ভাঙা আয়নার মন
পর্ব -৪৮
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনীয়া
|| নদী তুমি কোথা হইতে আসিয়াছো? ||
কষ্ট হয় না ঝিনিদি? কিসের?এই যে বাস,ট্রেন, রিকশায় রোজ কলকাতা থেকে আড়াই ঘন্টা জার্ণি করে ডিউটি যাও?কোঠারি তো কাছে ছিল। ধুসস,কষ্ট আবার কিসের? তাছাড়া সরকারি হাসপাতালে কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়।আর এখানে তো নাইট ডিউটিও নেই শুধু আউটডোর ।সুমির প্রশ্নের উত্তরে ঠোঁট উল্টে হাসে সে।পলাশের ভাইবোনরা তাকে দিদিই ডাকে। তাও রোজ রোজ এই ঝক্কি আমি বাপু পারতাম না।তাছাড়া এই অবস্থায় একা একা তুমি ধুমধাড়াক্কা এত দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছই বা কী করে ।
উত্তর তো দিয়েই দিলি।একা তো আর না। দুজন মিলে কাজকম্মে প্রাকটিস দিচ্ছি। সুমির কথায় আবারো হেসে ফেলে সে আর মনে মনে বলে আমি তো সত্যিই একা নই আর;ভেতরে একটা নদী বাড়ছে যে।
পেটে আল্ট্রাসাউন্ডের প্রোব ঘোরাতে ঘোরাতে সিনিয়র সোনোলজিস্ট পারেখদা আট সপ্তার মাথায়
যখন বললো বুঝলি স্রোতস্বিনী, ডাইনিং হলে রোজ তো দেখি মেয়েদের নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তিমে দিস তা ওই কারণেই বোধহয় মেয়েই আসছে তোর। পলাশ হাসছে দেখে সেও উঠে পড়ে ঘাড় বাঁকিয়ে বলেছে আমি জানি তো নদী ছাড়া কিচ্ছু আমি ভাবিনি যে।আর এই যে মেয়েদের নিয়ে বক্তিমে বললে না এতেই বোঝা যায় মেয়েদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা তোমার নেই। হাত জোড় করে ক্ষ্যামা দে,ক্ষ্যামা দে মা বলে পারেখদা হাসছিল।
আজকাল মা হবার স্বপ্নে ভরপুর সে চলতে চলতে কথা বলে ভেতরের আমির সাথে।ট্রেনটা হয়তো গমগমে কোনও ব্রীজ পার হচ্ছে,সে বিড়বিড় করে ভয় পাচ্ছিস নাকি?আরে দূর আমাদের কিনা বুক ভত্তি সাহস তাছাড়া ফিনফিনে একটা নদী পেরোচ্ছি তো আমরা। সেই যে ছোট্ট নদী কোন সুদূরে ধায়...বক্ষে রজত ধারা...রজত মানে হোলো রুপো বুঝলি। রুপোর মতন রোদ গলে গেছে তো জলে।কী সুন্দর দেখাচ্ছে বল দেখি।এ তো সেই নদীর ধারে ছোট্ট গাঁও/একটুখানি বসে যাও/বসতে বসতে সন্ধ্যা/বইছে বাতাস মন্দা...ঠিক সেই ছড়াটার ছবির মতো যে রে।
🍂
সুন্দর কিছু দেখলেই ফিসফিস করে, ব্যাপক একটা দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি,বুঝতে পারছিস?
ট্রেন থেকে নেমে কাঁকিনাড়ার নারায়নপুর পি এইচ সি পৌঁছতে মিনিট কুড়ি মতো লাগে।সুবলদার রিকশায় মান্থলি করা আছে। সব রিকশা যেতে চায় না সবসময়। আসার সময় স্টেশন থেকে রিকশা পেতে অসুবিধা না। সমস্যা ফেরার সময়। মাঝেরহাটের ট্রেনটা ধরবার তাড়াও থাকে।ওই গাড়িটা ধরতে পারলে ফিরতে খানিক সুবিধে হয়। রিকশা ঠিক করা থাকলে দুদিকেই সময় বাঁচে।
তার অবশ্য এত কিছু মাথায় আসত না। সিস্টার নীরাদিই বলেছিল।শুনে স্টেশনের রিকশা স্ট্যান্ডে গিয়ে পরদিনই সে সুবলদাকে ঠিক করে ফেলল। কী সব্বোনাশ!সুবল ছাড়া আর কাউকে পেলেন নাকো ম্যাডাম?এক নম্বরের গেঁজেল যে ও! আপনার শরীর ভালো নেই। এই অবস্থায় সুবল তো খুবই রিস্কি।নীরাদি,পূর্ণাদি আর ছায়াদি বয়স্কা তিন সিস্টারই এক সাথে বিলাপের ঢঙে কথা শুরু করে।তারা স্থানীয় বাসিন্দা। সবার স্বভাব চরিত্র তাদের নখদর্পণে।গাঁজা খায় নাকি?তাই অত রোগা পাকানো চেহারা।কেউ ওকে ডাকছে না দেখে ভাবলাম সওয়ারি পায় না বেচারা তাই ওকেই নিলাম। হায় হায় রে!কেউ চড়ছে না দেখেও বুঝলেন না যে তার সমস্যা আছে ! ভাববেন না। মিনিট কুড়ির তো রাস্তা ও ঠিক সামলে নেবো।
সামলাতে অবশ্য হয়ই। গাঁজা সুবল খায় সন্ধেবেলা। কাজেই সকালে মোটামুটি সজ্ঞানেই সে থাকে। তবে ডান চোখে ছানি পড়েছে। চশমার ডান কাঁচটা তাই জলদস্যুদের মতো কালো কাপড়ে ঢাকা। দেখেই তার টিনটিনের রেড সি শার্ক বইটার প্রচ্ছদ মনে পড়ছিলো বলেই সে এগিয়ে গেল সুবলের রিকশার দিকে।
কদিন পরেই দেখল বাঁ চোখের কাঁচটাও ফেটে গেছে।ও সুবলদা চশমা ফাটালে কি করে? পড়ে গেছিলাম। চশমা ঠিক করার আলাদা করে টাকা সে দিলেও সেটা বোধহয় গাঁজার পেছনেই গলে গেল ; ফাটা কাঁচ আর কালো কাপড় ঢাকা চশমার বদল হলো না।
তাছাড়া ঝিনিদি, তুমি ওই সুবলদার রিকশায় যাচ্ছোই বা কেন? পলাশের সুমিও সাবধান করে।এটা কিন্তু সত্যিই বিপজ্জনক। কিছুদিন হলো সুমি এসেছে তাদের বকুরতলার ফ্ল্যাটে। উচ্চ মাধ্যমিকের আগে পলাশের কাছেই সে অংক আর ফিজিক্স কেমিস্ট্রি পড়বে তিন মাস। ডাক্তারি পড়ার সময় পলাশ এত টিউশনি পড়িয়েছে যে এখনো ওসব জলভাত তার কাছে।সুমি থাকায় পলাশের ডিউটি থাকলেও একা লাগে না আর।
আর বলিস কেন কানেও তো সুবলদা কম শোনে। কাজেই রিকশা চড়ে কোনদিকে কী আসছে আমিই নজর রাখি আর ও সুবলদা গাড়ি, ও সুবলদা লরি বলে পিঠে ধাক্কা দিতে দিতে যাই।সেই ধাক্কা আর চেঁচামেচি সুবলদার ইন্দ্রিয়গোচর হলে রিকশা নিয়ে সোজা পাশের নয়ানজুলিতে নামিয়ে দেয় যখন তার অনেক আগেই গাড়ি বা লরি পাশ কেটে হুস হাস করে বেরিয়ে গেছে।সুমি আর সে একসাথে হেসে ওঠে। কিন্তু ওভাবে যাতায়াত করা ঠিক হচ্ছে না ঝিনিদি।পরের মাস থেকে অন্য রিকশা নাও।
তা নিতেই পারি। তবে ওর তো ভাড়া টাড়া জোটে না। একসাথে সাড়ে তিনশো টাকা ওর সংসারে অনেক।বাড়িতে দেয় না গাঁজায় দম দেয় তুমি জানো? তোমায় বোকা পেয়ে ওসব বলে। বৌটা কী রোগা জানিস। একদিন কেরোসিন নিয়ে যাচ্ছিলো সুবলদাই দেখালো। মাস গেলে তাকেই বলেছি হাসপাতালে এসে টাকা নিয়ে যেতে। আর আমায় বলিস কম বুদ্ধি? কিন্তু তোমার তো এখন সাবধানে চলাফেরা করার কথা।
ওসব বাদ দে দিকিনি। কুলের আচার খাবি? একদম বাড়ির মতো খেতে। ট্রেনে উঠেছিল এক দাদু। বাড়িতে দিদা বানায় আর দাদু ফেরি করে।
পলাশের ছুটি বা নাইট থাকলে বাড়ি ফিরে গরম ভাত পাওয়া যায় কিন্তু যে যে দিনগুলো ও থাকে না, টিফিন বাকসো দুটো সিঙ্কে নামিয়ে রেখে ফ্রিজ থেকে রান্না তরকারি,মাছ বার করে ভাত বসিয়ে সে স্নানে যায়।ভাত বেড়ে সুমিকে ডেকে খেতে বসতে বসতে প্রায়দিনই চারটে সাড়ে চারটে বেজে যায়।পরীক্ষা বলে দিনরাত পড়ছে সুমি। ও আছে বলেই ফেরার পথে স্টেশন বাজার থেকে সে প্রায়দিনই কিছু না কিছু বাজার করে আনে।পলাশও রোববার সব কিনে কেটে বেশি করে রান্না করে রাখে।
দুটো টিফিন বাকসো নিয়ে যায় সে।একটা যাওয়ার পথে খায় আর একটা ফেরার ট্রেনে।দুপিস করে টোস্ট, ডিম সেদ্ধ আর আলু সেদ্ধ নুন মরিচ মাখনে নেড়ে চেড়ে নিয়ে যায়।ধোয়া আপেল থাকে।রোজ এই এক টিফিন।ভোর ছটায় বেরোনোর আগে এর চেয়ে যুৎসই টিফিন সে বানাতে পারে না।
সকালে ঝর্ণাদির সঙ্গে তার দেখা হয় না। বিকেলে এসে বাসন ধুয়ে জামাকাপড় তুলে ভাঁজ করে ঘর ঝাঁটিয়ে সবজি কেটে দিয়ে চলে যায় সে। বিকেল চারটে নাগাদ খেয়েই মিউজিক সিস্টেমে গান চালিয়ে রাতের আর কাল দুপুরের মতো রান্না করে নেয় সে। মাছের ঝোল চাখতে গিয়ে ফিসফিস করে, টেস্ট করে বল দেখি কেমন হয়েছে; আমি আবার নুনটা ঠিক বুঝি না। বেশী বেশী হয়ে যায়।তুই বল ঠিক করে।
আজ মেঘ করে হাওয়া উঠেছে কেমন;
এই গানটা শোন,গোপন স্বপনে ছাইল...অপরশ আঁচলের নব নীলিমা... কী সুন্দর কথা না বল?
