জ্বলদর্চি

না বলেছে হৃদয়লীনা /অরুণ দাস

......আবার সেজে উঠলো জঙ্গল.....শুকনো পাতা ও রামধনু রঙে। হলুদ লাল বাদামী সব পাতার মাঝে রাখা, ভেঙে যাওয়া বুক। বুকের মাঝে পলাশ রঙা স্বপ্নের ক্ষরণ। সমুদ্রমন্থন শেষে কণ্ঠে নীলাকাশ মেখে নেমে এলো সেই নারী।
......শেষ বসন্তের নারী৷


না বলেছে হৃদয়লীনা

অরুণ দাস 



এক.
               
              তোমাকে নির্মান করি 
              অভিমানী জ্যোৎস্নায়
 

একদিন উড়তে উড়তে ছুঁয়ে ফেলি তোমায়৷ তোমার মনের সে সব জ্যোৎস্না ভেজা রাত।আমার মনের কোনে রাখা আলতো আঁধার রাখি তোমার হাতে।
......যে আশ্রয় রাখা আছে শান্ত চোখে, স্বযন্তে তুলে রাখি তোমারই চোখের জলে।তোমার মায়াময় মনের কাছে আমার আত্মসমর্পন।আমায় ছুঁতে যাওয়া গাছেরা সাজে বৃষ্টিরঙে।সূর্যলীন রোদ্দুরে।নিভৃত ডানায় লুকিয়ে রাখি অভিমানী পৃথিবীর সব অন্ধকার।
......রাত গভীর হলে
চোখের জলে আবছা হয়
                          বর্ণমালা
মুখ লুকোয় সবুজ পালক....



দুই.

                           তোমাকে 
                           নির্মান করি ,
                           আদর চাঁদে         
             


একদিন মেঘ খুঁজতে গিয়ে
                    হারিয়ে যাই মেঘে
নিয়ম না মানা চিঠিরা 
                  জমে ওঠে ওড়নায়
সাবধানী হয়ে উঠি  
                           লাজুক শব্দে
খুঁজে নিই নিজেদের
নিষেধের চেয়েও গভীর
                   কোনো অন্ধকারে
বেলা ফুরোয়
অভিমান ঝরে পড়ে
                            আদর চাঁদে
অস্থির জোনাকীরা চিনে নেয়
                  ভেঙে যাওয়া বুক।

লীনা, নিঃসঙ্গ ছায়ারা কোনোদিন ভেজালে তোমায়, শান্ত হয়ো তুমি আমারই হাত ছুঁয়ে।



তিন.

                      তোমাকে
                      নির্মান করি,
                      অবসর ঝরনায়


আনমনা সূর্য সাজাই তোমার ঠোঁটে ।শব্দের কালো ঝরনারা ছুঁতে চায় সময়ের গাছ।
জ্বালিয়ে দিই পালক শরীর Iনিখুঁত চাঁদের কাছে হেঁটে যাওয়া অন্ধকার।শরীর চিনে নেয় প্রতিটি দূর্বল ঢেউ ।ছায়ার মাঝে অবসর চাঁদ।

লীনা, এই যে চাঁদের ফাঁদ। এই আমি নষ্ট প্রজাপতি। ... তুমি দিশেহারা পৃথিবীর খেয়ালী জোনাকী।


চার.

