জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা -পর্ব ৪-সঞ্চিত হৃদয়ে .../কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা 
পর্ব ৪
সঞ্চিত হৃদয়ে ...
কমলিকা ভট্টাচার্য 

 সন্ধির সুর

রাতের সাথে দিনের সন্ধি,
ঊষা কালে পাখির বন্দনা।
সূর্য ওঠে নতুন প্রত্যয়ে,
আলোকিত হয় পৃথিবী মনা।

দিনের শেষে, রাতের পথে,
প্রদীপ জ্বলে শিখায় স্নিগ্ধ আলো।
শঙ্খধ্বনির নীরব আমন্ত্রণে,
আকাশ ছুঁয়ে শুদ্ধ আঁধার কালো।

মানুষের সাথে মানুষের সন্ধি,
হোক না স্বপ্নের মধুর গাঁথা।
হাতের স্পর্শে জাগুক বিশ্বাস,
হৃদয় হোক প্রেমের সুতোয় বাঁধা।

তবু কেন এই বিভেদ দ্বিধা?
অন্ধকারে কেন হারায় মায়া?
একসাথে চলি ঐক্যের সুরে,
জাগুক জীবনে শান্তির ছায়া।

সন্ধির পথে প্রণামের গান,
মানুষকে মানুষ করুক আপন।
প্রকৃতি যেভাবে বরণ করে,
তেমনই হোক মিলনের ক্ষণ।


 ধুয়ে গেল সংশয় 


মুষলধারায় বৃষ্টি ঝরছে,
চাঁদ ছিল একটু আগেই আকাশে,
তারাদের সঙ্গে হাট বসিয়েছিল,
আমি তাকিয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম।

তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাই,
মন একটা কবিতা লিখতে চায়
কিন্তু শিখার আলোতে জেগে ওঠে সংশয়,
ভালোবাসার কথা লিখতে গিয়েও থেমে যাই,
যেন সে কথা দোয়াতের কালির মতো গভীর, অপরিচিত।

বিড়ালটা রাস্তা কাটল—ভয় কি জানিয়ে দিল?
চামচিকিরা উড়ল মাথার উপর দিয়ে,
হৃদয় কেঁপে উঠল কুকুরের কান্নার শব্দে
মন কেমন চঞ্চল,
মনে এল প্রশ্ন—তুমি কি আমায় ভালোবাসো?
ঠিক তখনই টিকটিকিটা টিক টিক করে উঠল 
বৃষ্টির ধারা আকাশ আর মাটিকে জুড়ে দিল
ধুয়ে গেল নিকোনো উঠোনের মত আমার
সংশয় ...

🍂


 তোমাতেই মিলে আছি

তোমাতেই তো ছিলাম মিলে
দেখোনি তুমি একবারও চেয়ে
সেদিনও ছিলাম নীরব, নিরুত্তর
তোমারই আজ্ঞা মেনে।

যদি চাও বৃষ্টি হয়ে আজও পারি ঝরতে
তোমার মনের শুকনো উপত্যকাতে সবুজের রং ভরতে
ফুটতে পারি পদ্ম হয়ে টলটলে মন দীঘিতে
একবার শুধু ডেকো প্রিয় সেই আদরের নামেতে।

তোমার সুরেই তো বেজেছি আমি চিরকাল 
তোমার সুখেই গড়েছি রাগিণী
সাতসুরে বেঁধেছি জীবন তার
তোমার গুণেই যে আমি গুণী।

আজ যখন পেয়েই গেছি তোমার মনের চাবিটি
চুরি করে ঠিক নিয়েই নেব
লুকিয়ে গড়া হীরের আংটিটি।


 সর

পুকুরের জলে শ্যাওলার সর,
শান্ত অথচ অস্থির প্রতিচ্ছবি,
তলায় লুকিয়ে আছে ঘূর্ণি, অদেখা তুফান,
জীবনকে উপর উপর ছুঁয়ে যাই,
তলিয়ে দেখার সময় কোথায়!

দুধের উপর জমা সর,
এক মায়াবী আবরণ,
যেমন সম্পর্কেরও থাকে মসৃণ মুখোশ,
সেই মুখোশের নীচে লুকিয়ে আছে কত ক্ষত,
আমরা কি সেই ক্ষতের গভীরে উঁকি দিই ?
খুঁজে নিই সম্পর্কে নিহিত পুষ্টি?


দইয়ের উপর মাটার মতো জীবন জমে থাকে,
চামচে চেঁচে নিতে চাওয়া  মিষ্টি সর,
কিন্তু সেই নীচে জমা দইয়ের টক?

আমরাও তেমনি উপরের মিষ্টতা পেয়ে ভুলে যাই,
শুধু অনুসরণে জীবনটাকে উপভোগে ব্যস্ত 
জীবনটাকে তলিয়ে দেখে
যে শিকড় ছুঁতে পারতো অন্তরের গহীন সত্য
আমারা কি সে গভীরে ডুব দিই?

Post a Comment

0 Comments