জ্বলদর্চি

ভাঙা আয়নার মন/ পর্ব -২৩ম/মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনীয়া

ভাঙা আয়নার মন 
পর্ব -২৩
মমণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনীয়া

|| হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ ||


 নৌকো করে তারা গেল খুলনার বাগেরহাটে ন' জেঠামনির বাড়ি। ভোর ভোর ছই দেওয়া নৌকোয় চড়ে বসেছিল সবাই। ঘুমের মধ্যেই কোলে করে সানাকে নিয়ে উঠল হেম।নৌকোয় বিছানা পেতে তাকে শুইয়ে দিলে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে দিব্যি তার ছোট্ট পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে রইলো সে।
       বেলা হলে নৌকোর বড় মাঝি নাও থামিয়ে এক ঘাটে বাঁধল।ছোটমাঝির নাম ফটিক।বড় মাঝি বলল ফটকে, কয় গাছি কলার পাতা কাইট্য লই আয়।মা আর হেমের সাথে ঝিনি নেমে টিনের চাল দেওয়া উঁচু এক বাড়ির দাওয়ায় উঠল। অচেনা হলেও কত যত্ন করল সে বাড়ির মেয়েরা। ভেতরে নিয়ে গেল। গুড় মুড়ি খেতে বলল।হাতমুখ ধুয়ে তারা যখন নৌকোয় ফিরছে বাড়ির কর্তা ওসমান আলী একখানা পাটালি আর অনেক খানি মুড়ি তুলে দিয়ে হাত জোড় করে বলল হুদা মুহে মেহমান ফেরাইতে নাই। খাইবেন। নিশ্চয়ই খাবো। তাদের বাবাও হাত জোড় করল।
      কলাপাতায় করে মামু বাড়ি থেকে আনা পাটিসাপটা পিঠে আর সেই গুড় আর মুড়ি খাওয়া হলো। কিছু কলার পাতা দুপুরের জন্য রাখা হয়েছে। 
       মন্টু বিড়ি একেবারে আস্ত পাটাতন জুড়ে বসেছে সর দেখি বলে ঝিনিকে ঠেলেঠুলে চিতপাত হয়ে শুয়ে পড়ল ছোড়দা।বলতে নেই আমি হলাম তোর গুরুজন‌। বড়রা শুনতে না পায় এমন চাপা অথচ গম্ভীর গলায় ছোড়দা মাথাটা একটু টিপে দে তো নৌকোর দুলুনিতে কী যে আরাম বলে ছোড়দা  একের পিঠে দুই/নৌকো চেপে শুই বলে চোখ বুজে খানিক আরাম করছিল।ঝিনিও টুক করে হাত বাড়িয়ে  নদী থেকে একটু জল নিয়ে ওর মুখে থাবড়ে বলল গোলাপ চাঁপা জুঁই/পোঁটলা বেঁধে থুই।
     সাথেসাথেই ছোড়দার বিকট চেঁচামেচি, মায়ের প্রবল বকুনি,এই ছেমড়ি,গাঙ্গের পানিতে হাত দেও বুঝি কামটে হাতখান কাইটা লইয়া যাইব,ট্যারও পাইবা না  বলে ধমকে ঝিনি জবুথবু হয়ে বসল।কামট মানে কি কুমীর এ প্রশ্ন মাথায় ঠেলে উঠলেও রা কাড়ল না।
      দিদুন আর সোনা মামি বড় হাঁড়িতে ভাত মাছ ভাজা আর কলস ভর্তি খাবার জল দিয়েছে।
 দুপুরবেলা হাঁড়ি খুলে মা কলাপাতায় আলু বেগুন ভাতে ঘি আর কাঁচা লংকা দিয়ে মেখে সবার পাতায় ভাত আর মাছ ভাজা দিয়ে খেতে দিল।সানা ঘুম ভেঙে জল দেখছিল আর জে জে করে কিসব বলছিল। এখন হেমের পাতার ভাতে খাবলা দিয়ে মুখে পুরতে গিয়ে খানিক ছড়িয়ে দিল ভাত।মা তাকে কোলে নিয়ে ভোলাতে গেলে তার সেই  সেই বিখ্যাত বিকট কান্নাটা খুব মন দিয়ে শুরু করে দিল। ছোড়দা মুখভর্তি ভাত নিয়েও বাবাগোওওও বলে উঠল।দাদা মনি মিটমিট করে হেসে বলল এতটুকু যন্ত্রে এত শব্দ হয়!  খুব দ্রুত পাতার ভাত শেষে করতে করতে হেম বলল খেয়ে উঠে বোনকে একটু ভোলা না হতচ্ছাড়া বাঁদর। 
       সন্ধের গোড়ায় তাদের নৌকো মধুমতী নদীতে 
  পড়ল।এই আমাদের গাঙ বলে বাপি চুপ করে তাকিয়ে রইল গাঙ কুলের দিকে।কোথা থেকে এল এই নদী? দাদা মনি জিজ্ঞেস করলে তাদের বাবা বলল গড়াই নদী থেকে এসেছে আর সে এসেছে ডাকাতিয়া বিল থেকে আসলে এই মধুমতী হলো 
পদ্মারই শাখানদী। কী সুন্দর নাম এই নদীর না বাপি? মধুমতি গাঙ! এই গাঙের মিঠা পানিতে আমার বেড়ে ওঠা ঝিনুক মা।বাপি কেমন একটু হেসে জলের দিকে চেয়ে চুপ করে রইল। 
        মা ছইয়ের বাইরে এসে চুল আঁচড়ে বিনুনি বাঁধছিল।ভারি বেনীটাকে পিঠে ঠেলে দিয়ে হঠাতই 
 গেয়ে উঠল মধুমতী যায় বয়ে যায় গানটা।...কবির তুলিতে আঁকা/পুণ্য মমতা মাখা আপনার মনে বয়ে যায়/গানের কথাগুলো সন্ধের নীলচে অন্ধকারে রিনরিন জোনাক হয়ে উড়তে শুরু করল।... শ্যামল দুই তীরে/সন্ধ্যা নামে ধীরে/ঘরে ঘরে দীপ জ্বলে/ছায়া দোলে পলে পলে/চাঁদ হাসে মধু জোছোনায়... মার গলায় সেই গান আর  নদীর জলে সন্ধেতারার ছায়া মিশে যাচ্ছে দেখল ঝিনি।মাঝির কেরোসিন লম্ফেরও ছায়াও তখন বুকে জলে মুখ দেখছে।কোনটা তারা আর কোনটা মৃদু কুপির আলো জলে সেই ম্যজিক হচ্ছে আর মায়ের গানে অলৌকিক  সেই স্রোত, আবছায়া আর সুরের মধ্যে চুপ করে আছে তারা সবাই। শুধু মা যখন গাইল...মধুর কলতানে/চুপিচুপি কানে কানে/ফেলে আসা কত স্মৃতি/মধুমাখা সেই গীতি দিবিনিশি সবারে শোনায়... মধুমতি যায় বয়ে যায়... তাদের বাবা চশমাটা খুলে ঝুঁকে পড়ে মুছতে লাগলো আর মা বাপির কাঁধটা একটু ছুঁয়ে থাকল চুপ করে।ঝিনির মনে হলো কী যেন কষ্ট তাদের হাসিখুশি বাপির। হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলা আর খুঁজে না পেয়ে বড়দের এরকমই কষ্ট হয়? 
কাঁদতে পারে না তাই ঘসে ঘসে চশমা মোছার চেষ্টা করে?