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আর একবার গা ধুয়ে পাতলা রাতজামা পরে একটু চন্দন গন্ধ মেখে নেয়। এই সৌরভ তার পছন্দের।লম্বা চুল আঁচড়ে বিনুনি বাঁধে।ধুপ জ্বালে চন্দন গন্ধের। স্টেশনের ধারে ফুলের দোকান থেকে কিনে আনা জুঁইয়ের মালা থালায় জল দিয়ে মাথার কাছে সাজিয়ে রাখে। এক কাপ চা নিয়ে চৌরাসিয়ার বাঁশির সামনে চুপ করে বসে।ধুপের ধোঁয়ার মতো জড়িয়ে মড়িয়ে ওঠে সুর। গুনগুন করে সে গোপন স্বপনে ছাইল...শোন ছোট্ট ,আমার সবটুকু সত্যি আর সুন্দর নিয়ে হলি তুই বুঝলি।
একা একা কার সঙ্গে কথা বলো ঝিনিদি? দরজায় দাঁড়িয়ে সুমি জিজ্ঞেস করে। আয় আয়। না গো অনেক পড়া বাকি। বড়দা এত টাস্ক চাপিয়ে গেছে,কাল এসেই ধরবে। চায়ের কাপ রাখতে যাচ্ছিলাম রান্না ঘরে। তোমার কাপটাও নিতে এসে দেখি চোখ বুজে বিড়বিড় করছ।
কিছু না স্রেফ স্ক্রুগুলো একটু টাইট দিতে হবে বুঝলি? ননদকে নিজের মাথা দেখিয়ে ইশারা করে সে।কিছু খাবি তুই? বানিয়ে দেব? খিদে পায়নি। খাবার টেবিলে কুড়মুড়ে চিড়ে ভাজার একটা বয়াম রেখেছি । কারিপাতা,চিনে বাদাম আর শুকনো লঙ্কা ভেজে এমন একখানা বানিয়েছি বুঝলি সে একেবারে দেবভোগ্য ব্যাপার। খেলেই তোর জ্যামিতি এক্সট্রাগুলো স্যাটাস্যাট মিলে যাবে। সুমি হাসতে হাসতে বলে আচ্ছা খিদে পেলেই খাব।তুমি রেস্ট নাও দেখি।
সুমি চলে গেলে সে মশারি খাটিয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে বিভূতিভূষণের আরন্যক পড়তে শুরু করল। সবচেয়ে প্রিয় বইগুলো সে এইসময় আর একবার পড়তে চায়। কলেজ স্ট্রিট যাওয়া এখন আর হয়ে উঠবে না অথচ পছন্দের ক্লাসিক্যাল বইগুলো তো সব বাড়িতে।এখানে পড়ার জন্য সেসব বইয়ের কিছু তার এক্ষুনি চাই।বেহালার ট্রাম ডিপোর বইয়ের দোকানে সে খুঁজতেও গেছিল। আজকাল প্রায়ই তার মাথা ঘোরে। পশ্চারাল হাইপোটেনশন হলেই ট্রেনে বা স্টেশনে সে সঙ্গে সঙ্গে বলে আমায় একটু বসতে দিন। জল টল খেয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলে আবার সব ঠিক হয়ে যায়।
বুঝলি সুমি যা একখানা কাণ্ড হয়েছে।বইয়ের দোকানেও আজ আমার মাথা ঘুরে গেছিল। প্রায়ই হচ্ছে, তোমার স্যারকে বলো না।ধুর, এখন তো ওরম হতেই পারে। কী হলো তারপর শোন না। বলো। দোকানদারকে বললাম আমায় একটু বসতে দেবেন দাদা? মাথা ঘুরছে। শেষে অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে যাই পাছে দোকানদার তাই মহাবিপত্তি ভেবে বলল আপনি বরং সামনের ওই মন্দিরে গিয়ে বসুন।কী বদমায়েশ নিষ্ঠুর লোকটা! সুমি ভয়ানক রেগে যায়।আরে আজকাল এরকম তো হয়ই। তুমি করলে কী?কী আবার করব। সত্যিই খুব কাছে ছিল মন্দিরটা। তবে সিঁড়ি ভেঙে ওঠাটা রিস্ক হয়ে যাবে ভেবে সিঁড়িতেই বসে গেলাম। চকলেট আর জল খেয়ে খানিক বসে ঠিক হয়ে আবার দোকানে গেলাম। আবার তুমি ওই লোকটার কাছে গেলে? আমি হলে কিছুতে ওই লোকটার বই কিনতাম না।
