জ্বলদর্চি

পাকিস্তানের কণা-বিজ্ঞানী ড: আবদুস সালাম এবং তাঁর ইউনিফায়েড থিওরেম/ পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ০৯


পাকিস্তানের কণা-বিজ্ঞানী ড: আবদুস সালাম এবং তাঁর ইউনিফায়েড থিওরেম 

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

'এটা আপনার পদক, স্যার; আমার নয়'― প্রিয় মাস্টারমশায়ের গলায় নিজের নোবেল পদকখানি পরিয়ে দিয়ে বললেন নোবেলজয়ী এক শিষ্য।

   শিষ্যটি আরও বললেন, 'আপনার শিক্ষন এবং গণিত-প্রেম, যা আপনি আমার মধ্যে গ্রথিত করেছেন, এই দুয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল এই সোনার পদক।'
       
   দু'বছর আগের ঘটনা। ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভের অব্যাহতি পরে শিষ্যটি ভারত সরকারের নিকট একটি অনুরোধ রাখলেন। খুঁজে দিতে হবে তাঁর প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি মহাশয়কে। কারণ ব্রিটিশ ভারতে লাহোরের 'সনাতন ধর্ম কলেজ'-এ প্রফেসর গাঙ্গুলি'র নিকট তিনি গণিত শিক্ষা লাভ করেছেন। এই গণিতই তাঁর নোবেল জয়ের ভিত্তি, যার বীজ শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয় তাঁর ভেতরে গেঁথে দিয়েছিলেন। দেশভাগের পর লাহোর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর প্রফেসর গাঙ্গুলি স্বাধীন ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। দুবছর অনুসন্ধানের পর খোঁজ মেলে সেই মাস্টারমশায়ের। বার্ধক্যের ভারে শরীর ন্যুব্জ। হাঁটা-চলার শক্তি একদম নেই। দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে শয্যাশায়ী তিনি। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী শি‌ষ্য কলকাতা এলেন ১৯৮১ সালের ১৯-শে জানুয়ারি। দেখা করলেন তাঁর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শ্রী অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি'র সঙ্গে। আনন্দাশ্রুতে ভিজে গেল গাল, চিবুক। জড়িয়ে ধরলেন প্রিয় শিক্ষক মহাশয়কে। তারপর তাঁর নোবেল পদকখানি মাস্টারমশায়ের গলায় পরিয়ে দিলেন। উপস্থিত প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি, সাংবাদিক, আত্মীয় স্বজন― আবেগাপ্লুত সকলে।

   গুরু-শিষ্যের চিরন্তন সম্পর্ক সেদিন দেশ-কালের সংকীর্ণ গণ্ডি ভেঙে চুরমার করে দিয়ে গেল। কাঁটাতারের সমস্ত বিধিনিষেধের ঊর্ধ্বে। আসলে পাকিস্তানের নাগরিক সেই বিখ্যাত ছাত্রটি কণাবিজ্ঞানী ড: আবদুস সালাম এবং তাঁর শিক্ষকমশায় একজন ভারতীয়। ভারত-পাকিস্তানের চিরকালীন দ্বন্দ্বের আবহের মধ্যে ভারতের মাটিতে পা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি বিশ্ব-নাগরিক। এই পৃথিবী তাঁর দেশ। বিশ্ববাসী তাঁর প্রিয় জন। সমস্ত টানাপোড়েনের ঊর্দ্ধে তাঁর মনুষ্যত্ব। এ হেন গুণী মানুষটিকেও একদিন দেশের মানুষের কাছে, চতুর প্রশাসনের নিকট চরম লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে।

