জ্বলদর্চি

শুশুনিয়া ভ্রমণ /সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি

পর্ব - ৪২

শুশুনিয়া ভ্রমণ

সূর্যকান্ত মাহাতো

দীর্ঘ ১৬০০ বছরের প্রাচীন এক ইতিহাসকে অঙ্গে ধরে রেখেছে শুশুনিয়া পাহাড়। সেই ইতিহাসকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতেই বন্ধুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাঁকুড়া থেকে সোজা উত্তর পূর্ব অভিমুখে আমাদের যাত্রা শুরু হল। এক সময় পৌছালাম ছাতনায়। মনে পড়ে গেল বড়ু চন্ডীদাসের কথা। এই ছাতনাতেই কি জন্মেছিলেন "শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের" রচয়িতা? নাকি বীরভূমের নানুরে! বিতর্কিত চন্ডীদাসের কথা ভাবতে ভাবতেই এগোচ্ছি। আরো কিছুটা উত্তরে যেতেই চোখে পড়ল সুউচ্চ শুশুনিয়া পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়ের এক বৈশিষ্ট আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, ওই তো সামনেই। কিন্তু যতই এগোবে ততই যেন পিছনে সরে যেতে থাকে। শুশুনিয়াও তেমনি। কেবলই পিছনে সরে যাচ্ছিল। অবশেষে পৌছালাম শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে। পর্যটনের কথা মাথায় রেখে রাস্তার দু'পাশে গড়ে উঠেছে একাধিক কটেজ ও সরকারি আবাসন। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি খাবার হোটেল। পাহাড়ের একদম পাদদেশে বসেছে একাধিক হস্তশিল্পের দোকান। সেখানেই বসে বসে পাথরের অনিন্দ্য সুন্দর সব মূর্তি নির্মাণ করে চলেছেন দক্ষ কারিগরেরা। এছাড়াও বাঁশ ও কাঠের নির্মিত সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্রও বিক্রি হচ্ছে। বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য সেগুলো দারুন সংগ্রহযোগ্য। দোকানগুলো যেখানটাতে শেষ হয়েছে তার পাশেই আছে একটি পাহাড়ি ঝরণা। পাহাড়ী ঝরণার জলধারা একটি পাইপে বন্দী হয়ে নিচে পড়ছে। জল পড়ার জায়গাটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। ঝরনার এই জলকে অনেকেই পবিত্র মনে করে পান করছে। অনেকে স্নানও করছে। সে কারণেই  হয় তো পাশের  দোকানগুলোতে স্নানের গামছাও বিক্রি হচ্ছে। ঝরণাটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একাধিক মন্দির। ঝরণার ঠিক পিছনে সবথেকে বড় যে মন্দিরটি অবস্থিত। সেটি একটি কালী মন্দির।
ঝরণার পাশ দিয়েই পাহাড়ে ওঠার রাস্তা শুরু হয়েছে। কেটে কেটে বানানো হয়েছে এই পথ। পুরো পাহাড় জুড়ে বিস্তৃত আছে কেবলই ছোট বড় অজস্র চাটান পাথর। সেগুলোকে কেটে কেটেই পাহাড়ের উপরে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছে। ছোট বড় চাটান পাথরকে কেটে কেটে পাহাড়ে ওঠার এই পথ তৈরি করতে যে প্রচন্ড শ্রম আর দীর্ঘ সময় লেগেছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশ খাড়া পথ। এবড়ো খেবড়ো পাথরে ভর্তি। একটুতেই হাঁফ ধরে যাচ্ছে। উপরে ওঠার রাস্তায় একটু ছাড়া ছাড়াই বসেছে পানীয়ের দোকান। সেই সব দোকানে নুন কাগজির ঠান্ডা শরবত বিক্রি হচ্ছে। পানীয় জলও বিক্রি হচ্ছে। কিছুক্ষন বিশ্রামের জন্য খাটিয়া পাতা আছে। পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দোকানগুলো বসেছে। হেলমেট কিংবা বাড়তি ব্যাগ ওরা সযত্নে গচ্ছিত রাখেন। একদম দায়িত্বের সঙ্গে বিনামূল্যে। তবে ওদের কাছে ফেরার সময় লেবু চিনির শরবত খেতে হবে এটাই শর্ত।
কিছুটা ঝুলন্ত এবড়ো খেবড়ো পাথরের বিপজ্জনক পথ বেয়ে আমরা ক্রমশ উপরে উঠতে লাগলাম। নিজের শরীরের ব্যালেন্সকে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হচ্ছে, একটু বেসামাল হলেই পাথরের আঘাতে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যুও। এভাবেই ৫৮৫ মিটার খাড়া পথ অতিক্রমের পর পৌছালাম ছোট পাহাড়ের চূড়ায়। এই পাহাড়ের দুটো চূড়া। ছোট চূড়া এবং বড় চূড়া। একটাই সুবিধা, পাহাড়টি ন্যাড়া নয়। সবুজ গাছগাছালিতে ভরা। ছোট পাহাড়ের চূড়া থেকে ভিউ পয়েন্টটাও দারুন। হালকা কুয়াশায়  সমতলটাকে মনে হবে যেন নীল সমুদ্র।
ছোট পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার সময় সূর্যের আলো দেখা যায়। কিন্তু এরপর আর সূর্যালোক দেখা যাবে না ছোট বড় অজস্র গাছের ছায়া ঘন চাপ চাপ অন্ধকারে ঢাকা সমস্ত পরিবেশটা। ছোট পাহাড়ের চূড়া থেকে বড় পাহাড়ের চূড়ার দূরত্ব ৩২০ মিটার। বড় বড় পাথরের উপর হলুদ রঙ দিয়ে লাল কালিতে সেই পথের নির্দেশ ও দূরত্ব উল্লেখ করা আছে। সেই নির্দেশ মতোই ছোট পাহাড়ের চূড়া থেকে যাত্রা করলাম বড় পাহাড়ের চূড়ার দিকে। ছোট পাহাড় থেকে বড় পাহাড়ে যেতে গেলে ছোট পাহাড়ের চূড়া থেকে কিছুটা অবতরণ করতে হয়। দুই পাহাড়ের চূড়ার মাঝখানের এই অংশটা বেশ সমতল। বেশ মনোরম। একটা শীতল হাওয়া সর্বক্ষণ খেলে বেড়াচ্ছে। মনে হবে যেন এসির মধ্যে আছি। পাহাড়ে ওঠার কষ্টটা এখানে এলেই ভুলে যাবে সকলে। চেনা গাছের মধ্যে কয়েকটা বেলগাছও আছে দেখলাম। এখানে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ফের পথ চলা শুরু করলাম। খাড়া ভাবটা যেন আরো বেশি খাড়া হতে শুরু করেছে। রাস্তাটাও অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কখনো গাছ ধরে কখনো বসে পড়ে কখনো লম্বা পা ফেলে ফেলে উপরে উঠতে হচ্ছে। অনেক বেশি সাবধানতাও অবলম্বন করতে হচ্ছে। এখন আর কোনও আরোহী নেই। সবাই মাঝ পথেই হল ছেড়ে দিয়েছে। কেবল আমরাই দুই বন্ধু ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ধীর পায়ে পাহাড়ের খাড়া পথ বেয়ে উঠে চলেছি। মনের জোর আর জেদটুকুই যা ভরসা। একটা উঁচু চূড়ার মতো অংশে পৌঁছানো মাত্রই ভাবছি এটাই হয়তো শেষ! কিন্তু সামনে দেখি আরো একটা খাড়া পথ। হাল ছাড়িনি। এভাবেই একটার পর একটা ছোট ছোট শিখর জয় করতে করতে একসময় পাহাড়ের সর্বোচ্চ শিখরে পৌছালাম। কি যে খুশি আর আনন্দ হল বলে বোঝাতে পারবো না!
চারিদিকে অজস্র বড় বড় পাথর ছড়িয়ে আছে। বিছানো আছে বললেই বোধ হয় বলা ভালো হবে। তার ফাঁকে ফাঁকে জানা-অজানা নানান ধরনের গাছ। পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় পাথর দিয়ে একটি চৌবাচ্চার আকার গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণের একটি বড় মূর্তি বসানো আছে। মূর্তির পায়ের কাছে আছে আরও একটি ছোট রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তি। কৃষ্ণমূর্তির পিছনে "রুইদাস" পদবী  জনৈক এক ব্যক্তির নাম লেখা। গ্রামের নাম লেখা আছে "আগয়া"। তিনি সম্ভবত মূর্তির শিল্পী হতে পারেন। আবার মূর্তিটি তিনি দানও করে থাকতে পারেন।চৌবাচ্চার আকারের অংশটার উপর কয়েকটা কাঠ প্যান্ডেলের মতো বাঁধা। তার একাধিক জায়গায় সুতো বাঁধা। একধরনের পাহাড়ি গাছের লম্বা লম্বা ফলকেও অনেকে সুতো দিয়ে সেখানে ঝুলিয়ে রেখেছে। একটা হনুমান দেখলাম সেখানে চুপচাপ বসে আছে। প্রথমটায় একটু ভেংচি কাটছিল, তবে ক্ষতি কিছু করেনি।

উপরে পৌঁছানোর আনন্দে এদিক ওদিক তাকাতেই কয়েকটা পাথরের উপর চোখ আটকে গেল। একটা পাথরের উপর দেখলাম দুটো পায়ের দীর্ঘ ছাপ। বেশ কেটে কেটে বানানো হয়েছে। আঙুলগুলো কেবল গর্ত দিয়ে বানানো।  বাম পায়ের উপর একটি শঙ্খ বা শাঁখের ছবি চিত্রিত বা খোদাই করা আছে। ডান পায়ের উপর খোদাই করা আছে একটি পদ্ম ফুল। পা দুটোর ডান পাশে আছে একটি স্বস্তিক চিহ্ন। দুটো পা আর শঙ্খ ও পদ্মের ছবি দেখে সহজেই বিষ্ণু দেবতার কথা মনে পড়ে যায়। 

 পদযুগল অঙ্কিত পাথরের পাশেই আছে আরো একটি পাথর। সেই পাথরের উপর একটি সৌর মূর্তি খোদাই করা। গোল গোল চোখ। মোটা নাক ও দীর্ঘ গোঁফ যুক্ত একটি মুখ। মুখটা রাশভারি এক রাজার মতোই মনে হবে।

সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে এবার অবতরণের পালা। পা টিপে টিপে সাবধানে নামতে হচ্ছে। একবার হড়কে গেলেই হল। খাঁচা থেকে প্রাণ পাখি বেরিয়ে যাবে। নামার সময় হঠাৎ "কুব কুব" শব্দে প্রচন্ড গতিতে কয়েকটা হনুমান এডাল থেকে সে ডালে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। ডালের নড়াচড়ার ভীষণ শব্দে আমরা তো খুব ভয় পেয়ে গেলাম। ওদের আক্রমণের শিকার না হয়ে পড়ি। কিন্তু না, তারা কোনরকম আক্রমণ করল না। গাছেই কেবল লাফালাফি করছিল মাত্র।

নামার সময় হঠাৎ একটা গাছের উপর নজর পড়ল। দেখলাম গাছের ডালে এক টাকা ও দু টাকার কয়েনকে পাথর দিয়ে ঠুঁকে ঠুঁকে ঢোকানো হয়েছে। আর বাকি অংশটুকুকে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজেদের কোন মঙ্গল সাধনের জন্য এমনটা করেছে বলা মুশকিল। তবে গাছটার যে নিদারুণ অমঙ্গল হচ্ছে সেটা দেখলেই বোঝা যায়।

ধীরে ধীরে শরীরের ব্যালেন্স রেখে শেষ পর্যন্ত পাহাড় থেকে নামতে পারলাম। ঘর্মাক্ত শরীরকে কিছুটা আরাম দিতে সেই ঝর্ণার জলে হাত মুখ ধুলাম। কিছুটা জল পানও করলাম। স্বাদটা বেশ ভালো।


এবার শুশুনিয়া পাহাড়ের একেবারে পিছনে অবস্থিত সেই ঐতিহাসিক স্থান দর্শনে রওনা দিলাম। পাহাড়ের সম্মুখভাগ থেকে কিছুটা এগোতেই দেখলাম ট্রেকিংয়ের প্রশিক্ষণ শিবিরের বড় একটা পোস্টার। সম্ভবত এখান থেকেই পাহাড়ে ওঠার ট্রেকিং বা প্রশিক্ষণ শিবির হয়। চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে পাহাড়ের একেবারে পিছনে উত্তর মুখে যেতে হল। একটা কালো পিচ রাস্তা চলে গেছে গ্রামের দিকে। সেই পিচ বরাবর কিছুটা এগোনোর পরেই ডান দিকে পাহাড়ের দিকে ভেঙে যেতে হল। পাহাড়ি রাস্তা ফের শুরু হল। বড় বড় নুড়ি পাথরের কিছুটা খাড়া রাস্তা। তবুও বাইক চালিয়ে যাওয়া যায়। এভাবেই ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার যাওয়ার পর আর বাইক যাওয়ার পথ নেই। এবার পায়ে হেঁটেই যেতে হবে।

একেবারে ঘন শালের জঙ্গল। সূর্যের আলোর রশ্মিটুকু পড়ছে না। এত ঘন জঙ্গল। প্রচন্ড শুনশান এলাকা। ছমছমে! এদিকে পর্যটকদের তেমন  আসা যাওয়া একেবারেই কম। নেই বললেই চলে। কিছুটা এগোতেই একটা মিষ্টি শব্দ কানে ভেসে আসছিল। ঝিরঝির সেই শব্দ শুনে বুঝলাম সামনে কোথাও একটা ঝরণা আছে। সেই শব্দকে ডান দিকে রেখে আমার ইতিহাসের সন্ধানে আরো এগোলাম। এবার রাস্তা ক্রমশ খাড়া হতে শুরু করেছে। ঝোপঝাড়ও কিছুটা ঘন। আরো কিছুটা উপরে উঠলাম। কিন্তু ইতিহাসের সেই স্থানটিকে এখনো আবিষ্কার করতে পারলাম না। কিছুটা উপরে ওঠার পর দেখলাম দুটো রাস্তা। কোন দিকে যাব! কিছুটা হতভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই চোখে পড়ল নীল রঙের ছাউনির একটুখানি অংশ। এই ছাউনিটা দেখতে না পেলে জায়গাটা খুঁজে পাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। বিশেষ করে নতুনদের কাছে। বেশ উত্তেজনায় সেই জায়গাটার সামনে পৌছালাম। বিরাট বড় বড় পাথর দিয়ে জায়গাটা ঘেরা। কিছুটা উল্টো "v" এর মতো। কিছুটা কোণাকৃতি। তাই সহজে চোখে পড়ে না।

পুরো জায়গাটা দেখে মনে হল  পাথরের উঁচু একটা দেওয়াল। কেটে বানানো হয়েছে। দেওয়ালের সামনে একটি আত্মগোপন করার মতো আদর্শ স্থান। দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যাবে আত্মগোপনের জন্যই এই স্থানটি তৈরি করা হয়েছিল। সম্ভবত রাজা চন্দ্রবর্মন শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই বোধহয় পাহাড়ের এই স্থানটি নির্বাচন করেছিলেন। পরে এই স্থানে অবস্থানকালেই হয় তো লিপিটি অঙ্কন করেন। "লিপি"-কে সংরক্ষণের জন্য উপরে একটি টিনের শেড বা চালা তৈরি করা হয়েছে। যাতে বৃষ্টির জলে লিপির লেখাগুলো বিকৃত বা নষ্ট হয়ে না যায়। সামনের দিকটা তারজালি দিয়ে ঘেরা। যাতে কেউ সহজে লিপির দেওয়ালটা নষ্ট করতে না পারে। কিন্তু হায়রে দুর্ভাগা! মানুষের কাছে এ বাধা কোন বাধাই নয়। দেখলাম তারজালির কিছুটা অংশ ছড়ানো। যেটা দিয়ে সহজেই ভিতরে ঢোকা যাবে। লিপিকৃত দেওয়ালের পাশেই ডানদিকে আছে একটি বিরাট বড় কালো পাথর। বর্ষায় পাহাড়ের জল এই পাথরের গা বেয়ে যে নিচে পড়ে, তার দাগও স্পষ্ট।

লিপিকৃত দেওয়ালে কেউ যে আঁচড় কেটেছে তা "S+D" লেখাটি দেখেই বোঝা যায়। এই সব নামের আদ্যক্ষর লিখে কী প্রমাণ হয় কে জানে! হয়তো বা ভালোবাসাকে ইতিহাস বা অমর করার এটাও একটা প্রচেষ্টা। তাই বলে এমন সব মূল্যবান স্থানকে এভাবে দূষিত বা কলুষিত না করলেই মনে হয় ভালো। মূল পাহাড়ের গায়েও দেখলাম এরকম নামের আদ্যক্ষর অজস্র পাথরের গায়ে গায়ে লেখা আছে। বিভিন্ন গাছে, মন্দিরের গায়ে, পাহাড়ের উপর এছাড়াও অজস্র দেওয়ালে নামের এই আদ্যক্ষর তবে কি প্রাচীন রীতি? "গুহা চিত্র" বা "গুহা লিপি"গুলোর মতোই! আজকের দিনে দাঁড়িয়েও আমাদের অবচেতন মনে তবে কি সেই প্রাচীন ধারা বর্তমান! নাকি আধুনিককালে সেটা হাস্যকর, অযৌক্তিক!

যাইহোক ইতিহাসকে দেখার আনন্দে রাজা চন্দ্রবর্মনের কথা আলোচনা করতে করতে কিছুটা নিচে নামতেই ফের সেই ঝিরঝির শব্দটা কানে ভেসে আসতে লাগল। সেই শব্দটা অনুসরণ করে কিছুটা এগোতেই দেখলাম একটি পাহাড়ি ঝরণা। এটাও পাদদেশের ঝর্ণাটির মতোই পাইপে বন্দী। দেখলেই মনে হবে কৃত্রিম। তার নিজস্বতা যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো বলে সেই প্রাকৃতিক ভাবটা নেই। তবে এর জল অনেক বেশি ঠান্ডা। আসলে এর অবস্থানটাই তো একেবারে পাহাড়ি ঘন জঙ্গলের মাঝখানে। জায়গাটা পিকনিক স্পট। তার নমুনাও এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে।

পাহাড় ও জঙ্গল থেকে সমতলভুমিতে নেমে এলেই উত্তর দিকে একটি ঢালাই রাস্তা। তার গায়েই আছে একটি বড় বাঁধ। চারপাশে মাছধরার জন্য মাচা তৈরি করা আছে। বাঁধের পাড় দিয়েই আমরা সেই পিচরাস্তা ধরে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে ইতিহাস দর্শনের আনন্দে বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম।
 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments