বিজলীর ঝটকা
কমলিকা ভট্টাচার্য
"গায়ের সাথে সেঁটে দাঁড়িও না!" দীপ্ত চিৎকার করে ওঠে।
পূরবী বিরক্ত হয়ে বলে, "একভাবে তোমার জন্য লাইট দেখাতে দেখাতে আমার হাতে ব্যথা করছে। তুমি নিজে বসে সোল্ডিং করছ, আর আমি দাঁড়িয়ে থাকি! তোমার শখের জন্য আমায় কেন কষ্ট করতে হবে?"
দীপ্ত হেসে বলে, "তাহলে তুমি সোল্ডিং করো, আমি আলো ধরছি।"
পূরবী চোখ উল্টে বলে, "বাহ! বেশ বলেছ! তোমার ঐ ভাঙা পুরোনো রেডিও নিয়ে ঝামেলা আমি কেন সইতে যাব? তোমার শখ, তুমি কর। আমি তো তোমাকে কত হেল্প করি, খেতে পেলে শুতে চাও, তার উপর গায়ে গা লাগলে তোমার মুখ ঝামটা!"
দীপ্ত একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে, "আরেহ! আমার গায়ে সাঁটলে তোমার কারেন্ট লাগতে পারে তাই বলি।"
পূরবী এবার হেসে ফেলে। "তাহলে তো ভালোই। বিজলী লেগে আমি মরে গেলে তুমি তোমার প্রিয় রেডিও নিয়ে থাকো। কেউ তোমায় বিরক্ত করবে না! কিন্তু শুনে রাখো, আমার পা হাত সব ব্যথা করছে। আমি আর পারছি না। এবার আমি যাচ্ছি।"
"আরে! যাচ্ছ কোথায়? এখন তো বাইরের বাক্সটা গ্লু দিয়ে জোড়া লাগাতে হবে। তারপর টেপ লাগাতে হবে সঙ্গে সঙ্গে। তুমি টেপ কেটে কেটে রেডি করো।"
অগত্যা পূরবী একটা চেয়ার টেনে বসে দীপ্তর কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকে। বসে থেকে একমনে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে থাকে। দীপ্তর রেডিও নিয়ে প্যাশন, তার ধৈর্য—সব মিলিয়ে পূরবী অভিভূত।
দীপ্ত হঠাৎ মাথা তুলে বলে, "হ্যাঁ করে দেখছ কী? উঠে এদিকে এসে দাঁড়াও। টেপ কেটে দাও।"
পূরবী টেপ কাটতে কাটতে দীপ্তর গায়ে গা ঠেকে যায়।
"এই! সোজা হয়ে দাঁড়াও না! বিরক্ত করছ কেন?" দীপ্ত যেন কারেন্টের ঝটকা খেলো।
পূরবী অবাক হয়ে বলে, "আমি তোমাকে বিরক্ত করছি, নাকি হেল্প করছি? আগে তো বললে আমার কারেন্ট লাগবে। এখন তো কারেন্টের কাজও করছ না। তাহলে কিসের সমস্যা?"
🍂
"বাজে কথা না বলে কাজ করো। আমায় শান্তিতে কাজ করতে দাও। গায়ের উপর পড়ো না।"
পূরবী এবার আসল কথাটা বুঝতে পারে। সে হেসে ফেলে, তারপর দুষ্টুমি করে দীপ্তর আরও গা ঘেঁষে দাঁড়ায়।
দীপ্ত ফের বিজলীর ঝটকায় চমকে উঠে, কিছু বলার আগেই পূরবীর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। তারপর পূরবীকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে।
~ সমাপ্ত ~
2 Comments
Amazing..... The way she has expressed romance in her writing
ReplyDeleteThank you
ReplyDelete