   অনিন্দ্যসুন্দর প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক চিত্রপটে সাজানো এক দেশ পাকিস্তান। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের এক টুকরো অংশ। মূলত সুন্নি (৮০―৯০%) এবং সিয়া (১০―২০%) উপজাতির বাস। উভয় গোষ্ঠী মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। সিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আরও এক মুসলিম সম্প্রদায় বাস করে সেখানে। তার নাম আহমেদিয়া গোষ্ঠী‌ (০.২―২.২%)। বিশ্বের বৃহত্তম আহমেদিয়া জনগোষ্ঠীর (আনুমানিক ৪০ লক্ষাধিক) দেশ হিসাবে পরিচিত এই পাকিস্তানে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের উপর একদিন নেমে এল ঘন দুর্যোগ। স্বাধীনতার ছাব্বিশটি বসন্ত সুখে দুঃখে অতিবাহিত হওয়ার প‍র ১৯৭৪ সালে আহমেদিদের অমুসলিম গণ্য করে আইন ঘোষণা করল দেশের পার্লামেন্ট। জুলফিকার আলী ভুট্টো তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান পাল্টে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের উপরে খড়্গহস্তে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে তার প্রশাসন। 
          
   
এর তীব্র প্রতিবাদ জানালেন দেশের খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী ড: আবদুস সালাম। তিনিও ওই আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। আহমেদি হওয়ার সুবাদে প্রতি পদে তাঁকেও ঠক্কর খেতে হয়েছে বিস্তর। শুনতে হয়েছে কটুক্তি। প্রতিবাদে দেশ ছাড়ার পাকাপাকি সংকল্প একদিন নিয়ে ফেললেন তিনি। দুঃখে-লজ্জায়-অপমানে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান বাকি জীবন। সেদিকে অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নেই কারও। উল্টে বিজ্ঞানীর সমালোচনায় মুখর গোটা দেশ। গোল বাধল, ১৯৭৯ সালে যখন তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়ে বসেন। কারণ, নোবেলজয়ী শুধু প্রথম পাকিস্তানী বিজ্ঞানী বলে নন, তিনিই বিশ্বের প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল লাভ করেন। ধর্মান্ধ জেনারেল মহম্মদ জিয়া উল হক তখন ক্ষমতায়। স্বভাবতই, সেই জেনারেল জিয়াকেই টিভিতে কাষ্ঠ হাস্য দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। গোঁড়া কাঠমোল্লাদের খুশি করতে অবশ্য জিয়া তারপর কাঁচি চালাতে শুরু করলেন। যেখানেই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত কোনও শব্দ বিজ্ঞানী উচ্চারণ করেন তাঁর ভাষণে, কোরান থেকে উদ্ধৃতি দেন; কেটে বাদ দেওয়া হয় সেই অংশ। বাকি অংশটুকু ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত হয়ে জনসমক্ষে আসে প্রিন্ট মিডিয়ার দৌলতে। শত অপমান-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা শয়েও আমৃত্যু দেশের মঙ্গল কামনা করে গেছেন সেই মহান বিজ্ঞানী ড: আবদুস সালাম।

   ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কেন্দ্রস্থিত একটি ছোট্ট শহর ঝাং। এই ঝাং শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে চলেছে চিনাব। চিনাবের প্রবহমান জলের কলকল শব্দে মুখরিত হয় গোটা শহর। এ হেন ঝাং শহরে স্বাধীন পাকিস্তানের সবথেকে বিতর্কিত পদার্থবিজ্ঞানী সালাম-এর জন্ম এক পাঞ্জাবী মুসলিম পরিবারে, ১৯২৬ সালের ২৯-শে জানুয়ারি। তাঁর মা হাজিরা বিবি। পিতা চৌধুরী মহম্মদ হুসেন ছিলেন ব্রিটিশ শাসনাধীন পাঞ্জাব প্রদেশের শিক্ষা দপ্তরের নামকরা অফিসার। খুব ছোট থেকে সালাম পড়াশোনায় অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। জিতে নেন স্কলারশিপ। বৃত্তি পেয়ে লাহোর গভর্মেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটি'তে গ্র্যাজুয়েটে ভর্তি হয়ে গেলেন। উর্দু ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগ। যদিও ইতিমধ্যে তিনি হঠাৎ করেই গণিতের প্রতি অসম্ভব আসক্ত হয়ে পড়েন। ঠিক করলেন গণিত পড়বেন। কলেজে একটি বিষয় রাখলেন গণিত। এই কলেজে চতুর্থ বছরে একখানি প্রবন্ধ লিখলেন। বিষয় শ্রীনিবাসন রামানুজনের গণিতের একটি দুরূহ সমস্যা সমাধানের কৌশল। প্রকাশ পেল তাঁর প্রথম নিবন্ধ। ছাত্র-শিক্ষক সকলে অবাক। খুব প্রসংশিত হলেন। ১৯৪৪-এ গণিতে B.A. ডিগ্রি সম্পূর্ণ করলেন। তারপর বসলেন 'ইন্ডিয়ান রেলওয়ে'র প্রশাসনিক পরীক্ষায়। কারণ তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে আইসিএস পরীক্ষায় বসুক। বাবার কথা মান্যতা দিতে বসেছিলেন রেলের সে-পরীক্ষায়। কিন্তু এবার ডাহা ফেল করলেন। আসলে ছোটবেলা থেকেই তাঁর দৃষ্টির সমস্যা। সেজন্য পরতে হয় পাওয়ার-দেওয়া-চশমা। চোখের সমস্যার জন্য রেলওয়ে'র মেডিক্যাল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেন। অমনোনীত হয়ে একপক্ষে তাঁর খুব ভালোই হল। 

   গভর্মেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটির এমএ কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলেন। সেখান থেকে ১৯৪৬-এ গণিতে মাস্টার্স। আবারও একবার কেমব্রিজের সেন্ট জনস কলেজ থেকে স্কলারশিপ পেলেন। চলে গেলেন কেমব্রিজ। ভর্তি হলেন গণিত ও ফিজিক্সে। ১৯৪৯-এ উভয় সাবজেক্টে দ্বৈত প্রথম শ্রেণীসহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। পরের বছর প্রি-গবেষণা বৃত্তি 'স্মিথ প্রাইজ' জেতেন। এসময় বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল সালামকে পরামর্শ দিলেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্যাভেনডিস ল্যাব‍রেটরিতে এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্সে গবেষণার। ল্যাবে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে তাঁর ধৈর্য্য খুব কম। তাই মনস্থির করলেন খুব শীঘ্রই নিজের শহর ঝাং-এ ফিরবেন। দেশে ফিরে এসে পুনরায় স্কলারশিপের আবেদন জানালেন গ্রেট ব্রিটেনে গবেষণার জন্য। গবেষণার অনুমতি মিলল। এবার ১৯৫১ সালে কেমব্রিজের ক্যাভেনডিস ল্যাব‍রেটরি থেকে তাত্ত্বিক ফিজিক্সে পিএইচডি লাভ করলেন। কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-ডায়নামিক্সে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল 'Developments in Quantum Theory of Fields'। এজন্য তিনি জিতলেন 'অ্যাডামস প্রাইজ'। ইতিমধ্যে গবেষণা চলাকালে তাঁর মেন্টর তাঁকে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন: এক বছরের মধ্যে গণিতের একটি দুরূহ সমস্যার সমাধান করতে হবে। সালাম মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সেটির সমাধান করে সে চ্যালেঞ্জ জিতেছিলেন। ডক্টরেট প্রাপ্তির পর লাহোরে ফিরে সেখানকার গভর্মেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটিতে গণিতের প্রফেসর নিযুক্ত হলেন। সেখান থেকে ১৯৫২ সালে তিনি গেলেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে; গণিতের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান হয়ে। ১৯৫৩ সালে তিনি একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট খুলতে চেয়েছিলেন। যেখানে শুধু মাত্র বিশুদ্ধ গবেষণা মূলমন্ত্র হবে। কিন্তু এসময় লাহোরে দাঙ্গা বড় আকার ধারণ করলে তাঁর সে পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। দাঙ্গার মধ্যে ১৯৫৪-তে কেমব্রিজ চলে গেলেন। সেখানে সেন্ট জনস কলেজে গণিতের অধ্যাপক নিযুক্ত হয়ে। ১৯৫৭ সালে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন আমন্ত্রণ জানায় তাঁকে। 

   পল ম্যাথিউজকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজে ফিজিক্সের তাত্ত্বিক বিভাগ খুললেন। সময়ের প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন সম্মানসূচক গবেষণাগারে আত্মপ্রকাশ করল। এখানে স্টিভেন ওয়েনবার্গ, টম কিবল, রিয়াজুদ্দিন প্রমুখ প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় গবেষণার কাজে যুক্ত থেকেছেন। কণাবিজ্ঞানে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ১৯৫৭-এ পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। সে বছর ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনে পাকিস্তানী ছাত্রদের জন্য তিনি একটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু করেন। তাঁর নিরলস কর্ম প্রচেষ্টার দরুণ ১৯৫৯-এ তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো (FRS) নির্বচিত হন। ঐ বছর প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকেও একটি ফেলোশিপ পেলেন। দৌড়োলেন আমেরিকার প্রিন্সটনে। সেখানে পরমাণু বোমার জনক রবার্ট ওপেনহেইমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। ওপেনহেইমার তখন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির বিভাগীয় ডিরেক্টর। ইলেকট্রো-ডায়নামিক্স, তার সমস্যা ও সমাধানের তত্ত্ব স্থাপনে অনেক আলোচনা হল দুজনের। তারপর কেমব্রিজ ও ইম্পেরিয়াল কলেজে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি দল গঠন করলেন তিনি, যার বেশিরভাগ ছাত্রই পাকিস্তানী। ফলে পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চ শিক্ষার একটি নতুন অধ্যায় খুলে গেল। বিশেষত ইংল্যান্ডে গবেষণার। এভাবে দেশের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ দেশ ছাড়ার পরেও অব্যাহত রইল। বিদেশ বিভুঁই-এ থাকলেও দেশের প্রতি তাঁর নাড়ির টান কখনও এতটুকু কমেনি। বরং উত্তরোত্তর তা বেড়েছে। যখনই প্রয়োজন পড়েছে, সরকারের ডাকে ছুটে গেছেন স্বদেশে। দেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রকল্পের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণায় হাতেখড়ি হয়। 

   সময়টা ১৯৬০ সাল। দেশের প্রেসিডেন্ট তখন আয়ুব খান। স্বাধীনতার পর ১৩ বছর অতিক্রম হতে চলল। অথচ দেশে সুনির্দিষ্ট নিরবচ্ছিন্ন কোনও বিজ্ঞান পলিসি নেই এবং দেশের জিডিপি'র মাত্র এক শতাংশ গবেষণা ও ডেভলপমেন্ট খাতে খরচ হয়। এছাড়াও, পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি কমিশন একটি ছোট্ট ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আটকে পড়ে আছে যেন। এমতাবস্থায় পরমাণু শক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রেসিডেন্ট খান পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানালেন সালামকে। ড: সালাম হলেন পাকিস্তান পরমাণু শক্তি প্রকল্প (PAEC)-এর বিজ্ঞান পরামর্শদাতা। তাঁর হাত ধরে নিউক্লিয় শক্তি গবেষণায় জোয়ার এল দেশে। শুধু তাই নয়, ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট খানকে তিনি মহাকাশ গবেষণার গুরুত্ব সবিস্তার ব্যাখ্যা করে বোঝালেন। নিউক্লিয় গবেষণার পাশাপাশি সমান্তরালে চলতে থাকল মহাকাশ গবেষণা। এদিকে নিউক্লিয়ার গবেষণায় গতি আনতে সুইজারল্যান্ডের সার্নে কর্মরত নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট ইশাক আহমেদকে পাকিস্তানে ডেকে পাঠালেন। PAEC-এর লাহোর সেন্টার-৬-এর প্রথম ডিরেক্টর পদে বসালেন তাকে। সালামের তত্ত্বাবধানে তাত্ত্বিক ও কণাবিজ্ঞানে যেন জোয়ার নামল দেশে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন গবেষণা কেন্দ্র। দেশ-বিদেশ থেকে প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞগণকে ডেকে এনে বসিয়ে দিলেন এক একটি সেন্টারের মাথায়। তাঁর উদ্যোগে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হল 'আবদুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স'।
         
