বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ৭২
ভুঁইচাঁপা
ভাস্করব্রত পতি
কাঁধে মই, বলে "কই ভূঁইচাপা গাছ',
দইভাঁড়ে ছিপ ছাড়ে, খোঁজে কইমাছ,
ঘুঁটেছাই মেখে লাউ রাঁধে ঝাউপাতা
কী খেতাব দেব তায় ঘুরে যায় মাথা"।
-- 'খাপছাড়া' কাব্যগ্রন্থ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভুঁইচাপাকে সংস্কৃতে ভূমিচম্পক, হিন্দিতে মুখজালী বলে। এছাড়াও কীটমার নামে পরিচিত। ইংরেজিতে বলে Indian Crocus, Peacock Ginger, Round Rooted Galangale। ভুঁইচাঁপার বিজ্ঞানসম্মত নাম Koempferia rotunda। এটি Zingiberaceae পরিবারের অন্তর্গত। এর অন্যান্য প্রজাতিগুলি হল --
Kaempferia bhucampac Jones
Zerumbet zeylanica Garsault
Kaempferia longa Jacq
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ছাড়াও নেপাল, তাইওয়ান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, কোস্টারিকা, ইন্দোনেশিয়ার জাভা, চিনের ইউনান, হাইনান, কুয়াংতুং, কুয়াংশিতে প্রচুর দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে এবং কোথাও কোথাও শীতকালে এই গাছের ফুল ফোটে। এই গাছের ফুলে থাকে Toxin Benzyl Benzoate। এটি ব্যবহৃত হয় স্ক্যাবিসের প্রতিষেধক ওয়েন্টমেন্ট হিসেবে। এছাড়াও আয়ুর্বেদিক এবং অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ তৈরিতে কাজে লাগে। মূলতঃ জলাভূমিতে ঘাসের মাঝেই জন্মায়। পাতাগুলি খয়েরি রঙের। ক্ষুদ্রাকার। এতে আঠালো লোম রয়েছে।
যতীন্দ্রমোহন বাগচীর বিখ্যাত 'কাজলা দিদি' কবিতায় রয়েছে ভুঁইচাপার কথা --
'ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
দিস না তারে উড়িয়ে মা গো, ছিঁড়তে গিয়ে ফল;
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কী মা বল'!
🍂
0 Comments