সুমিত্রা ঘোষ
জমিদার বাড়ির ঘটকরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। প্রীতরাম দাস পাত্রীর রূপের বর্ণনা শুনে খুশি হলেন। হালিশহরে কোনা গঙ্গাঘাটে এগারো বছরের কিশোরী রানিকে পুত্রবধূ করে জানবাজারের নামজাদা জমিদার বাড়িতে আনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। খুব সম্ভব প্রীতরাম দাসও বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখে পছন্দ করেছিলেন। এব্যাপারে দ্বিমত পাওয়া যায়। কোথাও আছে রাজচন্দ্র পাত্রী পছন্দ করে পরিবার পরিজনদের বললেন। অন্যত্র পাওয়া যায় এগারো বছরের কিশোরী রানি রাসমণিকে দেখেই তাকে পুত্রবধূ করে নিজের বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত নিলেন। পাত্র-পাত্র উভয়ই মাহিষ্য। সেদিক থেকে বিয়ের কোন আপত্তির কারণ ছিল না। উভয়ের মধ্যে তফাৎ ছিল একটা ব্যাপারে। রানি রাসমণি গ্রাম্য চাষীর মেয়ে আর রাজচন্দ্র জমিদার তনয়। কন্যাটির পিতার নাম হরেকৃষ্ণ দাস। দরিদ্র চাষী পরিবার। প্রীতরাম দাস ঘটকের মাধ্যমে পিতা হরেকৃষ্ণ দাসের কাছে বিরাহের প্রস্তাব পাঠালেন। হরেকৃষ্ণ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। এমনও হয় নাকি?
কলকাতার সেরা জমিদারের ছেলের সঙ্গে দরিদ্রের কন্যার বিবাহ হবে। এই সামান্য মেয়ে কীভাবে অসামান্য হয়ে উঠলেন সে কাহিনি দেশবাসী জানে। নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কালের কী অসাধারণ খেলা! হুগলির কামারপুকুর এক অখ্যাত গ্রাম। আর হালিশহরের অখ্যাত কোনা গ্রাম। কামারপুকুরে একজন মহাপুরুষ জন্মালেন। হালিশহরের এই দরিদ্র রমণীর সঙ্গে হুগলীর অখ্যাত গ্রামের সেই মহাপুরুষটির সাক্ষাৎ হল। যখন দুজনের সাক্ষাৎ হয় তখন এই রমণী আর দরিদ্র নন। কলকাতার বিখ্যাত জমিদার ঘরণী রানি রাসমণি। হঠাৎ এঁদের দুজনের দেখা হবে এক উপলক্ষে। যে সাক্ষাৎ অনিবার্য। যে সাক্ষাতের আলোচনা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ব্যাপ্তি লাভ করবে।পৃথিবীতে যে সমস্ত ঘটনা ঘটে তার লৌকিক ব্যাখ্যা করলে সকলে বুঝতে পারেন। বাস্তব পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে মানুষ ভালকাজ করে, লোকের সেবা করে অলৌকিক স্তরে পৌঁছে যান। ভগবান বুদ্ধদেবও মানুষ ছিলেন, মহাপ্রভুও মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করে ভাল কাজ করে, কৃষ্ণ নাম বিলি করে পাপী-তাপী উদ্ধার করে আমাদের কাছে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এমন মহাপুরুষ গুণে শেষ করা যায় না, একমাত্র ভারতের মত মাটি আধ্যাত্মিক চেতনায় এবং শিক্ষা-সাংস্কৃতির ঐতিহ্যে বিশেষভাবে স্মরণীয়, একথা অনেকে মানবেন।
১৭৯৩ সালের ১১ আশ্বিন, বুধবার সকালে হালিশহরে মাহিষ্য বংশে যে মেয়ের জন্ম নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে হয়েছিল, ইংরাজী ১৮০৩ সালে (বাংলা ১২১৯ সালের ৮ বৈশাখ) জমিদার তনয় রাজচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে গেল। শ্বশুরবাড়িতে রানির কখনও কোনদিন অনাদর হয়নি।
ক্রমশ
১৭৯৩ সালের ১১ আশ্বিন, বুধবার সকালে হালিশহরে মাহিষ্য বংশে যে মেয়ের জন্ম নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে হয়েছিল, ইংরাজী ১৮০৩ সালে (বাংলা ১২১৯ সালের ৮ বৈশাখ) জমিদার তনয় রাজচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে গেল। শ্বশুরবাড়িতে রানির কখনও কোনদিন অনাদর হয়নি।
ক্রমশ
0 Comments