গুচ্ছ কবিতা
বিজন সাহা
পক্ষ বিপক্ষ
সে রাতে আকাশ ছিল আধো আলো ঢাকা
সে আকাশে চাঁদ ছিল অনেকটা বাঁকা
ঘরের পেছনে বার্চ পাইনের বনে
কত যে ঘুরেছি হেথা হাসিখুশি মনে
বার্চ আর পাইনের পাতার ফাঁকে ফাঁকে
বাঁকা চাঁদ আমাদের চোখে চোখে রাখে
তখনই হঠাৎ তুমি হাতে রেখে হাত
তাকালে গভীর চোখে আমি তো অবাক
শুক্ল না কৃষ্ণ পক্ষ, বলতে পার আজ?
চুমুতে ভরিয়ে দেব করব না লাজ।
লটারিতে পেতে হবে আদর তোমার?
ভালোবাসাহীন চুমু খুব কি দরকার?
আহা, গেলে তো দেখি একদম ফেঁসে
ভালোবাস, বললে কি সত্যি ভালোবেসে?
বার্চ আর পাইনের মাঝে দাড় করিয়ে
হাত থেকে হাত তুমি নিলে সরিয়ে
এখানে দাঁড়িয়ে তুমি থাকবে চোখ বুজে
একটু পরে আমায় বের করবে খুঁজে।
চোখ খুলি। চারিদিকে ঘন অন্ধকার
দেখা নেই দেখা নেই দেখা নেই তোমার
হঠাৎ এক দিন তার এল তোমার
ইতিমধ্যেই চলে গেছ সাত সমুদ্রের পার
কৃষ্ণ না শুক্ল পক্ষ হয়নি আর বলা
দু জনার দুটো পথ। একা একা চলা।
দুবনা, ২৫ জুন ২০২১
সত্য
সত্যি কথাটা হয় না কখনও বলা
মিথ্যে মায়ায় জীবনের পথচলা
মৃত্যুর পরে অলীক জীবন আশায়
জীবন এখানে রক্ত বন্যা ভাসায়
সত্য মিথ্যা মিলেমিশে একাকার
কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা বোঝাই এখন ভার
এই বোঝাটাই বোঝা হয়ে আজ মানুষকে দেখায় ভয়
জানতে চায়না সত্য কোনটা কোনটা সত্য নয়।
ভাগ্যের কাছে সঁপে দেয় সে নিজের জীবন মরণ
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ জানতে চায়না কারণ
জীবন এখানে হরেক রকম মিথ্যা আশ্বাসে ভরা
এর নামই কি বেঁচে থাকা নাকি বাঁচার আদলে মরা
দুবনা, ০৬ জুলাই ২০২১
দু' জন
আমি ভোলগার জল
তুমি দূরন্ত মেঘ
দু'জন দু ভূবনবাসী
যদিও দুজনই এক
আমি হেমন্ত বন
তুমি চঞ্চল পাখি
সুরে ভরাও চারিদিক
আমি রং দিয়ে ছবি আঁকি
আমি পায়েচলা মেঠো পথ
তুমি সেই পথে চলে যাও
যেতে যেতে কত স্মৃতি
তুমি আনমনে রেখে যাও
আমি শুভ্র শীতল শীত
তুমি সবুজ বসন্ত
জীবন মরণ খেলা
এ খেলা যে অনন্ত
আমি অস্তগামী সূর্য
তুমি ভরা পূর্ণিমা চাঁদ
সূর্য চন্দ্র গ্রহণে
পাই নব জীবনের স্বাদ
দুবনা, ০৪ আগস্ট ২০২১
সূর্য
ভোলগার জলে সূর্য দিয়েছে ডুব
লোকজন তাতে ভয় পেয়ে গেছে খুব
সেকেন্ড মিনিট পার হয়ে গেল ঘন্টা
অজানা ভয়ে উঠলো যে কেঁদে মনটা
ভাবছে সবাই সূর্য গেছে কি মরে?
কেমনে সকাল আসবে সবার ঘরে?
অধীর অপেক্ষা - পহিয়ে গেল রাত
পূব দিগন্তে হাসল রাঙা প্রভাত
ভোরের আকাশ সোনা রঙে রাঙিয়ে
উঠল সূর্য সোনার বরণ রথে
আলো আর প্রাণ ছড়িয়ে দিকে দিকে
সূর্য চলে চির পরিচিত পথে।
দুবনা, ০৪ আগস্ট ২০২১
কাগুজে বাঘ
তিনি যদি সত্যি সত্যি সর্বশক্তিমান
পাণ্ডা দিয়ে হরেণ কেন অভাগাদের প্রাণ?
তিনি যদি নিজেকে ভাবেন এতই শক্তিমান
ভক্তির নামে ভক্তের হাতে হন কেন অপমান?
তিনি যদি সর্বভূতেই হবেন বিদ্যমান
সীমাহীন মহাবিশ্ব ছেড়ে নেবেন কেন ঠাকুরঘরে স্থান?
নিজেকে কেন বন্দী রাখেন কোন এক দলের হাতে
সবাইকে নিয়ে পারেন না কেন চলতে একসাথে?
তিনি যদি সর্বজ্ঞ সবই যদি তাঁর জানা
সবাইকে সুপথে আনতে কে করেছে তাঁকে মানা?
আসলে তিনি কাগুজে বাঘ কল্পনা দিয়ে তৈরি
দুষ্টরা তাই বন্ধু যে তাঁর ভালরা তাঁর বৈরী।
দুবনা, ০৪ আগস্ট ২০২১
বিজন সাহা
গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments