জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি --২৬ পর্ব // চিত্রা ভট্টাচার্য্য

রাজধানী প্রাগ।

বার্লিনের ডায়েরি -২৬ পর্ব // চিত্রা ভট্টাচার্য্য

আকাশ ভাঙা মুষলধারায় বৃষ্টির সাথে তীব্র ঠান্ডা হাওয়ার চাবুক শরীর ,মন দুই ই বিকল করেছিল।  রাতে ডিনারের জন্য ওল্ডস্কোয়্যারের রেস্তোরাঁ থেকে ইতালীয়ান পাস্তা পিৎজা আর ক্রিমকফি নিয়ে এসে ,রেইনকোট খুলে হ্যাঙ্গারে টানিয়ে হঠাৎ খুশিতে অদ্রিজা গাইতে শুরু করে ''শ্রাবণের ধারার মত পড়ুক ঝরে -পড়ুক ঝরে || ' এ যাত্রায় রেইনকোট বাঁচিয়ে দিয়েছে মাথা ও গায়ের জামা কাপড়, বিশেষ ভেজেনি ,বেশ স্বস্তি লাগছে। শ্রী ভাবছে হঠাৎ মেয়ের এতো খুশির কারণ কি?  
                                                                                          ঋষভ বলে বিশেষ কিছুই নয় , বার্লিন থেকে ওর বন্ধু আলেক্সেইয়ের ফোন এসেছিল।অদ্রিজা , মা কে কপট রাগ দেখিয়ে বলে তোমার এত তাড়া ! আমাকে গান টা ও মনের সুখে গাইতে দিলে না ?  আলেক্সেই প্রাগের আবহাওয়া রিপোর্ট জানালো  ,'' কাল পরশু প্রাগে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।''  শুনেই  শ্রীর মনে খুশির অন্তহীন জোয়ার বই ছিল। আকর্ন হেসে বলে বৃষ্টি না থাকলে খুব সকালেই বেরিয়ে পড়বো সারাদিন ধরে ঘুরে পায়ে হেঁটে এ শহর দেখার মজাটাই আলাদা। ডিনারের পাট চুকিয়ে শ্রী নিশ্চিন্ত মনে প্রাগের ম্যাগাজিন টি হাতে নিয়ে ঘুমোতে গিয়েছিল ।  

ভোরের শুরুতেই দেওয়াল জোড়া কাঁচের জানলার পর্দা সরিয়ে শ্রী দেখেছিলো যেন কোন মন্ত্রবলে ,মায়ার সাধনে গতকালের সারাদিনের মেঘ বৃষ্টির ছিটে ফোঁটাও কোথাও নেই। বরং দিগন্ত প্রসারিত উজ্জ্বল আলোর খুশি নিয়ে প্রাগের সকাল এলো। আকাশে মুক্ত নীলমেঘেরা দল বেঁধে চলেছে নিরুদ্দেশে। তামাটে রঙের পাহাড়ের গায়ে সোনালী রোদ্দুরের ঢেউ। দিনের প্রথম সূর্যের আলোর লহরীতে ঝলমল করছে প্রাগ বা প্রাহার আনন্দময় পৃথিবী। ব্রেড বাটার ওমলেট বিস্কিট চা বানিয়ে ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে  শ্রী টিপট থেকে চা ঢেলে হেসে বলে আলেক্সেই তো ওয়েদার  রিপোর্ট একদম ঠিক বলেছিল। তিতির ফোড়ন কাটে ,ঠিকই তো বলার কথা। রাতদিন পরিবেশচর্চা ওয়েদার রিপোর্ট মেঘ বৃষ্টি হাওয়া রোদ নিয়ে রিসার্চ ওর হবি। শ্রী আপন মনে অসংখ্যবার সেই আদি সৃষ্টিকর্তা কে স্মরণ করে  প্রণাম জানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরী হয়ে নিয়েছে।   সাত সকালেই ওরা আজ  ঘর ছেড়ে প্রাগের পথের ডাকে বেরিয়ে পড়েছিলো।
এই সেই বিখ্যাত এস্ট্রোনোমিকাল ঘড়ি টি।

