দেশান্তরী -২১
হিল্লোল রায়
নামার পালা এলো, স্বপ্ন দ্বার খোলো
গন্তব্যস্থলে অবতরণ-গল্প-বিশ্রাম
এয়ারপোর্টে নেমে হাতের ব্যাগটা একমাত্র সংগী। মনটা এখন একটু বিষণ্ণ মনে হচ্ছেীইভেবে যে সত্যি সত্যিই খোদ মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রে এসে গেছি ভারতবর্ষ ছেড়ে। যাই হোক কিছুটা আসতে না আসতেই জনৈক মার্কিণী ভদ্রহিলা কোলের শিশুসন্তানসহ তার হাত ব্যাগটা বয়ে আনতে কষ্ট বোধ করায় একটু অনুরোধ করলেন এ ব্যাপারে একটু সাহা্য্য করতে। সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম।
কি আশ্চর্য! কোলের শিশুটি আমার কাছ ছাড়তে রাজী নয়, ওর মা-কে যেন ভুলেই ফেলেছে মনে হয়। ফুটফুটে কথা বলতে পারে না, আমার চোখের সংগে ওর চোখ যেন মিলতে চাইছিল। বেশ ভালই লাগছিল। পথশ্রান্তি, উদ্বেগ, পৈ্টিক গোলযোগ কিছুই লাগছিল না। সম্পূর্ণ সুস্থ এবং নির্বিঘ্নে দমদম থেকে রওনা হয়ে এসে নিউইয়র্ক পৌঁছেছি।
এবার 'কাসটমস চেকিং' এর পালা। ভীষণ ভীড়। কারণ লন্ডন টু নিউইয়র্ক যাত্রীসংখ্যা বেশ, প্রায় ২৫০ এর কাছাকাছি। কাজেই এই চেকিং-এ বেশ সময় লাগছিল। তার উপর আমার ইমিগ্র্যান্ট ভিসা থাকায় “ গ্রীন কার্ড” করতে হল। ভালই হল সবুজপত্র পেয়ে গেলাম। এখন এদেশে থাকতে তাহলে আর কোনই ঝামেলা রইল না। জিনিষপত্র বিশেষ করে 'অবজেকশ্যানএ্যাবল'' কিছু না থাকায় আমার কাসটমস চেকিং মূহুর্তের মধ্যেই হয়ে গেল। সংগী হাতব্যাগের সংগে আবার নতুন সংগী জুটল ঐ সবুজপত্রখানা। সমস্ত কিছু সেরে এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে বিকাল ৫-১৫ মিনিট হয়েছিল। মেজমামা, সেজমামা সাবাই অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। খুব আনন্দ হচ্ছিল। বাইরে ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকায় মেজমামার ওভারকোট গায়ে দিয়ে একটু চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করলাম। যতই হোক বিগত রাত্রির অনিদ্রিত চোখের অসামর্থ্য প্রকাশ পেলেই নিজেকে সামলে নিচ্ছিলাম। ইতিমধ্যে মেজমামা নিজের গাড়ী নিয়ে এসে হাজির । সবাই মিলে গাড়িতে চেপে বসলাম। ক্ষিদে তখন পাচ্ছে কি না বুঝতে পেটে দুবার হাত দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ/ না উত্তর পেলাম না। যাই হোক গাড়ীর মধ্যে লাড্ডু, কলা খেয়ে নিলাম। নিউইয়র্ক-ছাড়লাম সবমিলিয়ে সন্ধ্যা ৬টার কাছাকাছি।
প্রশ্নবানের শুরু হল গাড়ির মধ্যেই -দেশের খবর/বাড়ির খবর। সেজ মাসিমার বিয়ের খবর সবমিলিয়ে একটা গোটা ম্যাপ তুলে ধরতে হল। গাড়ীতে আসতে নতুনত্ব বিশেষ কিছুই চোখে পড়ল না, শুধু মাত্র দেশে রাস্তার দুধার দিয়ে অগণিত জনস্রোত দেখে এসেছি। এখানে তার পরিবর্তে গাড়ী আর গাড়ী। রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, চওড়াও বটে। এমনি করেই গল্পগুজবের মধ্য দিয়েই ফিলাডেলফিয়া (নিউইয়র্ক থেকে ১২৫ মাইল এসে পৌঁছালাম রাত ৯-১৫ নাগাদ। বিশ্রাম! স্নানপর্ব-আহার । গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে ক্ষণিক নতুনত্ব। বেশ ভালই লাগছিল। নমামা রাত ৯-৪৫ নাগাদ আমার পৌঁছানো সংবাদ টেলিফোনে নিল হিউসটন, টেক্সাস থেকে। সব কিছুর পর রাত্রের বিশ্রাম-ঘুম প্রায় বারোটায়।
বিস্ময়ে শুধু দেখি তোমারে, দিলে তুমি ঠাঁই হৃদিমাঝারে
ক্রমশঃ
0 Comments