জ্বলদর্চি

প্রাচীন মিশরের দেবদেবীর কথা /প্রসূন কাঞ্জিলাল

প্রাচীন মিশরের দেবদেবীর কথা

প্রসূন কাঞ্জিলাল


পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন হল মিশরীয় সভ্যতা। নীল নদের দেশ মিশর। আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে নীলনদের তীরে গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা এবং টিকে ছিল ৩২৩ খৃস্ট পূর্বাব্দে গ্রীক সম্রাট আলেক্সান্ডারের আক্রমনে পর্যুদস্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত। এর রহস্য পন্ডিতদের গবেষনার বিষয়। মিশরের উপর গড়ে উঠেছে পূরাতত্বের নতুন শাখা নাম Egyptology. প্রাচীন যুগের সপ্ত আশ্চর্য্যের মধ্যে আজও টিকে থাকা একমাত্র বিস্ময় মিশরের পিরামিড। কোথা থেকে উৎপত্তি, কিভাবে গড়ে উঠলো বিশাল পিরামিড, মন্দির,ওবেলিস্ক, বা স্ফিংসের মূর্তি সে রহস্য আজও সম্পূর্ন উদ্ঘাটিত হয় নি। নিত্য নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে গবেষনার ফলে, পালটে দিচ্ছে আগের ধারনা গুলোকে। 
খৃস্ট জন্মের ৩১০০ বছর আগে রাজা মেনেস নীল নদের উভয় পাশের উত্তর এনং দক্ষিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বসতিগুলোকে একত্রীভূত করে গোড়াপত্তন করেন মিশরীয় সাম্রাজ্যের। মেনেস হন প্রথম ফারাও। এর পর বংশানুক্রমে ৩১টি রাজবংশ শাসন করেছেন নীল নদের দেশ মিশরকে। মোটামুটিভাবে এখানেই শুরু ধরা হলেও এর ও আগে এমনকি খৃস্টজন্মের ৭,০০০ বছর আগের মিশরীয় সাম্রাজ্যের শিলালিপি আবিস্কৃত হয়েছে।আমাদের যুগে প্রাচীন গ্রীক সভ্যতাকে যেভাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস বিবেচনা করা হয়, ঠিক একইভাবে ঐ সময়ের গ্রীক মনীষিরা মিশরীয় সভ্যতাকে জ্ঞান বিজ্ঞানের সুতিকাগার বিবেচনা করতেন।

 হেরোডেটাস, প্লেটো, পীথাগোরাস সবাই মিশরীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের খোজে উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন সেই সময়ের মিশরে। 

নদী হল সভ্যতার প্রান কেন্দ্র। দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, চাষাবাস, প্রভৃতি কাজের জন্য প্রয়োজন ছিল জল। প্রাকৃতিক জলাধার নদী ছিল জলের সহজলভ্য উৎস। তাই প্রাচীণ সভ্যতাগুলো ছিল নদীকেন্দ্রিক। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় মেসোপটেমিয়া গড়ে উঠেছিল ইউফ্রেটিস, টাইগ্রিস নদীকে ঘিরে, ভারতবর্ষে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধু নদীর তীরে। আফ্রিকার কেন্দ্রস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে মিশরীয় মরুভূমির মধ্য দিয়ে নীল নদ গিয়ে মিশেছে ভূমধ্যসাগরে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নীল নদে বন্যা হত। নীলনদের এই মৌসুমী বন্যা বয়ে আনত উর্বর পলিমাটি ফলে চাষাবাস করা সম্ভব হত। জলেরর সহজলভ্যতা এবং খাদ্যের নিশ্চয়তার কারনেই আদিম মানুষ বসতি গড়েছিল নীল নদের তীরে। নদের দুই পাশে ২০ কিলোমিটার চওড়া এবং নদী বরাবর ৫০০ কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী গড়ে উঠেছিল এই সাম্রাজ্য।

প্রাচীন মিশরে ধর্ম এবং তাদের দেব দেবতারা কেমন ছিল? আদিম প্রস্তর যুগ থেকেই মিশরের নীল নদীর তীরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল স্থায়ী বসতি। তখনকার দিনের মিশর এখনকার মত মরুভূমির দেশ ছিল না । পশু শিকার এবং চাষাবাসের জন্য আদর্শ স্থান ছিল নীল নদের দেশ মিশর। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের সাথে এল রীতিনীতি বিশ্বাস । কিভাবে বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃস্টি হল , সূর্য্য, বাতাস, বৃস্টি, বন্যা ইত্যাদি কেন হয়? মানুষ মারা যায় কেন? মৃত্যুর পর কি হয়? ইত্যাদি ভাবনা স্বভাবতই তাদের ভাবিয়ে তুলেছিল। জন্ম নিয়েছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের। প্রথমে তা ছিল জাদুবিদ্যাকে ঘিরে। অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস থেকে জন্ম নিল দেবদেবতা এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস। সমাজ বিবর্তনে এবং সভ্যতার বিকাশের সাথে ধর্ম ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত।প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের ধর্ম বিশ্বাসকে লিখে রেখেছেন পাথরের গায়ে , সমাধি ক্ষেত্রে, গড়ছিলেন দেবদেবতাদের মূর্তি, মন্দির ইত্যাদি। 