   রাজধানী প্রাগ কে সিটি অব ব্লন্ডগার্ল বা স্বর্ণকেশী নারীদের নগর বলা হয়.। আবার পাঁচশতর ও বেশী সোনালী ডোম দিয়ে সাজানো বলে এ শহর কে সোনালী শহর নামে ও ডাকা হয়। কালোপাথরের পথের ওপর  দিয়ে চলতে গিয়ে শ্রীময়ীর মনে হয়েছিল আগাগোড়া ইতিহাসের মায়াজালে জড়ানো কোনো  ছবির মত সুন্দর নগরী তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিতির কে বলে দেখেছিস কেমন  চলার পথ জুড়ে প্রাকৃতিক দৃশ্যে সমৃদ্ধ কোথাও সবুজ প্রান্তর শস্য শ্যামলের ক্ষেত প্রাচীন প্রাসাদ জলাধার ঝর্ণা নদী পাহাড়। আবার  অন্যদিকে আধুনিক সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে বহির্বিশ্বের সাথে সমতা বজায় রেখে সুস্থ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক সুসভ্য নাগরিক জীবন গড়ে উঠেছে। পৌরাণিক রাজকাহিনীর সাথে আধুনিক কালের অপূর্ব মেলবন্ধন। মনোমুগ্ধ কর স্থাপত্য শিল্পের অজস্র নিদর্শন কত ছড়িয়ে আছে তাই তো ইতিহাস যেন প্রাণবন্ত হয়ে হাত ছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যায় তার রুদ্ধদুয়ারে।

 অনেক দিন পর ''বার্লিনের ডায়েরি '' বই টি তে প্রাগে র বেড়ানোর গল্প  লিখতে গিয়ে শ্রীময়ী স্মৃতির সরণি বেয়ে যেন সেই দেশেই চলে গিয়েছিলো। অনেকক্ষণ ধরে পাতা উল্টে পাল্টে দেখছিলো কিছুই হারিয়ে যায়নি। শিল্পীর তুলিতে আঁকা উজ্জ্বল ছবির মত সেদিনের স্মৃতি আজো অম্লান হয়ে আছে। শান্ত স্নিগ্ধ ভাল্টাভার তীরে কাটানো বেশ কিছু ভাললাগা মুহূর্ত ,মন স্রোতের মত তড়িৎগতিতে ছুটে চলেছে ইতিহাসের মলিন হয়ে যাওয়া ধূসর পাতায়। ভাল্টাভা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল চেক প্রজাতন্ত্রের এই বিস্ময় কর প্রাচীন নাগরিক সভ্যতা। বিশ্বের অতুলনীয় সৌন্দর্যের ধারক ও বাহক রাজধানী প্রাগ এক পরিপূর্ন সভ্যতা সংস্কৃতির দেশ। যেখানে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সংগীত চিত্র কলা নাট্যকলা স্থাপত্য শিল্প প্রেম যুদ্ধ বিগ্রহর সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের ও এক বিস্ময়কর মহামিলনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল ।
প্রাগের পুরোনো ঐতিহ্যর স্মারক প্রাসাদবাড়ি ।

 মেঘ মুক্ত উজ্জ্বল আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই দিকে হাত ছড়িয়ে নিজের চারপাশে কিশোরী সুলভ হাসিতে একপাক ঘুরে নিয়ে অদ্রিজা আহ্লাদে আটখানা বলে  ''আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে ''। বৃষ্টিরা কথা দিয়েছে আজ আসবে না কিন্তু প্রবল ঠান্ডা হাওয়া শহরের রাস্তায় পা দিয়েই বেশ অনুভূত হয়। ওরা আজ পর্যটকের মুডে ,প্রাগের ওল্ডস্কোয়্যারের থেকে হেঁটে খুঁজতে চলেছে সেই সব চমৎকার শিল্প সৃষ্টির হদিশ।যেখানে  শতাব্দী প্রাচীন প্রতিটি দেওয়াল তার ভিতে খিলানের গায়ে পাথরের তলে অজস্র অত্যাচারের বোবাকান্না চাপা পরে রয়েছে। সব দেশ রাজ্য শহর নগর পত্তণের গোড়ার দিকে যে কাহিনী সুপ্ত থাকে--এক ভয়ঙ্কর রক্ত উন্মাদনা লালসার নীরব সাক্ষী। 

