জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা-৩/তাহের আলি

গুচ্ছ কবিতা-৩

তাহের আলি


জীবনের ইচ্ছা

আমি যদি বাতাস হতাম 
সবার শরীর মন জুড়িয়ে দিতাম।
আমি যদি সাগর হতাম,
হাজারো হাজারো স্টিমার
আমার বুকের উপর দিয়ে সাঁতার কাটত।
আমি যদি পুস্করিণী হতাম
কত লোক আমার জলে অবগাহন করত।
কিন্তু আমি কিছুই হতে পারি নি।
অবশেষে আমি শিল্পী হলাম।

এক কালো মেয়ের দু:খের ছবি আঁকলাম,-
পতি তাকে ছেড়ে চলে গেছে,
গর্ভে একটা সন্তান রেখে দিয়ে।
বিরহ বেদনায়, নিঠুর অবজ্ঞায়, অভাবের তাড়নায়
জীবন কাটায় সে।

পথ চেয়ে বসে থাকে,
যদি সে আসে, কিন্তু
সে আর এলো না।
গর্ভের গহবর থেকে এক ছেলে,
পৃথিবীর আলো দেখলো।
সে বড় মিষ্টি, স্নেহারদ
মায়ের মত কালো নয় সে।
মা তাকে চুম্বন করলো,
বুকে জড়িয়ে ধরলো।

মায়ের চোখে জল,
তোর কেউ নেই মানিক
আমি আছি তোর মা।
আমার মুখ উজ্জ্বল করিস সোনা।
সদ্যোজাত শিশুটির চাঁদের মতো মুখ থেকে
এক চিলতে স্বর্গীয় হাসি নিঃসৃত হল।
সে যেন বলে দিল...
তোমার দু:খ ঘোচাব ,জননী আমার।


আকাঙ্খা

তুমি আমাকে স্পর্শ করেছ,
কিন্তু আমাকে কোনোদিন দেখোনি,
আমি আছি তোমাতেই, তোমার হৃদয়ে।
তোমার একটা হাত
তোমার বুকে রাখো একটুখানি
বুঝবে, আমি তোমার বুকে এঁকেছি সিম্ফনি।

তোমার দু:খে আমি দু:খ প্রকাশ করিনি,
তোমার সুখের সাথী হয়েছি।
তোমার ক্রন্দনে আমি কাঁদিনি,
তোমার হাসিতে হাসি মিলিয়েছি।
তোমার মঙ্গলে ,আমি মাঙ্গলিক দীপ জ্বেলে
তোমার সম্মুখে দাঁড়িয়েছি।

তুমি আশমানে উঠতে চেয়েছ,
আমি আশমানে উঠার সিঁড়ি পেতে দিয়েছি।
তুমি আনন্দ সাগরে ডুব দিতে চেয়েছ,
আমি সাগরের লোনা জলকে
মিষ্টি জলের রূপ দিয়েছি।
তুমি প্রেমিক হতে চেয়েছ,
আমি একটা রক্ত গোলাপ,
তোমার প্রেমিকার জন্য এনে দিয়েছি।

আমি আকাঙ্খা
তুমি আমাকে স্পর্শ করেছ,
কিন্তু আমাকে কোনোদিন দেখোনি।
আমি আছি তোমাতেই, তোমার হৃদয়ে


বৈষম্য তুমি যাও

বাসে বসে ছিলাম 
বছর দশেকের এক শিশু,
তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় আমাকে উঠাল।
দুটো টাকা দাওনা বাবু–,
শীর্ণ শরীর, খাবার জুটে না তার,
দীর্ণ পোশাক,অঙ্গ খালি আর।
মাথার চুল লালচে বর্ণ,
কত দিন হয়তো তেল পড়েনি।
হাতে একটা ময়লা থলে নিয়ে,
আমার কাছে দন্ডায়মান।


একটা কুড়ি টাকার নোট
তার হাতে দিলাম।
এক অনাবিল হাসি ছড়িয়ে
সে দৌড় দিল।
কোন দিন হয়তো,
এই টাকা সে দেখেনি।
বিগলিত মন আমার বিড়বিড় করে বলছিল–
এই পৃথিবীতে এত অভাব–অনটন,
দুঃখ– বেদনা কেন?

সামনে একটা বড় হোটেল,
কত মানুষের আনাগোনা,
কত মানুষের খানাপিনা।
ওই শিশুটির সেখানে স্থান নেই।
এই পৃথিবীতে এত বৈষম্য কেন?

ও প্রভু, তুমি তো চাঁদ দিয়েছো,
এই চাঁদের আলো
সবার মনে ছড়িয়ে দাও।
তুমি তো বাতাস দিয়েছো,
এই বাতাস সবার অঙ্গে
বুলিয়ে দাও।
তুমি তো ফুল দিয়েছো,
এই ফুলের গন্ধ
সবার অন্তরে পৌঁছে দাও।



প্রেমিকের স্বপ্ন

আমি স্বপ্নে তোমাকে দেখেছি,
মনের সুতোয় তোমাকে বেঁধেছি।
আমার হৃদয় মাঝে তোমাকে জায়গা দিয়েছি।
তোমার দুটো কোমল হাত,
আমার অশান্ত বুকে রাখতে দিয়েছি।
প্রেমের বন্ধন ছিন্ন করে
তুমি চলে গেছো।

শত শত বছর ধরে
গ্ৰাম থেকে গ্ৰামান্তরে,
এক শহর থেকে অন্য শহরে তোমাকে খুঁজেছি।
অরণ্যের মর্মর ছন্দে,
বৃষ্টির ঝরঝর আনন্দে তোমাকে খুঁজেছি।
বিহঙ্গের সুর মূর্ছনায়,
মরু বালুতে পায়ের আলপনায় তোমাকে খুঁজেছি।
কিন্তু তোমাকে পাইনি।

অবশেষে একদিন দেখলাম,
আমার শিয়রে তুমি আসীন।
তোমার দুটো হাত স্পর্শ করেছে আমার মুখ,
তোমার দীর্ঘ কেশ
ছুঁয়ে গেছে আমার বুক।
আমি পেছন ফিরে তাকালাম তুমি নেই।
আসলে তুমি কুহকিনী
তুমি চলে গেছো অনেক দূরে।
কোন এক অচিনপুরে।

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments