গুচ্ছ কবিতা
শুভশ্রী রায়
সহজিয়া চাঁদের রাতে
আমাদের মাঝের রাতে চাঁদমাখা আলোর সাথে
অবশেষে খাবার মেলে মরমিয়া জ্যোৎস্না-ভাতে,
আমাদেরই মধুর মরণ খাপছাড়া সু গভীর রাতে
হুলো সোনা দুষ্টু করে কোনো এক ভুলোর সাথে
বাঁধ ভাঙা ভালোর ছাতে জ্যোৎস্নাও গল্প পাতে;
ধলো কালো হাজারো সুখ পেয়ে যায় নরম তাতে
পরম এক জাদুর মায়া চরম রূপেই মানায় রাতে
বুঝে ফেলি আমরা সে সব নিশ্চয় জোর বরাতে।
সকলেই জ্যোৎস্না মাতে ভোলাভালা চাঁদের হাতে,
চাঁদ রাজা হাসিয়ে হেসে গড়াগড়ি লেখার পাতে
যত্নের মধ্য রাতে কামনার বন্যা ডাকে গহন খাতে
জাদু খোঁজা কবির কলম সডাঁটে জ্যোৎস্না চাটে;
পিয়াসী দেহ ও মন সুখ-সোহাগের ভাঁড়ার সাথে
নতুন এক চাঁদের খোঁজে মিলে যায় সহজ খাটে।
গভীর রাতে জাদুর ফাঁদে
কত শত আজগুবি হয় অনেক কঠোর দিবস-রাতে
সব চল-পলের মাঝে সৃষ্টির মায়াও ঝরে দৈব ঘাতে,
তবে চরমের মজাটি হয় একেবারে জ্যোৎস্না রাতে
বাড়াবাড়ি চাঁদ প্রবাহে আমাদের ফ্ল্যাটও মাতে!
টলটলে চাঁদ শাসক এসে হামলে পড়ে সহজ ছাতে
তারপরে লাফিয়ে নামে দু'চার দানার ভাতের পাতে,
জীবনের দুঃখ যত সমস্তটাই বয়ে যায় চাঁদের খাতে
এত সুখ বহন কী আর সয় আমাদের গরীব ধাতে!
অতএব কিছুটা সয় কিছুটা খরচও হয় পায়ে-হাতে
যতটা পারি কাড়ি খানিক বাঁচিয়ে রাখি যতন সাথে,
কত শত ব্যাপার ঘটেই চাঁদের আলোয় গভীর রাতে
অবাক এসে অনায়াসে সাঁতার কাটে ক্ষিদের পাতে!
গরীবের দুঃখ ভোলার এ এক উপায় জ্যোৎস্নারাতে
অভাবের ভরাডুবি মাগনা জাদুর ফাঁদে চন্দ্র-তাতে।
রূপালি জাদু
পাহাড়ের গা বেয়ে রূপকথা নামে এঁকে বেঁকে
প্রবাহে মেশানো রূপোর চেয়েও ঝকঝকে চাঁদ,
নদী বয়ে নিয়ে আসে অনন্তের জাদু আর মায়া
সমগ্র চরাচর জুড়ে পাতা কারো কুহকিনী ফাঁদ।
চাঁদ শীতল স্রোতে নিজেকে ভরে দেয় হাসিমুখে
মোহ-টানে সুখী জলধারা মেতে ওঠে ক্রমাগত,
আবহ নিসর্গের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে
নিজ অপার্থিব উদ্ভাসে প্রকৃতি নিজে সম্মোহিত।
অনন্ত পথ
সোনালি চিরকালীন পথ একটাই, বড় সূক্ষ্ম!
অতএব, হে শরীর, এত বেশী কোরো না দুঃখ,
হলে তোমার দশা অসুখ কিম্বা দুর্ঘটনায় রুক্ষ।
তোমার ভেতর যিনি বাস করেন, জন্মমৃত্যু নেই তাঁর
তুচ্ছ দেহ ছাড়িয়ে তাঁর অক্ষয়, অনন্ত মহা বিস্তার
মৃত্যুকে ভয় পেও না, আত্মার রাজ্যপাট অপার।
0 Comments