জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা /পর্ব- ৪/তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা  
পর্ব- ৪

তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়


অধোবদন ফুচকাওয়ালা

আলুসিদ্ধ, তেঁতুলজল, একটু ছোলা,
ময়দা, সুজিতে গড়া পাঁপড় ফোলা –
বের হয় নিয়ে রোজই ফুচকাওলা।

যাবার আসলে কথা গঞ্জের মোড়ে,
তার আগেই ডাক পড়ে এর-ওর দোরে,
স্বাদ বদলায় লোকে এক এক করে।

খাস্তা, মুখরোচক, সস্তা খাবার,
পরিচ্ছন্ন হাত, ভালো ব্যবহার;
সমস্যা আছে শুধু একটিই তার।

নতমুখে যায় যেন কতই নিরাশ,
তাকায় না সেরকম এপাশ ওপাশ,
কতবার কতো লোকে ডেকেও হতাশ।

আর্তি যায়না কানে, থামেইনা বাঁকে,
দূরে থাকা খদ্দেরে বিশ্বাস রাখে–
ঝগড়ুটে মহিলার নিনাদে ও হাঁকে।

“ফেরি কি কখনো মুখ নিচু করে হয়!”
প্রশ্ন করেছি তাকে, “কি তোমার ভয়!
অপরাধবোধ নাকি লজ্জা, বিনয়?

গঞ্জের মোড় ছাড়া বেচার অনিচ্ছে?
নাকি ও ঘাড়ের ব্যামো, কষ্ট যা দিচ্ছে?
নাকি ওটি অকারণ, উদ্ভট ইচ্ছে!

অনতিদূরেও ঘাড় ঘুরিয়ে না দেখে,
হয় কি কামাই কান খোলাই না রেখে!
খাটুনি বেকারই হবে রোদ মেখে মেখে!”

বললে সে ওরকমই, ত্রুটি তা বটেই,
চাইলেও জেদি ঘাড় ঘোরেনা মোটেই!
নেবে পণ আর অমন যাতে না ঘটেই।



"উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ"

যে পোশাকে নেই টান, যে খাবার বাড়তি,
যে ভাষায় কাজ নেই, ফিরেছে যে আর্তি,
যে কথারা আধমরা, যে কবিতা ব্যর্থ,
যে ছবিরা অসফল, মেটাবেনা স্বার্থ,
টাকছুট চুল, দাঁত পোকায় অভব্য,
লোহা, টিন, কাঁচ, মন -ভাঙারা দাতব্য।
চাহিদার বর্ষারা থামলে যে মেঘলা,
তুরুপ, স্বরূপ গিয়ে একাকী যে মেখলা,
স্বপ্ন, যত্ন - পরাজিত, প্রতিদানহীন,
ভূতে ধরা পোড়ো বাড়ি, অমিশুক দুর্দিন,
যে বয়স বওয়া দায়, যারা চিররুগ্ন,
শীতকালে ডালে ডালে যে পাতারা শুকনো,
ত্রাণে যাক, দানে যাক, ক্ষালনে বা গালনে,
যেখানেতে খুশি যাক, যাক জলে, জ্বালনে।



আয়না

ঘুম থেকে উঠে পোঁটা দেখে শুধু জঙ্গল,
অনতিদূরেই নানা পশুদের দঙ্গল।
তুলে এনে রেখে গেলো বনে কোন্‌ দুর্জন-
টের পায়নিকো পোঁটা, ঘুমে ছিল অচেতন।
ভাগ্যিস সাথে ছিল একখানি আয়না,
নিজেকে দেখেই তা’তে ঘাবড়েছে হায়না।
যমজ ভাইকে দেখে পশুরাজ ক্ষুব্ধ,
প্রতিরূপ দেখে চিতাবাঘেরা প্রলুব্ধ!
লজ্জায় গরিলারা পুরো দিগ্‌ভ্রান্ত,
আয়নায় প্রাণও বাঁচে- তা কি কেউ জানতো?
আজ থেকে পোঁটা তাই আয়নাই গড়বে,
রিপু দেখলেই আগে আয়না সে ধরবে।



অভোগ্য পুরস্কার

“যাইহোক! মৃত্যুর আগে তো পেলেন”
বলেই সাংবাদিকও এড়িয়ে গেলেন।
মুমূর্ষু শিল্পীকে পদক প্রদান -
করা হল মেপে তাঁর সব অবদান।
গ্রহণ, বর্জনেরও ঊর্ধ্বে যে জন,
তাঁকে হাসপাতালেতে করেছে বরণ।
ক্ষীণ যাঁর দৃষ্টি ও হাতে নেই বল,
কি বা নেতব্য তাঁর, সফল, বিফল!
অনুভূতি প্রকাশেরও সুসময় নেই,
তবু যা উঠেছে ছবি বাঁধানো যাবেই।
জীবদ্দশায় ভোগ নাই যদি হয়,
সে ভূষণ সান্ত্বনা, অভোগ্য জয়।
স্তোকে নয়, পরে মনে রাখে যাতে লোক,
স্বীকৃতি কুড়িয়ে বুজতে হলে চোখ,
শিল্পীকে ছুঁতে হবে একশ বছর,
এমনই বিলম্বিত হয় সমাদর।
তা দেখে জোয়ান কবি কষ্টে, রাগেই,
কিনছে পুরস্কার মরার আগেই।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments