কোকুনের ঘর
কমলিকা ভট্টাচার্য
আমার একটা ঘর আছে—
কোকুনের মতো আঁটসাঁট,
বাইরে তার রেশমি মোড়ক,
ভেতরে অন্ধকারে শ্বাস টেনে বাঁচি আমি।
দরজার বাইরে শুধু শব্দের ধ্বংসযজ্ঞ,
অসমান্তরাল রেখার মতো ছড়িয়ে থাকা হিজিবিজি,
যেন ভাঙা আয়নার টুকরোয় গড়া শহর
যেখানে কারও ছায়া কারও সঙ্গে মেলে না।
স্বাভাবিক—অস্বাভাবিকের মাপকাঠি
সবার হাতে আলাদা দাঁড়িপাল্লা,
কেউ চোখের পলকে গড়ে তোলে মহাবিশ্ব,
আবার কেউ ভেঙে ফেলে স্বপ্নের নক্ষত্রচূড়া।
তুলনার বিষাক্ত বৃষ্টিতে
ভিজে গেছে মাটির প্রতিটি শিকড়,
আর অনুকরণের ধোঁয়ায়
শ্বাসরুদ্ধ প্রতিটি জানালা।
আমি তবু খুঁজি এক টুকরো ফাঁকা আকাশ,
যেখানে মাটির গায়ে রোপণ করব
আমার নিজের নিরাভরণ শ্বাসের বীজ।
আমি চাই এমন এক নীরবতা
যেখানে শব্দেরা হবে নরম শৈবালের মতো,
পায়ের তলায় ছুঁয়ে যাবে, কিন্তু
আর কেটে দেবে না রক্তাক্ত ক্ষত।
কোকুন ফেটে গেলে
আমি বের হবো আমার প্রজাপতি মনের ডানায়,
বর্ণিল ধ্বনির ঝরনা মেখে
উড়ব সেই আলোয়—
যেখানে প্রতিটি হাওয়া হবে নিজের,
প্রতিটি সূর্যরশ্মি হবে অনাবৃত মুক্তি।
🍂
অস্পর্শে তোমার পাশে
তোমার কাছে আসবো ভাবলেই
কোনো শব্দ খুঁজে পাই না,
কেবল এক অন্তর্গত আলো
অন্ধকারের পরত ভেদ করে
আমাকে নীরবে ডেকে নেয়।
তুমি কোনো দিকচিহ্ন নও,
তবু চলার পথ নিজেই খুলে যায়।
আমার ভেতরের দীর্ঘ নীরবতা
তোমার নিঃশ্বাসে নরম হবে বলে
বুকের ভেতর নতুন নদী আঁকে।
তোমার উপস্থিতি
যদিও এক অদেখা স্বরলিপির মতো
তাতে বাজে এমন সুর
যা কেবল হৃদয় জানে,
কোনো বাদ্যযন্ত্র নয়।
আমি আর প্রশ্ন করি না
দিনের হিসেব, রাতের প্রহর;
তোমার সঙ্গে না থাকাও
নিজেই এক সম্পূর্ণ সময় তবু,
যা ভাঙা যায় না,
0 Comments