সুরেশ দাস
জীবন সখা
সেদিন লোকাল ট্রেনে
বসেছিলাম জানালার পাশে,
সকালের ট্রেন; তবু হাওয়ায়
শেষ বৈশাখের দাবদাহের আভাস।
কামরায় নেই তেমন ভিড়
দু-একটা স্টেশন ছাড়াতেই
একটা সুরেলা কণ্ঠে ভেসে এলো গান - "দোলাও দোলাও দোলাও
আমার হৃদয় ..."।
সচকিতে চেয়ে দেখি, এক অন্ধ যুবা
ঐ গান গাইতে গাইতে এগিয়ে আসছে,
ডান হাত সামনে বাড়ানো।
অদ্ভুত এক তৃপ্তির অনুভূতি...
উষ্ণ হাওয়ায় যেন লাগলো বৃষ্টির ছোঁয়া,
মন বলে উঠলো -
এ যে আমার প্রতিদিনের সকালবেলার সুর;
দহন দিনে চলার পথে আনন্দ ভৈরবী।
ঝড়ের রাতে একলা আমার পরাণ সখা,
আমার সকল কাজের মধুর সর্বনাশ!
সুরের মায়া ছড়িয়ে যুবক চলে যায়,
আমি ভাবতে থাকি ...
কোন মন্ত্রবলে এ গান হয়ে ওঠে
এক অন্ধ ভিক্ষুকের প্রাণের গান!
প্রাণ ধারণের গান!
জানালায় ছুটে আসা হাওয়ায়
হয়তো দুচোখ বুজে এসেছিল,
দুচোখের ক্যানভাসে ফুটে ওঠে
এক অবিস্মরণীয় ছবি -
বিশাল এক প্রান্তরে মঞ্চের উপর
দাঁড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ,
দিনান্তের রক্তিমায় উদ্ভাসিত
কবির মুখমণ্ডল,
তাঁর বামহাতে গীতবিতান,
ডান হাত ঊর্ধ্বে প্রসারিত
আর প্রান্তরের বাতাসে মন্দ্রিত হচ্ছে
আন্দোলিত জনতরঙ্গের উদ্দেশে
কবির উদাত্ত আহ্বান -
"ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো ...।"
বিস্ময় বিমুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকি
তাঁর আপাদ-লম্বিত পোশাকের দিকে,
দিনশেষের আলোয় যেখানে বিচ্ছুরিত হচ্ছে
হাজার তারার ঝিকমিক ।
তবু এক কৌতূহল জাগে,
কবির চারপাশে প্রদক্ষিণ করে দেখি
"বুর্জোয়া কবি" তির্যক এই অভিধা
কে জানে কখন
উড়ে গেছে বৈশাখী হাওয়ায়।
🍂
0 Comments