   ১৯৭২-এ ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জগদীশ পতির সঙ্গে কাজ শুরু করলেন। ১৯৭৪-এ ভারত পোখরানে নিউক্লিয়ার টেস্ট সফলভাবে সংঘটিত করল। এবার সিন্দুরে মেঘ দেখল পাকিস্তান। উপমহাদেশে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা অনুভব করল তারা। চটজলদি ডাকা হল মিটিং। মিটিং আহ্বান করেছেন সালামের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও পরামর্শ দাতা মুনীর আহমেদ খান। উপস্থিত আছেন সালামও। সেদিন তড়িঘড়ি বোমা তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়িত করার সবরকমের উদ্যোগ গ্রহণে সিলমোহর পড়ে গেল। PAEC-এর Directorate of Technical Development (DTD)-এর প্রধান করা হল মহম্মদ হাফিজ কুরেশি'কে। সেদিনের মিটিং-এর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, মিটিং-এ 'বোমা' শব্দটি একবারের জন্যও কেউ মুখে উচ্চারণ করলেন না। কিন্তু সকলেই জানেন এরপর কী ঘটতে চলেছে। শুরু হয়ে গেল বোমা তৈরির প্রস্তুতি। ১৯৭৪-এর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সালাম পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তারপরই সালামের চারপাশের পৃথিবীটা কেমন যেন উলোটপালট হয়ে গেল। জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার পার্লামেন্টে আহমেদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে। সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ জানালেন সালাম। প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো'র উপর সমস্ত রাগ উগরে দিলেন তিনি। এমনকি সরকারের বিপক্ষে প্রতিবাদে সরব হলেন। কোনও ফল হলো না। উপরন্তু, অনেক গঞ্জনা হজম করলেন তিনি। তারপরই চিরতরে পাকিস্তান ছাড়ার স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। চলে গেলেন কেমব্রিজে। এত সবকিছুর পরেও দেশের প্রতি, দেশের মানুষের জন্য তাঁর ভালোবাসায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। পাকিস্তানে কর্মরত নিজের সহকর্মীদের জন্য একরাশ ভালোবাসা ও অপরিসীম শ্রদ্ধা ছিল তাঁর মননে। 

   কিন্তু সময় হয়তো তাঁকে বিস্মৃত করেনি। এল সেই বহু প্রতিক্ষিত ও কাঙ্ক্ষিত কাল। ১৯৭৯ সাল। নরওয়ের স্টকহোম থেকে ঘোষণা করা হল পদার্থবিজ্ঞানে সে বছরের নোবেল পুরস্কার। প্রাপক তিনজন কণাবিজ্ঞানী। দুই আমেরিকান স্টিভেন ওয়েনবার্গ ও শেল্ডন গ্ল্যাশো'র সঙ্গে তিনি, পাকিস্তানের উপেক্ষিত নায়ক ড: আবদুস সালাম। কী এমন আবিষ্কার করেছেন তিনি, যার জন্য জিতে নিলেন নোবেল? 
           
   কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-ডায়নামিক্স ও কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি নিয়ে কাজ করলেও তাঁর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার বোধহয় গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরি'র ইলেকট্রো-উইক মিথষ্ক্রিয়া। যার জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে শেলডন গ্ল্যাসো ও স্টিভেন ওয়েনবার্গ-এর সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কী সেই ইলেকট্রো-উইক মিথষ্ক্রিয়া? গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরিই বা কী?