                           তোমাকে
                           নির্মান করি
                           শান্ত শিশিরে


অনায়াসে হেঁটে যাই 
                        পথহীন পথে
বুক সাম্লে নেয় মগ্ন ঝড়
হাতের মধ্যে হাত       
অনায়াসে সেরে নেয়
                             সমুদ্রস্নান ।
তৈরি চোখের হরিণী সকাল,
হেঁটে যায়
আকাশ ছুঁয়ে যাওয়া
                           মাটির মধ্যে।
প্রতিটি শ্বাসের মধ্যে ।
আজ অনায়াসে ছুঁয়ে ফেলি
তোমাকে......          
অঝোর নীলের মাঝে।
তোমাকে দিই,
অরণ্যের মধ্যে আরো সবুজ
                                 হয়ে ওঠা
সমুদ্রের মধ্যে গড়ে ওঠা সমুদ্র
বৃষ্টি ভেজা স্বপ্নের 
                    এক অশান্ত হাত৷

লীনা, শরীর ছোঁয়া বৃষ্টিদের ভুললে তুমি.....এ শহরও মৃত কোনো ভ্রমণের দিন হয়ে ওঠে।


পাঁচ.
                         তোমাকে
                         নির্মান করি
                        পরিযায়ী মেঘে

ভেসে উঠি বরফহীন রাতে। নীল মেঘ নামে শেষরাতের চুলে। সতেজ জ্যোৎস্নায় জাগে যত্নঝড়। নৌকো শিখি ,ফ্রকহীন ভোরে৷ শুয়ে থাকে জল...পুকুর ফেরত ঢেউছাপ।

লীনা, যাই বিমূর্ত ঝরনার কাছে৷জলোচ্ছ্বাসে ভাসে দুষ্টু সময়ের গাছ।একদিন শূণ্য ফেরত সব নদী ফেরে শূণ্যতার কাছে৷


ছয়.
                        তোমাকে
                        নির্মান করি
                        কুমারী পাতায়


তোমাকে লিখি ,শব্দের গায়ে
নীল চোখের মায়াবী ডানায়
ঝরে পড়ে সবুজ 
পাগল আঙুলে 
                   জেগে ওঠা রাতে।
হাল্কা হাওয়ায়
           ভেসে যায়
              বুকের সবুজ অক্ষর।
চোখেরা,সহজশূণ্য
                   খুলে নেয়
                        ঘুমহীন শহরে৷

লীনা,কুয়াসায় সাজিয়েছে যে ঠোঁট... পাগল শ্যাওলাদের...
চতুর ওড়নায়,
রোদহীন একদিন শূণ্য হলে,
রেখে যাবো নির্জন শহর
                        তোমার জন্য ।


সাত.
                       তোমাকে
                       নির্মান করি
                       শব্দহীন সন্ধ্যায়


প্রশ্নহীন হই অনামী সন্ধ্যায়৷
একদিন, পাহাড় ছুঁতে চায় বিশ্বাসী ঠোঁট।তুষার চূড়ো।
রাতের মাঝে নিস্পন্দ জল ছুঁই৷ শিখি, দ্বিতীয় পৃথিবীর প্রথম সকাল।

লীনা, একদিন নিঃশব্দ ভিড় বয়ে গেলে বুকের মাঝে, চড়াই ফেরত সব সূর্য মেশে শান্ত সন্ধ্যায়৷


আট.
                        তোমাকে
                        নির্মান করি
                        সমুদ্র শূণ্যতায়


তুমি অজুহাত রেখে 
                        ফেরাও সময়
আমার অন্ধকার পৃথিবীর
                       সব ভালোবাসা
স্তব্ধ সময় চায় সব শূন্যতার 
                                      শেষ।
সব রক্তবর্ণ ধূসরতার শেষ।
অদৃশ্য স্বর পাল্টে যায়,
বোবা পাথরের চোখের জলে।

.... মুখস্থ করি নীরব মৃত্যুকে৷ সোনালী স্বপ্ন রেখে চলে যাওয়া নির্জন নারীকে ।স্বপ্নের যা কিছু রং.....স্মৃতির পালক ছেড়ে উড়ে যায় আকাশে।অন্ধকারের চেয়েও অন্ধকার কোনো স্বপ্নের কাছে৷

লীনা, রক্তের মধ্যে গড়েছি যে মূর্তি আমি....মৃত্যু ছাড়া তার আর ভুলে যাওয়া নেই৷

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments