মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব -- ১৬৬
সত্যরাম বসু (পাঁচালীকার, কবি, মেদিনীপুর)
ভাস্করব্রত পতি
হৃদয়রাম বসু ছিলেন কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্যের দুই বিশিষ্ট বন্ধুর মধ্যে একজন। তিনি কর্ণগড়ের রাজার রাজ্যের দেওয়ান ছিলেন। রামেশ্বরের শিবায়নে আছে -- 'পরমানন্দের কর পরম আনন্দ / হৃদয়রামের কর সকল স্বচ্ছন্দ।' এই হৃদয়রামের ছোট ভাই হলেন সত্যরাম বসু। দাদার মাধ্যমে রামেশ্বর ভট্টাচার্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে এবং তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নিজেও অনুকরণ করে লিখেছিলেন একটি 'সত্যনারায়ণের পাঁচালী'।
কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্যের সময়কালে সত্যরাম বসুও কাব্যসাধনা করে গিয়েছেন। যদিও তার লেখা কাব্যটি রামেশ্বর ভট্টাচার্যের কাব্যের মতো ততোধিক জনপ্রিয়তা পায়নি। প্রচারও পায়নি। কিন্তু প্রতিবছর বিজয়া দশমীর পর প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেলে এতদঞ্চলের বহু বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে সত্যনারায়ণের পূজা করার চল ছিল। সেখানে এই সত্যরাম বসুর লেখা পাঁচালীটি গীত হত। তৎকালে সেই পাঁচালীর ভণিতায় উল্লিখিত হত 'উদয়রামের পৌত্র, কালীচরণের পুত্র সত্যরাম'। যোগেশচন্দ্র বসু লিখেছেন, "কথিত আছে, স্কন্দপুরাণোক্ত সত্যনারায়ণ এদেশে যবন সংসর্গে সত্যপীর হইয়াছিলেন। এ প্রদেশে তাঁহার সম্বন্ধে যে সকল পয়ারাদি গীত হইত রামেশ্বর ও সত্যরাম সেইগুলি অবলম্বন করিয়া তাঁহাদের গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন।"
হৃদয়রাম ও সত্যরাম বসু ছিলেন মহেশচন্দ্র বসুর মেজ ছেলে রাজারামের প্রপৌত্র। মহেশচন্দ্র বসুর পাঁচ ছেলে নারায়ণ, রাজারাম, গোবিন্দরাম, মধুসূদন এবং মনিরাম। রাজারামের ছেলে উদয়রামের দুই ছেলে কালীচরণ ও রঘুনাথ। কালীচরণের সাত ছেলেরা হলেন হরিপ্রসাদ, গুরুপ্রসাদ, মনসারাম, দয়ারাম, হৃদয়রাম, মতিরাম এবং সত্যরাম বসু। এই সত্যরাম বসু ছিলেন বুদ্ধিমান এবং শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সবাই তাঁকে স্নেহ করতেন। কোনও কাজে সত্যরামের যুক্তি ও পরামর্শ ছাড়া কোনও কাজ করতেন না কেউ। তিনি সবসময় মেদিনীপুর শহরেই থাকতেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ভবানী মনি। ।
সত্যরাম বসুর তিন ছেলে -- রামধন, উমাশঙ্কর এবং ত্রিপুরাশঙ্কর। এই রামধন বসু প্রথম জীবনে কিছুদিন তৎকালীন মেদিনীপুরের জেলা আদালতে ওকালতী করতেন। পার্শীভাষায় তাঁর অসামান্য ব্যুৎপত্তি ও দক্ষতা ছিল। এজন্য তাঁকে সবাই রামধন মুন্সী নামে অভিহিত করত। গবেষক যোগেশচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁরই প্রপৌত্র। এই রামধন বসু নিজের হাতে কাশীদাসের মহাভারত, প্রাচীন নারদ সংবাদ, রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়ন ইত্যাদি গ্রন্থের প্রতিলিপি নিজের হাতে লিখে গিয়েছেন।
🍂
0 Comments