   বিগ-ব্যাঙ ব্যুৎপত্তির সুনির্দিষ্ট কারণ আমরা জ্ঞাত নই। অন্ধ মানুষ যেমন ডিপ হোল (deep hole)-এর প্রান্ত অন্বেষণ করে তার ব্যাসের দৈর্ঘ্য অনুমান করে, গভীরতা নয় ; তেমনি বিজ্ঞানীগন বিগ-ব্যাঙের অস্তিত্ব কল্পনা করে নিয়ে নব্য ব্রম্ভাণ্ডের পরিবর্তনশীল ও সম্ভাবনাপূর্ণ ঘটনাসমূহের ক্রিয়াকালকে এক একটি অধিযুগে (epoch) শ্রেণি বিন্যাস করেছেন। প্রতিটি অধিযুগে শত শত ঘটনার ঘনঘটা।

   মহাবিস্ফোরণ (শূন্য সেকেন্ড) থেকে  ১০^(-৪৩) সেকেন্ড পর্যন্ত সময়কালকে প্ল্যাঙ্ক অধিযুগ ( Planck Epoch ) বলা হয় এবং ১০^(-৪৩) সেকেন্ড কালকে প্ল্যাঙ্ক সময় (Planck Time)। এই অধিযুগের শেষে উষ্ণতা প্রায় ১০^৩২ °K এবং কসমিক সিঙ্গুলারিটি ব্যতীত অন্যান্য ঘটনা সমূহ আজও অসংজ্ঞাত। সিঙ্গুলারিটি সম্পর্কিত তথ্য জানা অসম্ভবও। কারণ কোন‌ও ক্রিয়া-কৌশল প্ল্যাঙ্ক টাইমকে টপকে বিগ-ব্যাঙের অনুসন্ধান আজ পর্যন্ত করতে পারেনি। এ হেন ব্রম্ভাণ্ডে তীব্র টালমাটাল অবস্থা তখন। মূলত সে-কারণে বিশ্বের বাকি তিন জাতের মৌলিক বল – তীব্র নিউক্লিয়, তড়িৎচুম্বকীয় ও মৃদু বলগুলোর মতন মহাকর্ষ বলও সমান শক্তিশালী, আজকের মত এত ক্ষীণ বল নয়। উপরের চার জাতের সমান শক্তিশালী বল-এর তখন একটাই নাম – সুপারগ্র্যাভিটি ফোর্স বা সুপারকসমিক ফোর্স। এটাই বলগুলোর ইউনিফায়েড তত্ত্ব। এ হেন অসীম উষ্ণ ও ঘনত্বের নব্য ব্রম্ভাণ্ডে, আধুনিক কসমোলোজীর মতানুসারে, ঐ সুপার মৌলিক বল চার প্রকার বলকে প্রতিসাম্যের নিয়মে বেঁধে রাখে এবং পরবর্তী অধিযুগে বিবর্তনের নির্ঘণ্ট বাজায়।

   পরের অধিযুগ গ্র্যান্ড ইউনিফিকেশন অধিযুগ। এর ব্যাপ্তি ১০^(-৪৩) সেকেন্ড থেকে ১০^(-৩৬) সেকেন্ড পর্যন্ত। এ সময় প্রতিসাম্যের নীতি ভেঙে সুপার গ্র্যাভিটি থেকে সবার প্রথম আলাদা হয়ে যায় মহাকর্ষ। কিন্তু তখনও তিন কোয়ান্টাম বল (তীব্র নিউক্লিয়, তড়িৎচুম্বকীয় ও মৃদু বল) যে প্রতিসাম্যের রীতিনীতি মেনে একত্রিত থাকে, তা গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড তত্ত্ব (Grand Unified Theory বা GUT)। এ সময় স্ট্রং ফোর্স বিনিময়কারী গ্লুয়ন কণা, তড়িৎচুম্বকীয় বল বাহক ফোটন কণা এবং উইক ফোর্সের কণা ত্রয়ী ডব্লিউ প্লাস ( W+), ডব্লিউ মাইনাস (W-), জেড জিরো (Z°) – সব কণা ভরশূন্য। তাদের আলাদা আলাদা অস্তিত্ব নেই। তারা একসাথে খুব দ্রুত গতিতে (শূন্যস্থানে আলোকের বেগে) ছুটে বেড়ায়। কোয়ার্ক, লেপটন ও তাদের বিপরীত কণা এই যুগে তৈরি হয় বলে ধারণা করা হয়।

   বিগ-ব্যাঙের পর ১০^(-৩৬) সেকেন্ড থেকে ১০^(-৩২) সেকেন্ড সময়কাল ইনফ্লেশন ইপক বা প্রসারণ অধিযুগ।এই সময়কালের ভেতর ব্রম্ভাণ্ড আয়তনে পূর্বের থেকে বেড়ে ১০^৭৮ গুন হয়। সোজা কথায়, যে কোন একমাত্রিক দৈর্ঘ্য (x / y / z) বরাবর ব্রম্ভাণ্ড ১০^২৬ গুন বাড়ে এবং তাপমাত্র ১০^২৮ °K থেকে দ্রুত কমে হয় ১০^২২ °K । একে সুপার-কুলিং দশা (Super cooling phase) বলে। উষ্ণতা দ্রুত হারে কমে যাওয়ায় কোয়ান্টাম ফোর্সের প্রতিসাম্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ইলেকট্রো-উইক বল (একসঙ্গে তড়িৎচুম্বকীয় ও মৃদু বল) থেকে স্ট্রং ফোর্স পৃথক হয়ে যায়। তখনও ভরহীন অবস্থায় অন্যান্য মৌলিক কনাসমূহের ন্যায়  গ্লুয়ন কণা আলোর গতিতে চতুর্দিকে ছোটে। 
       
                  
   ইলেকট্রো-উইক ইপকের সূচনা ১০^(-৩২) সেকেন্ডে ও সমাপ্তি ১০^(-১২) সেকেন্ডে, যখন তাপমাত্রা ১০^২২ °K থেকে কমে ১০^১২ °K হয়। আগের চেয়ে তাপমাত্রা আরও কমায় ইলেকট্রো-উইক বল-এর প্রতিসমতার নীতিও ভেঙ্গে পড়ে। তা থেকে জন্ম নেয় বিশ্বের শেষ দু'জাতের বল – তড়িৎচুম্বকীয় বল (Electromagnetic Force) ও মৃদু বল (Weak Force)। ইলেকট্রো-উইক সিমেট্রি ভেঙ্গে বিশ্বে তখন এক নতুন ধরনের কোয়ান্টাম প্রভাব (Quantum Field)  বিরাজমান, যা হিগস প্রভাব (Higgs Field)  নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় , হিগস প্রভাবের সরাসরি মদতে ইলেকট্রো-উইক সমতা বিঘ্নিত হয়। এই হিগস প্রভাবের অভিক্রিয়ার কারণে মৃদু বল-এর কোয়ান্টাম ডব্লিউ-প্লাস, ডব্লিউ-মাইনাস, জেড-জিরো বোসন ( W+ , W- , Z° ) ভারী কণা ও ফোটন ভরহীন হয়েছে। আর ভারী হবার জন্য W+ , W- , Z° বোসনগুলি মন্থর হয়েছে, কিন্তু ফোটন আগের মতো তীব্র বেগে (সেকেন্ডে ২৯৯৭৯২ কিমি) চতুর্দিকে ঘুরে বেড়ায়। শুধু এরা নয়; কোয়ার্ক, লেপটন ও তাদের অ্যান্টি-পারটিক্যাল – সকল মৌলিক কনাকে হিগস ফিল্ডে ঈশ্বরকণা ওজন জুগিয়ে মন্থর করেছে।

   পাঠকের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে, উষ্ণতা কমে গেলে মৌলিক বলগুলো এক এক করে  পৃথক হয়ে যায় কেন? উচ্চ উষ্ণতায় অত্যাধিক শক্তি প্রতিসাম্য (Equilibrium)  সৃষ্টি করে। যেমন লোহার উপাদানের মধ্যে যে চৌম্বক বল বিরাজ করে, ৭৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়। সেই কারণে তাপমাত্রা পতনের সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রো-উইক সিমেট্রি ব্রেকিং-এর পর বিশ্বে চার জাতের বল আজকের স্বাধীন সত্তায় বিমুক্ত হয়। এই শেষোক্ত দুই জাতের বলের মিথস্ক্রিয়া আবিষ্কার করে বাকি দুজনের সঙ্গে ড: সালাম নোবেল জিতে নিয়েছেন।
তাদের সেই আবিষ্কার বিগব্যাঙের অব্যাহতি পরের ঘটনাগুলি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছে।

   এত সবকিছুর পরেও বলা যায়, তিনি অতি দুর্বল ক্ষীণ বলের সঙ্গে শক্তিশালী তড়িৎচুম্বকীয় বলের মিল ঘটিয়ে ইলেকট্রো-উইক বলের সন্ধান করতে পারলেন ঠিকই। অথচ স্বদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজের স্বজাতি আহমেদিয়া জনগোষ্ঠীর মুসলিম যোগসূত্র উদ্ভাবন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলেন! তাই বোধহয়, তাঁর কবরের যে 'এপিটাফ' (সমাধিস্তম্ভ লিপি)-এ লেখা ছিল ‘ফার্স্ট মুসলিম নোবেল লরিয়েট’; ১৯৯৬ সালে মৃত্যুর দু’ বছর পরে তাঁর এই এপিটাফটিও রেহাই পায়নি দেশের মানুষের রোষানল থেকে। তাই তো স্থানীয় এক ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মুছে ফেলা হয় ‘মুসলিম’ শব্দটি। এপিটাফের শূন্যস্থানে এখন কেবলই জ্বলজ্বল করছে, ‘ফার্স্ট __ নোবেল লরিয়েট’। এতটুকু দ্বিধা নেই; লজ্জা শরম ও সম্মান প্রদর্শন তো দূর গ্রহের জীব!
        

   আরও আছে; ১৯৯৬ সালের ২১-শে নভেম্বর অক্সফোর্ডে মারা গেলেন সালাম। তাঁকে কবর দেওয়া হল রাবওয়া শহরে। পাকিস্তান সরকারের আক্রোশের শিকার এই শহরের নাম ইতিমধ্যে সরকারি খাতায় পালটে চেনাব নগর করে দেওয়া হয়েছে। কারণ একটাই, এখানে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের বাস। হায় রে নিয়তি! কী বিচিত্র সব নিয়ম এবং তার প্রবক্তা! দেশের মানুষের যাকে মাথায় তুলে নাচবার কথা, অবহেলা-অপমানের ধূসর ভূমিতে তিনি লাঞ্ছিত হলেন! কিন্তু না, দেশ-কালের ক্ষুদ্র সীমানা কখনও সালামের মতো পণ্ডিতের চলার পথে অন্তরায় হতে পারে না। তাই ভূ-লুন্ঠিত হতে দেখে বাকি পৃথিবী আজ আপন করে নিয়েছে তাঁকে। গোটা পৃথিবীটা আজ তাঁর দেশ এবং সমগ্র বিশ্ববাসী একান্তই আজ তাঁর আপনার জন। প্রিয় আবদুস সালামজি, আপনাকে আমরা খুব ভালবাসি। আপনি আমাদের মনের মনিকোঠায় উন্নত শির চিরউজ্জ্বল প্রিয় বিশ্ব-নাগরিক হয়ে থাকবেন চিরদিন।

ড: আবদুস সালামের লেখা পুস্তকসমূহ :
(১) Unification of Fundamental Forces (1990)
(২) Renaissance of Science in Islamic Countries (1994)
(৩) Fundamentals of Electrical Machines

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments