজীকে, সমগ্র ভারতের নায়ক বোঝাতে দেশনায়ক বলেছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে নেতাজী দেশনায়ক নন রাষ্ট্রনায়ক বলাই যুক্তিযুক্ত। 
দীপান্বিতা দেবী আপনার ভাগ্যের জন্য আমরা ব্যথিত। না বুঝে কথা বলার জন্য, আপনার স্বামী দায়ী নয়! না বুঝে কথা বলাটা এখন আমাদের দৈনিক প্রাতঃকৃত্য। ওটি না হলে যেমন সারাদিন আপনার মন মেজাজ খিটখিটে ভাব থাকে, ঠিক তেমনি আপনি বুঝুন আর না বুঝুন, আমরা এখন অভ্যস্ত কিছু বিষয়ে মন্তব্য করে, নিজেকে জাহির করতে! সেটা না করতে পারলে আমাদের কেমন যেন করে। 

   তার উপর কেউ যদি একটু হোমরাচোমরা বা কেউকেটা হয়, তারা আবার ধরাকে সরা জ্ঞান করে। তারা ভুল বললেও ঠিক! কারণ, জানে আমার উপর বলার কেউ নেই। আমি যা বলবো তাই বেদবাক্য। আর তিনি এও জানেন, আমার কিছু পোষা সাগরেদ (এখানে কুত্তা কথাটা ব্যবহার করলাম না, কারণ তাদের অনেকের পেছনে সাঁটা--ডঃ, ডি.লিট, রত্ন প্রভৃতি খেতাব)  আছে, যারা এই বাবুর মিথ্যা কথাকে সত্যি প্রমাণ করার জন্য, আপনাকে সারাবিশ্ব ভ্রমণ করিয়ে আনবেন, এবং কয়েক হাজার বই জোগাড় করবে। হয়তো এতো বই জাতীয় গ্রন্থাগারে ও নেই। যে কোনো ভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে জল ওপর দিকে যায়। সহজে না গেলে জলকে ফুটিয়ে বাষ্প আকারে উপর দিকে পাঠাবে। এই সমস্ত লোকদের আবার বিদ্যাসাগর মহাশয় পছন্দ করতেন না। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় একবার বিদ্যাসাগরকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি সব ছেড়ে শেষ বয়সে কেন দূর্গম কার্মাটাড়ের মতো দূর্গম অঞ্চলে সাঁওতালদের মধ্যে আছেন। এর উত্তর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি- "জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, বড়লোকের বাটিতে যাওয়ার অপেক্ষা এসকল লোকের (সাঁওতালদের) কুটিরে যাইতে আমার ভালো লাগে, ইহাদের স্বভাব ভালো, ইহারা কখনো মিথ্যা কথা বলেনা ইত্যাদি কারণে এখানে (কার্মাটাড়ে) থাকিতে ভালোবাসি।" যেহেতু আপনি আপনার স্বামীর আয় উপার্জনে খান রোগ সারান। তার উপর কখনো আবার আপনাকে বলছে, সোনা আমার মনি আমার, তুমি আমার জীবন ইত্যাদি। এতোসব খেতাব যখন দেয়, আপনি তখন আনন্দে টগবগ করে ফুটতে থাকেন।  

   অতএব আপনার স্বামী জাহির করার জন্য যদি দু একটা কথা না বুঝে বলে, তা আপনাকে মেনে নিতে হবে। যতদিন আপনি এই স্বামীর অধীনে আছেন। আবার যদি না মানেন, চড় থাপ্পড় এমনকি কবিরাজি ওষুধ ডাঙ্গেশ্বর মোদক ও খেতে হতে পারে। তাই যতক্ষণ উনি আছেন ততক্ষণ আপনাকে মেনে নিতেই হবে। জানি কষ্ট হবে, তবু রাত্রে ঘুমানোর জন্য এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করুন।  সেইজন্য তো গর্কি তাঁর 'দি লোয়ার ডেফথস' এ লিখেছেন, "মেয়েরা যখন বিয়ে করে সেটা কেমন জানো? শীতকালে বরফের চাদরে একটা গর্তে লাফ মারার মতো। একবারই করে আর মনে রাখে সারাজীবন।"

Post a Comment

0 Comments