জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি/৫৬পর্ব /চিত্রা ভট্টাচার্য্য

ভ্যাটিকান মিউজিয়াম

বার্লিনের ডায়েরি    
৫৬পর্ব      
চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
( ভ্যাটিকান মিউজিয়াম )   

 ভ্যাটিকান মিউজিয়ামে প্রবেশের দরজায় ওরা ঝড়ের গতিতে এসে  দাঁড়ালো। শ্রীময়ী স্মৃতির গভীরের ক্যানভাসে চলার পথের কত অবর্ননীয় অনুপম দৃশ্যগুলো সেদিন তুলি নয় ওর একান্ত আপন প্রিয় কলম টি দিয়ে কথার পিঠে কথা বসিয়ে অপটু হাতে ছবি এঁকেছিল প্রতিদিনের  অভ্যাস মত । একপাশে বিশাল আকারের সুউচ্চ প্রাসাদগুলো সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে প্রহরায়রত। মিউজিয়ামগুলো সেদিকেই। আরেক প্রান্তে অনুসন্ধান কেন্দ্র। সেখানের মিউজিয়াম দেখার জন্য দর্শনার্থীদের  টিকিট সংগ্রহের  লম্বা লাইন যদিও বেশ কয়েকটি কাউন্টার আছে। ভারতীয় অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরাও ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের দর্শনার্থী। তাদের  গুরুগম্ভীর আলাপ আলোচনার মৃদুগুঞ্জন পিছনের লাইন থেকে ভেসে আসছে। অবাক হয়ে ঋষভ বলে শ্রী লক্ষ্য করে দেখেছো এখানে কিন্তু বিভিন্ন দেশের দালালচক্র রয়েছে। ওরা অল্প কিছু কমিশনের মাধ্যমে মিউজিয়ামে প্রবেশের টিকিট দেবে আমাদের লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না। অদ্রিজা বলে আমাদের তো টিকিট অন লাইনেই সংগ্রহ করা আছে। তাহলে ওদের কথা শোনার দরকার নেই। 
                    ঘুষ -দালালির মতো জঘন্য ঘটনা এতো দিনে বিদেশে এসে এই প্রথম দেখেছিল। এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র টির পবিত্র ভূমিতে এমন সব অনৈতিক কান্ড শ্রীর ভারী  অবাক লাগে। যত বলা হচ্ছে টিকিট কাটা আছে দরকার নেই তবুও কানের কাছে এসে একতরফা গুনগুন চলছে। উৎসবের মরশুম শেষের পথে  ,শনিবারের উইকেন্ডে এখানে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগমে যেন জনসমুদ্র। সেদিনের ভীড়ের একটা স্মরণীয় ঘটনা মনে পড়লে শ্রী কলম হাতে আজ নীরবে হেসেই চলেছে।  ডায়েরির পাতা উল্টে দেখে সে ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ কোথাও লেখা নেই শুধু সারমর্ম টুকু ছুঁয়ে যাওয়া আছে। কিন্তু আজ স্মৃতি চারণ করতে বসে  সম্পূর্ণ ঘটনা ছবির মত মনে পড়ছে। 
ৱ্যাম্প

 মিউজিয়ামে ঢোকার রাস্তায় বড্ড ভীড় জমেছিল। অনেকটা ঠিক কলকাতার লোকাল বাস ট্রাম ট্রেনগুলোর দরজার কাছে যেন হঠাৎ জমা জনারণ্য। শ্রীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাশিয়ান ভদ্রলোকের কোটের পকেট থেকে এক ভদ্রবেশী হ্যাটকোটে আপাদমস্তক সুসজ্জিত যুবক দুই আঙুলের নিখুঁত কায়দায় পার্স টি হাতসাফাই করে প্রায় তুলে নিতে যাবে , শ্রীর সেদিকেই নজর পড়লে মুখ দিয়ে ঠিক তক্ষুনি স্থান কাল ভুলে বাংলা উচ্চারণের অদ্ভুত ভাবে-- গেলো -গেলো আওয়াজ বেরিয়ে আসে। ও ঝুঁকেমাটির দিকে তাকিয়ে পায়ের পাতা দেখে ,ভাবটা যেন পায়ে আঘাত পেয়েছে। পিতা কন্যা দুজনেই বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে কি এমন হলো যে স্থানকাল ভুলে এমন চিলচিৎকার করলে ? শ্রী অপ্রস্তুত হয়ে বলে এমনি । সবাই শ্রীর দিকে তাকানো তে পকেটমার বাবুটির হাত সাফাইয়ে বিঘ্ন ঘটায় সতর্ক হয়ে সেদিক থেকে নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি  টুপির আড়ালে মুখ লুকিয়ে জনতার ভীড়ে মিশে গা ঢাকা দিয়েছিল। ভদ্রলোকের পার্স টি সে যাত্রায় রক্ষা পাওয়ায় শ্রীময়ীর দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হেসে রাশিয়ান ভাষায় ধন্যবাদ জানিয়ে ছিলেন। রোমের রাস্তায় বা ভ্যাটিক্যান সিটিতে এমন পকেটমারের গল্প  সিলিয়া বার্লিনেই বলেছিল। বিশেষ করে প্রাগে অন্বেষণ এবং রোমে ক্যাপ্টেন মল্লিক সাহেবের মুখে ওরা বারবার শুনেছিল। শ্রী অবশ্য জানেনা চোর ধরা পড়লে এ দেশে শাস্তি কী হবে ? এমন ঘটনা বোধহয় এখানে হামেশাই ঘটে। তাই পথে চলতে অনেক জায়গায় দেখেছিল দর্শনার্থী কে সাবধান করে চুরি সম্পর্কে সতর্ক বাণী লেখা আছে ।  

🍂

 
পাহাড়ের মসৃণ গড়ানে পথের পাশে এক ঢাল সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ পেরিয়ে ভ্যাটিকান মিউজিয়ামে প্রবেশ করেছি-- বিশালাকার বড় সংগ্ৰহ শালা। এরপরই প্রাসাদের পর প্রাসাদের সারি যার প্রতিটি ঘর মাথা থেকে মেঝে প্রতিটি কোণ ভরে আছে রেনেসাঁস যুগের অমর শিল্পীদের নিজস্ব শিল্প ও শ্রেষ্ঠ আর্টের প্রসারিত সংগ্রহ ছাড়া ও আশেপাশের দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর নিদর্শনে। প্রাসাদে ঢুকতেই দর্শকদের সুবিধার্থে একটা বেশ চওড়া ধরণের helical ramp যাতে এতো সংগ্রহের ঘর গুলোতে অতি সহজে পৌঁছনো যায়।  বিরাট লম্বা এই  ramp  টি  পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে চলে গেছে প্রাসাদের সর্বোচ্চ ওপর তলা পর্যন্ত। এতো বিবিধ নানা রূপ সামগ্রীতে পরিপূর্ণ যা এতোটুকু সময়ে দেখে ওঠা মোটেই সম্ভব নয়। এমন কি একদিনে অতি বিখ্যাত শিল্পের নিদর্শনগুলোও  ঠিক করে তেমন দেখা যাবেনা। 
মিউজিয়ামের অন্দর মহল।

ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস প্রচুর পরিমানের সংগৃহিত ভাস্কর্য্য নিয়ে যে সংগ্রহ শালাটির সূচনা করেছিলেন পরবর্তী কালে সময়ের পরিবর্তনে নতুন পোপদের আমলে তাঁদের উ ৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষক তায় ধীরেধীরে ভ্যাটিকান মিউজিয়াম টিকে বিপুল সম্প্রসারিত করেছিলেন। শিল্পী মনের ছোঁওয়ায় রঙ তুলির বাহারী সূক্ষ্ণ টানে অপরূপ  চিত্রশিল্প আর সুনিপুন হাতের দক্ষতায় ছেনী হাতুড়ির ঠোকাঠুকিতে পাথর খুঁদে গড়ে তোলা অনবদ্য শৈল্পিক সত্ত্বা দিয়ে মনের মাধুর্য্যে অলৌকিক ভাব প্রকাশের সূক্ষ্ণ কাজে হাজার হাজার  ভাস্কর্য্যগুলো পাথরের বুকে প্রাণ পেয়েছিল।  
 
অন্দরে প্রবেশ করে এই বিল্ডিঙে প্রথমেই দেখা যাবে গ্রীকপুরাণের সোনালী চুলের সুদর্শন আলোর দেবতা সূর্য - Apelo দেবের মূর্তি টি কে। সেখানে  দৈববাণী শুনে, চিরন্তন সত্য আলোর মহারাজ Apelo কে  প্রণাম জানিয়ে গ্রীকবাসীর জীবনের পথ চলা শুরু।  তাঁর উজ্জ্বল প্রভায় স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির অপামর মানব সন্তান কে আশীর্বাদে ধন্য করলেন। এখানেই রয়েছে স্মারক স্তম্ভ ধারণকারী পুরুষের প্রতীক রূপে রোমের ক্যাম্পাস মার্টিয়াস নামক স্থান টি। এখানে সম্রাট অগাস্টাস সূর্য্য ঘড়ি হিসেবে স্মারক স্তম্ভটি স্থাপন করেছিলেন। উৎসবের মরশুমে দর্শনার্থীর স্রোতে ভাসছে ভ্যাটিকান সিটি। রাশিয়া চীন জাপান কোরিয়া ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার মত বিভিন্ন দেশ মহাদেশের মানুষের মিলন সাগরের মেলার আমরা ও এক অতি উৎসাহী অংশীদার। 

 অবর্ণনীয় শিল্পে সমৃদ্ধ ভাস্কর্য্য শুধু পথের দু পাশ জুড়ে সাজানো নয় মেঝেগুলোর নক্সা ও নানা ধাঁচে বহু বর্ণের মোজাইকে তৈরী। রোমাঞ্চিত হয়ে ঋষভের হাতটি ধরে অদ্রিজা এগিয়ে যায়।  শ্রী বিস্মিত চোখে চেয়ে থেকে বলে এসেছি যেন রূপকথার সাম্রাজ্যের আলিবাবার চোখ ধাঁধানো সেই মণি মাণিক্যে পরিপূর্ন বিশাল রত্ন ভান্ডারটি তে। ঋষভ বলে খুব ঠিককথা ; প্রাচীনকালের থেকে রেনেসাঁ সংখ্যক যুগের অবিস্মরণীয় ও বরণীয় শিল্পীদের এই অসাধারণ শিল্প প্রতিভা হীরে জহরতের মত অমূল্য রত্নভান্ডার টির থেকেও বহুগুনে মূল্যবান ।                                                                                                          
 জাদুঘরটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যেমন (১)পিও ক্লেমেন্টিন মিউজিয়াম ,(২)পোপ  চতুর্দশ ক্লেমেন্ট ও ষষ্ঠ পিউসের নামে যাদের উদ্যোগে সংগ্রহ শালা আরো বহুমাত্রায় বর্দ্ধিত হয়েছিল। (৩)এট্রাসকান মিউজিয়াম , (৪)ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়াম,গ্যালেরি অফ ট্র্যাপেস্ট্রিস ,(৫)গ্যালারি অফ ম্যাপস সবিয়েস্কি রুম।  ( ৬) রাফায়েল স্ট্যাঞ্জ ,(৭)রুম অফ ইম্যাকুলেট কনসেপ্শন, সিস্টেইন চ্যাপেল --আরো বিস্তর গ্যালারি। তালিকার শেষ নেই। এ যেন স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টি--শিল্পের কূলহারা অথৈ মহাসাগর। ঋষভ পছন্দের তালিকা অনুযায়ী ঘরের নাম্বারে টিক মার্ক দিয়েছিল। মাইলের পর মাইল রাস্তা জুড়ে রয়েছে এই মিউজিয়ামটির ঘরগুলো তার আদি অন্তর সীমা খুঁজে সর্বত্র  ঘুরে দেখা এই টুকু সময়ে অসম্ভব। তাই খুব অল্প সংখ্যক সৃষ্টি ওরা দেখবে বলে স্থির করেছিল। 

মিউজিয়ামের উপরের দিকে পিনাকোটেকা চিত্রশালা। ঢোকার আগে বাম দিকের উন্মুক্ত একটি জায়গায় পূর্বতন রোমান সম্রাট আন্তোনিয়াস পায়াসের নামে উৎসর্গ করা শ্বেত শুভ্র মার্বেল পাথরের স্তম্ভ টি চোখে পড়লো ,--এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা সম্পন্ন  দেবতুল্য সম্রাট পায়াসের প্রতি ১৬১ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত স্তম্ভ টি সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস কর্তৃক উৎসর্গিকৃত হয়েছিল। গ্রীক পুরাণ থেকে উড়ন্ত পাখা যুক্ত দেবদূত সম্রাট আন্তোনিয়াস পায়াস ও তাঁর রানী ফাউস্টিনাকে স্বর্গে বহন করে নিয়ে যাওয়ার মনোরম দৃশ্য।সম্রাটের সঙ্গে একটি ঈগল পাখি পথ দেখিয়ে আকাশ পথে উড়ে চলেছে। এক অপরূপ সুন্দর প্রেমের কাব্য গাঁথা - নিঃসন্দেহে ভাস্কর্য্যে গ্রথিত হয়ে আছে। 
                                                                    
 ভ্যাটিকান সিটিতে ডিসেম্বরের ৮ তারিখ থেকে শুরু হয় বড় দিন ২৫শে ডিসেম্বরের উপলক্ষ্যে একমাস ব্যাপী উৎসব পালন। এখন জানুয়ারীর তৃতীয় সপ্তাহ।এখনো দিকে দিকে তার রেশ চলেছে । চলার পথ কখোনো ও প্রশস্ত ঘরের ভিতরে নয়তো অপরিসর বারান্দায় যেখানেই দেখা যায় সেখানেই অপরূপ শিল্প সৃষ্টি অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের প্রকাশ। শ্রী ভাবে তিতিরের হাতে ক্যামেরা থাকলে কি হবে মানুষের ভীড়ে ছবি তোলা অসম্ভব।  তবে কোথাও বেশী ক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখার অবকাশ নেই। প্রত্যেক দরজার পাশেই ম্যাপ আছে সেই ম্যাপ অনুযায়ী পছন্দের প্রদর্শনী ঘরের দরজায় পৌঁছলে এতদিন পরে স্মৃতি হাতড়ে লিখতে বসে শ্রীর মনে পড়ে না ,দক্ষিণে না বামে ,বা কত নম্বর ঘরে কোন বিশেষ স্থাপত্য টি দেখেছিল। 

তবে এখোনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে একটি নয়ন মুগ্ধ কর স্থাপত্য। রোমের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রোমার মূর্তি কে স্বর্গ পথ গামী রাজা রানী প্রণাম জানাচ্ছেন।  শৌর্য্যের প্রতীক অধীশ্বরী দেবী রোমা তাঁর হাতের ঢালে রোমের প্রতিষ্ঠাতা শিশুদ্বয় রেমাস ও  রোম্যুলাসের নেকড়ে দুগ্ধ পান রত মূর্তি টি। যে মূর্তি টি কে প্রতীক চিহ্ন করে রোমের জন্মদাতাদের এক অবিস্মরণীয় রূপের মূর্তিকে সজীব করে রাখা হয়েছে। সামনেই আর একটি ঘরের গ্যালারী ভরে থরে থরে সাজানো রয়েছে  অসংখ্য অপরূপ ভাস্কর্য্য ,বাইবেলের ঘটনা থেকে সংগৃহিত গল্প ও চরিত্র নিয়ে রচিত এই অসাধারণ সৃষ্টি গুলো। আর এক জায়গায় দেখি রোমানদের তৈরী পশুপাখি দের শ্বেত পাথরের ভাস্কর্য্যের সংগ্রহতে  ভরে আছে। নিখুঁত প্রাণী মূর্তি তাদের গায়ে পশম গুলো পর্যন্ত পাথর কেটে তৈরী। এতো প্রাণবন্ত  যে একটু  হাতের স্পর্শ পেলেই যেন তক্ষুনি জেগে উঠবে।  শ্রীময়ীর মনে হয়েছিল পৌরাণিক মুনি ঋষির অভিশাপে পুরানের গল্পের পাষাণী অহল্যার মত যে রামচন্দ্রের স্পর্শে জেগে উঠেছিল। এরাও যেন তেমনি  অসামান্য নিপুনতা দক্ষতা দিয়ে গড়া এই শিল্প সৌন্দর্য মন দিয়ে অনুভব করে সামনের ঘরের দৃশ্যে এগিয়ে গিয়েছিল। 

পোপ জুলিয়াস দ্বিতীয়ের আদেশে স্ট্যাঞ্জা ডি এলিওডোরো ,স্ট্যান্জা ডেল্লা সেগানাটুরা , সালা ডি কনস্টান্টিনো ,স্ট্যাঞ্জা ইনসেন্ডিও ---এই চারটি কক্ষতে ১৫০৯ থেকে ১৫১২ খ্রিষ্টাব্দর  মধ্যবর্তী সময়ে নতুন করে দেওয়াল চিত্র বা ফ্রেস্কো অঙ্কন কাজ শুরু করা হয় । সালা ডি কনস্টান্টিনোর  কক্ষে রাফায়েলের মৃত্যুর পর ১৫২০ থেকে ১৫২৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তাঁর ছাত্র দের দ্বারা চিত্রিত পৌত্তলিকতা বা চোখে  তৎকালীন প্রচলিত ধর্মের উপর খ্রীস্ট ধর্মের জয়লাভের কথাই ছবিতে চিত্রিত করা হয়েছে। রাফায়েলের নক্সা অনুযায়ী জি ও লিও রোমানোর অঙ্কিত কনস্টান্টাইন এড্রেসিং হিজ সোলজার্স এবং দি ভিশন অফ ক্রশ আর একটি ছবি ভিক্টরী অফ কনস্টান্টাইন ওভার মাকসেন্টিয়াস নিয়ার দ্য মিলভিয়ান ব্রিজ ইত্যাদি ফ্রেস্কো চিত্র গুলো অপরূপ সুন্দর হয়ে দেওয়াল গাত্র শোভিত হয়ে আছে।  

স্ট্যান্জা ডি এলিওডোরো নামের কক্ষ টিতে রাফায়েলের অঙ্কিত এক্সপালসন অফ হেলিওডোরাস কে জেরুজালেমের মন্দির থেকে বহিস্কার করার দৃশ্য ,আর একটি পাশে লিও রিপালসিং এটিলা চিত্রটি। পোপ লিও কর্তৃক হুন সম্রাট এটিলাকে অস্বীকার করা।  ওরা সেখানে বিভিন্ন ধারার বহু চিত্র শিল্পীর নানা রকম  শিল্পকর্ম দেখলেও বেশ কয়েকটি  মর্মস্পর্শী চিত্র শ্রীর চোখের  ওপর এতদিন পরেও স্পষ্ট হয়ে আছে। .বিশেষ করে  ''লিবারেশন অফ সেন্ট পিটার।''  
 আর একটি কামরায় স্ট্যান্জা ডেল ইনসেনডিওতে দেওয়াল চিত্রে ইনসেন্ডিও ডি বর্গ রোমের অগ্নিদাহের করুণ দৃশ্যের চিত্র টি নিপুন ভাবে পরিবেশিত হয়েছিল।  অপর একটি চিত্রে করোনেশন অফ শার্লাম্যান এই ফ্রেস্কোটিতে রাজা শার্লাম্যানের রাজ্যাভিষেকের চিত্র ছাড়াও আর ও প্রচুর দৃশ্য ও অপরূপ অঙ্কন শৈলী দেখে শ্রী ঋষভ কে আফশোস করে বলে আমরা কেউ চিত্রশিল্পী নই। শুধুই দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। যাঁরা ছবি বিশেষজ্ঞ সত্যিকারের ছবি বোঝেন তাদের কাছে এ দেখা কত তাৎপর্য্য পূর্ণ হতো তাই ভাবছি। 
স্থাপত্য

ঋষভ ,একটি ঘরের সামনে এসে বলেছিল এটি ''স্ট্যানজা ডি এলিওডোরো কক্ষ" । অসাধারণ সব ফ্রেস্কো বা দেওয়াল চিত্রে ঘরটি ভরে আছে , ---"'দ্য মিটিং অফ লিও দ্য গ্রেট এন্ড এটিলা "যেখানে পোপ লিওর সাথে হুনের রাজা এটিলার দেখা হয়েছে। এবং এখানে সেন্টপিটার ও সেন্টপল কে আকাশ পথে তরবারী বহন করে আনতে দেখা যাচ্ছে। 

  দৃষ্টি নন্দন চিত্র ''এক্সপালশন অফ হেলিওডোরাস ফ্রম দি টেম্পল-"-এই চিত্রের বিষয় টি  ছিল সিরিয়ার রাজা চতুর্থ সেলুকাস তাঁর কোষাধ্যক্ষ হেলিওডোরাস কে জেরুজালেমের ইহুদি মন্দির থেকে অনাথ গরীব ও সহায় সম্পদ হীনদের সাহাযার্থ্যে সঞ্চিত করে রাখা সম্পদ লুঠের নির্দেশ দেন। দেবতা কর্তৃক রক্ষিত সম্পদ লুঠ করতে এসে হেলিওডোরাস এক অশ্বারোহী বীর সহ চাবুক হাতে দুই দেবদূতের কাছে লাঞ্ছিত হয়ে মন্দির ত্যাগ করার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। চিত্রের মধ্যস্থলে প্রার্থণা রত পুরোহিত পবিত্র দীপাধার মেনোরাহ ,দক্ষিণে যুদ্ধ রত দেবদূতেরা ও পরাজিত ভূপতিত হেলিওডোরাস ও তার সহচর বৃন্দ। বামে রয়েছে অনাথ শিশু ও গরীব স্বামীহারা অসহায় স্ত্রীজাতিদের দের চিত্র। এবং সব থেকে পেছনে সুইস গার্ডদের কাঁধে সিংহাসনে আরোহিত পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস আবির্ভাব হলেন ,যেন ছবিতে নয় সর্বময় কর্তা পোপ সশরীরে উজ্জ্বল প্রাণবন্ত।সুইস রক্ষা বাহিনীর কাঁধে চড়ে আসরে আসছেন এ যেন শুধুই চিত্র নয় সবটাই চলমান বাস্তব।                                                            
                                                         ক্রমশঃ

Post a Comment

0 Comments