জ্বলদর্চি

নীলার কিছু কথা কবিতায়...পর্ব 2/কমলিকা ভট্টাচার্য

নীলার কিছু কথা কবিতায়...
পর্ব 2
কমলিকা ভট্টাচার্য 

নীলার জন্য..


চল্লিশের মন খারাপ সবে ছুঁয়েছে নীলাকে
দুটো একটা সাদা চুল সময় মনে করায়
তবু আয়নার কোণে আজও সে অটুট রানী,
সংসারের ঢেউয়ের মাঝে খুঁজে নেয় নিজেরও আখ্যানখানি।

প্রশ্রিত হৃদয় মৃদু স্বরে বলে,
“এবার নিজেকে দেখো, উদাসীনতা ছাড়ো।”
একদিন হঠাৎ পড়ন্ত রোদে
পদ্ম দীঘির শান্ত জলে
চিকচিক সোনার আলোর শিহরণ,
আকাশের বুক চিরে উড়ে যাওয়া পাখিদের কোলাহলে
মুক্তির স্বপ্ন ডেকে যায় নীলাকে।

দুরন্ত বাতাস ছুটে এসে বলে,
“দেখি, তোর কবি হওয়া আটকায় কে?”
লিলির কোমল সুবাসে মাখা
নিস্তব্ধতার স্নিগ্ধতা,
দূরের মন্দিরে আরতির সুর,
তুলসী তলায় প্রদীপের নরম আলো,
শঙ্খধ্বনির মিষ্টি ছোঁয়ায় অভিষেক হলো তার
শুরু হলো নতুন কবিতার গল্প,
যেন অজানা কোনো আকাশে মুক্তির অভিজ্ঞান,
প্রতি পদক্ষেপে লুকিয়ে রইল অনন্তের সন্ধান 
নিজেকে খুঁজে পাওয়া..


সে আছে...

সে আছে, যে আমিটা আমার মত, তার পুরোটা জুড়ে।  
তার উপর খালি আমার অধিকার...

সে আমায় কখনো বকেনা, সে আমার উপর কখনো রাগ করেনা,  
সে কখনো আমাকে ভুল বোঝে না।  
আমার সব অভিযোগ শোনে, কিন্তু কোনো অভিযোগ করেনা।  
আমার মাথা ব্যথা করলে সে সযত্নে আমার মাথা টিপে দেয়।  
যখন আমার শরীর চায় আদর, সে আমায় আদরে ভরিয়ে দেয়।  
যখন অনেক কষ্ট হয়, সে আমার চোখের জল মুছে দেয়।  
সে আমার কাছে কিছু চায় না, সে শুধু আমার, আমার আর আমার।

সে আমায় প্রশ্ন করেনা, বদলাতে চায় না।  
আমি ঠিক যেমন, সেই রকমভাবে আমায় ভালোবাসে।  
ভালোবাসার নামেই কৌতূহল তুঙ্গে—কে সে?

সে যে আছে আমার কল্পনায়, আমার নিজস্ব রঙে আঁকা এক স্বপ্ন।  
সে যে আমার দুঃখের সাথী, আমার নিঃশব্দ কান্নার প্রতিধ্বনি।  
সে যে আমার জীবনের এক অমূল্য উপহার, আমার আত্মার সঙ্গী।  
সে যে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি স্বপ্নে, প্রতিটি কথায়।  
সে যে আমার সুখের প্রতীক, আমার শূন্যতার পূর্ণতা।

সে যে আছে, আমার গভীর ভালোবাসায়।  
সে যে আমার সমস্ত ভাঙাগড়ার সাক্ষী, আমার একান্ত নিবেদিত সঙ্গী।  
সে আমার প্রতিটি মুহূর্তের নিঃশব্দে বোনা প্রেমের মালা।  
সে আছে, সে রয়ে গেছে আমার সমস্ত দুর্বলতা আর শক্তির মধ্যে,  
সে আমার স্বপ্ন আর বাস্তবতার সেতু।  
তার ছোঁয়ায় মিশে আছে আমার প্রতিটি ব্যথা আর আনন্দের কাব্য।  
সে যে আমার নাটোরের বনলতা সেন, আমার আকাশ ,যে আমায় দু দণ্ড শান্তি দেয়...

🍂


কবির উড়ান 

জানি না কোন লগ্নে জন্ম,
নাকি জন্মেই লগ্নভ্রষ্টা,
কপালে সুখের কারুকার্য,
বিধাতা এঁকেছেন কবির টিপ।

শিল্পী এঁকেছে মনের মত করে,
ঠোঁটের রঙে গোলাপী শব্দ,
কবির চোখে কালো ধোঁয়াতেও কল্পনা,
শুধু সে পেয়েছে মনের ছোঁয়া।

চরিত্রের উপর আঁচিল,
বরাবর কবির,
তুলতুলে পালকে লেখা প্রেম,
কিম্বা শব্দের ধারে ছেঁড়া পাতা,
তবুও তো কেউ বোঝে মনের কথা।

সবুজ পাতার স্বাদ বুকে বেঁচে,
হাজারো কাঁটা গায়ে বিঁধে 
শুঁয়োপোকা 
মননের কোকুনে থাকা কিছুকাল,
প্রজাপতির ডানায় কবির উড়ে যাওয়ার অপেক্ষা।


প্রেরণা

ভেবেছিলাম কবিতা লিখব
এ এমন কি বড় কাজ
লিখতে বসে দেখি
নোনাধরা দেওয়াল
গজিয়েছে অশ্বত্থের গাছ 
ভাঙ্গা টুকরো ইঁট আর সুরকির ঢিবি
ভাঙ্গা দেওয়াল
দাঁড়িয়ে আছে তালা ঝোলানো ফটক
ভাঙ্গা মন ঘুন ধরা মগজ
কি করে লিখব কবিতা এখন?
সেই তুমি এলে,
এক তুড়িতে জাগালে 
এক নিমেষে সাদা কালো চোখে 
রামধনু রং লাগালে
হাত ধরে চললে নিয়ে
দেখতে জীবন মেলা
কলম খালি চলল লিখে তোমার আমার কবিতা
তবু তোমার  স্বরূপ খানি থেকে গেল অস্পট
যে প্রেমে বেঁধেছি নিজেকে
সে প্রেমে যে খালি কষ্ট
যাওয়ার আগে দাওনি তুমি কোনো সঠিক ঠিকানা 
জানি আমি  তুমি যুগে যুগে সব কবির প্রেরণা
আনাদিকালের তুমি কাব্য সুজন সাথী
চিরকালই তুমি আধরা অচিন পাখি
গভীর আঁধারে শব্দ হারালে 
এসো জ্বেলে শব্দবাতি
ঝড়ের রাতে সাজিয়ে দিও
এলোমেলো হওয়া পঙক্তি 
রেখেছ তুমি মনের গহনে কাব্য চিরাগ জ্বেলে
ভাবিনি কখন পড়ব প্রেমে কবিতা লেখা হলে।

Post a Comment

0 Comments