🍂

          ন'জেঠামনির বাড়ি পৌঁছতে রাত্তির হলো।ঘুম ঘুম চোখে রান্না ঘরের কাঠের মেঝেয় কাঠের ভারি পিঁড়িতে বসে কোনরকমে খেয়েই জেঠিমার কোলের কাছে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ঝিনি।
          টুকটুকে ফরসা,কটা চোখে ঢেউ খেলানো কোঁকড়ানো চুল আর ঝিনুকের মতো পাতলা হাত পা'র গড়ন খুব সুন্দর দেখতে জেঠিমার নাম শ্রীমতী। পরদিনই দাদারা নান্টুদা মন্টুদার সাথে ফুটবল এবং ঝিনি ছন্দাদি আর অঞ্জুর সাথে ছি-বুড়ি খেলতে লেগে পড়ল। তাদের বুড়ি চু খেলার মতোই তবে নিয়মে সামান্য হেরফের ।
        হুটোপাটি খেলা ধুলো, ছন্দাদির সাথে জেঠামনির জন্য জমিতে ভাত নিয়ে যাওয়া, বিকেলে বাগেরহাট বাজারে গিয়ে মেজদার মুদি দোকানে বসে থাকা তারপর বাদাম খেতে খেতে সবাই মিলে বাড়ি ফেরার মধ্যে দিয়ে দিন পাঁচেক হু হু করে কাটিয়ে আবার মামু বাড়ি ফেরা কেননা ওখান থেকেই তাদের দেশে ফিরতে হবে যে।
     ভারতে যাওয়ার কথা ভাবিছো নদ্দা? তোমাদের ভিটের জন্যে মসলন্দপুরে  জমি একটু কিনে রেখেছি।এ দেশের চাষের জমি যেটুক আছে সেগুলো বেচে নকপুলে ছোটদ্দির কাছাকাছি ধানি জমি কিছু কিনলেই হবে। আর বাগেরহাটের দোকান বেচে একখানা মুদি দোকান মসলন্দপুরেই হতে পারে। তুমি মনস্থির করে জানাও আমায়।বড় খোকার লেখাপড়ার দায়িত্ব আমার।সে হস্টেলে ভালোই আছে। কিন্তু বাকিদের লেখাপড়ার কথাও তো ভাবতে হবে।জেঠামনি চুপ করে রইল অনেকক্ষণ। তারপর বলল আর এট্টু সময় দেও।আ্যম্বায় ভিটে বেচার মনস্থ করতি পারতিছি নে আ্যহোনো।
         পরদিন সেই মধুমতী গাঙ ধরে আবার তাদের মামু বাড়ি ফেরায় আরতিদি,চয়নদাদের সাথে কলকলিয়ে উঠল তিন ভাইবোন।
      পেয়ারাবাগানগুলো সরু সরু খাল দিয়ে ঘেরা এমন,মনে হয় এক একটা দ্বীপ।তাকে বলে কান্দি।তপনদা,তুহিনদার সাথে ডিঙি চেপেই  ঘুরছিল তারা। অই অইল আমাগো গইয়া কান্দি।সব বাগানই এমনি জলে ঘেরা? হ, কান্দির গর এমুনিতো অইব। গইয়ার ফলন বালা অয়।অহনতো ফুল ধরছে, আষাঢ়-ছাবুন মাসে নাও বুজাই গইয়া এই খাল বাইয়া জালোকাডির আডে যাইব গা। কিছু ফল এখনো আছে গাছে। পাখি আর বাদুড় নীচে ফেলেছে পাকা ফল।পেয়ারাকে তোমরা গইয়া বল? হ,গাছের বগলে যাইয়া কও দেহি, বান্দুর বান্দুর সয়া/মোরে একখান গইয়া।দেখবা টুপপুস কইরা একখান গইয়া তোমার লাইগ্যা ফালাইয়া দিব আনে। মানে কি? সয়া মানে বোজঝোনি,বন্দু।আরে বাদুড়কে যদি তুই বলিস, বাদুড়, ও বন্ধু আমায় একটা পেয়ারা দাও,সে পেয়ারা ফেলবে তোর জন্য। দানি বলে আর সবাই মিলে হাসে তারা।
           থোপা থোপা ফল এনে তুহিনদা বলে খাইয়া দ্যাহো মিডা ব্যাতের ফল।দানি শুয়ে পড়ল ঘাসের ওপর। জলমাখা হাওয়ায় ঝিরঝিরে পেয়ারার ফুলের শাদা পাপড়ি ঘুরে ঘুরে নেমে আসছে।লালচে একটা বেতের ফল হাতে বসে থাকতে কেমন ভাল লাগে,মনে হয় রূপকথার মত সব চেয়ে সুন্দর দেশে পৌঁছে গেছে যেন।
            অ মনুরা,দেইখ্যা যাও,তোমাগো মামু কতফোর ইলিশডা আডের থিক্যা আনছে। দিদুনের কথায় তারা মাছ দেখতে ছোটে। নিপুণ হাতে আঁশ ছাড়িয়ে গাদাপেটি আলাদা করছে সোনামামি।হাসছে আর বলছে পিডা খাইবা?বানাইছি।চুষি পিডা খাইছ,অ মনু? গভীর কোন মায়া মেঘলা ছায়ার মত সোনা মামির মুখে খেলা করে।আর মায়ের দেয়া জিনিসগুলো নাড়তে চাড়তে আরতিদি বলে ইন্ডিয়ার সাজনের  জিনিসগুলান কি সুন্দার,এহানের হাউসের জিনিসেরতো ঢকপদ নাই।তোমার পছন্দ? খুবই বালা। নিজের হেয়ারব্যাণ্ডটা খুলে তাকে পরিয়ে দেয় ঝিনি।
          দুদিন ধরেই তপনদার সাথে ছোড়দার কি ফিসফাস চলছে। এক ভোরবেলা উধাও তারা। ল্যাহাপরার লামে খোঁজ নাই,আবার ছোড ভাইডারেও লইয়া বাইরাইছে হারামজাদায় আউক দেহি ,পিডের উপর চ্যালাকাড ভাঙুম আইজ। হাতে এক টিয়াপাখি নিয়ে বেলা গড়িয়ে ফিরে এল তারা। তপনদাদের ইশকুলে ঘণ্টা বাজায় যে সে আঠাকাঠি না কি দিয়ে জানি পাখি ধরতে পারে। পিসবোর্ডের বাক্স ফুটো করে করে তাকে নিয়ে আসার ব্যাবস্থাও পাকা।
          সন্ধেবেলা বাপি মামুকে বলল,ওদেশে যাওয়ার কথা কিছু ভাবলেন দাদা? গইয়ার ফলন আগের চাইতে কমছে,ধাইনও। ইশকুলের চাকরিতেও লানান ব্যানিয়ম।তবে কি জানো ধীর‍্যান,মোর পোলাপান উচ্চশিক্ষার পর যদি যাইতে চায় মুই না করুম না তয় মুই নিজেএই বয়সে আর উদ্বাস্তু হইতে চাই না। উদ্বাস্তু মানে কি মা? ভিজে চোখে অদ্ভুতভাবে তাকালো মা।
           আমার টিয়াআআআআ, ভোরবেলা চিৎকার দিল ছোড়দা, নির্ঘাত বেড়ালের কাণ্ড! দড়ি দিয়ে বাঁধা বাক্সের গিঁট খুলতেই পারে না,আমি জানি কোন বেড়াল বলতে বলতে বাঘের মত লাফ দিল ছোড়দা তার ঘাড়ে। বাপি এসে ছাড়ানোর আগেই পিঠে ধাঁইধাঁই গোটাকতক পড়ে গেছে। কত কষ্ট করে সারাদিন দৌড়ে, কত উচু গাছে চড়ে বগাকাকাকে দিয়ে ধরলাম পাখিটা!পারবি তুই ঢ্যাঁড়শ কোথাকারে।স্পোর্টসের দিন কিচ্ছু না পেরে পারিসতো বাবলা তলায় ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে।মন্টু বিড়িকে আজ মেরেই ফেলব, ছোড়দা তখনও রেগে ফোঁসফোঁস করছিল। এমন কেন করলে ঝিনুক? কত কষ্ট করে  বেচারা জোগাড় করেছিল পাখিটা?
তুমিতো বলেছো এটা সোনার দেশ।ওকে নিয়ে গেলে ওতো আর কোনোদিন এ দেশে ওর সঙ্গীসাথীদের কাছে ফিরতে পারত না,ঝিনুক ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে।ওতো উদ্বাস্তু হয়ে যেত। কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল বাপি।
          ধীর‍্যান,কিছু কইয়ো না অরে,বড়ই মায়াবতী হইছে আমার মায়!যত্ন কইরো মাগোরে। মামু তার মাথায় হাত রাখে।কল্লোলবাবু,বুঝতে পারছি,পাখিটার জন্যে খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার।দৌড়ঝাঁপ করে ধরে এনেছিলে।আদর করে কথা শেখাতে কি আর করা যাবে ফিরে বরং কুকুর পোষা যাবে,সেওতো তোমার অনেক দিনের শখ,এবার পারমিশন দিলাম?ওই দ্যাখো কত মানুষ এসেছে আমাদের টা টা করতে। দয়ার সাগর আমার! আড়ালে ছোড়দা মুখ ভেংচে চড় দেখায়। 
        পক্ষীডা ছাইড়া দিছো মনু? তয় আমি তোমার লাইগ্যা একখান পক্ষী ধইরা রাখছি বোঝজোনি ছাইড়া দিলেও হেয়া উড়াল দেয় না।সোনা মামী টিনের তোরঙ্গ খুলে লাল শালুর ঝালর দেওয়া এক পাখা বার করে হাতড়ে হাতড়ে।শাদা সুতোর জমিনে সবুজ এক টিয়া রাঙা টুকটুকে ঠোঁট নিয়ে হলুদ সুতোর ডালে বসে আছে। সরু বাঁশের মধ্যে পাখার ডাঁটি আটকানো।হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাওয়া খেতে হয়।চক্ষু যহন ভালো ছিল বানাইছিলাম। তুমি আমাদের সঙ্গে চলো। বাপিকে বলবো  ডাক্তার দেখাতে। তোমার চোখ সেরে যাবে আবার। মামী তাকে জড়িয়ে ধরলো। একখান দুষ্টু পঙ্খী আমার চক্ষুর মণিদুইডা লইয়া উইড়া গেছে মাগো।ঢাকার চক্ষুর বড় ডাক্তার কইয়াই দিছে অহন আর এই চক্ষু ভালা হইবো না। তয় তোমাগো লগে যে যাইতে কইলা বুকখান আমার হেয়াতেই এক্কারে জুড়াইয়া গ্যাছে।
        আর তুমারে যে পক্ষীডা আইজ দিলাম এ
 হইলো সুনা পঙ্খী।যতন কইরা রাইখা দিলে তোমারে ছাইড়া যাইবো না। এক্কেবারে দিলে ?এত সুন্দর পাখাটা নিয়ে সে কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না।
   হ ,এক্কারেই দিলাম তো। মামী হাসছিল। তোমায় আমি কী দেবো তালে? মামী তাকে কোলে নিয়ে বিড়বিড় করলো কিসসু দিতে অইবো না ধন। মামীর বুকে গুড়মাখা পিঠের গন্ধ।
           উঠোন ভরে গেছে লোকে।গোটা পাড়াটাই তাদের আত্মীয়কুটুম। হাড়িভর্তি সেদ্ধভাত,  মাছভাজা,মোয়ার টিন আর পিঠে নৌকোয় তুলতে তুলতে ছেলেমানুষের মত কাঁদতে লাগল মামু।অগো যাইবার সময় চউক্ষের জল ফালাইও না বলে দিদুন আরও জোরে কাঁদতে লাগল। আইবো মাগো,আবার আইবো,দিদুনের শাদা থানে মা মুখ গুজে বলে।সাবধানে যাইও ইন্ডিয়ার থিক্যা আওন যাওন সোজা কামডা না।
          ঝিনি,চক্ষু বুজো,আরতিদি ফিসফিস করে, এইবার মুডাডা খুলো, আর হাতের মধ্যে তার নরম একমুঠো রেশমের মত সবুজ এক রিবন। সুন্দার? খুব। আবার আইবাতো? আরতিদি তাকে জড়িয়ে ধরে। ঝিনি দ্যাখে সবার থেকে একটু দূরে গাবতলায় একলা দাঁড়িয়ে আছে সোনামামি আর তার অন্ধ চোখ থেকে জল পড়ছে।

Post a Comment

0 Comments