প্রাচীন মিশরে ২০০০ এর ও বেশী দেবদেবীর অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায়। এই দেব দেবতাদের মধ্যে স্থান কাল এবং পাত্রের পার্থক্য ছিল। কোন এক স্থানে যে দেবতা শ্রেষ্ঠ হিসেবে পূজিত হতেন অন্য স্থানে ছিলেন পৃথক অন্য কোন দেবতা, আবার মিশরীয় সাম্রাজ্যের গোড়ার দিকের দেবতারা পরবর্তীকালের দেবতাদের থেকে পৃথক। এদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন মিশরীয় রাজা বা ফ্যারাও যারা পরবর্তীতে দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত হন। কেউ কেউ আবার ছিলেন ক্ষতিকর দেবতা । উল্লেখযোগ্য দেবতারা ছিলেনঃ- রা বা রে(Re), তাহ(Ptah),ওসিরিস(Osiris), আইসি্স‌(Isis),হোরাস(Horus),সেথ(Seth), হাথর(Hathor), আনুবিস(Anubis), থথ(Toth), আটেন(Aten), আমুন(Amun), বাস্তেত(Bastet)।

তাহ-
 মিশরের মেমফিসে (কায়রো’র নিকটবর্তী স্থান) উপাস্য তিন দেবতার প্রধান ছিলেন তাহ।অন্য দুই জন দেবতা ছিলেন তার পত্নী সেখমেত এবং পূত্র নেফেরতেম। শেখমেত ছিলেন সিংহের মাথাওয়ালা দেবী । তিনি সুর্যদেবতা রা’এর শত্রুদের ধ্বংশ কারী ছিলেন আর নেফেরতেম ছিলেন পদ্ম দেবতা। তাহ’র প্রতিকৃতি হল দেবতার পীঠস্থানে হাতে লাঠিওয়ালা মমিকৃত পুরুষ হিসেবে। তিনি ছিলেন সৃস্টিকর্তা দেবতা । তিনি তার চিন্তাশক্তি এবং নির্মান ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবী সৃস্টি করেন।মেমফিসের বিশ্বাসমতে দেবতা সোকারের সাথে তিনি ছিলেন সমাধিক্ষেত্র রক্ষাকারী মৃতদের দেবতা।গ্রীক পন্ডিতদের মতে তাহ ছিলেন ধাতুকর্মের দেবতা হেফেস্টাস।  

রে (Re)-
রে ছিলেন সূর্য্য দেবতা। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত সূর্য্য হল জীবনের প্রতিচ্ছবি। সূর্য্যোদয়, সূর্য্যাস্ত, পূনরায় উদয় হওয়ার মতই জন্ম, মৃত্যু এবং পূনর্জন্ম। রা দেবতা কে সূর্য চাকতি বা মাথায় সূর্য্য চাকতি বয়ে নিয়ে বেড়ানো ঈগল পাখির মাথা ওয়ালা একজন পুরুষ হিসেবে। তার প্রধান উপাসনা স্থল ছিল ইউনু বা হেলিওপোলিস( সূর্য্য নগরী) রা দেবতার বিভিন্ন রুপে আবির্ভূত হতেন, সকালে খেপরী(গুবরেপোকা) , বিকালে আটুম , এবং হোরাক্তি। গিজার স্ফিংসের মুর্তি হল হোরাক্তির প্রতিফলন। রা ছিলেন ৯ জন দেবতা বা গ্রেট ইনিয়াড( Great Ennead) প্রধান। তিনি ছিলেন পরকালের সর্বোচ্চ বিচারক। মিশরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে বিবেচিত রা-এর পুত্র ছিলেন একজন মিশরীয় ফারাও। 

ওসিরিস- যে নয়জন দেবতা গ্রেট ইনিয়াড( Great Ennead) হিসেবে বিবেচিত হতেন তাদের একজন হলেন ওসিরিস। ওসিরিস ছিলেন পরকালের বিচারক , শস্য এবং পূনর্জন্মের দেবতা। তাকে দেখানো হয়ে থাকে একজন মমিকৃত রাজা হিসাবে। সেই সময়ের জনশ্রুতি মতে প্রতিহিংসাপরায়ন ভাই সেঠ কর্তৃক খুন হলেও রাজা ওসিরিস পূনর্জন্ম লাভ করেন। ওসিরিসের উপাসনার প্রধান কেন্দ্র ছিল এবিডোস(Abydos) । তার মৃত্যু এবং পুনর্জন্ম পালিত হত বাৎসরিক উৎসবের মধ্য দিয়ে। তিনি ছিলেন সার্ব্জনীন ভাবে পূজিত দেবতা। কারন সম্ভবত মিশরীয়রা ছিল পূনরজন্মে বিশ্বাসী এবং অনন্ত জীবন প্রত্যাশী।

আইসিস- শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় দেবী হিসেবে বিবেচিত আইসিস ছিলেন ওসিরিস পত্নী এবং হোরাসের মা। তার সম্মোহন শক্তি এবং পতিভক্তির জন্য সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি। আইসিস এবং ভগ্নি নেফথিস ছিলেন মৃতদের রক্ষাকারী। নেইথ এবং সেলকেত দেবীদের সাথে মৃতদের কফিন এবং অংগ প্রত্যঙ্গের পাত্র রক্ষা করতেন আইসিস। মিশরে মৃতদেহ থেকে লিভার এবং অনান্য প্রত্যংগ বার করে রাখা হত ঢাকনা দেওয়া জার বা পাত্রে এবং মৃতদেহকে মমী করে রাখা হত। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত মৃতরা এক সময় পূনর্জন্ম লাভ করবে। সে জন্য দেহ কে মমি করে সংরক্ষন করত। 

হোরাস- হোরাস হলেন আকাশের দেবতা। তিনি ছিলেন ওসিরিস এবং আইসিসের পূত্র। দেবতা সেথের হাতে ওসিরিস খুন হওয়ার পর তার জন্ম। মা আইসিস তাকে বড় করেন এবং ৮০ বছর ধরে যুদ্ধ করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেন। তিনি মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে অভিসিক্ত হন। তিনি হলেন রাজাদের রক্ষাকারী পৃষ্ঠপোষক দেবতা। তিনি গ্রেট ইনিয়াড ৯ জন দেবতাদের একজন। ফ্যালকন বা ঈগল পাখির মাথাওয়ালা পুরুষ দেবতা হোরাস হলেন রাজাদের দেবতা। হোরাসের উপাসনাস্থল হল বেহদেত এবং হিয়েরাকোনপলিস।

সেথ- সেথ হলেন লাল দেবতা। তিনি মরুভুমি ঝড়ঝঞ্ঝা এবং ধ্বংসের দেবতা। তার প্রতিকৃতি বিভিন্ন প্রানী যেমন শুকর, গাধা, জলহস্তী বা ওকাপি ইত্যাদি বিভিন্নভাবে বিবেচিত হয়।তিনি ছিলেন দেবতা ওসিরিসের ভাই এবং দেবতা হোরাসের প্রতিদন্দ্বী। মিশরীয়রা তাকে ক্ষমতা কে ভয় এবং ভক্তি করত। গ্রীকরা তাকে দানব টাইফন এর সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। 

হাথর- দেবী হাথর হলেন প্রেমের দেবী। তার প্রতিকৃতি হল গরু বা গরুর মাথা কিংবা শিং এবং কানওয়ালা মানবী। দেবী হাথর সঙ্গীত এবং মদিরার দেবী। তার উপসনাস্থল ছিল ডেনডেরা। তিনি মাতৃত্ব , সৃস্টির দেবী। অবিবাহিত মেয়েদের রক্ষাকারী এবং রাজাদের অন্নদাতা। দেবতা বেস এর সাথে তিনি মহিলাদের সন্তান জন্মের সময় রক্ষা করতেন। তিনি মিশরের সিনাই এলাকার খনি রক্ষাকারী দেবী, হোরাসের পত্নী এবং হোর-মা তাওয়ী’র মা। গ্রীক পৌরানিক ভালবাসার দেবী আফ্রোদিতি’র সমকক্ষ। 

আনুবিস- আনুবিস হলেন শেয়াল দেবতা। সমাধিক্ষেত্রে শেয়ালের আনাগোনা থেকে তাকে মিশরীয়রা মৃতদেহের দেবতা হিসেবে পূজা করতে থাকে। শেয়ালের বা বন্য কুকুরের দেহ অথবা শেয়ালের মাথা ওয়ালা দেবতা আনুবিস। ওসিরিসের আগে আনুবিসকে পূজা করা হত মৃতদেহ সৎকারের দেবতা এবং সমাধিক্ষেত্রের রক্ষক হিসেবে। আনুবিসের কাছেই মিশরীয়রা মৃতদের জন্য প্রার্থনা করতেন। তিনি ওসিরিসের মৃতদেহকে সর্বপ্রথম মমিতে রুপান্তরিত করেন এবং সেই থেকে মমি প্রস্তুতের দেবতা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। মৃত্যুর পর তিনি মৃতব্যাক্তিদের পথ দেখিয়ে থাকেন।

থথ – থথ হলেন চন্দ্র দেবতা। তার প্রতিকৃতি হল সারস শ্রেনীর পাখি আইবিসের মাথাওয়ালা একজন পুরুষ। তার কাছে আইবিস পাখি এবং শুকর হল পবিত্র। লেখন পদ্ধতির আবিস্কারক থথ । মৃত্যুর পর বিচারের রায় তিনি লিখে রাখতেন মিমুসপ গাছে। থথের কাছে থাকা বইতে পৃথিবীর সমস্ত তথ্য থাকত। তার প্রধান উপাসনা স্থল হল হারমোপলিস ( এখনকার এল- আশুমুনেইন) গ্রীক পুরানের দেবতাদের দুত হারমিস এর সমকক্ষ ধরা হয় থথকে।

আমুন- আমুন শব্দের অর্থ অদৃশ্যমান। তার প্রতিকৃতি হল মাথায় লম্বা দুই পালক সমৃদ্ধ টুপি এবং হাতে দন্ড নেওয়া একজন পুরুষের। তার প্রিয় হল ভেড়া এবং রাজহাস যারা পুরুষত্বের চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়। মিশরের মধ্যম রাজবংশের যুগে তাকে “রা” এর সাথে একসাথে “আমুন-রা” হিসেবে পূজা করা হত। তার উপসনার স্থল ছিল থিবীস(এখনকার লুক্সর) এ । অস্টাদশ রাজবংশের যুগে আমুন সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা হিসেবে পুজিত হন। দেবতাদের রাজা হিসেবে পূজনীয় আমুনের সুবিশাল মন্দির “ কারনক” এ অবস্থিত।

আটেন- আটেন হলেন সূর্য্য চাকতি।। সুর্য্য চাকতি হিসেবে স্বর্গের দেবতারা দৃশ্যমান হতেন। ফারাও আমেনহোটেপ-৪ এর রাজত্বকালে আটেন সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ফারাও নিজের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন “আখেনাটেন” বা আটেনের স্বর্গীয় আত্মা। তার সময়ের আঁকা ছিবতে আটেনকে দেখান হয় হাতের উপর সুর্য্য চাকতি হিসেবে। আখেনাটেন তার স্ত্রী নেফেরতিতিকে নিয়ে নতুন এক নগর বসবাস শুরু করেন যেখানে আটেন, রা এবং আখেনাটেনের পূজা হত। আটেন ছিলেন রাজাদের দেবতা, সাধারন মিশরবাসীদের কাছে আটেনের গুরুত্ব ছিল না। 

বাস্তেত- বাস্তেত ছিলেন বিড়াল দেবী। তার প্রতিকৃতি হল বিড়ালের মাথা ওয়ালা এক নারী। তিনি ছিলেন কুমারী তৎসত্বেও তার একপূত্র ছিল, নাম মিহোস। গ্রীক পোরানিক শিকারের দেবী আর্টেমিসকে বাস্তেতের সমকক্ষ বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

খ্রীস্টপূর্ব ৩৪০০ অব্দে নানারূপ দেবদেবীর পূজা করতো তারা। মিশরের প্রধান সূর্যদেবতার নাম ছিল ‘রি’ বা ‘রা’। রা’র শরীর মানুষের মত হলেও, তার চেহারা ছিল প্রাচীন বিলুপ্ত শিকারী বাজ পাখির মত। রা’র মাথায় থাকতো একটি সাপ-জড়ানো গোলাকার মুকুট। দেবতা রা’য়ের নাম পরিবর্তন করে মিশরীরা পরে একে ‘আমন’, ‘আটন’ ইত্যাদি নামেও ডাকতো। সূর্যদেবতা রা’য়ের ৩ ছেলের নাম ছিল যথাক্রমে শু, টেফনুট ও নুট এবং মেয়ের নাম ছিল ‘শেব’। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, ‘শেব’ হচ্ছে পৃথিবী, আর তিন ছেলে হচ্ছে আকাশ, পাতাল ও বায়ুমন্ডল। শেবের ২ ছেলের নাম ছিল ‘ওসাইরিস’ ও ‘সেট’। ‘ওসাইরিস’ ছিল মৃতদের তথা পাতালপুরীর রাজা। অন্য দেবতা ‘হোরাস’ও ছিল সূর্যসন্তান। তাদের সারসমুখো দেবতার নাম ছিল ‘থথ’। ‘আনুবিস’ ছিল শিয়ালমুখো মৃত্যুর দেবতা। বিড়ালমুখো ‘বাস্ট’ দেবতা ছিল রা’য়ের কন্যা, এর অপর নাম ছিল ‘আইলুরাস’ প্রকৃতপক্ষে সূর্যদেবতা, যার সঙ্গে মিল ছিল চন্দ্রদেবতা ও গ্রীক দেবী আর্টেমিসের সঙ্গে। ‘বেস’ ছিল নিউবিয়ান থেকে আগত মিশরীয় দেবতা। ‘গেব’ ছিল উর্বরতার দেবতা, যে ডিম পারলে তাতে সূর্যদেবতা ‘তা’ দিতো। মিশরের নিম্নভূমির দেবতা ছিল ‘গেব’। গেব তার বোন ‘নাট’কে বিয়ে করেছিল। গ্রীক দেবতা ক্রোনসের সঙ্গে তার মিল ছিল। মিশরীয় গো-দেবতার নাম ছিল ‘হাথোর’। এই দেবী রা-এর স্ত্রী ও হারোসের মা ছিল। দেবতা অসিরিসের ছেলে ছিল ‘হারোস’। গ্রীক এথেনা দেবীর সমগোত্রীর মিশরীয় দেবীর নাম ছিল ‘নেইথ’। ‘ইসিস’ ছিল অন্যতম দেবতা অসিরিসের স্ত্রী, হোরোস এর মা, অসিরিসের বোন এবং জেব ও নাট এর কন্যা। ‘নেপথিস’ ছিলেন সেব ও নাটের কন্যা, আইসিস, সেট ও অসিরিসের বোন এবং সেট এর স্ত্রী, আনবিসের মা। এই দেবতার মুখ ছিল শিকারী ঈগলের মত। মিশরীর আকাশ দেবতার নাম ছিল ‘নাট’। নাট ছিল সু ও টেফনাটের কন্যা এবং জেবের স্ত্রী।

এলাকা হিসেবে মিশরে হেলিওপোলিসের নয় দেবদেবী ছিল যথাক্রমে আতুম, গেব, আইসিস, সুট, ওসাইরিস, নেপথিস, সেথ, শু এবং তেফনুত। হার্মোপোলিসের আট দেবদেবী ছিল যথাক্রমে নুনেত, নু, আমুনেত, আমুন, কুকেত, কুক, হুহেত ও হুহ। এলিফ্যান্টাইনের খুম, সাতেত ও আনুকেত। থিবিসের আমুন, মাত ও খেনসু। মিম্ফিসের পহাত, সেকমেত ও নেফেরতেম। এ ছাড়াও বিচ্ছিন্ন মিশ্র দেবতারা ছিলো যথাক্রমে আমুন, আমুনেত, আনুবিস, আনুকেত, আপেপ, আতেন, আতুম, বাস্ত, বাল, বাত, বেস, হোরাসের চার পুত্র, গেব, ছাপি, ছাথোর, হেগেত, হোরেস, ইমহোতেপ, আইসিস, খেপ্রি, খানুম, মাহেস, মা’আত, মাফদেত, মেনহিত, মেরেতসেগের, মেনথু, মুত, নুনেত, নেইথ, নেখবেত, নেপথিস, নুত, ওসাইরিস, পতাহ, রা, রা-হোরাকতাই, রেশেপ, সাতিস, মেখমেত, সেকের, সেলকেত, সবেক, সেত, সেশাত, শু, তাওযেরেত, তেফনুত, থোথ, ওয়াজেত, ওয়াজ-ওযের, ওয়েগওযাওযেত, ওরসেত।

মিশরীয় শাসক ‘ফারাও’ বা ‘ফেরাউন’রা নিজেদের দেবতা কিংবা তার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতো মানুষের সামনে এবং প্রজাদের কৃতদাস বানিয়ে তাদের শোষণ করতো। মিশরের রাজা ফারাহ খাফরার চেহারার অনুকরণে ছিল গিজায় স্ফিংসের দেবমূর্তি। 

মীশরীয়রা মৃত্যুর পরে আত্মায় বিশ্বাস করতো এবং মনে করতো যে, মৃত্যুদেহে আবার আত্মা ফিরে আসে, যে কারণে তারা মৃতকে বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতো ‘মমি’ করে, যাতে তার দেহে আত্মা আসতে পারে সহজে। অনেক আগেই পৃথিবীর হাজারো প্রাচীন ধর্মের মত মিশর থেকেও এ ধর্ম লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বর্ণিত শক্তিধর দেবদেবী সমেত! মিশরীয় ফারাওগণ খ্রীস্টপূর্ব ৩২০০ থেকে মিশরে পরম বিক্রমে পৌরাণিক ধর্মকেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। বর্ণিত রাষ্ট্রে বহু দেবদেবীর অস্তিত্ব থাকলেও, একসময় মিশরবাসী কেবল একেশ্বর হিসেবে সূর্যদেব ‘আতেন’ কেই পূজা করতো।
ন্যুট
ন্যুট ছিলেন আকাশ ও তারাদের দেবী। তার বিশাল দেহ ভূ-পৃষ্ঠের উপরে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে মানবজাতিকে রক্ষা করে বলে বিশ্বাস করতো প্রাচীন মিশরীয়রা। প্রতিদিন রাতে তিনি সৌর দেবতা রা-কে খেয়ে ফেলতেন এবং প্রতিদিন সকালে তাকে আবার নতুন করে তিনি জন্ম দিতেন!

শু
শু ছিলেন শুষ্ক বাতাসের দেবতা। তাকে সাধারণত মাথায় পালক শোভিত একটি মুকুটসহ দেখা যায়। তার কাজ ছিলো মূলত ন্যুটের দেহকে উপরে তুলে রেখে আকাশ ও মাটিকে পৃথক রাখা!

গেব
গেব ছিলেন পৃথিবীর দেবতা। তিনি ছিলেন একইসাথে আকাশের দেবী ন্যুটের ভাই ও স্বামী। প্রাচীনকালে মিশরীয়রা মনে করতো যে, পৃথিবীতে যতো ভূমিকম্প হয়, সেগুলো আসলে গেবের হাসির কারণে হয়ে থাকে!

আমুন
আমুন এককালে মিশরীয়দের কাছে বেশ ক্ষমতাশালী দেবতা বলে পরিচিত ছিলেন আমুন। এমনকি মিশরের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এককালে তাকে ‘দেবতাদের রাজা’ বলেও মনে করা হতো। কখনো কখনো সূর্য দেবতা রা’র সাথে মিলিত হয়ে তিনি ‘আমুন-রা’ নাম ধারণ করতেন।

আনুবিস
আনুবিস মানুষের মতো দেহ ও শেয়ালের মতো মাথাবিশিষ্ট আনুবিসকে ভাবা হতো মৃত্যুর দেবতা। প্রাচীন মিশরে প্রায়ই শেয়ালদের দেখা যেত কবরস্থান থেকে মৃতদেহ তুলে খাচ্ছে। এখান থেকেই আনুবিসের শেয়ালের মতো মাথার ধারণাটি এসেছে বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন মিশরীয় রাজাদের দেহ মমিকরণের সাথে যুক্ত পুরোহিতরাও আনুবিসের অনুকরণে মুখোশ পরতেন।

বাস্টেট

বাস্ট, বাস্টেট, উবাস্টি ও পাস্‌খ নামে পরিচিত ছিলেন এ দেবী। তাকে বিভিন্ন জিনিসের সংরক্ষক মনে করা হতো দেখে তার রুপও ছিলো বিভিন্ন। প্রথমদিকে বাস্টেটকে ভাবা হতো মিশরের নিচু এলাকাগুলোর রক্ষাকর্ত্রী দেবী। এজন্য তখন তাকে সিংহীর রুপে দেখা যেত। পরবর্তীতে তাকে নিরাপত্তা ও আশীর্বাদের দেবী এবং নারী-শিশু- বিড়ালের রক্ষাকর্ত্রী মনে করা হতো। সেই সাথে সূর্যোদয়, সঙ্গীত, নৃত্য, আনন্দ, পরিবার, উর্বরতা ও জন্মের দেবীও ধরা হতো তাকে। কখনো কখনো বাস্টেটকে বিড়াল রুপেও দেখা গিয়েছে।

বেস

গর্ভবতী নারী, সদ্য জন্ম নেয়া শিশু ও পরিবারের রক্ষক হিসেবে দেখা হতো কিম্ভূতকিমাকার বামন এ দেবতাকে। তিনি গায়ে সিংহের চামড়া জড়িয়ে রাখতেন। কোনো শিশুর জন্মের সময় তিনি সারা রুমে ঝুমঝুমি বাজিয়ে নেচে নেচে অশুভ আত্মাকে দূরে রাখতেন বলে বিশ্বাস করতো প্রাচীন মিশরীয়রা। আর যখন কোনো বাচ্চাকে কোনো কারণ ছাড়াই হাসতে দেখা যেতো, তখন তারা ভাবতো যে রুমের কোথাও বসে বেস হয়তো বাচ্চাটিকে ভেংচি কাটছে!

হাপি

নীলনদের সৃষ্ট বার্ষিক প্লাবনের দেবতা হিসেবে দেখা হতো হাপিকে। বিশালাকার পেট ও স্তনবিশিষ্ট এ দেবতার মাথায় থাকতো বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ।

হাথর

সৌরদেবতা রা’র কন্যা হাথরকে দেখা হতো নারী, সৌন্দর্য, ভালোবাসা, আনন্দ ও সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষক দেবী হিসেবে। গরু, নারীদেহ কিন্তু কানটি গরুর কিংবা নারীদেহ কিন্তু গরুর শিং মাথায় জড়িয়ে রাখা- এ তিন রুপেই দেখা যেত হাথরকে।

হোরাস

ওসাইরিস ও আইসিসের পুত্র হোরাসকে দেখা যেত বাজপাখি কিংবা মানুষের দেহ ও বাজপাখির মাথার সংমিশ্রিত এক রুপে। হোরাসকে আকাশের দেবতা ভাবতো প্রাচীন মিশরীয়রা।

আইসিস

প্রাচীন মিশরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক দেবী ছিলেন আইসিস। তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ জাদুকর মনে করতো মিশরীয়রা। তাই জাদুর দেবী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন সর্বত্র। জীবন দানকারী, আরোগ্য প্রদানকারী এবং রাজাদের প্রতিরক্ষক হিসেবে দেখা হতো আইসিসকে। কখনো নিজের মাথায় একটি সিংহাসন নিয়ে, আবার কখনো পুত্র হোরাসকে স্তন্যদানরত অবস্থায় দেখা যেতো আইসিসকে।

খেপ্রে

খেপ্রে, খেপ্রি, খেপ্রা, খেপেরা ইত্যাদি নানা নামে পরিচিত এ দেবতাকে মিশরীয়রা গুবরে পোকাদের দেবতা বলে ভাবতো। গুবরে পোকাদের বিভিন্ন প্রাণীর মল গড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখে প্রাচীন মিশরীয়রা ভাবতো যে, খেপ্রে হয়তো সূর্যকে তার কক্ষপথে স্থাপন করে এসেছেন!

খ্‌নুম

ভেড়ার মাথাওয়ালা খ্‌নুম বা খ্‌নেমু নামে পরিচিত এ দেবতাকে মিশরীয়রা নীল নদের উৎসের দেবতার মর্যাদা দিয়েছিলো। একই সাথে তাকে জলপ্রপাত, উর্বরতা ও সৃষ্টির দেবতা ভাবা হতো। তার কাছে থাকা কুমোরের চাকাতেই তিনি নীলনদের তীরের মাটি থেকে প্রথম মানুষ তৈরি করেছিলেন বলে এককালে বিশ্বাস করতো মিশরীয়রা।

খোন্সু

আমুন ও মুতের ছেলে খোন্সুকে খোন্স, খেন্সু, খুন্স ইত্যাদি বিভিন্ন নামেও ডাকা হতো। প্রাচীন মিশরে তাকে চাঁদ, চাঁদের আলো ও সময়ের দেবতা হিসেবে গণ্য করা হতো।

মা’আত

আইন-কানুন, নীতি-নৈতিকতা ও বিচার ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির দেবী হিসেবে ভাবা হতো মা’আতকে। উটপাখির পালক মাথায় জড়ানো অবস্থাতেই তাকে চিত্রায়িত হতে দেখা গেছে।

ম্যুট

সৌরদেবতা রা’র কন্যা ম্যুটকে শকুনদের দেবী হিসেবে কল্পনা করতো প্রাচীন মিশরীয়রা। দীর্ঘাকায় এ দেবীর পরনে থাকতো উজ্জ্বল রঙয়ের পোষাক, মুকুটে শোভা পেত শকুন।

নেফিথিস

অনেক ক্ষমতার অধিকারী দেবীকে নেফিথিসকে প্রাচীন মিশরীয়রা ‘চমৎকার দেবী’ বলেও সম্বোধন করতো। তবে সময়ে সময়ে চমৎকার এ দেবী ভয়ংকরও হয়ে উঠতে পারতেন। রাজার শত্রুদেরকে তিনি তার নিঃশ্বাস দিয়ে শেষ করে দিতে পারেন বলে বিশ্বাস করতো মিশরীয়রা। তাই তাকে রাজাদের প্রতিরক্ষক বলা হতো। মৃত্যু, ক্ষয় ও অন্ধকারের এ দেবীর জাদুবিদ্যায় ছিলো অসাধারণ পারদর্শীতা ও অদ্ভুত আরোগ্য প্রদানের ক্ষমতা।

ওসাইরিস

প্রাচীন মিশরের দেবতাদের মাঝে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করে আছেন ওসাইরিস। মিশরের প্রথম রাজা হিসেবে চিত্রায়িত এ দেবতাকে তারা ভাবতো শস্যের দেবতা হিসেবে। ফারাওয়ের ক্ষমতা দখলের লড়াই নিয়ে নিজ ভাই সেথের কাছে খুন হন ওসাইরিস। পরে অবশ্য ওসাইরিসের ছেলে হোরাস সেথকে পরাজিত করে ফারাও হয়েছিলেন। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, স্ত্রী আইসিস তাকে পুনরায় জীবিত করেছিলেন। এরপর তিনি পাতালপুরিতে চলে যান শাসক হিসেবে এবং মৃতদের বিচার করতে!

প্‌তাহ

প্‌তাহকে স্থাপত্যশিল্পের দেবতা হিসেবে কল্পনা করতো মিশরীয়রা। তারা ভাবতো যে, নিজের কল্পনা ও মুখ নিঃসৃত শব্দের সাহায্যেই বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন প্‌তাহ! মমিবেশী এ দেবতার হাত দুটো বের হয়ে থাকতো ব্যান্ডেজের ভেতর থেকে। সেই হাত দিয়ে ধরা থাকতো একটি লাঠি।

রা
রা, রে ইত্যাদি নানা নামে পরিচিত এ দেবতা ছিলেন মিশরীয় মিথলজির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক দেবতা। মূলত সৌরদেবতা থাকলেও তার ক্ষমতা ছিলো অনেক। মানুষের মতো দেহ ও বাজপাখির মতো মাথাধারী রা’র মাথায় থাকতো সৌর চাকতি।

রা

প্রতিদিন সকালে পূর্বদিকে তার জন্ম হতো ও রাতে পশ্চিমে ঘটতো মৃত্যু। দিনের বেলায় সৌর নৌকায় চড়ে তিনি ঘুরে বেড়াতেন পুরো আকাশ জুড়ে। আর রাতের বেলায় পাতালপুরিতে গিয়ে শায়েস্তা করে আসতেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের। অন্যান্য দেবতাদের উপর তার ক্ষমতা এততাই বিস্তৃত ছিলো যে, তিনি মাঝে মাঝেই তাদের ক্ষমতা আত্মীকরণ করতে পারতেন। এভাবেই আমুন-রা (আমুন ও রা), মন্টু-রা (মন্টু ও রা), রা-হোরাখ্‌তি (রা ও হোরাস) নামগুলো এসেছিলো রা’র জন্য।

সবেক

কুমিরের মতো মাথা ও বাকিটুকু মানবদেহের অধিকারী সবেককে কুমিরদের দেবতা মনে করা হতো এককালে।

সেথ

গেব ও ন্যুটের ছেলে সেথকে সেত, সেতেখ, সুতি ও সুতেখ নামেও ডাকতো প্রাচীন মিশরীয়রা। মরুভূমি, বজ্রপাত ও অকল্যাণের দেবতা হিসেবে ভাবা হতো সেথকে। তার মাথায় থাকা পশুটি আসলে কী সে সম্পর্কে জানা যায় নি। কখনো কখনো আবার জলহস্তী, শূকর কিংবা গাধার রুপেও দেখানো হয়েছে সেথকে।

টেফনাট

সিংহীর মাথা ও মানুষের শরীরধারী টেফনাট ছিলেন শু-এর স্ত্রী। তাকে পানি ও উর্বরতার দেবী হিসেবে ভাবা হতো।

ঠথ

লেখালেখি কিংবা গণনায় ব্যস্ত হিসেবে চিত্রায়িত ঠথ ছিলেন জ্ঞানের দেবতা। মানবদেহ ও আইবিস পাখির মাথাবিশিষ্ট ঠথের হাতে লেখালেখির জন্য সবসময় কলম ও বোর্ড থাকতোই!

ওয়াজ-ওয়ের
আংশিক পুরুষ ও আংশিক নারী হিসেবে চিত্রায়িত এ দেবতাকে উর্বরতার দেবতা বলে ভাবতো মিশরীয়রা। কখনো কখনো তাকে গর্ভবতী হিসেবেও দেখানো হয়েছে!

তাওয়ারেত

দেবী তাওয়ারেত ছিলেন জলহস্তীর মতো দেখতে। যেহেতু মা জলহস্তী তার বাচ্চাদের রক্ষা করতে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে (এটা তো দুনিয়ার যেকোনো মা-ই করবে!), তাই গর্ভবতী মায়েরা নিজেদের গর্ভের সন্তানকে রক্ষার জন্য তাওয়ারেতের মন্ত্রপূত কবচ পরতেন।

ওয়াজেত
গোখরা সাপের মতো করে চিত্রায়িৎ এ দেবীকে মিশরের নিচু অঞ্চলের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে এককালে মনে করতো মিশরের অধিবাসীরা।

সপদু
তিনি ছিলেন একজন যুদ্ধের দেবতা।

সেশাত
কখনো ঠথের কন্যা আবার কখনো ঠথের স্ত্রী হিসেবে দেখানো হতো দেবী সেশাতকে! তাকে লেখালেখি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও স্থাপত্যবিদ্যার দেবী মনে করা হতো।

ক্বেতেশ
সিরিয়া থেকে মিশরীয় মিথলজিতে ঢুকে পড়া দেবী ক্বেতেশকে দেখা হতো উর্বরতার প্রতীক হিসেবে।

সার্কেত

সার্কেতকে এককালে মিশরের অধিবাসীরা ভাবতো বিচ্ছুদের দেবী হিসেবে। তিনি যেমন খারাপ লোকদের গায়ে বিচ্ছুর হুল ফুটিয়ে দিতেন, তেমনি ভালো লোকেরা বিচ্ছু বা সাপের বিষে আক্রান্ত হলে তাদের রক্ষার ব্যবস্থাও করতেন!

রায়েত-তাওয়ি
তাকে বলা যেতে পারে সৌরদেবতা রা-এর সঙ্গিনী।

সেকার
সেকারকে বলা হতো বাজপাখিদের দেবতা।

ক্বেবুই
উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত বাতাস নিয়ন্ত্রণকারী দেবতা ছিলেন ক্বেবুই!

সেখমেত

আগুন ও যুদ্ধের দেবী বলে পরিচিত সেখমেতের মাথাটি ছিলো সিংহীর এবং দেহটি ছিলো একজন নারীর। তার নিঃশ্বাসের ফলেই মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করতো মিশরের লোকজন!

পাখেত
পাখেত নামে এ দেবীর মাঝে একই সাথে স্নেহ ও আক্রোশকে খুঁজে পেত মিশরের অধিবাসীরা। কারণ তিনি ছিলেন একইসাথে মায়ের মতো স্নেহময়ী ও যুদ্ধের মতো ধ্বংসাত্মক বিষয় দুটোর দেবী।

নেখবেত
শকুনের মতো দেখতে এ দেবী ছিলেন মিশরের উঁচু এলাকা, শিশুর নিরাপদ জন্ম ও ফারাওদের রক্ষার কাজে নিয়োজিত।

মেন্‌হিত
সিংহ ও যুদ্ধের দেবী ছিলেন মেন্‌হিত।

কুক
নারী ও পুরুষ উভয়ের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কুককে দেখা হতো অন্ধকার জগতের সাথে সম্পৃক্ত এক সত্ত্বা হিসেবে। তাকে কেক, কেকু প্রভৃতি নামেও ডাকা হতো।

মাফদেত
মিশরীয় উপকথার একেবারে শুরুর দিকে খোঁজ মিলে মাফদেতের। বিড়াল বা বেজির ন্যায় চিত্রায়িত এ দেবী সাপ ও বিচ্ছুদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবে বলে বিশ্বাস করতো মিশরীয়রা।

কেবেচেত
দেবতা আনুবিসের কন্যা কেবেচেতকে প্রাচীন মিশরীয়রা ক্বেবেহেত, কেবহুত, কেবেহুত, ক্বেবেহুত ও কাবেচেত নামেও ডাকতো। তিনি ছিলেন সজীবতা ও বিশুদ্ধতার দেবী।

মাহেস
সিংহের ন্যায় মস্তকধারী মাহেস ছিলেন প্‌তাহের ছেলে। তাকে যুদ্ধের দেবতা হিসেবে মান্য করতো লোকজন।

হেকেত
ব্যাঙের আকৃতিধারী দেবী হেকেত ছিলেন জীবন ও উর্বরতার প্রতীক।

গেঞ্জেন ওয়ের
রাজহাসের মতো দেখতে এ দেবতাকে আসলে কোন কাজ নিয়ন্ত্রণের ভার দিয়েছিলো তার অনুসারীরা তা জানা যায় নি! তবে প্রাচীন মিশরের বিভিন্ন চিত্রকর্মে প্রায়ই দেখা মেলে তার।

বাবি
বাবা, বাবি প্রভৃতি নামে পরিচিত এ স্বত্ত্বা ছিলেন বেবুনদের দেবতা। বেবুনদের সাথে মানুষের চারিত্রিক কিছু বিষয়ের মিল দেখে তখন মানুষ ভাবতো যে, বেবুনেরা বুঝি তাদের মৃত পূর্বপুরুষ!

আপেপ
সাপের মতো দেখতে এ দেবতা আপেপ, আপেপি, অ্যাপোফিস ইত্যাদি নামে পরিচিত। তাকে অন্ধকার জগত ও বিশৃঙ্খলার সাথে সম্পৃক্ত বলে মনে করতো মিশরীয়রা।

আমুনেত
দেবতাদের রাজা হিসেবে খ্যাত আমুনের স্ত্রীর নাম ছিলো আমুনেত। অন্যান্য আরো দেবীর মতো তাকেও সৃষ্টির দেবী বলে বিশ্বাস করতো প্রাচীন মিশরীয়রা।

আন্‌হুর

‘আন্‌হুর’ শব্দের অর্থ ‘আকাশ বহনকারী’। নাম শুনেই তার কাজের ধরণ সম্পর্কে অনুমান করা যায়। আন্‌হুর ছিলেন একইসাথে আকাশ ও যুদ্ধের দেবতা। 


তথ্যসূত্র : -

 The Egyptian Book of the Dead, by Sir E. A. Wallis Budge in 1888.

ছবিটি :---- internet থেকে নেওয়া।

ক্লিক করে পড়ুন। কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের স্মৃতিগদ্য। 👇

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments