গুচ্ছ কবিতা
গৌতম বাড়ই
কবিতা-১
রোহিণী ( পাহাড় ও নদী)
একদিন অন্তিম সন্ধ্যাছায়ায়
এই যে বন জঙ্গল পাহাড় খরস্রোতা ধ্বনি
যাকে আমি অক্ষরে অক্ষরে চিনি বলে
একটু বা বেশি বড়াই করি
তবে কখনো বড়াই করা ভালো
কিন্তু যে বড় পাথরের খন্ড রোহিণী নদীটির পাড়ে
আমায় ডেকে বলে- বসবি নে
বোস, দু- দন্ড পুরানো কথা ঝালিয়ে নি
একদম প্রস্তর যুগের বন্ধু নয় সে
চাঁদের বৌ-টি নদী ছেড়ে উঠে আসে পাড়ে
মতলব আছে
আমরা এই এখানে পাহাড়ের বিষম ঝিঁঝিঁ অন্ধকারে
বসব এক গোপন অভিসারে
সব পাহাড়ী কীট অণুকীট সরীসৃপ নিশ্চুপ হবে
চাঁদ কেন ম্লান হয়ে আসে তখন
ছায়া পড়ে নদীটির জলে
নিজেই কেন একলা হাসিস? বৌকে অমন গোপন করে?
এই দেখ আমার বুকের কাছে বসে আছে
কলকল করে তোর রোহিণী নদীটি
একরকম গোপন অভিসারের নির্জীব অন্ধকারে
সব পাহাড়ের নিজস্ব গন্ধ আছে
সব নদীরও তাই
রোহিণী বলে- আমি আর আড়াল নেব না
শুক্লাতিথির পঞ্চদশ দিনে
ঋণগ্রস্ত অমূল্য আলোক জোছনায়
আমি চাঁদের পিঠে পাশ ঘুরিয়ে খেউড় গাইবো
দেখে নেবে দেখে নেবে দেখে নেবে --- প্রিয়
রোহিণীর চুমোয় আমি এখনও চন্দনচর্চিত হই
এখনও রোহিণী পাহাড় থেকে নদীটির দিকে
আরও তাকাই
চাঁদের বৌটি সবুজ লতাপাতার মাঝে অবর্ণনীয় চলে
তিরতিরে হরিণী গর্ভিনীর মতন
কবিতা-২
হৃদয়ে রেখেছি যা
অমৃত সমান পালক তোমার ওষ্ঠে গুঁজেছি
তার অন্দরে অন্দরে কিলবিল করে বিষদাঁত
ওহে সৌদামিনী তোমার ঘাতে চূর্ণ করো
অভিসম্পাত একটি নষ্টদিনের
ক্ষণিকের মৃত্যুও তার কাছে ম্লান
ধীরবেলা চলে যায় আতঙ্কের খাদ বেয়ে নেমে পড়ে
অতুলনীয়া উজ্জ্বলতা হারায়
হঠাৎ নেমেছে অন্ধকার----
কান্না পাওয়া সমস্তদিনের বিষাদে
গলা বুজে আসে চোখ ধড়ফড়
বাতাসে কী কথা বলল ভদ্রকালৈ
সবভুলে যাই শুধু ভুলিনাই আকাশের উত্তুঙ্গপ্রাসাদ
নেমে আসা মৃত্যু পরোয়ানাগুলি
অনেক গভীরে খুঁড়েছি আর খুঁজেছি তাদের
শেকড়ের প্রত্ন ইতিহাস
যেখানে প্রলম্বিত হয় আমাদের না বোঝা কথা
আমরা হৃদয়ের চোরাস্রোতে ধরে রাখি তাই
গুপ্তসাম্রাজ্যের দলিল
একদিন শুধুমুধু ছাই হয়ে যায় উড়ে
কবিতা-৩
মেঘ জমলেই স্মৃতি
মেঘ আর ফাল্গুনের কথা
মেঘ হল বহুবর্ণা রামধনু ক্যানভাসে
নদী একদিন নারীর মতন হল
বাঁকে বাঁকে হারায় নতুন জলের ধারায়
ক্রন্দসীর হাহাকার
তানপুরার ঝঙ্কারে যে কালোয়াতী
স্মৃতিতে রেখে দেওয়া তক্তায়
বাঁকের কথা হারায় না
স্মৃতির তালুকে বিবর্ণ তবুও তো আছে
কবিতা-৪
কী সর্বনাশ!
অবিরত চিল্লিয়েছে সারা পাড়া
হাওয়ার দিকে আর গতিবেগটা জানা
এতদিন দেমাক ছিল হাওয়ামোরগ তার
হাতের চেটোয় ঘোরে
তবু কী নিদারুণ হাওয়া! হাওয়া!
মুখের খানিকটায় খুবলে নেওয়া
অত যে ভারীবুক রক্তশূন্য পাছাটাছায়
অহঙ্কারে পুড়ছে গণচিতায়
শেষবিকেলে মোষের পিঠে চড়ে
রাখালরাজা নিজের বস্তি ফেরে
রাখালরাণী বেকাম থাকা মাসের পরে মাস
এখন নাকি বারোমাস তিনলপ্তে সর্বনাশ
কবিতা-৫
উন্মাদের মার্গীয় কথা
আমরা শিশির ভেজানো রাতে মৃত্যুর গল্প বলি
যে বেঁচে থাকাটা সুলভ ছিল
নিয়মিত খবর নেয়নি অভিমানবশত
কাকজলে জোছনার সাঁতার কেটেছি বহুমিত্র
উলম্বে ঝুলছে স্বর্গীয় কিছু মৃত্যু
আর
ভূমে নরকের দেহগুলো চিরুনির দাঁড়ার মতন সাজানো
কে কবে কপোতাক্ষ জলে দেখেছে
ঝুঁকে পড়ে আছে মৃতচাঁদ
খাড়ি পেরোলেই খড়িবাড়ি
সেখানে জমে আছে পুণ্যাতুর আশীর্বাদ
আমরা কত কী শিশির ভেজানো রাতে আর
মৃত্যুর গল্প বলি শোন
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


0 Comments