আমার জীবনের ঘটনা : ২০
পঠিকা রূপে এক প্রতিমার আবির্ভাব
মলয় রায় চৌধুরী
বহুকাল যাবত ভাবতুম যে আমার জীবনকে কি সাহিত্যিকের জীবন বলতে পারি !
পাঠিকা রূপে কৃষ্ণনগর-স্বর্গের এক প্রতিমা, মাটির নয়, রক্তমাংসের, আমার জন্মদিনে মুম্বাইয়ের এক রুমের ফ্ল্যাটে কয়েক ঘণ্টার জন্য এসে নিশ্চিন্ত করলেন যে, পারি।
হাহা, পারি । কতো ঘটনা ঘটেছে জীবনে । কিন্তু এই ঘটনার তুলনা হয় না ।
সমালোচকরা যা ভাববার ভাবুন, যা লেখার লিখুন, পরোয়া করি না ।
মানে, মহাকালকে আর পরোয়া করি না ।
মর্ত্যে একা নেমে এলেন তিনি, দুটো নদী ভুটভুটিতে পেরোলেন, একা, একটা ট্যাক্সি নিয়ে দমদমে পৌঁছোলেন।
মর্ত্যে নেমে আসার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই বেশ আগেই করে রেখেছিলেন।
মুম্বাই পৌঁছে এক দিনের জন্য শহরের অত্যন্ত দামি হোটেলে রাতটা কাটিয়ে, আমার ফ্ল্যাটে এলেন আর কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়ে সেই দিনই ফিরে গেলেন।
আসা-থাকা-যাওয়ায় কম করেও, ৫০০০০ টাকা খরচ করে ফেললেন ।
কী বলব এই প্রাপ্তিকে ?
ফিরে গিয়ে লিখলেন :
“যেমত নেশাতুর হরিণীর তারারন্ধ্র স্থির ও উদাস থাকে বিশালতায়
প্রায় বছর আড়াই পর আবার উঠোন ভাঙতে গিয়ে প্রথম জানা গেলো কখন গালিব বলেছিলেন “কিতনি খউফ হোতে হ্যায় শাম কে অন্ধেরো মে, পুছ উন পরিন্দো সে জিনকে ঘর নেহি হোতে”। নিজের হাজার ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে প্যাকিং, বোর্ডিং পাস, কার্ড ব্যালেন্স চেক করে মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার আগে “জাস্ট ঘুমোতে যাওয়ার সময় gdn8 টা লিখে ঘুমোবে যদি ঘুমোতে মনে থাকে” বলে আর একবারও পিছনে না তাকিয়ে সোজা নিজের দুর্গে ফিরে যাওয়ার প্রবল পুরুষটি আর দাঁড়িয়ে থাকবে না ব্যালকনিতে যখন আমি ফিরবো…
খুব সহজ ছিলো না তাই এই সফর অথচ যেতে আমায় হতোই। ভাঙা বাতিঘর থেকে নাড়ি কাটা সূর্যকে দেখার জন্য যে নশ্বরতা, তার দায় থাকে। রামধনু দিয়ে কাজল পরে যে ফ্লাইটে উঠেছিলাম বৃষ্টি আর বিদ্যুত তাকে ধুয়ে কিছু অতিরিক্ত ক্লান্তি আঁকতে পেরেছিলো মাত্র। যে কোনো ডানার উড়াল আকাশের ব্যক্তিগত ভালো লাগার তালিকায় আছে, ঝড়ে যে উড়োজাহাজ আটকে না থেকেছে, তার যাত্রী না হলে এই প্রসঙ্গে সম্যক জ্ঞান জন্মায় না।
কিংবদন্তী যে প্রেমিক তাঁর মাথা কেটে আমায় পাঠিয়েছিলেন, তাঁর পায়ে একবার হাত না রাখলে অপরাধ হয় অথচ তিনি যেহেতু বললেন “আর তো দেখা হবে না”, বরাবরের উন্মাদিনী আমার ভিতরে জিহাদ এলো তাঁকে ভুল প্রমাণের, সুতরাং প্রণাম করিনি, আবার দেখা হবে এই বিশ্বাসে।”
🍂
0 Comments