কবিতা অ্যাভিনিউ-২/বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
কবিতা অ্যাভিনিউ
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
পর্ব-২
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
নৈরাশ্যদীর্ণ বিষাদ এবং মৃত্যুচেতনার অক্ষরগুলিই জীবনানন্দ দাশকে তাঁর পাঠকের অন্তরে এক উজ্জ্বল পরিচিতি দিয়েছে । তাঁর এই আইডেনটিটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অসহায়তার মতোই স্বতঃসিদ্ধ উপপাদ্যের পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাঁকে । ফলে তাঁর প্রাণদায়ী কবিতাগুলিও শেষ পর্যন্ত পর্যবসিত হয়েছে সর্বপ্লাবী হতাশার নেতিলীন অন্ধকারে । অথচ খুব গভীর ভাবে তাঁকে পাঠ করলে দেখা যাবে জীবনানন্দের কবিতায় রয়েছে বস্তুনিষ্ট পর্যবেক্ষন যা জল মাটি এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য সমুহের ভেতর থেকে পল্লবিত হয়েছে । অলৌকিক আনন্দের ভার এবং বেদনার দ্বন্দ্ব এই দ্বিবিধের মিশ্রন অন্তর্দীপ্ত বোধের অগ্নিশিল্প হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায় । মুখরিত অবসাদ থেকে অনেকদূরে মানুষের জীবনযাপনকে স্বপ্নাচ্ছন্ন স্থিতির দিকে “ নক্ষত্রেরর রুপালি আগুন ভরা রাত” এর দিকে প্রাণনা দিয়েছে ।
সেইদিন , এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি.../এই নদী নক্ষত্রের জলে /সেদিনও দেখিব স্বপ্ন /সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে ?/আমি চলে যাব বলে/ চালতা ফল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে ?
এই কবিতার মধ্য দিয়েই জীবনানন্দকে প্রথম স্পর্শ করেছিলাম আমি । ভিজে গিয়েছিলাম তাঁর আবহমান শিশিরের সৃষ্টিজলে । অন্তরে মার্ক্সীয় দর্শনের বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গী এবং যুক্তিবাদী পারিবারিক পরিচর্চা নিয়ে জীবনানন্দকে দেখতে শুরু করেছিলাম । অনেকে জীবনানন্দকে নৈরাশ্যের কবি প্রকৃতির কবি মনে করলেও বস্তুনিষ্ঠ ভাবনা থেকেই আমি তাঁকে অনুশীলন করতে শিখেছিলাম অই অল্প বয়সেই । এই কবিতা পড়তে পড়তে মনে পড়েছিল চে গুয়েভারার সেই অবিস্মরনীয় কথা - dream never ends . সোনার স্বপ্নের সাধ কবে আর ঝরে । পরে অনেক পরে বনলতা সেন পড়ি । তখন তাঁর কবিতা সম্পর্কে এক দৃঢ় ধারণা প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল আমর্ম হৃদয়ের অন্তঃস্থলে । “ পৃথিবীর ইতিহাসে , মাঝে মাঝে এরকম শীত ও শারদ নেমে আসে ’। হ্যাঁ , জীবনানন্দ বলেছিলেন এ কথা । এই নিঃসীম শীতলতার কথা । মার্ক্স কি বলেন নি বিপ্লবের হিম শীতলতা ? বলেছিলেন – Revolution sometimes come down into frozen point . এই তো কত মিল । কি অপূর্ব ভাবে জীবনানন্দের কবিতায় মার্ক্সবাদের সন্নিবিষ্ট ছায়া ।
হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে
সিঙ্ঘল সমুদ্র থেকে ।
মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস কি একদিনের ? আবহমান শ্রেণি সংগ্রাম তা প্রাক ইতিহাস থেকে । পুঁজির ক্রমবিকাশ এই ধারাকে পরিপুষ্ট করেছে , পালন করেছে দীর্ঘস্থায়ী করেছে । কিন্তু এই পথ চলার জন্ম অনাদি কাল থেকে । সিংহল সমুদ্র থেকে নাকি আরও গভীর অন্ধকার নিশীথের মালয় সাগর থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল এই পরিব্যপ্ত ইতিহাসের ধারা । জলের ভেতরই তৈরি হয়েছিল প্রাণের স্পন্দন। জলের ভেতর থেকেই উঠে এসেছিল মাৎস্যন্যায়ের দর্শন । সমুদ্র এবং সাগর শব্দদ্বয় সেই প্রবণতাকেই সূচিত করে । মার্ক্স বলেছেন – revolutions are the locomotives of history . হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি । হাঁটা শুধুমাত্র চলাচল নয় । অগ্রগমনের প্রতীক । যাবতীয় জড়ত্ব অচলায়তনকে ভেঙে নতুন দিক অন্বেষণের নিরন্তর প্রয়াস । ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক চারদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন ” আমি শব্দটির দিকে যদি ফিরে তাকানো যায় কি দেখা যাবে ? না কোন ব্যক্তিস্বত্ত্বা নয় বরং প্রবহমান সামগ্রিকতার সংশ্লেষণ । পৃথিবীর জন্মের সূচনাবিন্দু থেকেই তো আমি শব্দটি জড়িয়ে আছে তার সাথে । কোন এককোষী প্রাণের স্বপ্নবিন্দু হয়ে আগামী ইচ্ছে হয়ে গর্ভস্থ অনুবাসনা হয়ে । আমি তাই প্রবহমান । এককোষী এমিবার ভেতর থেকে প্রাণের উন্মাদনা হয়ে পিতামাতার বাসনাপথের অনুভূমিক অবগাহনে । এবং তার পরেও । সভ্যতার সমস্ত যাত্রাপথ তাই আমার আত্মজীবনীর অংশবিশেষ । দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি থেকেই নব নব দিগন্তের উন্মোচন। এবং সামনে এক প্রাণিত শিল্পের নান্দনিক আভাস । এক সফলতা , এক ইপ্সিত স্বপ্নের অনুসন্ধান যা মানুষকে শান্তি দেয় । সাময়িক শান্তি । দুদণ্ডের শান্তি । কারণ এই চলমানতার মাঝে এই চিরন্তন সঞ্চারপথে অতৃপ্তি ছাড়া কিছু নেই ।
মার্কস বলেছেন - Art is always and everywhere the secret confession and the same time the immortal movements of its time . সেই ইপ্সিত স্বপ্নময় শাশ্বতের কাছে এসে মনে হয় মুখে তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য । ক্লান্তি থেকে দিশাহীনতা থেকে উদ্ধারের একমাত্র উপায় শিল্প । মানুষের পরিশীলিত শিল্পবোধই পারে অন্ধকারকে অবজ্ঞা করতে তাচ্ছিল্য করতে এবং অন্তর্গত যন্ত্রনাকে আপন সত্তায় ধারণ করতে । সুচেতনার অনুশীলনের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব । অতিদূর সমুদ্রের পথে নিমজ্জিত একটি জাতিও উঠে দাঁড়াতে পারে যদি তার অন্তর্গত চেতনায় অন্ধকারকে আলোকিত করার উজ্জ্বল প্রমিতি থাকে থাকে জীবনের সঙ্গতির চিরন্তন সৌন্দর্যের সাধনা । এই সাধনা এবং সুচিন্তাই বনলতা সেনের প্রতীকে রূপায়িত হয়েছে । সবুজ ঘাসের দেশ যা আসলে ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে দারুচিনি দ্বীপের স্বপ্ন দেখায় । জীবনের যাবতীয় অপ্রাপ্তির যন্ত্রনায় দীর্ণ হয়েও মানবতাবাদের প্রদীপকে উস্কে দেয় । সব হারার সব পাওয়ার ঠিকানায় স্নিগ্ধ প্রাণিত দীপ্তিতে উজ্জ্বল করে ।আলবেয়ার কামু বলেছিলেন – সংস্কৃতি বাদ দিলে সমাজ জঙ্গলমাত্র । চিত্তবৃত্তির প্রসার ছাড়া মানুষের আর কোন উজ্জ্বল পিপাসা নেই । এই পিপাসাই যাবতীয় সীমাবদ্ধতার অসন্তোষকে অগ্নিস্নাত পরিশুদ্ধির দিকে নিয়ে যায় । আন্তঃনাক্ষত্রিক আলোয় তখন তাকে দেখা যায় ।
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে । অন্ধকারের ভেতরই তো ফুটে উঠে আলোর নির্যাস । এতদিন কোথায় ছিলেন ? এই অপেক্ষার নিয়েই জীবন চলে । মানুষের সংগ্রাম কখনও লক্ষ্যবিচ্যুত হতে পারেনা । যাবতীয় প্রতাপের বিরুদ্ধে আগ্রাসী তত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অভিমুখে এক আশ্রয়ের অনুসন্ধানই তার যাত্রাপথ । যা পাখির নীড়ের মতো আশ্রয়দায়ী , উদ্দীপনাদায়ী । হয়তো সেই শুভরাষ্ট্র ঢের দূরে । চারদিকে বিকলাঙ্গ অন্ধ ভিড় অলীক প্রয়াণ । মানুষের লালসার শেষ নেই । লোভী মানুষের ক্রমিক নির্যাতন এবং নৈরাশ্যের স্তরগুলি উন্মোচন করতে গিয়ে জীবনানন্দ আমাদের কোন সরলবর্গীয় আশাবাদের সামনে দাঁড় করান নি । বস্তুনিষ্ঠ অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকেই তিনি বুঝেছিলেন এই আর্তরব , অসুস্থ চারপাশের নিরন্তর রক্তমোচনের ভেতরেও অমলিন স্নিগ্ধতার সন্ধানী তিনি । 'এক বিমূঢ় যুগের বিভ্রান্ত কবি।' হলেও তিনি অতিক্রম করতে চেয়েছেন যাবতীয় অস্থিরতা । তাঁর কবিজীবন ছিল নানা কারণে দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং বিপর্যয়ে আক্রান্ত। মানুষের স্বার্থপরতা, হীনম্মন্যতা, হিংসা, লিপ্সা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আস্ফালন , ধ্বংসযজ্ঞ, ফ্যাসীবাদ এবং সমকালীন যুগের এই নির্মম অসঙ্গতিগুলো জীবনানন্দের কবিজীবন কে আহত করেছিল রক্তাক্ত করেছিল । পৃথিবীর অসুন্দর রূপ তার ভয়াবহতা ও যুগজ্বর দেখে ক্লান্ত, নিরাশ এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি হয়তো সাময়িক উচ্চারণ করেছিলেন : 'ছিঁড়ে গেছি ফেঁড়ে গেছি পৃথিবীর পথে হেঁটে-হেঁটে...।' অনুভব করেছেন 'পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন'।পুঁজিবাদের নির্মমতা যুগের যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে তার উদ্ভাসন জীবনানন্দের কবিতায় : 'কিন্তু সেই শুভ রাষ্ট্র ঢের দূরে আজ।/চারিদিকে বিকলাঙ্গ অন্ধ ভিড়্ত অলীক প্রয়াণ।/মন্বন্তর শেষ হ'লে পুনরায় নব মন্বন্তর;/যুদ্ধ শেষ হ'য়ে গেলে নতুন যুদ্ধের নান্দীরোল;/মানুষের লালসার শেষ নেই/উত্তেজনা ছাড়া কোন দিন ঋতু ক্ষণ/অবৈধ সংগম ছাড়া সুখ/অপরের মুখ সস্নান করে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ/নেই।'
প্রেমের অভাবে ই সবকিছু অন্ধ হাহাকারময় এই কথা বারবার তাঁর কাব্যে অনুরণিত হয়েছে । যেকোন শুভময়তাকেই তিনি দেখেছেন নারীর আদলে । বিনাশশীল পরিপার্শ্ব থেকে মুক্তির দ্যোতনা পেতে জীবনানন্দ খুঁজেছেন আশ্রয়গভীর এক নারী এবং আলোকাপ্লুত নিজস্ব নীড় । কালের বিবর্তনের সাথে ব্যক্তিচিন্তার বিবর্তন স্বাভাবিক । হাজার বছর ধরে পৃথিবীর ইতিহাসের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে জীবনধারণের রসদ খুঁজতে হয় গ্রীসে অথবা মিশর ব্যাবিলনের সভ্যতার ছায়ায় । কোন এক বিকেলের নক্ষত্রের কাছে এসে দাঁড়াতেই হয় কবিকে । বিম্বিসার অশোকের রাজত্বে । অহিংসার বাণী থাকলেও সেখানে গ্লানিহীন নিরুপদ্রুত কোন ছায়াতল নেই । বরং যা নামিয়ে আনে নিষ্ঠুর অন্ধকার । আর এই অদ্ভুত আঁধারে অন্ধের দুচোখে জ্বলে ওঠে দৃষ্টি আর দম্ভের আলো । প্রেমহীন অনুভূতি হীন মানুষের পরামর্শে চালিত হয় পৃথিবীর রাষ্ট্রকাঠামো । তাই শেয়াল আর শকুনের খাদ্যের মতো এক পচা গলা আবিল সংস্কৃতি আমাদের গ্রাস করে । এই নৈরাজ্যের ভেতরেই সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার কথা মার্কস বলেছেন । মার্ক্সীয় জ্ঞানতত্বের ( epistemology) নানা স্তর সম্পর্কে জীবনানন্দের গভীর প্রজ্ঞা ছিল কি ছিল না এ সম্পর্কে দ্বিমত থাকলেও মৌলিক পাঠ তাঁকে ঋদ্ধ করেছে এই বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই । হয়তো সচেতন ভাবে তিনি দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদকে তিনি সাহিত্যে প্রয়োগ করেননি । কিন্তু এই বিষয়ে তিনি কোন দিকনির্দেশ তাঁর সৃষ্টির ভেতর রেখে যাননি এরকম মনে করার সঙ্গত কোন ভিত্তি নেই । বরং তাঁর সাহিত্যের গভীর পর্যবেক্ষন বিপরীত তত্বটিকেই প্রতিষ্ঠিত করে । গভীর পাঠ ছিল বলেই নিজস্ব ধারণা থেকে তিনি শিল্পীর আলোড়ন নিয়েই মানুষের জীবনের ভেতর গিয়ে দাঁড়াতে পেরেছেন ।