আরে আমার তো বইগুলো চাইই। নাইলে এত কষ্ট করে বিকেল অবধি না খেয়েও নামব কেন ওখানে?আর বইগুলো তো আর সত্যি করে কিছু লোকটার না।ও তো স্রেফ বিক্রি করে।বই না নিয়ে চলে এলে তো লোকটার খারাপ ব্যবহারটাই সাথে করে ফিরতে হতো। এখন দ্যাখ কবিতা উপন্যাসের আনন্দ সঙ্গে নিয়ে তো এলাম। তুমি একটা অদ্ভুত। আগে খাও দেখি। তারপর কথা।
আমরা চঞ্চল ... আমরা অদ্ভুত গাইতে গাইতে সে হাত ধুয়ে ঝট করে আলু বেগুন, টমেটো সেদ্ধ দিয়ে ভাত রান্না বসিয়ে স্নান করতে চলে গেল।সুমিকে সে বলল না মন্দিরের সিঁড়িতে বসে চকলেট খেতে খেতে সে বলছিল এসব তুচ্ছকে ইগনোর করতে শিখতে হবে আমাদের।পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ আসলে ভালো।তারা একে অপরকে সাহায্য করতে করতে এতদূর এসেছে।এই মন্দ ব্যবহার মনে রাখতে হয় না বুঝলি। অন্ধকার আমরা ভাবব না মোটেও।
এই যেমন আরন্যক পড়তে পড়তে সে তুলে নিল সাগর থেকে ফেরা। আরও পরে টেনিদা পড়তে পড়তে ঝিমঝিম বৃষ্টির মতো ঘুম নামল চোখে।রাত সাড়ে দশটায় সুমি ডেকে তুললে সে উঠে ভাত বাড়ল, সুমির খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই তার বাসন নামিয়ে। ভোরের জন্য আলু,ডিম ধুয়ে সসপ্যানে রেডি করে, টিফিন কৌটো চামচ রুমাল,ধোয়া আপেল , জলের বোতল সব রেডি করে পরদিনের জামা,পার্স, ঠিক করে রাখল। বারান্দায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। টবের বেলফুলে চুমু খেল।রাত জাগিস না বেশী,সুমির মাথায় একটু হাত রেখে শুতে চলে এল সে।এই সময়টা কী একটা ঘোর লেগে থাকে কথা বলতে ইচ্ছে করে না , সুমিও সেটা বোঝে।
একটা ট্রেন মিস করলে এক ঘন্টার বেশী হা পিত্যেশ।ফলে দাদা ধরুন বলে ব্যাগখানা এগিয়ে দিয়েই দৌড়ে সে আটটা পাঁচের ট্রেনে উঠে পড়ে। বসিরহাটের জিতু কাকা চলন্ত ট্রেনে লাফিয়ে উঠতে দেখে মাকে জানায় এবং সেদিন রাতে অবধারিত বাড়িওলার ল্যান্ড ফোনে মার ফোন এসে পড়ে।
তুই এই অবস্থায় চলন্ত ট্রেনে দৌড়ে উঠছিস? কিছু না মা,ওকেও একটু ট্রেইন করছিলাম আর কী।ভয়ানক বকুনি আর বিশদ উপদেশের পরে বলে মা,ফোনটা রেখে না আমাদের ছাদে বা পুকুর ঘাটে গিয়ে পশ্চিম আকাশে তাকাও।কেন?সেখানে আবার কী?
দেখবে ভেনাস আর জুপিটার একদম পাশাপাশি।মানে? আরে তিরিশ বত্রিশ বছর পরে পরে ওরা অমন কাছে আসে।আজকে আমি তোমায় দেখাচ্ছি হয়তো ঠিক এত বছর পরে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে আমার মেয়ে বলবে, মা দ্যাখো দ্যাখো।একেই বলে প্রবাহমানতা।
আচ্ছা মা,এখন থেকে আমায় আরো সত্যি হতে হবে তো নিজের কাছে তাইনা?মানে কী?ধরো যা আমি সত্যি বলে জানি,তাইই তো শেখাবো ওকে নাকি? তাইলে আমাকেও তো যা বিশ্বাস করি সেসব আরও ঝালিয়ে নিতে হবে ভেতরে নাকি?তুমিও নিশ্চয়ই তাই করেছিলে।অত শরীরের যত্ন শরীরের যত্ন কোরোনা তো।পাগলি একটা বলে মা ফোন রেখে দিলে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে ওঠে সে।কত তারা আকাশে আজ।ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদে অনন্ত ছায়াপথের নীচে দাঁড়িয়ে সে বলে নদী,তুমি কোথা হইতে আসিয়াছো?
0 Comments