জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা-পর্ব ৩/পারমিতা রায়

গুচ্ছ কবিতা পর্ব ৩
পারমিতা রায় 


আজকের সমাজে নারী

আজকের সমাজে আমি সেই নারী , আর ওই যে দেখছেন     পথ চলতি মহিলা , 
আমারি বান্ধবী ।
আমাদেরই আপনারা......
রাস্তায় ,বাসে, ট্রেনে 
সর্বক্ষণ দেখেন , 
আমাদের মাথার চুল বাঁধা ,
      না খোলা, 
 তার খেয়াল রাখেন। 
আরো অনেক কিছুই, 
দেখার প্রত্যাশা রাখেন।
    যাদের ছায়া মাড়ানো 
      আপনাদের নিষিদ্ধ, 
      অথচ সেই ছায়াকেই , 
             নিবিড় রাতে 
          করে নেন আবদ্ধ।
      আমরা সেই সকল নারী, 
        আজ আমরা বিদ্রোহী।
   রাস্তার ধার থেকে যাদের               
         নিয়ে যেতে চান 
       আপনাদের বাংলোতে, 
         আমরাই সেই নারী। 
   যাদের জন্মের পরে সাধারণ  
মানুষের ঘরে নেমে আসে, 
     কালবৈশাখীর মতো     
গুরুগম্ভীর কালো 
      মেঘের সমাবেশ ।
    চারিদিকটায় যেন নারীদের অসহায়তা , নিস্তব্ধতা ‌।
রঙিন মেঘের মাঝে ঝলমলে সূর্যের অস্ত যাবার মুহূর্ত দেখার সুযোগ হয় না 
আমাদের মত নারীদের। 
তার আগেই বন্দী হতে হয়, রক্ত শাসনের চার 
দেয়ালের মাঝে। 
আমাদের চোখে আপনারা পুরুষ সমাজ ......
 একে দিতে চান মিথ্যে স্বপ্ন। 
তবে সংসারের ভরসা 
 আমরা এই নারীরা। 
আমাদের দিনরাত এক করে সংসারের জন্য 
ভাবতে হয়,  করতে হয়। 
আমাদেরই জমানো টাকায় প্রয়োজনীয় ঘরের  না হওয়া    কাজ মিটে যায়।
 কালো মেঘের নিচে আমরা নারীরা যেন ছাতার মতো বাচাই নিজেদের সংসার ।
তবে আপনারা হ্যাঁ, আপনাদের এই মানব  সমাজ 
অনেক করেছে নেই নারী জাতির উদ্দেশ্যে। 
কখনো বা মা বলে পুজো করেছেন আমাদের। 
প্রকৃতির উজ্জ্বল নিদর্শন বলে সম্মানও করেছেন। 
তবে আবার কখনো বা আমাদেরই কুপি হাতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
তবে আমরাই জেগে উঠেছি আজ প্রতিবাদের শিখা নিয়ে।
আজ আমরাই জেগে উঠবো প্রগতি ,উন্নতি নিয়ে এই সমাজের বুকে ।
আমরাই কাটাবো সমাজের এই অন্ধকারকে। 
সামনের বন্ধ দ্বার খুলব আমরা নারীরা। 
আমরাই শেষ করব পুরোহিত কঙ্কালের পাশা খেলা। 
 আমরা আর পুরুষ শাসিত সমাজের পায়ের কাছে 
বসে থাকবো না। 
আমরাও আক্রোশে আজ হেসে উঠবো না 
আমরাও স্বপ্নের মধ্যে ওই বাবুদের বাড়িগুলোর 
ছেলেদের মত সেজে ; 
গেছি রঙ্গালয়ে। 
সূক্ষ্ম হবার বুকে উড়িয়ে দিয়েছি আমরা 
ওই দৃশ্য লোক।
আমরা নারীরা ফুলের পাশে, 
ফুল রূপে ফুটেও দেখেছি 
তাদেরকে ভালোবাসতে সফলতা পাই কিনা।
আমরা নারীরা কপাল থেকে ঘাম মুছে নেবার মত 
মুছে ফেলেছি বিয়ের পর 
পিতাদের পদবীগুলি। 
আমরা তাই না মারা গিয়েও করেছি ঘুমের অভিনয়গুলি।
ভবিষ্যতে লেখাগুলি হয়তোবা আমার উইপোকায় 
      খেয়ে নেবে। 
তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাব 
অক্লেশে সত্যি তাকে বলবার। 
ভোগ করে যেতে চাই নিজের     ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার।
আজকালের নারীদের দুটি চোখ অবশ্যই ----
"এক পলক সত্যি চোখ "
আমরা নারীরা আমাদের চারপাশে চাই -----
নিরীহ , সৎ 
 চরিত্রের ভদ্রলোক।।

🍂


চাঁদের আলো 

শীতল স্নিগ্ধ চাঁদের দিকে 
তাকালে মন হয় 
শান্ত এবং মনমুগ্ধকর 
তবে প্রকৃতপক্ষে, 
শীতের আকাশে 
ভিক্ষুক মন চায় আসল 
কবিতার কথাগুলিকে
ছাপিয়ে গিয়ে, 
প্রকৃতপক্ষে পরিবেশের শীতলতার, থেকে রক্ষা পেতে, 
শরীরে জড়াবার 
      জন্য কম্বল।



চব্বিশের নারী

দয়া করে এটা বলবেন না যে, 
নারী-পুরুষ উভয়েই সমান। 
কলিযুগে মেয়েরা ডাক্তারি হোক ,শিক্ষিকারই হোক, ইঞ্জিনিয়ারই হোক , বিমান         চালিকায় হোক, 
আসক্ত বোয়াল মাছগুলো সব গিলে নিচ্ছে। 
আর মেয়েদের হতাশা, আর্তনাদ, চিৎকার 
বাড়তে থাকছে।
তাই বলছি ফেমিনিজম 
ছেলেমেয়েরা সমান 
এই  কথাগুলি ,
আর আপনারা বলবেন না। 
মনে রেখো তোমারি পুণ্যে 
বাঁচবে তোমার 
 আগামী সন্তান। 
নারী আপনারা মায়ের জাত 
ঈশ্বর আপনাদের দিয়েছেন অশেষ সম্মান। 
বাবার চেয়ে মায়ের 
 বেশি অধিকার 
মায়ের পদতলে 
সন্তানের বেহেশত।
নারীরা মর্যাদা 
 পায় আড়ালে পর্দায়, 
নারী হয়ে পুরুষের চালচলন, 
সাংঘাতিক বিপদ ঘটায়। 
নারীরা হলেন পৃথিবীর 
 শ্রেষ্ঠ সম্পদ ,
যে কুলাঙ্গারিরা মাতৃ জাতির অসম্মান করে, 
সমাজ সেই অভিশপ্তকে পশু হিসেবে জানে, 
আজকের এই 
আধুনিক যুগেও
নিষিদ্ধ সংগম শেষে , 
নারীরা যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে 
পরিত্যক্ত নক্ষত্র, 
যে নক্ষত্রে রয়েছে 
উজ্জ্বল আলো কিন্তু, 
নেই সেই আলো শোষণকারী কোনো উপগ্রহ ।।

Post a Comment

0 Comments