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দে সন্ধ্যা নেমে আসে চুপিচুপি । দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ইপ্সিত বিপ্লব ও সেরকমই নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায় । পুঁজিবাদী শোষণের নগ্নতা এবং বাজার নিয়ন্ত্রিত আর্থ ব্যবস্থার সার্বত্রিক প্রসার মানুষকে ক্রমেই তার প্রজাতিগত সত্তা থেকে বিয়োজিত করতে করতে প্রথমে অর্ধেক মানবে এবং পরে শুধুমাত্র পণ্যে রূপায়িত করে । মার্ক্সীয় অন্বীক্ষার এই দিকটি সম্পর্কে জীবনানন্দ দাশ পরিচিত ছিলেন তাই তিনি সহজেই বলেছেন – শকুন আর শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয় । তবু এই আগ্রাসী শোষণের গন্ধ একদিন মুছে ফেলে চিল । মুছে ফেলতে বাধ্য হয় । এই রক্তরুক্ষতা ভয়াবহ প্রতিবেশ অতিক্রম করে মানবমুক্তির ইস্তাহার লেখা হয় । তারই পাণ্ডুলিপি লিখে চলে অনিবার্য সময় । লেনিন বলেছেন we cannot make revolution in a white gloves সমকালের আর্তি আর্তনাদ এবং রক্তক্ষরণ সেই পাণ্ডুলিপির পাতাকে বর্ণমন্ডিত করে । স্থবির তামস জাড্যতা অতিক্রম করেই জোনাকির রঙে ঝিলমিল করে ইতিহাসের পাতা । মনের ভেতর এক ধারাবাহিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় মানবী থেকে নারী উত্তীর্ণ হয় সুর্যজলস্ফুলিঙ্গের মুখরিত সারাৎসারে । ইতিহাসের রক্তাক ভঙ্গিল তুষার পিচ্ছিলতা থেকে ধাতুর সংঘর্ষে জেগে ওঠে মানবিক চেতনা –
Nothing can upset the order of light
Whrere I am only myself
And what I love
And on the table
This jug is full of water and bread of rest
কোথাও জীবন আছে সত্যিকারের জীবনের স্বাদ । সুস্থ চিন্তা স্বপ্ন এবং প্রশ্নজর্জরিত সংঘর্ষের অতলস্পর্শী চুড়াকে যা নিরাকৃত করে । অর্থনীতি এবং রাজনীতির সত্যনিরপেক্ষ অবস্থান ছাড়া কোন সামাজিক সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না । So long as the state exists there is no freedom. When there is freedom, there will be no state. (V.I .Lenin ) আর তাই সীমান্তবিহীন এক মুক্তির দ্যোতনায় শেষ হয়েছে কবিতার যাত্রাপথ । যা পাখির মতো মুক্ত , নদীর জলের মতো বেগবান । পাখি কোন সীমান্ত মানেনা । নদী কাঁটাতারের উদ্যত আস্ফালনের কাছে মাথা নত করেনা । সভ্যতার প্রাথমিক স্তর শুরু হয়েছিল প্রিমিটিভ কমিউনিষ্ট সোসাইটির ভেতর দিয়ে । অর্থাৎ আদিম সমভোগী সমাজব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ।জীবনকে সভ্যতাকে সমভোগী সাম্যব্যবস্থার কাছেই ফিরে আসতে হবে যেমন ভাবে সব পাখি ঘরে । বিবর্তনের এই অনিবার্যতাকে অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই । প্রাতিস্বিক সত্তা আবার আবিষ্কার করে নিজের অন্তর্নিহিত শক্তি। সংক্রমন থেকে পচন থেকে অগ্নিঋদ্ধ বিশুদ্ধতার সূচিপত্রে ফিরে যায় আলোর অভিমুখ । স্নায়ুপুঞ্জে অনন্ত অপেক্ষা নিয়ে সময় তাকিয়ে থাকে এই বিদ্যুতবিদীর্ন জীবনের সমুদ্র সফেন মুহুর্তের দিকে। অপরিমেয় ক্লান্তির প্রেক্ষণবিন্দু থেকেই ঝলসে ওঠে এক দুর্লভ এপিফ্যানি দীপ্ত অগ্নিগর্ভ সময়ের অনিবার্য নারী বনলতা সেন।
Comments
Post a Comment