শহরের প্রতিটি কোণায় পাথরের স্তূপে মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা সব অলিখিত সত্য। শতকের পর শতক পার হয়ে সুদীর্ঘ কালের অন্তহীন যাত্রার রাজনীতি সমাজ নীতি ,যুদ্ধ বিগ্রহ ধ্বংস লীলায় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর শান্তি-মৈত্রী চুক্তি ও স্বাধীনতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর বহন করে সর্বংসহা রূপে বিরাজ মান এ বিশাল প্রাসাদ নগরী। প্রায় হাজার বছরের পুরোনো ঢঙে বানানো একই রঙের ও উচ্চতার বাড়ি ঘরদোর স্থাপত্য সৌন্দর্য , সংস্কৃতি শিল্প কলার বাহক মূর্তিগুলো প্রাগ কে অপরূপা শ্রীমণ্ডিত ঐতিহ্যশালী করে তুলেছে। শ্রী বলে দর্শকমন আপনা থেকেই আকৃষ্ট হয়ে ঘুরে বেড়াবে এই রহস্যময় নাগরিক জীবনের অলিগলিতে ।                  চার্চের অন্দর সজ্জা।

      ওল্ডস্কোয়্যারে বেড়ানোর সময় ওদের মনে হয়েছিলো বিষন্ন ধূয়াশা ভরা সাঁঝের মলিন আঁধারে এক রূপকথার গল্পের মত। প্রাগের পাথুরে রাজপথে কান পাতলে প্রতিধ্বনিত হবে ঘোড়ার খুরের চলার খট খট শব্দ। অশ্বারোহী পদাতিক ,তীরন্দাজ বাহিনী  সৈন্য সামন্ত প্রহরীর পদশব্দে স্থম্ভিত আকাশ। সশস্র বাহিনী সমেত কাড়ানাকাড়া বাজিয়ে ,মন্ত্রী সান্ত্রী সামন্তের দল নিয়ে সসাগরা রাজ্যের অধীশ্বর রাজা ধীরাজ যুদ্ধ জয়ের পর রাজ্যে ফিরছেন।সেখানে শহরের আনাচে কানাচে অলিগলি বা রাজপথে ছড়িয়ে আছে অজস্র প্রহরীর কড়া প্রহরা। রোমান্টিক প্রাচীন নগরীর ইস্পাত কঠিন বুকের ওপর দিয়ে ওরা এগিয়ে চলেছে কোনো রাজার দরবারে। পথের মাঝে বা মোড়ের প্লাজায় ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো যেন তারই সঙ্কেত বইছে। শ্রী বিস্মিত হয়ে দেখে , কোথাও রয়েছে কালোপাথরের ত্রানকর্তা সন্তদের মূর্তি, অথবা সংগ্রাম রত রাজমূর্তি। যুদ্ধ জয়ী সম্রাটের মূর্তি থেকে প্রেমিক রাজারানীর আনন্দ ঘন মুহূর্ত ,নৃত্য গীত বাদ্য রত স্বনাম ধন্য শিল্পীর ধাতব মূর্তি বা ভাস্কর্য শিল্প দিয়ে সেজে উঠেছে শহর। 

ভাবনার অতলে তলিয়ে গিয়ে তন্ময় হয়ে শ্রী পথে হাটছিলো হঠাৎ পিতা পুত্রীর আলাপে মন দিয়ে শুনতে পেল --অদ্রিজা  বলছে ,এই যে বাঁধানো রাস্তার ওপর যত পা ফেলে এগোচ্ছি  চলতে গিয়ে  আগাগোড়া মনে হচ্ছে কোনো প্রাচীন ইতিহাসের মায়া জালে পরিবেষ্টিত নগরী তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যেন এক আলোআঁধারিতে  মধ্য যুগের সম্রাট প্রথম বা দ্বিতীয়  চার্লসের রাজত্বে রবাহূত অতিথি হয়ে  ঢুকে পড়েছি। ভাবছি এখনই  প্রহরীরা  দন্ড হাতে ছুটে এসে বন্দি করবে শৃঙ্খলিত কারার লৌহ কপাটের অন্তরালে।তারপর চলবে রাজার আইন ভঙ্গের কঠিন বিচার ,শাস্তি সাজা।  

ঋষভ বলে বাস্তবে অনেক দূরের পথ পায়ে হেঁটে দেখতে হবে। ঐতিহাসিক ইন্টারেস্টিং দেখার বস্তু অনেক রয়েছে এক জায়গা নিয়ে ভাবলে সময় বেকার চলে যাবে। এ শহরের বুক চিরে তরতর করে বইছে স্রোতস্বীনি নীল জলের ভল্টাভা নদী ও তার ওপর রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত চার্লসব্রিজ ,আছে ক্লক টাওয়ার, আলবার্ট আইনস্টাইনের আবাসভূমি ,সাহিত্যিক ফ্রানৎস কাফকার মিউজিয়াম ,প্রাগ ক্যাসেল।  কত দেখার জায়গা সব তো দুদিনে পায়ে হেঁটে দেখা মোটেই সম্ভব নয়। চল আমরা এগিয়ে যাই।  

🍂

  চেক রিপাব্লিক প্রজাতন্ত্র কে বলা হয় যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বর্ণময় লীলা ভূমি তেমনি এক বিশ্ববিখ্যাত সাংষ্কৃতিক আকর্ষণের আকর। এক গুরুত্ব পূর্ণ কৃষ্টি সংস্কৃতি ,কালচারের পীঠস্থান। যাকে অনেক যত্নে বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ধ্বংসের কালো হাত থেকে রক্ষা করা গিয়েছিল। শ্রীর যত দূর মনে আছে-ওরা সেদিন সম্ভবত স্টারমোয়েস্কা ষ্টেশনের কাছে ওরা ছিল। অদ্রিজা  প্রবল উৎসাহে ওর হাতটি ধরে সোজা টেনে নিয়ে চলে এসেছিলো প্রাগের পুরোনো শহরে।  ঐতিহাসিক নিদর্শনে পূর্ণ  বিশেষ আকর্ষণীয় ওল্ড টাউন স্কোয়ারের এবং এখান থেকে প্রতিটি দর্শনীয় স্থান খুব কাছাকাছি থাকায় দেখে বিস্ময়ে মন ভরে গিয়েছিলো। একদম হাঁটা পথের সামনেই  রয়েছে  বিশাল সিটি হল টি। ওল্ড টাউনের এই  সিটি হল টি তে  ১৩৩৮সালের থেকে  প্রাগের শাসন তন্ত্র পরিচালনা করা শুরু হয়েছিল । দেশের সর্বত্র রাজা ,মন্ত্রী এবং রাজ কর্মচারী গণ সিটি হল থেকেই শাসন তন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন ও নিয়ম শৃঙ্খলার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন । কখোনো কখোনো রাষ্ট্র বিদ্রোহীদের বন্দিশালা হিসেবে এই সিটিহল টিকেই ব্যবহার করা হতো। 
                                                                                                                                            ওরা প্রথমেই  এসেছিলো অজস্র ঐতিহাসিক সংগ্রামের জ্বলন্ত স্বাক্ষর বহন কারী এই শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ অভ্ৰংলিহ চার্চের সামনে। এই চার্চটির নির্মানের সময়কাল ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ  শতাব্দীতে। ওল্ড টাউন স্কোয়্যার ইউরোপের সর্ব বৃহৎ এবং সর্বাপেক্ষা সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ শহরের একটি এলাকা যা দশম শতাব্দী থেকেই প্রাগের প্রধান পাব্লিক প্লেস হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। প্রতিটি এলাকায় একটি বেশ বড় মাপের কালো পাথরে বাঁধানো খোলা চত্বর বা প্রাঙ্গন রয়েছে যাকে স্কোয়্যার বা প্লাজা বলা হয়। যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে  নিজেদের সুখ দুঃখের চাওয়া পাওয়ার আলোচনা করতে পারে ,উৎসবে মিলন সভায় জমায়েত হতে পারে। শ্রীময়ী বলে শোনাযায় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই অঞ্চল টি ব্যবহৃত হতো প্রাগের প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে। 
এই সেই বিখ্যাত এস্ট্রোনোমিকাল ঘড়ি টি।

  সিটি হলের অনতিদূরেই ১৪১০ সালে নির্মিত  প্রাগের  বিখ্যাত এস্ট্রোনোমিকাল ক্লক বা জ্যোতিষ ঘড়ি   টি এখনো জোডিয়াক ক্যালেন্ডার ও সময় সীমা দুই ই প্রদর্শন করে চলেছে । প্রাগের এই ঘড়ি টি বিশ্ববিখ্যাত প্রথম এবং অন্যতম একমাত্র ঘড়ি যার এখোনো সময় দিন সপ্তাহ বছর সব একত্রে প্রদর্শন আদিকাল থেকে আজো অব্যাহত রয়েছে।  ঘাড় উঁচু করে ওপরের দিকে শ্রী তাকালো , নীলাকাশের গায়ে সেই উঁচুতে মাথা ঠেকিয়ে আছে গগনচুম্বী  উচ্চতার এক  টাওয়ার তার মাথা জুড়ে শোভা পাচ্ছে বিশাল বড়  বিশিষ্ট ডায়ালের সেই  আদ্দিকালের ঘড়িটি । তাকে দেখার জন্য দেশ বিদশের প্রচুর দর্শনার্থীর ভীড় হয়েছে ঐ চত্বর টি তে। স্থানীয় এক দর্শনার্থী জানালেন বিষুব রেখার নিয়মে চাঁদের গতি অনুসরণ করে অদ্ভুত এই ঘড়িটির চলার নিয়ম। পৃথিবীতে যে কয়েকটি ঐতিহাসিক এস্ট্রোনমিকাল ঘড়ি আছে ,প্রাগের এই ঘড়ি টি তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা ও তৃতীয়।     
            স্থাপত্য শিল্প।
                                                                                               এই আশ্চর্য্য ঘড়িটির গায়ে নানা সংকেত আঁকা আছে। বছরের নানা সময়ে চন্দ্র সূর্যর অবস্থান থেকে শুরু করে রাশিচক্রের অবস্থান কে সঠিক ভাবে দেখায় আর প্রতি ঘন্টায় সময় জানান দিয়ে যায়। ঘড়িটির ঘন্টি বাজার সাথে বিশেষ রূপ টি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দর্শনার্থীর দল। এই চত্বরে ভ্রমণার্থীদের মেলার ভিড়ের সাথে স্ন্যাক্স কফি ব্রেকফাস্টের স্টল ও বসেছে। যেই ঘড়ির কাঁটা সকাল দশটার ঘর ছুতে চলেছে নীচে দাঁড়িয়ে দেখা গেল ঘড়ির ওপরের জানলা  দু দিক থেকেই  খুলে গিয়ে বারোটা মূর্তি Apostles যান্ত্রিক ভাবে সচল হয়ে বেড়িয়ে এলো। টুং টাং শব্দ করে পশু পাখি কঙ্কাল নারী পুরুষের মূর্তির পুতুলগুলো চক্রাকারে বেরিয়ে এসে বাজনা সহযোগে ঘড়ির ওপর এদের প্রসেশন শুরু করলো। সব থেকে ওপরে এক কঙ্কালের হাত জীবনের শেষ পরিণতির ইঙ্গিত বয়ে নিয়ে বেরিয়ে এসে ,সে যেন বাজিয়ে চলেছে অনাগত ভবিষত্যের নির্দিষ্ট কালের ঘন্টা ধ্বনি টি। অদ্রিজা বলেছিল ভাবতে পারো -,সেই যুগে বানানো বিজ্ঞানের কতো বড়ো বিস্ময়কর অবদান চমকপ্রদ এই ঘড়িটি। আজো প্রাগবাসী দের গর্ব ও অহংকার এই এস্ট্রোনোমিকাল ক্লক টি এক গৌরবান্বিত প্রাচীন ঐতিহ্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত  হয়ে রাজধানী প্রাগ কে বিশ্বেরদরবারে মহিমান্বিত করে রেখেছে ।  .              ক্রমশঃ

Post a Comment

1 Comments

  1. বার্লিনের ডায়েরী ,,বেশ সুন্দর

    ReplyDelete